Advt

Advt

Choto Maa, Story, Galpo, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik digital, bengali online, bangla web, e magazine, ছোটমা, গল্প

 

Choto Maa, Story, Galpo, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik digital, bengali online, bangla web, e magazine, ছোটমা, গল্প

আত্মীয়র  সম্পর্ক না হলেও যে আত্মিক যোগ থাকে  হঠাৎ একদিন টের পেলাম। তখন আমার বয়স কত? বড়জোর চব্বিশ-পঁচিশ হবে। তখন আমি চাকরিতে ঢুকে গেছি। ব্যাংকের প্রবেশনারী অফিসার। এক রবিবার দুপুরে খেয়ে দেয়ে বিছানায় শুয়েছিলাম। তন্দ্রামত এসেছিল। আমি মণি মাসিকে স্বপ্ন দেখলাম। সেই থেকেই  মণি মাসিকে দেখার জন্য মন ছটফট করতে লাগলো।  মিথ্যে বলবনা, ব্যাংকে আমার দায়িত্বপূর্ণ কাজ। তার মধ্যেও মণি মাসিকে ভুলতে পারছি না। অন্তত একবার চোখের দেখা চাই-ই চাই। না হলে স্বস্তিতে থাকতে পারছি না। মাকে বললাম কথাটা।

মা বললেন, তাই নাকি? তুই বাবা মেয়েটাকে গিয়ে নিয়ে আয়। শুনেছি সে নাকি বড় অসুখে পড়েছে। ওরা কোনো চিকিৎসা করাচ্ছে না। খুব অশ্রদ্ধা করে ওরা। শুনে আমারও মনটা কদিন ধরে  খুব খারাপ। তোকে বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তুই নানা কাজের ঝামেলায় থাকিস। যা, আজতো শনিবার। তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে। ফেরার পথে নিয়ে চলে আয় বাবা। এনে ভালো একটা ডাক্তার দেখা। মেয়েটা তোর জন্য অনেক করেছে।

আমার চোখ দিয়ে জল এসে গেল। অসুস্থ তবু চিকিৎসা করাচ্ছে না? কেমন মানুষ?

আসলে মণি মাসি ওদের কেউ হয় না। আমাদেরও আত্মীয় নয়। তবে আমার কাছে আত্মীয়র থেকেও অধিক। আমার যখন জন্ম হয় তখন মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। মরণাপন্ন অবস্থা। তখনই দিদা, মণি মাসিকে মায়ের দেশের বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। শুনেছে আঠারো-কুড়ি বয়স  তখন। মায়ের দেখভাল তো করতেনই, আমাকেও সর্বদা আগলে রাখতেন। আমি মণি মাসির কাছেই বড় হয়েছি। মনে আছে, আমি তখন অনেক বড় হয়ে গেছি।সিক্স-সেভেনে পড়ি।তবু মণি মাসি খাইয়ে না দিলে খেতাম না। মা বকাবকি করতেন, এত বড় হয়ে গেছিস, এখনো তোকে খাইয়ে দিতে হবে? তবু আমি গোঁ ধরে থাকতাম। না খাইয়ে দিলে  কিছুতেই খাবো না। রাতে মণি মাসিকে ধরেই শুয়ে থাকতাম।

ক্লাস এইটে যখন পড়ি তখন মণি মাসি চলে যান। মায়ের এক বন্ধু  সীমা মাসির সন্তান হবে। বেশি বয়েসে বাচ্চা হবে বলে খুব ভয় পাচ্ছিলেন। মা-ই পরামর্শ করে মণি মাসিকে দেখাশোনার জন্য পাঠিয়ে দেন। ওরা নিতে এসেছে মণি মাসিকে। মাসি বললেন, এখন যাবো না, বিকেলে যাবো। বাবু স্কুল থেকে ফিরুক, ওকে টিফিন খাইয়ে তবে যাবো। শুনে মা আর বাধা দেন নি। মা তো জানেন, আমাকে কতটা ভালোবাসেন মণি মাসি।  মনে আছে, আমি খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। রাতে ভাত পর্যন্ত খাইনি।  

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে  মানুষের মনেও বিস্তার ঘটে।  আমিও এক সময়  মণি মাসিকে ছাড়াই বাঁচতে শিখে গিয়েছি। নিজে নিজে ভাত খাই। স্কুল ড্রেস পরি। বই-খাতা ব্যাগে গুছিয়ে ভরি টিফিন বক্সটিও ভরতে ভুলি না। আসলে মা বরাবরই চিররুগ্ন। বিয়ের পর পরই নাকি একবার টাইফয়েড জ্বরে ভুগছিলেন। সেই যে শরীর ভেঙেছে আর ঠিক হয়নি।  আমি জন্মের পর আরো শরীর খারাপ হয়েছে। রক্তাল্পতায় ভুগছেন। বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েও একই অবস্থা। ফলে আমাকে একটু দ্রুত স্বাবলম্বী হতে হয়েছে।

