Advt

Advt

Chand Mamar Desher Pathe Prantare, 1st Part, Feature, Jana Ajana, by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e-magazine, Science

ড. তুষার রায়ের আগের লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

Chand Mamar Desher Pathe Prantare, 1st Part, Feature, Jana Ajana, by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e-magazine, Science

ছোটবেলায় কে না পড়েছি ‘চাঁদের বুড়ি চরকা কাটে’। অথবা বাচ্চাকে ভোলাবার জন্য জ্যোৎস্নার আকাশে চাঁদ দেখিয়ে বলা “চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা”। এই যে চাঁদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্বন্ধ স্মরণাতীত কাল থেকে চলে আসছে এ শুধু কল্পনা নয়,এর পিছনে বৈজ্ঞানিক সত্যও লুকিয়ে আছে। চাঁদ থেকে তুলে আনা ধুলো,মাটি আর পাথর পরীক্ষা করে জানা গেছে যে চাঁদ আর পৃথিবী একই প্রাথমিক বস্তু দিয়ে গড়া। সেই হিসাবে চাঁদ আর পৃথিবী ভাই-বোন হল কিনা? আর আমরা পৃথিবীর জীবরা সবই ত পৃথিবীর সন্তান। তাহলে চাঁদ ত সত্যিই আমাদের মামা হল। চরকা কাটুক আর পাহাড়ে চড়ুক চাঁদ আমাদের স্বপ্নলোকে একটা বড় স্থান অধিকার করে আছে। কিন্তু চাঁদ আমাদের পৃথিবী আর জীবনে এতই বড় ভূমিকা পালন করে যে তার সম্বন্ধে একটু বেশি না জানলে খুব ভুল হবে আর চাঁদের প্রতি অবিচারও করা হবে। সেই কারণেই বোধ হয় মানুষ কেবল দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করে নয় চাঁদের মাটিতে নেমে বার বার তাকে আরও গভীর ভাবে জানার প্রচেষ্টা করেছে।এপোলো-১১ মিশনে তিন আমেরিকান বৈজ্ঞানিক প্রথম চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছিল ২১জুলাই,১৯৬৯ সালে। আর চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রথম মানুষের সেই উত্তেজিত কণ্ঠস্বর (নাকি ভবিষ্যৎ বাণী) কি আমরা ভুলতে পারি? “A small step by (a) man,one giant leap for mankind”.

আমরা জানি আমাদের এই সৌরমণ্ডলে কমসে-কম ২১০টি উপগ্রহ বা চাঁদ আছে। সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি হলেও সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ আছে শনি গ্রহের-৮২ টি। আর আমাদের পৃথিবীর মাত্র একটি-আমাদের অতি প্রিয় চাঁদ। উপগ্রহদের  শ্রেণীতে আমাদের চাঁদ আকারে পঞ্চম স্থানে থাকলেও বয়সে কিন্তু সবচেয়ে নবীন- সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের জন্মের অন্তত ৫ কোটি বছর পরে কোন বিরাট মহাকাশ বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর এক বিশাল ধাক্কার ফলেই চাঁদের জন্ম হয়েছিল। এবারে দেখা যাক,আমরা (অর্থাৎ আমাদের চাঁদ) যদি পঞ্চম স্থানে থাকি তাহলে আমাদের উপরে কে কে আছে।

সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ হল বৃহস্পতি-তার আছে ৭৯টি উপগ্রহ বা চাঁদ;আর এই ৭৯ টি চাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হ’ল ‘গ্যানিমেড’ (Ganymede)-বিশাল বড় এই উপগ্রহ বুধ গ্রহের চেয়েও বড় আর এই একমাত্র উপগ্রহ যার নিজের ‘চৌম্বক ক্ষেত্র’ বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড আছে।প্রসঙ্গত,আমাদের চাঁদের ‘চৌম্বক-ক্ষেত্র’ নেই। গ্যানিমেড এর বরফ বিছানো সমতলের নিচে আছে এক বিশাল লবণাক্ত সমুদ্র।তাই বৈজ্ঞানিকদের অভিমত এই যে এই উপগ্রহে জীবন থাকার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

Chand Mamar Desher Pathe Prantare, 1st Part, Feature, Jana Ajana, by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e-magazine, Science
এর পরের স্থানে আছে শনির বিখ্যাত উপগ্রহ ‘টাইটান’।বিখ্যাত এই কারণে যে এর আবহাওয়া খুব ভাল আর এর সমতলের উপর বায়ুর চাপ পৃথিবীর বায়ুচাপের সামান্য বেশি।তাই বৈজ্ঞানিকদের লোলুপ দৃষ্টি এই উপগ্রহের উপরে-এখানে জীবনের উপস্থিতির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।এর পরের স্থান অধিকার করে আছে বৃহস্পতির আর এক উপগ্রহ-ক্যালিস্টো (Callisto) চতুর্থ স্থানে আছে বৃহস্পতির আর এক উপগ্রহ-আই-ও (Io) এর পরের স্থানেই আছে আমাদের চাঁদ-যার ব্যাস মাত্র ৩৪৭৬ কিলোমিটার। আমাদের চাঁদের পরের স্থান অধিকার করে আছে বৃহস্পতির সবচেয়ে সুন্দর আর বসবাসের উপযোগী উপগ্রহ,নামটিও সুন্দর দেওয়া হয়েছে-‘ইয়োরোপা’। ইয়োরোপার উপরে হালকা অক্সিজেনের বায়ুস্তর আছে।তাই এর উপরও বৈজ্ঞানিকদের নজর কম নয়।তাহলেই দেখা যাচ্ছে সৌরমণ্ডলের অন্য গ্রহদের তুলনায় তাদের উপগ্রহদের উপরের অবস্থাই জীবনের অবস্থানের ইঙ্গিত বহন করছে। আমাদের চাঁদ সে ব্যাপারে একেবারে নিরেটঃখানা-খন্দ-পাহাড়ে ভরা পাথুরে ময়দান।       

