Advt

Advt

Thomas Alva Edison, Jana Ajana, by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik digital, bengali online, bangla web, e magazine, থমাস আলভা এডিসন


Thomas Alva Edison, Jana Ajana, by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik digital, bengali online, bangla web, e magazine, থমাস আলভা এডিসন

 

উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে (১৮৮৯) ফরাসি দেশের রাজধানী প্যারিসে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শণিতে একটি পুরো বিভাগে দর্শকদের প্রচণ্ড ভীড়।আবাল বৃদ্ধ সকলে চায় ওই তাবুতেই ঢুকতে।কি ছিল ওই বিশেষ তাবুতে? একটি একক আবিষ্কারকের আবিষ্কারের প্রদর্শনী।আবিষ্কারক ? থমাস আল্ভা এডিশন। আবিষ্কারককে এই প্রদর্শণিতে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষ ভাবে আমন্ত্রন করা হয়েছিল।সন্ধ্যায় এক বিশেষ ভোজনানুষ্ঠানে এক বক্তা বলেছিলেন,“এডিসন এত সব দরকারি জিনিষ আবিষ্কার করেছিলেন যে বাকী কারও জন্যে আর নতুন কিছু আবিষ্কারের স্থানই ছেড়ে দেন নি”। সত্যিই প্রায় তাই।এই একটি মানুষই তাঁর জীবনকালে ইলেকট্রিক বাল্ব থেকে শুরু করে ফোনোগ্রাফ,কাইনেটোস্কোপ,ডিক্টাফোন,কার্বন মাইক্রোফোন ইত্যাদি ইত্যাদি।সারা জীবনকালে আমেরিকাতে ১০৯৩ টি আর সারা পৃথিবীতে ৫১২টি পেটেন্ট করেছিলেন।এ এক অভুতপুর্ব সংখ্যায মৌলিক আবিষ্কার বা উন্নতিকরণ।

মাত্র ১১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম আবিষ্কার শুরু করেন আর শেষ করেন ৮৪ বছর বয়সে-মৃত্যুর কয়েকদিন আগে;তখন তিনি প্রায় সম্পূর্ণ বধির।

এগারোই ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার ওহাইও প্রদেশের মিলান নামক স্থানে এডিসন জন্মগ্রহন করেছিলেন।ছেলেবেলা থেকেই থমাস ছিলেন ভীষণ দুর্বল আর রুগ্ন দেহ ওর স্বাস্থ্য নিয়ে মা-বাবার চিন্তার অন্ত ছিল না। রুগ্ন হলেও সব ব্যপারেই ছিলেন অনুসন্ধিৎসু,কি কেন এই সব প্রশ্ন তার মনকে সদাই ব্যস্ত করে রাখত আর আশে পাশের সবাইকে প্রশ্ন করে উত্তক্ত করত।অন্য কারও কাছে থেকে উত্তর না পেলে নিজেই খোঁজ শুরু করতেন এবং উত্তর বের করেই ছাড়তেন।ছোট ছোট জন্তু-জানোয়ার সম্মন্ধে জানার জন্য নিজেই ব্লেড চালিয়ে ওদের খন্ড-বিখণ্ড করে ওর উত্তর খুঁজে নিতেন।

ওহাইও থেকে এডিসান পরিবার ১৮৫৪ তে চলে গেলেন মিশিগান প্রদেশে।সেখানে থমাসকে স্থানিয় একটি স্কুলে ভর্তি করানো হল। কিন্তু স্কুলের শিক্ষক থমাসের অন্তহীন প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে বিরক্ত বোধ করতেন।তিনি থমাসের অসীম অনুসন্ধিৎষু মনের পিপাসা মিটাতে অক্ষম ছিলেন। মাত্র তিনমাস গিয়েছিলেন থমাস ওই স্কুলে। থমাসের মা যিনি নিজেই ছিলেন একজন শিক্ষিকা ঠিক করলেন থমাসকে তিনি নিজেই বাড়িতে বসে পড়াবেন। এতে করে থমাসেরও ভাল হল-স্কুল যাওয়া আসার সময়টা বেঁচে গেল।এগারে বছর বয়সে বাড়ির চিলেকুটিরে বানালেন নিজের লেবরেটরি।এক বছরের মধ্যেই বানালেন একটি সাধাসিধে টেলিগ্রাফ যন্ত্র। মাত্র বারো বছর বয়সে গ্র্যান্ড-ট্রাঙ্ক রেলওয়ের ডেট্রয়েট থেকে পোর্ট হুরনগামী ট্রেনে খবরের কাগজ ফেরী করার কাজ করতে আরম্ভ করলেন। সময় বাঁচাবার জন্য ট্রেনেই একটি কারখানা আর গবেষণাগার স্থাপনের জন্য অনুমতিও আদায় করলেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।এতে করে ওর খুব সুবিধা হল-ট্রেনে যাতাযাতের মাঝেই পড়াশুনা,নোট নেওয়া আর ছোট খাটো নীরিক্ষা চলতে লাগল।

