ধারাবাহিক
উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার
১৯তম পর্বটি পড়তেএখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার অন্যান্যলেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
২০তম পর্ব শুরু ………
জীবন চলে তার নিজের গতি পথে। পার হয়ে যায় মরু, প্রান্তর, ঝড়, জল, নদী, খাল, বিল। আমরা অভিনেতা অভিনেত্রী অভিনয় করে চলি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। অভিনয় জানি বা না জানি তাঁর ইশারায় অভিনয় করতেই হয়। মা, বাবা, ভাই, বোন, ঠাম্মা, ঠাকুর ভাই, কাকা, কাকিমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে এলাম অনেক দূরে। ছোট ছোট মা মরা দুটো বাচ্চাকে রেখে এলাম পিছনে। তাদের আমি মা ছিলাম। তারাই ছিল আমার প্রথম সন্তান। সব কিছু ভুলে যেতে পারলেও তাদের ভুলব কেমন করে? তাদের কান্না ভেজা দুটো চোখ আমার বালিশকে শুখতে দিত না। অত বড় ফ্যামিলি থেকে এসে এই আত্মীয় বান্ধব বর্জিত দেশে কীভাবে বাঁচি? ঈশ্বরের উপর বড় অভিমান হতো। মা বাবার উপর অভিমান হতো। নিজের ভাগ্যের উপর ভরসা করতে ভয় পেতাম। একা, সম্পূর্ণ একা মনে হতো নিজেকে। মনে হতো সাহারা মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। দূর দূরান্ত পর্যন্ত কেউ কোত্থাও নেই।
ফেলে এলাম সাহিত্য প্রেম, হারমোনিয়াম, রঙতুলি। ফেলে এলাম প্রিয় মানুষ, প্রিয় মাঠ ঘাট, প্রিয় গাছ পালা। পিছনের সুখ দুঃখ হাসি কান্নায় ভেজা পৃষ্ঠাগুলি ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে পদার্পণ করলাম নতুন অধ্যায়ে। সংসার বুঝতে না বুঝতে মা হওয়ার অমূল্য সুখদ অনুভূতি অনুভব করলাম। জীবনের খুঁটিনাটি বুঝে ওঠার আগেই প্রচণ্ড শরীর খারাপ নিয়ে ডক্টর জেঠুর কাছে গেলাম। ডক্টর জেঠু বললেন তুমি মা হতে চলেছ। সেই মুহুর্তটুকু আমার জীবনের সবথেকে মূল্যবান মুহূর্ত। শরীরের সমস্ত কষ্ট যেন কোথায় উধাও হয়ে গেল এক নিমেষে। আনন্দে আত্মহারা তখন আমি। হাসব না কাঁদব গাইব না নাচব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল এই তো পেয়ে গেছি বেঁচে থাকার রশদ। ঈশ্বরের প্রতি আর কোনো অভিমান রইল না। আমাকে বাঁচতে হবে। ভালো থাকতে হবে। আমার নতুন অতিথিকে বরণ করার জন্য আমাকে বাঁচতে হবে। বেঁচে উঠলাম।
কোনো এক শুভক্ষণে
আমার কোল জুড়ে নেমে এলো আমার রত্ন। আমার আকাশে তখন ঝলমলে আলো। কোথাও কোনো ক্লেদ
নেই নেই কোনো কালিমাও। মন প্রাণ জুড়িয়ে দিল তার ছোট্ট ছোট্ট দুটি চোখ। সে যে
আমার জগৎ, আমার আশা, আমার
জোৎস্না। আমারই অংশ সে। ছোট্ট টিয়া।
আমার মেয়ে
প্রথম যেদিন তুই মায়ের কোল
আলো করেছিলি
তোর ফুটফুটে
মুখটি মায়ের বুকে
ফুটিয়েছিল অসংখ্য
শতদল ।
এক অজানা আনন্দে
ভরে উঠছিলো
মায়ের সকল মন
প্রাণ।
এক আকাশ স্নিগ্ধ
মধুর হাসি
মাধুর্য্য
ছড়িয়েছিল তার
সমস্ত অধরমন্ডলে।
সমস্ত সূর্যের
আলো ঠিকরে
পড়েছিল মায়ের সমস্ত শরীরে
আলোকময় হয়েছিল
মায়ের
ত্রিভূন........।
কেন জানিস?
কেনকি সে তোর
মধ্যে দেখেছিল
তার বন্ধুকে, তার
সুখ দুঃখের সাথীকে
তার ভালবাসাকে, তার
সব থেকে
আপন মানুষটি কে।
সে তোর মধ্যে
দেখেছিল তার মা কে,
সারা জীবন তার মা
হয়ে থাকিস মা...
তার মা হয়ে
থাকিস সারাটিজীবন।
যার হাত ধরে এসেছিলাম তাকে একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষকে তাদের যোগ্য সম্মান দিয়েছি। ভালোওবেসেছি অপরিসীম। তাঁদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছিও যথেষ্ট। সংসারকে ভালোবেসে দুঃখ কষ্টকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। দুটো সন্তানের মা হলাম। তাদের আঙুল ধরে চলতে শেখালাম। একটু একটু করে চোখের সামনে বেড়ে উঠলো কলি দুটি। চাঁদের হাট সামলে উঠতে উঠতে ফুরিয়ে যেত দিন। এই জীবনে ছিল শুধু পরিশ্রম আর পরিশ্রম। ছেলে মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য পরিশ্রম। না চিন্তা করার সময়, না স্বপ্ন দেখার সময়, না সাহিত্য চর্চার সময় ছিল তখন আমার কাছে। দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছি তখন শুধু।
ক্রমশ ………………
২১তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার ।
লেখিকার পরিচিতি –
মনীষা কর বাগচী বিয়ের পর দিল্লিতে আসেন। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে সবুজে শ্যামলে ঘেরা নদীয়া জেলার মাঝেরগ্রাম নামক একটি গ্রামে।
স্কুল থেকেই লেখা লিখি শুরু । নিজের মনেই লিখে যেতেন কত কিছু। আজ সে সব লেখাগুলোও হারিয়ে গেছে। লেখার অনুপ্রেরণা জোগান সেজোকাকা কবি নিশিকান্ত বাগচী।
দেশে এবং বিদেশে অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়। প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখেন। শ্রদ্ধেয় কাকু বিরাট বৈরাগ্যের সহায়তায় হরিচাঁদ ঠাকুরের গান লিখেছেন।
এ পর্যন্ত লেখিকার নিচের আটটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
১ নীল দিগন্ত
২ চোখের কোণে জল
৩ নূতন ভোর
৪ বসন্তরেণু
৫ শিউলি বেলার সুর
৬ বিবর্ণ বনলতা
৭ তপন বাগচী গভীর অনুধ্যান
৮ স্বপ্ন সফর (গল্প বই)
দু’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পথে।
১ শিমুলরঙা সূর্য
২ দেখা হত যদি