ছবিতে ওই যে বুড়ি কুঁজো হয়ে বসে সুতো কাটছে মনে হয় আসলে ওগুলো পাহাড় আর বিশাল বিশাল ক্র্যাটার বা গহ্বর।

 মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের (৩,৮৫,৪০০কিলোমিটার) মহাকাশ বস্তু হল চাঁদ। চাঁদ এত কাছে থাকা সত্ত্বেও আমরা ওখানে ‘কলোনি’ বানাবার কথা কেন ভাবছিনা? কারণ অনেক: প্রথমত,জল নেই, আবহাওয়া নেই ,অক্সিজেন নেই,ভীষণ অল্প মাধ্যাকর্ষণ,কোন চুম্বকত্ব (Magnetic Field)  নেই আর অসম্ভব গরম(১২৭ডিগ্রী সে:) আর ভীষণ ঠাণ্ডা,মাইনাস(- ১৭৩ ডিগ্রী সে:) !এবার দেখা যাক কোনটার অভাব বা উপস্থিতি কি ফল দেয়।জলের অভাব ত বুঝাই যায়,মাধ্যাকর্ষণের অভাবে কিছুই ত ধরে রাখা যাবেনা,আমরা ওখানে গেলেও সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবনা;আর চুম্বকত্বের অভাবে সূর্য আর মহাকাশের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আমাদের কে রক্ষা করবে ? সবার উপরে,দিনে রাতের ওই উত্তাপে কে বাঁচবে?

আমরা জানি চাঁদ তার অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে প্রায় চক্রাকারে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ২৭দিন ৮ঘন্টায়-তার মধ্যে সাড়ে ১৩ দিন হল একদিকের দিন এবং বাকি সাড়ে ১৩ দিন রাত।যখন সূর্য-কিরণ পড়ে চাদের উপর তখন চাঁদের উপর তাপমান গিয়ে দাঁড়ায় ১২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর যখন সূর্য থাকেনা তখন তার উত্তাপ কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস!

আমাদের পৃথিবী তার অক্ষের সমতলের থেকে প্রায় সাড়ে ২৩ডিগ্রী (২৩.৪৪ডিগ্রী) হেলে থাকে।এরই ফলে আমাদের পৃথিবীতে ছয়টি ঋতু দেখা যায়,এটা আমরা জানি।চাঁদ কিন্তু তার অক্ষের উপর প্রায় দেড়(১.৫৪)ডিগ্রী হেলে ঘুরতে থাকে তাই ওখানে কোন ঋতু পরিবর্তনের ব্যাপার নেই,কিন্তু এর ফলে চাঁদের দুই মেরুতে এমন অনেক স্থান আছে যেখানে কোনদিনই সূর্যকিরণ পৌছায় না।তাই ওই সব স্থানে সর্বদাই থাকে রাত আর হয় ভীষণ ঠাণ্ডা।

আমেরিকার বিজ্ঞান সংস্থা ‘নাসা’(NASA)তাদের চাঁদ-প্রদক্ষিণ করা রোভার মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ক্র্যাটার গুলোর মধ্যে তাপমান মেপে মাইনাস ২৩৮ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত পেয়েছে,আর মাইনাস ২৪৭ডিগ্রী মেপেছে উত্তর মেরুর ক্র্যাটারে।এত কম তাপমান সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে দূরের গ্রহ ‘প্লুটো’তে ও পাওয়া যায়না।প্লুটোতে তাপমান থাকে মাইনাস ২৪০ থেকে মাইনাস ২১৭ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত।

বৈজ্ঞানিকদের ধারনা এই যে,চাঁদের গভীর অন্ধকার ক্র্যাটার গুলিতে যেখানে কোনদিনই সূর্যকিরণ পৌঁছায় না সেখানে হয়ত বরফ আকারে জল থাকা সম্ভব। এই ব্যাপারে আমাদের দেশ কিন্তু ‘পাইও-নিয়ার’। আমাদের “চন্দ্রযান”এ স্থাপিত আমেরিকান রাডারে, ২০১০ সালে, চাঁদের উত্তর মেরুতে ৪০টি ছোট ক্র্যাটারে বরফ-জল আবিষ্কার করেছিল।এরই ফল স্বরূপ সারা পৃথিবীর বৈজ্ঞানিকরা অনুমান করেন যে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি লিটার বরফ-জল লুকিয়ে আছে ওইসব সদা-অন্ধকার সুগভীর ক্র্যাটার গুলির অন্তরালে। এবার এই ক্র্যাটারগুলির বিশালতা আর গভীরতার পরিমাপ একটু জানা যাক:

সবার বড় হল কোপার্নিকাস : ব্যাস ৯৩ কিলোমিটার আর গভীরতা ১২,৫০০ফুট।                      

এরপরের স্থান হল ‘টাইকো’ : ব্যাস ৮৫ কিলোমিটার কিন্তু গভীরতা অনেক বেশি- ১৫,৭০০ফুট।

তৃতীয় বৃহৎ ক্র্যাটার এর নাম অ্যারিস্টরকাস : ব্যাস ৪১ কিলোমিটার আর গভীরতা ৯,৮০০ফুট।

(ক্রমশ) ……………

২য় অধ্যায় পড়ুন আগামী রবিবার (২৫.০৯.২০২২)

লেখক পরিচিতি –

ডঃ তুষার রায় স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ। ওই সময়েই “শুকতারা”তে “অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পান।