আমেরিকার ;সিভিল-ওয়ার শুরু হয়ে গেল ১৮৬১ তে।থমাস এই সু্যোগে যুদ্ধের খব্র পরিবেশন করবার জন্য একটি ছোট খবরের কাগজ প্রকাশ করতে আরম্ভ করল্রন ট্রেন বসেই।মাত্র ১২ ডলার খরচ করে একটি পুরানো ‘হাতে-ছাপা’ ছাপাখানা কিনে সেটিকে প্রয়োজন মাফিপ অদল-বদল করে নিয়ে ছোট একটি ছাপাখানা তৈরি করে যুদ্ধের খবর ছাপাতে আর বি্লি করতে লাগলেন।শুরু হয়ে গেল, “গ্র্যাণ্ড-ট্রাংক হেরাল্ড” খবরের কাগজ।এই প্রথম রেল গাড়িতে ছাপা খবরের কাগজ শুরু হয়ে গেল।কাগজের খরিদ্দার প্রায় ৪০০জন জুটে গেল,বেশির ভাগই রেল-কর্মী।এই সময়ই একটি বিশ্রি দুর্ঘটনায় থমাস চিরতরে ‘বদ্ধ-কালা’ হয়ে গেলেনঃনখবরের কাগজ বিক্রি করার জন্য একটি স্টেশনে নেমেছিলেন,কখন ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে খেয়াল ছিল না।পরে দেখলেন গাড়ি ইতিমধ্যেই চলতে আরম্ভ করেছিল।থমাস দৌড়াতে আরম্ভ করলেন;গাড়িতে ছিলেন একজন রেল-কর্মী,যিনি দেখতে পেলেন থমাস দৌড়াচ্ছে কিন্তু উঠতে পারছেন না কারণ থমাসের দুই হাত বোঝাই ছিল খবরের কাগজে। ট্রেন-কর্মী ওকে তুলে নেবার জন্য হাত বাড়ালেন কিন্তু থমাসের হাত ত খবরের কাগজে বোঝাই-ধরবেন কোথায়? ওদিকে গাড়ি আরও জোরে চলতে শুরু করলে রেল-কর্মী দু’হাত বাড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করলেন; কিন্তু ধরলেন থমাসের কান দুটিকে। সেই যে আঘাত পেলেন কানে পরবতীকালে তার ফলে উনি সম্পুর্ণ বধির হয়ে গিয়েছিলেন।

এরপর এক বন্ধুসম স্টেশন-মাস্টারের সৌজন্য টেলিগ্রাফি শিখলেন।কিছুদিনের মধ্যেই রাত্রের টেলিগ্রাফ অপারেটরের চাকরি পেয়ে গেলেন। এতে থমাসের খুব সুবিধা হল-রাত্রে কাজ ও পড়াশুনো আর দিনের বেলায় নিজের নতুন নতুন আবিষ্কারের পরীক্ষা নিরীক্ষা।কিন্তু এতে সারাদিনে ঘুমের সময় কমে যেতে লাগল।ঘুমের সম্য বাড়াবার জন্য টেলিগ্রাফ মেসিনে এমন ব্যবস্থা করলেন যাতে আপনা থেকেই ‘অল-ওকে’ মানে ‘সব-ঠিক হ্যায়’ বলে মেসেজ যেতে লাগল।এর ফলে কাজের টেবিলেই একটু ঝিমিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু ভাগ্য বিপরিত-একরাতে ওঁর চালাকি ধরা পড়ে গেলে চাকরিটা গেল। এবার পুরো ‘বেকার’ হয়ে এখানে সেখানে ঠিকা কাজ করে পেট চালাতে লাগলেন।এত কষ্টের মাঝেও থমাসের উর্বর মস্তিষ্ক কিন্তু চুপ করে বসে থাকত না।পড়া-শুনো আর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে থাকল।বোস্টনে থাকাকালিন ১৮৬৮ সালে তৈরি করলেন একটি স্বয়ংক্রিয় ভোট রেকর্ড করার যন্ত্র। ওটার পেটেন্ত বানিয়ে ফেললেন তক্ষুণি।

