Advt

Advt

chaliyati-galpo-story-by-nityaranjan-debnath-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-চালিয়াতি-নিত্যরঞ্জন-দেবনাথ

 

chaliyati-galpo-story-by-nityaranjan-debnath-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-চালিয়াতি-নিত্যরঞ্জন-দেবনাথ


ট্রেনে প্রচন্ড ভিড়। দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। হবে নাইবা কেন?  পর পর দুটো ট্রেন ক্যানসেল। ডাউন কাটোয়া-হাওড়া লোকাল।এমনিতেই এক ঘন্টা অন্তর ট্রেন। একটা ট্রেন মিস করলে ঠায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকো। তার উপর আজ আবার দুটো ট্রেন নেই।ভিড়, ঠেলাঠেলি যে হবে সে আর নতুন কথা কি। ট্রেনটা যখন কুন্তীঘাট স্টেশন পার হল, তখনই শোরগোলটা শুরু। ট্রেনের মাঝামাঝি একটি কম্পার্টমেন্টে উঠেছিলেন এক দম্পতি। সম্ভবত গুপ্তিপাড়া স্টেশন থেকে উঠেছেন। বয়স আর কত হবে? বড়জোর আঠাশ-ত্রিশ। তবে বরের তুলনায় স্ত্রী একটু বেশি  স্মার্ট বলেই মনে হয়। তিনি ঠেলেঠুলে ভেতরে ঢুকে দুদিকের সিটের মাঝখানের প্যাসেজটার জানলার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। বর ভদ্রলোক তখন অনেকটাই তফাতে। হঠাৎ হইচই চিৎকারে সকলের চোখ এখন ওই মহিলার দিকে। যিনি বরকে পিছনে ফেলে ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়েছেন। তিনি হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছেন -- "ওরে আমার গলার হার কোথায়? একটু আগেওতো ছিল। হায় হায় কে নিল আমার অমন সুন্দর হারটা?"

এসব ক্ষেত্রে যা হয় --- নানাজনের নানা মন্তব্য। উপযাজক হয়ে জ্ঞান গম্যির কথাই বেশি শোনা যায়। " এমন ভিড় ট্রেনে কেউ সোনার জিনিস পরে আসে? পরেছে যখন একটু সতর্ক থাকবে না? বলিহারি আক্কেল।" কেউ কেউ অবশ্য সহানুভূতিশীলও ছিলেন। " আহারে কি দিনকাল পড়ল? মানুষ একটু শখের জিনিসও পরে বাইরে বেরোতে পারবে না। সোনার জিনিস কি শুধু ঘরে পরে থাকার জন্য? পাঁচজনকে যদি নাই দেখাতে পারে, তবে ওসব বানিয়ে লাভ কি?"

কয়েকজন যাত্রীর আবার অন্যরকম দৃষ্টি। বউটার সঙ্গে ভিড়ে লেপ্টে আছে একটি বাইশ-তেইশ বছরের যুবক। চোখ-মুখ দেখে তাকেই অনেকে সন্দেহ করছে। ফিসফিস করে বলাবলিও করছে। হঠাৎ সিটে বসে আছেন এক মহিলা দুম করে বলে বসলেন, " ও ভাই আপনিতো ওর ঘা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন তখন থেকে, আপনি নেননি তো?"

এই ভাবে না দেখে কাউকে ডাইরেক্ট বলা অভদ্রতা। তাছাড়া কোনো প্রমাণ ছাড়া কি বলা যায়? কিন্তু এখানে মহিলাকে অনেকেই সমর্থন করছেন, " হ্যাঁ হ্যাঁ ওই নিয়েছে মনে হয়।"

যুবকটি রেগে গিয়ে বলল," কি ভেবেছেন আপনারা? আমার কি মান-সম্মান নেই নাকি? আমি ভদ্র ঘরের ছেলে। এসব নিচু কাজ আমি ভাবতেও পারি না। তবু আপনাদের অত সন্দেহ হচ্ছে যখন, ভালো করে সার্চ করুন আমাকে।"

বলেই নিজের জামা-প্যান্টের পকেটে গুলো দেখাতে লাগল। একজন আবার হাত দিয়ে ভালো করে দেখলেনও। মহিলাটি আবার একজনকে বললেন," দাদা ওর জাঙ্গিয়ার ভেতরটা একটু হাত দিয়ে দেখুন তো। এদের কোনো বিশ্বাস নেই।"

কথা শুনে অনেকেই স্তম্ভিত। সত্যি সত্যি এক ভদ্রলোক ওর অন্তর্বাসে হাত দিয়ে সার্চ করলেন। ভাবা যায় -- লজ্জা লজ্জা !

এরপর পরিবেশ একটু থমথমে।সবাই কেমন চুপ হয়ে গেছে। ব্যান্ডেল ঢোকার পর অনেক যাত্রীই নেমে গেল। ট্রেন কিছুটা ফাঁকা। যিনি বেশ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছিলেন, সেই মহিলা চন্দননগরে নামলেন। অন্য দরজা দিয়ে সেই যুবকটিও নামল।

মহিলা যুবকটিকে বললেন, "এমন কাঁচা কাজ কেউ করে? ব্যাগটা খোলা রেখেছিলাম কি করতে? হারটাকে আমার কোলের উপর ছুঁড়ে দিলি? কেউ দেখে ফেললে কি হতো বুঝতে পারছিস?"

যুবকটি বলল," ব্যাগেই রাখতে চেয়েছিলাম। ঠেলা লেগে তোমার কোলে পড়ে গেছে।"

"আহাম্মক। যা এখন বাড়ি যা। বিকেল পাঁচটা দশের শিয়ালদা থেকে কৃষ্ণনগর লোকালটা ধরব।"

লেখক পরিচিতি: 

জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।

তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট,  দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর  ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।

তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। 

Tatkhanik digital bengali online e magazine