আমি যখন কলেজে পড়ি, বাবার হার্ট অ্যাটাক। খবর পেয়ে কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতেই বাবা নেই। সেই সময় মাকে সামলানো দায় হয়ে উঠেছিল। কারণ বাবা, মাকে খুব ভালো বাসতেন। মায়ের ঔষধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বাবা দেখভাল করতেন। বলতেন, তোর বাবার জন্যই এতদিন বেঁচে আছি। সেই থেকে আমিই মাকে দেখাশুনা করি। মায়ের ঘরে থেকেই রাত জেগে পড়াশুনা করি। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মায়ের সামান্য পেনশনেই সংসার,আমার পড়াশুনা চলছে। তবে এরমধ্যে এক ধন্বন্তরী ডাক্তার মাকে সুস্থ করে তোলেন। মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই, কোনো কোনো ডাক্তার বোধহয় হাত যশের গুণেই  অসাধ্য সাধন করে ফেলেন। না হলে  অনেক ডিগ্রিধারী ডাক্তার দেখেও কিছু করতে পারলেন না। অথচ শেষ কালে এক বয়স্ক এম.বি.বি.এস ডাক্তার  দুমাসের ঔষধ খাইয়েই একেবারে রোগমুক্ত। সব চেয়ে আশ্চর্য, বড় বড় ডাক্তাররা কিন্তু ওই একই ঔষধ দিয়েছিলেন। কম্পোজিশন এক, শুধু ব্র্যান্ড নেম আলাদা। কি করে হয়? আমি ধন্বন্তরী কে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম। উনি মুচকি হেসে বললেন,"  মনের জোর। তোমার মাকে বলেছিলাম,  দু'মাস নিয়ম করে ঔষধ খেলে আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমি জোর দিয়ে বলছি।" বলেছিলাম কিনা? আমি মাথা ঝাঁকালাম। হ্যাঁ, বলেছিলেন। ডাক্তার বললেন,"এই জন্যই তো লোকে বলে ধন্বন্তরী।"

আমাকে দেখেই মণি মাসির চোখে জল। কেনো জানি না এত দিন পর দেখেই বোধহয় আবেগে ঠিক থাকতে পারেন নি। যেই শুনল আমি নিতে এসেছি, আনন্দে আত্মহারা। দশ মিনিটের মধ্যেই ব্যাগ গুছিয়ে রেডি।

মানুষের ভাবনা-চিন্তার কেন যে এত অধঃপতন, আজও ভেবে পাই না। মানুষ প্রথমেই কেন কু চিন্তা করে। আমার ধারণা, যে যেমন মানসিকতার তার চিন্তা ধারাও ঠিক সেই রকম হয়। সীমা মাসির বাড়িতেই এক জন বললেন,  মণি মাসির নাকি স্বভাব চরিত্র খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিছু খেলেই ওয়াক করে বমি তুলছে। সোমত্ব মেয়েদের এমনটা কখন হয় জানো? নিয়ে যাও একে। বিদেয় করতে পারলে বাঁচি।

আমি বললাম, ডাক্তার দেখিয়েছেন?

"এসব ক্ষেত্রে আবার ডাক্তার দেখাবো কি হে ছোকরা?  সিমটমই বলে দিচ্ছে কি কাণ্ডটা বাঁধিয়েছে। যাও যাও নিয়ে চলে যাও, আর কথা বাড়িও না।"

আসলে মাসির অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হচ্ছিল। তাই কিছু খেতে পারছিল না,  বমি করে দিত। ডাক্তার পেটে হাত দিয়েই বলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে অপারেশনের পরামর্শ দিলেন। অথচ মানুষগুলো ডাক্তার না দেখিয়ে অসভ্যের মত  কুচিন্তা করছিল। কেন বমি করছে বিশেষজ্ঞদের মত  নিদান দিয়ে দিল।

ডাক্তার বললেন, আপনাদের ভাগ্য ভালো। আর দু-একটা দিন দেরি করলেই বার্স্ট করে যেত। বাঁচানো যেত কিনা সন্দেহ ছিল। যাক অপারেশন সাকসেস। সাত দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে, নিশ্চিন্তে বাড়ি  যান।

এক মাসের মধ্যেই মণি মাসি সম্পূর্ণ সুস্থ। সারাক্ষণ চনমনে ভাব। সংসারের সমস্ত কাজ একা হাতে সামলাচ্ছেন।