পরের বছর চলে গেলেন নিউইয়র্কে। সেখানে বেশ কিছুকাল বেকার থাকার পর চাকরি পেলেন একটি প্রাইভেট স্টক-এক্সেঞ্জের টেলিগ্রাফ অফিসে।এখানেও নতুন নতুন উপায় আবিষ্কার করে একই সঙ্গে অনেক মেসেজ পাঠাবার কৌশল(ডুপ্লেক্স) বের করে ফেললেন।আবার কয়েকটি পেটেন্ট বানিয়ে ফেললেন।এই ডুপ্লেক্স মেশিনটি একসঙ্গে অনেক স্তক-এক্সচেঞ্জ খবর পাঠানো যেত। মেসিনটি দেখালেন একটি বড় স্টক-এক্সচেঞ্জ কোম্পানির প্রেসিডেন্টকে। ভাবলেন এর জন্য হাজার তিনেক ডলার নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন। স্টক-এক্সচেঞ্জের ‘বস’ এর মেসিনটি খুব পছন্দ হয়েছিল,জিজ্ঞেস করলেন,”কত ডলার আশা করছ?”

থমাস বিনিত ভাবে পালটা প্রশ্ন করলেন, “কত দেবেন স্যার”?

একটু ভেবে প্রেসিডেন্ড বললেন, “ আমি চল্লিশ হাজার দেব”।

থমাস চমকে উঠলেন, চল্লিশ হাজার ডলার! তখনকার চল্লিশ হাজার ডলার এক অকল্পনীয় সংখ্যা-কয়েকটা ‘ডার্বি’ লটারীর সমান! ওই টাকা দিয়ে থমাস নিউ-জার্সির বর্তমান এয়ারপোর্টের কাছে ‘নেওয়ার্ক’এ স্থাপন করলেন নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা কেন্দ্র। তারপর ১৮৭৬এ ও অঞ্চলের ‘মেলনো পার্ক’এ স্থাপন করলেন নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা ও গবেষণা কেন্দ্র।

এতদিনে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল থমাসের-নামযশ আর অর্থ দুই আসতে লাগল ভূরু ভূরি। এখানে তৈরি হল রেমিংটন টাইপরাইটারের আদি সংস্করণ। তারপর ফোনোগ্রাফ,গ্রামাফোন,চলচ্চিত্র প্রক্ষেপক যন্ত্র বা ‘মোশান পিকচার প্রোজেক্টার’ ইত্যাদি যুগান্তকারী আবিষ্কার হতে লাগল একের পর একঃ ১৮৭৯ সালে এসে গেল লাইট-বাল্ব আর ১৮৮২ তে নিউইয়র্কে এলো বিদ্যুৎ উৎপাদন আর বিতরনের কেন্দ্রিয় স্টেশন। থমাস আলভা এডিসন জীবনভোর আবিশকার আর নতুন নতুন যন্ত্রপাতি তৈরি করে ১০৯৩টি পেটেন্ট করেছিলেন। এত বেশি পেটেন্ট আমেরিকার পেটেন্ট অফিস আর কারও নামে করান নি। এডিসন বলতেন, “প্রতিভা হচ্ছে ১ ভাগ সৃষ্টিশীল প্রেরণা আর ৯৯ ভাগ পরিশ্রম”। অর্থ,যশ ,নাম সব কিছু আসতে লাগল সারা পৃথিবী থেকে।তার সঙ্গে এলো অনেক নামীদামী পুরষ্কার। এদের মধ্যে একটি অসাধারণ পুরষ্কার ছিল আমেরিকার পার্লামেন্ট এর সোনার মেডেল যাতে লেখা ছিল,“এই পুরষ্কার সেই সব আবিষ্কার আর উন্নয়ন এর জন্য যার ফলে বিগত শতাব্দীর মানব সভ্যতার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে”। আমেরিকার ওয়েস্ট অরেঞ্জ শহরে ১৮ই অক্টোবর,১৯৩১ এ বয়সে এই যুগ-পুরুষ ৮৪ বছর বয়সে দেহ রক্ষা করেন। ।।

লেখকের পরের লেখাটি প্রকাশিত হবে আগামী রবিবার

লেখক পরিচিতি –

ডঃ তুষার রায় স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ। ওই সময়েই “শুকতারা”তে “অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পান।