Advt

Advt

Probohaman-story-upannyas-26thpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার

 

Probohaman-story-upannyas-26thpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

২৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

২৬তম পর্ব শুরু ……

অভিযোগ নেই

নদী নামের মেয়েটি সমুদ্রের সন্ধানে বেরিয়েছিল কোনো এক দিন। সমুদ্র খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত সে এখন। ঘাত প্রতিঘাতে শিথিল তার গতি। এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ এখন। তবুও সে সমুদ্রের স্বপ্ন দেখে নিরন্তর।

স্বপ্ন সাজাতে সাজাতে কবে যে ফুরিয়ে গেল রাত বুঝে ওঠা গেল না। হঠাৎ একদিন নড়ে উঠলো পৃথিবী। যমরাজ তাঁর সবগুলো দরজা খুলে দিল কিংসুকের জন্য।

 যমে মানুষে কি ভয়ঙ্কর টানাটানি! যার হাত ধরে পাড়ি দিয়েছিল সাত সমুদ্দর তেরো নদী। এই বান্ধব বর্জিত দেশে সে নদীকে একা ফেলে চলে যেতে চায়, কী করে মেনে নেয় সেটা? ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল সে সেদিন। সুখে দুঃখে এতগুলো বছর পাশাপাশি চলেছে। কখনও রাগ, কখনও অভিমান, কখনও অভিযোগ। তার মধ্যেও কেটে গেছে দিন। দায়িত্ব কর্তব্য প্রেম ভালোবাসার ছোট্ট নীড়ে ফুটিয়ে ছিল রঙবেরঙের অসংখ্য ফুল। সেই সাজানো বাগান তছনছ করে করে দিতে চাও কিংসুক? একটুও মায়া হয়না তোমার? 

হাসপাতালের বেডে অচৈতন্য কিংসুক। মৃন্ময়ীর মনে হচ্ছিল ঐ শরীর প্রাণহীন। দুচোখে জলের ধারা। মানুষটির প্রতি তার অনেক রাগ ছিল অভিযোগ ছিল। আজ আর রাগ দুঃখ অভিমান অভিযোগ কিচ্ছু নেই। শুধু করুনা হচ্ছে। ভারি মায়া হচ্ছিল তার উপর। বারবার মনে পড়ছিল বিয়ের দিনটির কথা। বারবার মনে হচ্ছিল এই মানুষটিকে সে একদিন নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবেসেছিল। সব খুঁটিনাটি কথা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। খুব খুব খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। কিন্তু কিইবা করবে। একমাত্র ভগবানকে ডাকা ছাড়া আর কিছুই তো করার নেই । হে ঈশ্বর ফিরিয়ে দিয়ে যাও এখনও যাওয়ার সময় হয়নি তার। তাকে যাওয়ার অনুমতি আমি দিতে পারব না। ঈশ্বরকে মনে প্রাণে ডাকতে পারলে সে সাড়া দেয় সেদিন বুঝেছিলাম। ঈশ্বর হার মানলো। ডক্টরবাবু বলে গেলেন এখন আর ভয় নেই। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরছে। যাক এতক্ষণ প্রাণ আটকে ছিল গলায় এখন যেন ঠিক মতো নিঃশ্বাস নিতে পারল মৃন্ময়ী। আঙুলগুলো নড়ে উঠলো কিংসুকের সে কি আনন্দ মৃন্ময়ীর। আনন্দে দুচোখের পাতা ভিজে উঠলো নিজের অজান্তেই। সে যাত্রা বেঁচে উঠল কিংসুক। 

-- এতো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলে হাত? এখনও কত কাজ রয়ে গেছে বাকি...

--- তুমি করবে। জানি তো তুমি পারবে।

---একদম পারব না। একসঙ্গে শুরু করেছি পথ চলা এক সঙ্গেই শেষ করব। 

--- কি করব বল? মাথা ঠিক থাকে না। মনে হয় মৃত্যুই একমাত্র সুখের চাবিকাঠি। 

--- এতো দায়িত্ব আমার মাথায় চাপিয়ে তুমি সুখ খুঁজতে আত্মহত্যা করতে চাইছিলে? কত স্বার্থপর তুমি।

---না গো আমি স্বার্থপর ন‌ই। আমি বেঁচে থেকেই বা কি করতে পারছি? ওষুধ খাচ্ছি আর কষ্ট ভোগ করছি।

--- শরীরের কষ্ট সকলের‌ই কিছু না কিছু থাকে। এই ধরনের আজে বাজে কথা আর মাথায় এনো না। মাথার উপর থেকে ছাতাটা সরিও না বাইরে যে ভয়ঙ্কর রোদ্দুর!

--- মেয়ের বিয়েটা দিতে হবে। শরীরের যা পরিস্থিতি কখন কি হয় কিছুই বলা যায়না।

--- আবার আজে বাজে কথা?

--- আচ্ছা বলছি না। যতদিন পারি রোদ্দুর আটকাই।

        তার ইচ্ছে অনুযায়ী মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলো। মেয়ের বিয়েতে যদিও সে কিছু করতে পারেনি তবে পাশে পাশে থেকেছে। এটুকুই অনেক।

 ক্রমশ ……


২৭তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার । 

লেখিকার পরিচিতি –

মনীষা কর বাগচী বিয়ের পর দিল্লিতে আসেন। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে সবুজে শ্যামলে ঘেরা নদীয়া জেলার মাঝেরগ্রাম নামক একটি গ্রামে।

স্কুল থেকেই লেখা লিখি শুরু  নিজের মনেই লিখে যেতেন কত কিছু। আজ সে সব লেখাগুলোও  হারিয়ে গেছে। লেখার অনুপ্রেরণা জোগান সেজোকাকা কবি নিশিকান্ত বাগচী

দেশে এবং বিদেশে অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়।  প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখেন  শ্রদ্ধেয় কাকু বিরাট বৈরাগ্যের সহায়তায় হরিচাঁদ ঠাকুরের গান লিখেছেন।  

এ পর্যন্ত লেখিকার নিচের আটটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

১ নীল দিগন্ত 

২ চোখের কোণে জল

৩ নূতন ভোর

৪ বসন্তরেণু

৫ শিউলি বেলার সুর

৬ বিবর্ণ বনলতা

৭ তপন বাগচী গভীর অনুধ্যান

৮ স্বপ্ন সফর (গল্প ব‌ই)

দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পথে।

১ শিমুলরঙা সূর্য