পৃথিবীতে কত মানুষের জন্ম হয়। সবার ভাগ্য কি এক রকম থাকে?  নিদারুণ দুঃখ-কষ্টের মধ্যে  কত লোক কত ভাবে দিন যাপন করে। তবে তার মধ্যেও একটা আনন্দ খুঁজে নেয়। না হলে বাঁচবে কি করে?  মায়ের কাছে শুনেছে, মণি মাসির নাকি তিন কুলে কেউ নেই। এক দূর সম্পর্কের কাকার কাছে মানুষ। ছোট বেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছে। কোথায় এক ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, সেখানে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়। তিন জনেই ছিল ট্রেনে। মিরাকল ভাবে মণি মাসি বেঁচে যান। যেই লোকটা ওকে নিয়ে এসেছে, আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। তবু তিনি লালন-পালন করে নিজের মেয়ের মতই মানুষ করেন। কিন্তু  মণি মাসি যখন বড় হয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়, তখনই লোকটার টনক নড়ে। স্ত্রীর সঙ্গে নিত্য দিন অশান্তি। কেন তুমি অন্যের মেয়ের দায়িত্ব নেবে? বিয়ের খরচ কি কম? হটাও এই বাড়ি থেকে। তখনই দিদা মণি মাসিকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। অথচ মণি মাসি দেখতে কিন্তু খারাপ নয়। শ্যামলার মধ্যে নাক, চোখ, মুখের গড়ন খুব ভালো। মাধ্যমিক পাস। বিয়ের কথা কেউ ভাবলোই না।

আমাদের এখানে এসে নিজের বাড়ির মতো আনন্দ খুঁজে পেয়েছে। একদিন খেতে বসেছি। খেয়ে অফিস যাবো। আমি বললাম, মাসি, আমাকে আর একটু ভাত দাও। হঠাৎ মণি মাসি ঝাঁঝিয়ে উঠলেন," আমাকে মাসি মাসি করিস কেনরে?  আমি তোর মায়ের মত। এবার থেকে ছোট মা বলে ডাকবি।" পাশেই মা বসে ছিলেন। মা মুচকি হেসে বললেন, " মণি ঠিক কথাই তো বলেছে। ওতো তোর আরেকটা মা, এবার থেকে ছোট মা বলেই ডাকবি।

সেই থেকে মণি মাসি আমার ছোট মা হয়ে গেলেন। ছোট মায়ের অধিকার বোধ যেন অনেকটাই বেড়ে গেল। এর জন্য ছোট খাটো মনোমালিন্য যে হয় নি, তা বলবো না। অবশ্য নিজের মায়ের সঙ্গেও তো এমনটা হয়। এসব স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রথম গন্ডগোল বাধে আমার বিয়ের সময়। মা ছেলের বিয়ে দেবেন বলে মেয়ে দেখা শুরু করেছেন। তিনটে মেয়ে দেখা হয়েছে। আমিও দেখেছি। এক প্রকার  তিন জনকেই পছন্দ। তবে একটি মেয়ে চাকরি করে। স্কুল শিক্ষিকা। ওকেই বিয়ে করবো বলে বাড়িতে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।

ছোট মা বললেন, না, চাকরিওয়ালা মেয়েকে ঘরে আনবো না। আমাদের ছেলে রোজগার কম করে নাকি?  ঘরোয়া সংসারি মেয়ে চাই।  যে মেয়েটিকে প্রথম দেখে এসেছি, তাকেই বিয়ে করবি তুই। এর কোনো নড়চড় হবে না। দিদি, ফাইনাল খবর পাঠিয়ে দাও।

আমার খুব রাগ হলো। তবু মুখে কিছু বললাম না। অফিস চলে গেলাম। যে বিয়ে করবে তার মতামতের কি  কোনো মূল্য নেই?  সন্ধে বেলায় বাড়ি ফিরেও একটু গম্ভীর ছিলাম। কারো সঙ্গেই কথা বলছিলাম না। অধিকার বোধের একটা সীমা আছে , নাকি?  এতো এক প্রকার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মা আমার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করলেন। ছোট মা তখন রান্না ঘরে ব্যস্ত।

মা বললেন, শোন বাবু, তোকে একটা কথা বলি। মণির জীবনটা তো সবই জানিস তুই।  জীবনে কিছুই পায়নি মেয়েটা। এখন তোকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। সংসারটা নিয়ে যেভাবে ও ভাবে আর যেভাবে খাটে, শুধু তোকে কেন, আমাকেও যেভাবে সেবা-যত্ন করে, আমিতো একেবারে স্বর্গসুখে আছি। আমার বড় ভুলটা হয়েছিল ওকে সীমার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে। আমার বিশ্বাস, মণি যদি এখানে থাকতো তোর  বাপি বোধহয় অকালে চলে যেত না।  মানুষটা মনে হয় প্রেসারের ট্যাবলেট ঠিক মত খেত না। মণি থাকলে আগের মত  ঘড়ি ধরে খাইয়ে দিত। যাই হোক, যেটা বলতে এসেছি, ওকে কখনো অশ্রদ্ধা করিস না। তাহলে মেয়েটা সহ্য করতে পারবে না।  প্রথম যে মেয়েটা দেখে এসেছি, সেটা আমারও খুব পছন্দ। তবু তোর মতামতটাই আসল। ঠিক আছে, তুই মণি কে কিছু বলিস না, আমিই সব বুঝিয়ে বলে দেব।

