Advt

Advt

aamaro-vool-chhilo-galpo-story-by-nityaranjan-debnath-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-আমারও-ভুল-ছিল-নিত্যরঞ্জন-দেবনাথ

aamaro-vool-chhilo-galpo-story-by-nityaranjan-debnath-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-আমারও-ভুল-ছিল-নিত্যরঞ্জন-দেবনাথ

 লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

অশোক বাবুর স্ত্রী হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে চলে গেলেন। হার্টের রোগ ছিল ঠিকই। তাহলে কী নিয়মিত ঔষধ খেতেন না?  তিনি লেখালেখি, পড়াশুনা করেই দিন কাটাতেন।স্ত্রীও সেটাই চাইতেন। বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যেই নিজের একটা জগৎ তৈরি করে ফেলেছিলেন।  সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মী থাকার সুবাদে সরকারি আবাসনেই চাকরি জীবন কাটিয়েছেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর এক মফস্বল শহর থেকে সামান্য তফাতে ফাঁকা জায়গা দেখে সুন্দর একটি বাড়ি করেন। তাও প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল।একমাত্র ছেলে বিদেশে কর্মরতআশেপাশে অবশ্য ফাঁকা জায়গা আর থাকেনি। কয়েক বছরের মধ্যে হুড়মুড় করে দোতলা তিনতলা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে পড়েছে। বেশির ভাগই ব্যবসাদার। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ করার আগ্রহও তেমন হয়নি। কিন্তু আজ ডাক্তার যখন বললেন,স্ত্রী আর নেই তখন থেকেই তিনি নির্বাক !  যেন পাথর বনে গেছেন। বয়স আশি পেরিয়ে গেলেও দিব্যি ছিলেন। এবার একা একা কীভাবে কাটাবেন? 

কাজের মেয়েটি বলল, দাদু, আমি আশেপাশে কয়েকজনকে খবর দিয়ে আসি।  বলেই বেরিয়ে গেল।

অশোক বাবু ভাবছেন, পাড়া প্রতিবেশি আর কী করবেন? মানুষগুলোকে দেখেই বোঝা যায়, এরা কেমন। এদের দ্বারা কি উপকার হবে। কয়েকটা ছেলেকে প্রায়ই এদিক ওদিক ঘুরতে দেখা যায়। হঠাৎ হঠাৎ এরওর বাড়িতে ঢুঁ মারতেও দেখেছেন। পুরোপুরি মস্তান। মাথায় মিলিটারি ছাট। তালুতে এক ঝাঁক চুল আর চারিদিকটা নেড়া।কানে দুল। হাতে বালা। এরা হচ্ছে তার প্রতিবেশী।

আশ্চর্য ! দশ মিনিটের মধ্যে আট-দশ জন ইয়াং ছেলে হাজির। সঙ্গে কয়েকজন মহিলাও। দুল পরা মস্তানটা বলল, ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন তো? আপনি কোনও চিন্তা করবেন না মেসোমসাই।আমরা সব ব্যবস্থা করছি।

আধ ঘন্টার মধ্যে শববাহী গাড়ি ও একটি টেম্পো চলে এল। অশোকবাবুকে একজন শববাহী গাড়ির সিটে বসিয়ে দিল। সঙ্গে একজন মহিলাও বসল। আর বাকি সব টেম্পোতে করে একেবারে শ্মশান।

দাহ কর্মের সমস্ত কাজ ওই ছেলেরাই সম্পন্ন করল। তিনি এক জায়গায় স্থির বসে বসে দেখলেন।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধে। কানের দুল বলল," মেসোমসাই আপনার পক্ষে এত বড় বাড়িতে একা থাকাটা ঠিক হবে না। আপনার তো অনেক ঘর আছে।আমি দু'জনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। রাতে থাকুক।"

একটু পরেই দুজন মহিলা এল। বয়স বোধকরি ত্রিশের মধ্যেই । বিবাহিতা। দেখেই মনে হয় সম্ভ্রান্ত ঘরের।

একজন বলল," মেসোমসাই এই নিন,এতে দুধ সাবু কলা ও একটু মিষ্টি আছে। খেয়ে  শুয়ে পড়ুন। আমরা পাশের ঘরেই আছি। অসুবিধা হলে ডাকবেন।"

অশোকবাবুর খিদে পেলেও স্ত্রীর শোকে কিছুই ভালো লাগছে না। তবুখেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লেন।

সকালে কাজের লোক আসার পর মহিলা দুজন চলে গেল। সন্ধের পর আবার আসবে বলল।

পরদিন মহিলা দুজনের সঙ্গে সামান্য আলাপ করতে গিয়ে তিনি অবাক। একজন কলেজে পড়ায় আরেক জন স্কুলে।

জিজ্ঞেস করলেন,"তোমার স্বামী কি করেন মা। রাতে থাকবে যে তার অনুমতি নিয়ে এসেছ তো?"

"আমার স্বামী ব্যবসা করে পাশাপাশি সোশ্যাল ওয়ার্ক। স্বামীই তো বলল, আপনার বাড়িতে কয়েক রাত থাকতে হবে। ঐযে কানে দুল হাতে বালা দেখলেন না? তিনিই আমার স্বামী। আকাশের মত বড় মন।মানুষের বিপদ শুনলেই সব কাজ ফেলে ছুটবে।"

রাতে কানের দুল একবার এল, " মেসোমসাই আমাদের দুটো নাম্বার আপনার মোবাইলে সেভ করে রাখুন। যখনই অসুবিধা হবে নির্দ্বিধায় ডাকবেন। মনে রাখবেন আপনি একা নন আমরা সবাই আপনার সঙ্গে আছি।" নাম্বার দুটো দিয়েই বেরিয়ে গেল।

অশোকবাবুর মুখে কোনো কথা বের হল না। অপলক ছেলেটির চলে যাওয়া দেখছেন। ভাবছেন তাঁর স্ত্রী একটা ভুল মনোভাব নিয়ে চলে গেলেন। প্রায়ই বলতেন, এদের সঙ্গে মেশার দরকার নেই।পোশাক আসাকেই মানুষের রুচিবোধ ও মানসিকতা বোঝা যায়। সব ক্ষেত্রে যে তা নয় সেটাই তাঁর জানা হলো না।

লেখক পরিচিতি: 

জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।

তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট,  দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর  ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।

তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। 

Tatkhanik digital bengali online e magazine

aamaro-vool-chhilo-galpo-story-by-nityaranjan-debnath-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-আমারও-ভুল-ছিল-নিত্যরঞ্জন-দেবনাথ