Advt

Advt

Probohaman-story-upannyas-23rdpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

 

Probohaman-story-upannyas-23rdpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

নীচের লেখার অডিও শুনতে ওপরে অডিও আইকনে ক্লিক করুন ।

২২তম পর্ব পড়তেএখানে ক্লিক করুন ।

লেখিকার অন্যান্যলেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

২৩তম পর্ব শুরু ……

সময় পাল্টে দেয় অনেক কিছু

কিংসুক মানুষ হিসেবে মন্দ নয়। কোনো রকম নেশা ভাঙ করে না। চরিত্র ভালো। বয়সে আমার থেকে বেশ একটু বড়। সেই কারণেই বোধহয় প্রভূত্বটা একটু বেশিই ফলাতে চায়। আমাকে এতোটাই আগলে রাখতে চাইতো যে ধীরে ধীরে আমার কেমন অসহ্য হয়ে উঠছিল। বন্ধুরা বলতো সে তোকে অত্যাধিক ভালোবাসে তাই অমনটা করে। ভয় পায় বৌ যদি হারিয়ে যায়? যদিও কথাটা ওরা ইয়ার্কির ছলে বলত কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সত্যিই আমি চিন্তা করতাম। 

সবথেকে প্রথম আমি তার ব্যবহারে কষ্ট পাই সেদিন যেদিন সে আমাকে বি এ পরীক্ষায় বসতে মানা করে। তার মতে, "বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর পড়াশোনা করে কি হবে? সংসারের কাজ কর্ম শেখো।" খুব কান্না করেছিলাম সেদিন সারারাত। আবার একদিন কষ্ট পেলাম যেদিন হারমোনিয়াম কিনতে চেয়ে বকা খেলাম। "এসবের আর কি দরকার?" এই হলো তার কথার শ্রী। পরে অবশ্য নিজে ইনকাম করে হারমোনিয়াম কিনেও ছিলাম। মেয়েকে গান‌ও শিখিয়েছিলাম। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলাম। পাস‌ও করলাম। আমার জেঠু সেদিন প্রথম আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। " আমার বংশের প্রথম মেয়ে গ্রাজুয়েট হলো বললেন।" ওনার সে কি খুশি! গর্বের আলো দেখেছিলাম আমার বাবার চোখেও। আমার আরও অনেক পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ঐ যে বললাম ভাগ্য বলে কিছু একটা আছে। আমার মন চায় আবারো পড়াশোনা শুরু করি। আমার ছেলে মেয়েকে বলি আমি আবার পড়াশোনা শুরু করব দেখিস। তোরা যে কেন পড়তে চাসনা বুঝিনা বাপু। ছেলে মেয়ে হাসে। বলে পড়। পড়ার কোনো বয়স হয় না।

আমার স্বপ্নে যে রাজ কুমার ছিল। সে ময়ূরপঙ্খী চড়ে আসত না। তার কোনো রাজমহল‌ও ছিল না। সে ছিল মাটির মানুষ। মাটির কোল ঘেঁষে বেড়ে ওঠা ভারি সাধারণ চেহারার একটি অসাধারণ পুরুষ। সে ছিল ধীর স্থির শান্ত। তার দুটি চোখ জুড়ে ছিল শান্ত স্নিগ্ধ স্বচ্ছ ঝিলের গভীরতা। তার কন্ঠে  রবীন্দ্রসঙ্গীত নেচে বেড়াতো অহরহ। কখনও বৈকালে কখনও রাত দুপুরে কখনও গোধূলি বেলায় তার কাঁধে মাথা রেখে আমি শুনব আমার প্রিয় রবিঠাকুরের গান। আমার সকল মন খারাপের বেলায় সে আমার পাশে পাশে থাকবে। তার স্পর্শ ভুলিয়ে দেবে আমার সকল যন্ত্রণা। তার সুর আমার সমস্ত শিরা উপশিরায় মিশে বয়ে আনবে অনাবিল আনন্দ ধারা । তার হাসিমাখা মুখে আমি দেখব আমার স্বর্গ। কতো কল্পনা‌ইতো এভাবে ঝরে গেছে বসন্তের শেষে। নূতন কিশলয়ের সম্ভাবনা আসেনি কখনও।

কিংসুক আর আমি  দুই মেরুতে অবস্থান করছি। সে বেশি বলতে ভালোবাসে। আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলা পছন্দ করিনা। সে বাড়িয়ে চাড়িয়ে বলতে ভালোবাসে আমি সত্যি টুকুও বলতে লজ্জা পাই। আমি কবিতা ভালোবাসি। সে কবিতা বোঝে না এবং কবিতা নিয়ে বাড়াবাড়ি (তার ভাষায়) করাটাও পছন্দ করে না। আমার শ্বশুর বাড়িতে মোটামুটি সবারই একটা ধারনা যারা গান বাজনা করে বা যারা কবিতা টবিতা লেখে এদের চরিত্র ভালো হয়না। যাক সে সব কথা কারো ভাবনা কে তো আমি বদলাতে পারি না। যাই হোক এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকটি বছর।

ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম মানুষটি সে ভালো। আমাকে ভালোও  বাসে। কিন্তু রেগে গেলে কান্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে। আমার গায়ে হাত উঠাতেও বাধেনি তখন তার। আমি তখন ফিনিক্স পাখি হয়ে গেছি। ছাই হয়ে উড়ে গেছি আকাশে নতুবা বসুমতী দ্বিধা হয়েছে আমি প্রবেশ করেছি পাতালে। তবুও হিম্মৎ হারিনি। মা বাবা কাকাদের জানতে দিইনি কিছু। সব ঠিক হয়ে যাবে এই অপেক্ষায় রয়েছি বছরের উপর বছর। আরও পরে জেনেছি ওর ব্রেনের একটু সমস্যা আছে। ট্রিটমেন্ট শুরু হ‌ওয়ার আগে পর্যন্ত ভয়ঙ্কর উৎকণ্ঠায় কেটেছে আমার দিন রাত। কি জানি কখন কি হয়। সেই সময় শ্বশুর বাড়ির সবাই আমার সাথে ছিলেন। আমার দেবরেরা আমার বন্ধুর মতো। সুবিধা অসুবিধা বিপদে আপদে ওরা আমার পাশে থেকেছে। এবং এখনও থাকে। তবে ওদের সবার‌ই ধারনা ঘরের বউ ঘরেই মানায় বাইরে বের হতে নেই। যাই হোক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টে যায়। আমি ও পাল্টে গেছি। এখন আর লাউলতাটি ন‌ই আমি। কারো সাহারা ছাড়া ভেঙে পড়ার ভয় পাই না। কারো ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখলে খাটের তলা খুঁজি না লুকানোর জন্য। বেশ তো হলো ভয় ভয় খেলা। রুখে দাঁড়াতে শিখে গেছি এখন।

একটা সময় চরম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। অর্থনৈতিক প্রব্লেম। আমার জীবনে এমন পরিস্থিতি কখনও আসতে পারে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। সেই কারণেই বলি কোনো কিছুতেই অবাক হ‌ওয়া উচিৎ নয়। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। ব্যাবসায় উত্থান পতন লেগেই থাকে।  একটা সময় এমন পরিস্থিতিতে পড়লাম ঘরে একটা পয়সা নেই। আমার ভীষণ শরীর খারাপ ডাক্তারের কাছে না গেলেই নয়। ঠিক মতো কথা বলতে পারছিনা। গলা শুকিয়ে আসছে। জিভ আটকে আসছে। কি করা যাবে? ওর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। আমি আমার একটা আংটি বিক্রি করলাম পাশের বাড়ির এক দিদির কাছে। তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় আমাকে। সত্যি কথা বলতে কি আমরা খুব বড়লোক ন‌ই। তবে খাওয়া পড়ার  কষ্ট  পাইনি কখনও। এই পরিস্থিতি দেখে ভয় পেয়েছিলাম খুব। তার পর থেকে আর বসে থাকিনি। বুঝে গেছিলাম ছোট মেয়ে হয়ে থাকার দিন ফুরিয়েছে এখন বড় হতে হবে।  সে খুব বেশি পরিশ্রম করতে পারে না তাই পরিশ্রম আমাকেই করতে হবে। 

শুরু হলো নতুন জীবন। আরও একবার জন্ম হলো আমার। পরিশ্রম আর পরিশ্রম। যেটুকু সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছি সেটুকু সময় ছাড়া অন্য সবটুকু সময় কাজ করেছি। একটা এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সোয়েটার বানিয়েছি। টিপ বানিয়েছি। নানা রকম ঘর সাজানোর সাজসরঞ্জাম তৈরী করেছি। আমার সোয়েটার ওনাদের ভীষণ পছন্দ হতো। আমার সোয়েটার একজিবিশনে নিয়ে যেতেন। নিজের জীবন থেকে শিখেছি ইম্পসিবল বলে কিছু হয় না। মানুষ চাইলে সবকিছু করতে পারে। হিন্দির '' না জেনে এতো কিছু করা শুধু সেটাই নয় সেই ভাষাতে শিক্ষকতা করা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ১২ বছর একটা স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। ক্লাস এইটের হিন্দিও পড়িয়েছি। ১৪ বছর হয়ে গেছে নিজে স্কুল খুলেছি। সঙ্গে সঙ্গে টিউশনও পড়াচ্ছি। সেই থেকে চলছি আর চলছি। যতক্ষণ চলবে শ্বাস ততক্ষণ থামবে না পথ চলা। টাইপিং শিখেছি। পেইন্টিং শিখেছি। শেলাই শিখেছি। বিউটিশিয়ান কোর্স করেছি। এন টি টি করেছি। সবকিছু ঠিকঠাক কাজে লাগিয়েছি।

 ক্রমশ …………

২৪তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার ।

লেখিকার পরিচিতি –

মনীষা কর বাগচী বিয়ের পর দিল্লিতে আসেন। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে সবুজে শ্যামলে ঘেরা নদীয়া জেলার মাঝেরগ্রাম নামক একটি গ্রামে।

স্কুল থেকেই লেখা লিখি শুরু  নিজের মনেই লিখে যেতেন কত কিছু। আজ সে সব লেখাগুলোও  হারিয়ে গেছে। লেখার অনুপ্রেরণা জোগান সেজোকাকা কবি নিশিকান্ত বাগচী

দেশে এবং বিদেশে অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়।  প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখেন  শ্রদ্ধেয় কাকু বিরাট বৈরাগ্যের সহায়তায় হরিচাঁদ ঠাকুরের গান লিখেছেন।  

এ পর্যন্ত লেখিকার নিচের আটটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

১ নীল দিগন্ত 

২ চোখের কোণে জল

৩ নূতন ভোর

৪ বসন্তরেণু

৫ শিউলি বেলার সুর

৬ বিবর্ণ বনলতা

৭ তপন বাগচী গভীর অনুধ্যান

৮ স্বপ্ন সফর (গল্প ব‌ই)

দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পথে।

১ শিমুলরঙা সূর্য