মা বেরিয়ে গেলেন। আমি অভিভূত। মা, ছোট মায়ের জন্য এতটা উদার? কোনো মা কী অধিকার ছেড়ে দিতে পারে?  এ এক মহৎ ভাবনা। কেউ কারো অধিকার নিতে পারে না। ছোটমা যাতে ভালো থাকেন , মা মনেপ্রাণে তাই চান। আমি মত বদলালাম। কাউকেতো ভালোবাসিনি। সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম মাত্র। বদলাতেই পারি।

রাতে খেতে বসে বললাম, মা, ছোটমার যখন প্রথম মেয়েটিকেই পছন্দ, জানিয়ে দাও। ওখানেই বিয়ে করবো।

ছোটমা বললেন, দেখ বাবু, আমার পছন্দটা বড় কথা নয়। তোর পছন্দটাই আসল। তুই যদি চাকরি করা মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাস, করতে পারিস। মনে কিছু করবো না। আমরা চাইছিলাম, একটি ঘরোয়া, সংসারি মেয়ে আনতে। পরে ভেবে দেখলাম,  চাকরি করলে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ বাড়বে। আরেকটু ভালো থাকতে পারবি। আর সংসার সামলানোর জন্য আমরাতো রইলামই।  দেখ ভেবে দেখ?

আমি বললাম, আমার কোনটাতেই আপত্তি নেই। তোমরা আলোচনা করে ঠিক করে নাও।

পরে আমি চাকরি করা মেয়েটিকেই বিয়ে করলাম।

প্রথম দিন থেকেই আমার স্ত্রী ঈশা ছোটমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। দুই মা-ই তার কাছে নাকি আপন মানুষ। দেখতে দেখতে আমি এক পুত্র সন্তানের পিতা হয়ে গেলাম। সেও ছোটমায়ের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকলো। ঈশার পক্ষেও স্কুল করে এসে বাচ্চার দেখভাল করা সম্ভব হয়ে উঠছিল না।

আমার ছেলে হীরক যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন আমার মা  মারা যান। বয়স হয়েছিল, তাছাড়া ভুগছিলেন বছর খানেক ধরে। সেই সময় ছোটমাকে যা কাঁদতে দেখেছি, তা ভোলার নয়। বার বার বলছেন, এই মানুষটাই আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। না হলে কোথায় যে ভেসে যেতাম, কে জানে। হাউ মাউ করে কান্না। থামতেই চায় না। নিজে চোখে দেখেছি, রাতের পর রাত মায়ের পাশে থেকে সেবা করেছেন। চোখে এতটুকু ঘুম নেই।

কিছু কিছু মানুষ থাকে , তাঁদের আন্তরিক স্নেহ, ভালোবাসা অন্তরে গেঁথে থাকে। কখনো ভোলা যায় না। কারণ সেখানে তো কোনো স্বার্থ থাকে না। ছোটমা যখন মৃত্যু শয্যায় তখন হীরক ক্লাস নাইনে পড়ে। সে নেওয়া-খাওয়া, স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সে তার ছোট ঠাকমাকে যেতে দেবে না কিছুতেই। বোকাটা জানে না, মানুষ মাত্রই একদিন মৃত্যু হবে। আসলে ছোট ঠাকমাই তার কাছে সব। তিনিই যে তাকে ছোট থেকে বড় করেছেন।  ক্লাসের ফার্স্ট বয় দিনের পর দিন স্কুল কামাই করে নার্সিং হোমে পড়ে আছে ভাবা যায়! 

ডাক্তার যখন বললেন, সি ইজ নো মোর। তখন হীরকের সে কি কান্না!  অবশ্য কাকে কি বলবো? আমার ভেতর থেকেও ঠেলে ঠেলে বেরিয়ে আসছে ফোঁপানির শব্দ। কিছুতেই থামাতে পারছি না। রক্তের সম্পর্ক না হলেও যে কতটা আপন হতে পারে বার বার অনুভব করি।

লেখক পরিচিতি: 

জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।

তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট,  দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর  ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।

তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। 

Tatkhanik digital bengali online e magazine

Choto Maa, Story, Galpo, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik digital, bengali online, bangla web, e magazine, ছোটমা, গল্প