Advt

Advt

Probohaman-story-upannyas-21stpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।

Probohaman-story-upannyas-21stpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

 

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

২০তম পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

২১তম পর্ব শুরু ……………

অনেক বার জন্ম হয়


মায়ের হাত ধরে যখন এই পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম তখন প্রথম বার জন্ম হলো। তার পর বহু বার জন্ম হয়েছে। মানুষ যখন প্রথমবার স্কুলে যায় তখন একবার জন্ম হয়। যখন কলেজ লাইফে প্রবেশ করে তখন একবার জন্ম হয়। যখন প্রথম প্রেমে পড়ে তখন একবার জন্ম হয়। শৈশব ছেড়ে কৈশোর, কৈশোর ছেড়ে যৌবনে যখন পা রাখে তখন তখন জন্মহয়। বিয়ের পর মেয়েরা যখন শ্বশুর বাড়িতে একেবারে অন্য পরিবেশে নিজেকে ঢেলে নূতন করে গড়ে তোলে তখন একবার জন্ম হয়। যখন প্রথম মা হয় তখন একবার তার জন্ম হয়।  মেয়ে জীবনে বহুবার জন্ম হতে দেখেছি নিজের চোখে।

যে মানুষটির হাত ধরে নূতন জীবনে প্রবেশ করলাম। সে আমাকে প্রথম দর্শনেই ভালোবেসে ফেলেছিল। আমাদের বাড়ি থেকে এ বিয়েতে সকলের সম্মতি ছিল না। খবর পেয়ে মানুষটি বলে বসল "বিয়ে করব তো এই মেয়েকে তা না হলে আর বিয়েই করব‌ না।"  শুনে বড় দয়া হলো।  প্রথমে অমত থাকলেও পরে মন খানিকটা শান্ত হলো। মনকে বোঝালাম যে এতো ভালোবেসেছে  ঠিক মতো আমাকে না জেনে। সে  হয়তো ঠকাবে না। জীবন তরী ঠিক মতো চলবে। হাল সে শক্ত করে ধরবেই। কোনো মতেই ডুবতে দেবে না তরী যত‌ই ঝড় তুফান উঠুক।

বড় ভাসুরের ব্যবহার‌ও মুগ্ধ করেছিল আমাকে। ভদ্রলোক আমাকে তাঁর ভাতৃবধূ রূপে দেখার জন্য দীর্ঘ এক বছর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর ঘরের গৃহলক্ষ্মী হ‌ওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন আমাকে অপার স্নেহ দিয়েছেন। আমার জীবনের সুখ দুঃখের কথা তাঁকে জানানো হয়নি কোনোদিন। ভালোই হয়েছে আমার জীবনযুদ্ধের এলোপাথাড়ি গাঁথা তাঁকে শুনে যেতে হয়নি। জানলে তিনি  ভীষণ কষ্ট পেতেন। আমার জীবনের সবথেকে বড় আঘাত আমি পেয়েছি আমার ভাসুরের হত্যা হ‌ওয়ায়। জলজ্যান্ত মানুষটিকে প্লাটফর্মের উপর গুলি করে মেরে দিল? ট্রেন ঢুকছে তখন। এক প্লাটফর্ম মানুষের সামনে সক্কালবেলা অস্ত গেল আমাদের সূর্য । সিংহ গর্জন করার‌ও সময় পেল না। ভাবলে এখনও পায়ের তলায় মাটি থাকে না।

বড়দা

বড় অসময়ে ছেড়ে গেলেন সাথ

বলেছিলেন, "ভয় নেই

আমি আছি

হাতে করে এনেছি রাখব পুতুল করে!"


"ঝড় ঝঞ্ঝা আমাকে পেরিয়ে পৌঁছাবে না তোমার চৌকাঠ"

বিশ্বাস করেছিলাম

করেছিলাম বিশ্বাস।


আপনাকে লক্ষণ রেখা ভেবে নিশ্চিন্তে চলেছি পথ

এমন অবেলায় চলে যাবেন ভাবিনি কোনদিন।

নরভক্ষীর দল মুছে দিল রেখা

মাথার উপর র‌ইল না ছাদ!


আবার একবার অনাথ হলাম

অস্তগামী সূর্যের দিকে তাকালে

 এখনও কাঁপে হাত

বড় অসময়ে ছেড়ে গেলেন সাথ।।


ভালো থাকবেন সেই দুনিয়ায় 

এই কথা ছাড়া কিইবা বলতে পারি আর।

 

ক্রমশ ……………

২২তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার ।

 লেখিকার পরিচিতি –

মনীষা কর বাগচী বিয়ের পর দিল্লিতে আসেন। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে সবুজে শ্যামলে ঘেরা নদীয়া জেলার মাঝেরগ্রাম নামক একটি গ্রামে।

স্কুল থেকেই লেখা লিখি শুরু  নিজের মনেই লিখে যেতেন কত কিছু। আজ সে সব লেখাগুলোও  হারিয়ে গেছে। লেখার অনুপ্রেরণা জোগান সেজোকাকা কবি নিশিকান্ত বাগচী

দেশে এবং বিদেশে অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়।  প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখেন  শ্রদ্ধেয় কাকু বিরাট বৈরাগ্যের সহায়তায় হরিচাঁদ ঠাকুরের গান লিখেছেন।  

এ পর্যন্ত লেখিকার নিচের আটটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

১ নীল দিগন্ত 

২ চোখের কোণে জল

৩ নূতন ভোর

৪ বসন্তরেণু

৫ শিউলি বেলার সুর

৬ বিবর্ণ বনলতা

৭ তপন বাগচী গভীর অনুধ্যান

৮ স্বপ্ন সফর (গল্প ব‌ই)

দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পথে।

১ শিমুলরঙা সূর্য

২ দেখা হত যদি