ধারাবাহিক উপন্যাস
লেখিকার অন্যান্যলেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
২৩তম পর্ব পড়তে
এখানে ক্লিক করুন ।
২৪তম পর্ব শুরু ………
চাকরির পরীক্ষা দিতে থেকেছি। অনেক বার পাশও করেছি। কখনও টাইপে কখনও অন্য কিছুতে আটকে গেছি। সেই যে আমার ভাগ্য লিখতে গিয়ে ঈশ্বরের কাছে আর কালি ছিল না যে। তবে এখন আর দুঃখ করিনা। জানি যা কিছু হয় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়। ঈশ্বর ছক কেটে রেখেছেন।নিজের কর্ম অনুযায়ী প্রতিটি আত্মাকে তার ফল ভোগ করতে হয়। দু এক বছরের মধ্যে কলকাতা ফিরে যাবে আমাকে কথা দিয়েছিল সেই দু এক বছর এখনও আসেনি। একথা ভেবে ভেবে আগে কষ্ট পেয়েছি এখন পাইনা। আমার ভাগ্যে ছিল আপনজন থেকে দূরে বসবাস করা। সে কি করবে?
সংসার ছেলে মেয়ে ইস্কুল করতে করতে এক সময় ভুলে গিয়েছিলাম যে আমার একটা আলাদা জগৎ আছে। যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন চারিদিকে বই এর পাহাড় ছিলো কিন্তু পড়ার সময় ছিল না। পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে উপন্যাস পড়তে গিয়ে কতবার ধরা পড়েছি আমার সোনা কাকার কাছে। বকাও খেয়েছি অস্বাভাবিক। যারপরনাই হেনস্থা হয়েছি। আর মনে মনে ভেবেছি যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখন তো আর পড়াশোনা থাকবে না তখন শুধু উপন্যাস পড়ব। কবিতা পড়ব। গল্প পড়ব। তখন কে জানত বিয়ের পর এমনভাবে আবদ্ধ হতে হবে কুহক জালে। রবি ঠাকুর, জসীমউদ্দীন, মাইকেল, শরৎ বাবু সবাই ছেড়েছেন আমার হাত। আমার ভালো লাগা ভালোবাসা সমূলে উৎখাত হয়েছে আমার জীবন থেকে। এলোমেলো ধূসর জীবন এভাবেই এগিয়ে চলছিল তাপ উত্তাপ হীন। একদিন কেউ আমাকে বললো ফেসবুক খোলো তোমার কাজে লাগবে। ফেসবুক কি তখন জানিনা। আমার এক স্টুডেন্ট কে বললাম বেটা ফেসবুক কি জিনিষ রে? সে আমাকে বুঝিয়ে বলল। এবং আমার একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিল। তার পর ধীরে ধীরে একটু একটু করে পড়তে শুরু করলাম। একটা দুটো কবিতা লিখলাম। আমার মেয়ে শিখিয়ে দিয়েছিল কেমন করে লিখতে হয়। যে বছর এন টি টি (নার্সারি টিচার ট্রেনিং) করেছিলাম সেই বছর সেখান কার বন্ধুরা ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছিল কিন্তু তখন তো কিছু বুঝিইনা। সে আইডি কবে কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে। ২০১৫ থেকে ফেসবুকে আছি। মাঝে কয়েক বার বন্ধও করতে হয়েছে। চরম অশান্তি হয়েছে কয়েকবার এই ফেসবুক নিয়ে। ভয়ে পেয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। আবার বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটু একটু পড়তে চেষ্টা করেছি। সে দিনগুলো ছিল আমার জীবনের অন্যতম ভয়ঙ্কর দিন, অন্ধকারময় দিন। সে ঠিক আছে। অন্ধকার ভেদ করে কখনো না কখনো আলো অবশ্যই বের হয়। একটু একটু করে সাহিত্য আমাকে পেয়ে বসে। ফেসবুক আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। ফেসবুকে খুব ভালো ভালো বন্ধু পেয়েছি যাদের অনুপ্রেরণা আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে। দীর্ঘ ২০-২৫ বছর পর আবার আমি আমার জোৎস্নার আলোয় ভিজছি। লিখছি, পড়ছি, ভালোবাসছি, আমার নিজের জগতে হাবুডুবু খাচ্ছি। সংসারের দায়িত্ব আগের মতই আছে কিন্তু কোনো চাপ নেই। নিজের জগতে এসে যেন পালকের মতো হালকা হয়ে গেছি। ফুরফুরে মেজাজে চলছি হাওয়াদের তালে তালে। দায়িত্ব পালন করতে কষ্ট হয় না এখন। যে মানুষ গুলো আমার লেখা লিখি অপছন্দ করে তারা জানে না তারা আমার কতটা ক্ষতি করেছে। তারা এখনও উপলব্ধি করতে পারেনা তাদের এই আচরণে আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি। যাক কারো উপর আমার আর কোনো রাগ নেই। ক্ষমা করেছি সব্বাইকে। আমার সেজ কাকা আমার কান্ডারী। ওনার হাত ধরে এই পর্যন্ত আসা। আমার মা বাবাকে আমার কাব্যগ্রন্থ "চোখের কোণে জল " উৎসর্গ করেছি। বাবার হাতে গ্রন্থটি তুলে দিলে তাঁর মুখে যে হাসিটুকু আমি দেখেছিলাম কোটি কোটি টাকা দিয়েও সেটা কেনা যায় না।
হঠাৎ চলে গেলেন আমার বাবা সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। এতো তাড়াতাড়ি ছাদহীন হব ভাবিনি কোনোদিন।
ক্রমশ ………
২৫তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার পরিচিতি –
মনীষা কর বাগচী বিয়ের পর দিল্লিতে আসেন। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে সবুজে শ্যামলে ঘেরা নদীয়া জেলার মাঝেরগ্রাম নামক একটি গ্রামে।
স্কুল থেকেই লেখা লিখি শুরু । নিজের মনেই লিখে যেতেন কত কিছু। আজ সে সব লেখাগুলোও হারিয়ে গেছে। লেখার অনুপ্রেরণা জোগান সেজোকাকা কবি নিশিকান্ত বাগচী।
দেশে এবং বিদেশে অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়। প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখেন। শ্রদ্ধেয় কাকু বিরাট বৈরাগ্যের সহায়তায় হরিচাঁদ ঠাকুরের গান লিখেছেন।
এ পর্যন্ত লেখিকার নিচের আটটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
১ নীল দিগন্ত
২ চোখের কোণে জল
৩ নূতন ভোর
৪ বসন্তরেণু
৫ শিউলি বেলার সুর
৬ বিবর্ণ বনলতা
৭ তপন বাগচী গভীর অনুধ্যান
৮ স্বপ্ন সফর (গল্প বই)
দু’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পথে।
১ শিমুলরঙা সূর্য