Advt

Advt

Vejal banam Pure (Adulterated vs Pure), Galpo, Story, by Rekha Nath, Tatkhanik Digital Bengali Online, bangla web, e magazine, ভেজাল বনাম পিয়োর

Vejal banam Pure (Adulterated vs Pure), Galpo, Story, by Rekha Nath, Tatkhanik Digital Bengali Online, bangla web, e magazine, ভেজাল বনাম পিয়োর


সবজি দেখেই জবার মেজাজ চড়চড় করে সপ্তমে উঠে যায় । থলে থেকে সবজি বার করতে করতে তিনি চিৎকার করে স্বামীর উদ্দেশ্যে বললেন --- তুমি আবার সেই কচু-ঘেঁচু,বেগুন,কুমড়ো নিয়ে এসেছো! বাজারে কি সবুজ সবজির আকাল পড়েছে। পটল,ঝিঙে,ধুঁদুল,ভিন্ডী,লাউ,বরবটি,টিন্ডা ও শিমলামির্চ ইত্যাদি কত রকমের সবুজ সবজি আছে গরমকালের ।

বৌয়ের রণচণ্ডী মূর্তি দেখে রতন সিকদার নরম গলায় বললেন --- সারা  বাজার জুড়ে সবুজ রং মাখানো সবুজ সবজির বাহার । ওই সব সবজি খেলে নির্ঘাৎ ক্যানসার । তাই আনিনি ।

আগুনে ঘী পড়ার মত স্বামীর কথায়  জবা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন । ক্রোধান্বিত গলায় বললেন--- দুনিয়ার লোক সবুজ সবজি খাচ্ছে না ? আর আমরা খেলেই আমাদের ক্যানসার হবে,তাই না ! ছেলে-মেয়ে দুটি তো বেশীর ভাগ দিন বাইরে খেয়ে আসছে । একজন অফিসের ক্যান্টিনে,আর একজন কলেজের ক্যান্টিনে । এরকম সবজি প্রতিদিন এলে  ওরা তো ঘরের খাওয়া ছেড়েই দেবে । রাগে গজ-গজ করতে করতে জবা বললেন--- ঘরে চিংড়ি মাছ ছিল বলে বলেছিলাম লাউ নিয়ে আসতে ।  লাউ চিংড়ি করব,তার কী হল ? সেটাও কী রঙে চোবানো ছিল ! রতন সিকদার মিন-মিন করে বললেন--- তা নয় । বাজারে একটাও কচি লাউ ছিল না । ইয়া বড়-বড় সব লাউ । ইনজেকশন দিয়ে বড় করা সব লাউ । ওই লাউ খেলে নির্ঘাৎ লিভার,কিডনী ড্যামেজ হবে ।

--- রাখো তোমার লিভার,কিডনী ! ঝংকার দিয়ে ওঠেন জবা, বললেন--- তোমার ওই কচু,কুমড়ো,বেগুন কি এক্কেবারে ধোয়া তুলসীপাতা ! এর উৎপাদনে কি পেস্টিসাইড,ইউরিয়া দেওয়া হয়নি ।

রতন সিকদার কৃতিত্বের গলায় বললেন--- তাই তো বেছে-বেছে পোকা ধরা কানা বেগুনগুলো এনেছি । অন্ততঃ এতে পেস্টিসাইড নেই ।

জবা হাসবে না নিজের পোড়া কপালের জন্য কাঁদবে ভেবে পান না ।

সাবধানের মার নেই । তাই  রতন সিকদার সব কিছু খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখে-শুনে ও ভালভাবে পরীক্ষা করে বেছে-বেছে জিনিষ কেনেন। যাতে খারাপ বা ভেজাল জিনিষ শরীরে না ঢোকে । এই সেদিন  দূরদর্শনে দেখাচ্ছিল দুধে কী ভাবে ইউরিয়া ও ডিটার্জেন্ট মিশিয়ে 'পিয়োর দুধ' বাজারে বিক্রী হচ্ছে অবাধে এবং ঘী তৈরীর কারখানায় কী ভাবে মরা জন্তু-জানোয়ারের চর্বি থেকে 'পিয়োর গাওয়া ঘী' তৈরী হচ্ছে অবলীলায় । এই সব খেলে মানুষের কল-কবজা অচল হতে বেশী দেরী লাগবে না ।  সেই থেকে রতন সিকদার দুধ ও গাওয়া ঘী খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। এই নিয়ে প্রায়ই স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল সংঘাত বাধে। বাড়িতে ঘী ঢোকে না কিন্তু দুধ বন্ধ করতে পারেননি তিনি । নিজে মিল্ক পাউডার দিয়ে কফি খান । চা খাওয়া ছেড়েছেন, সে আর এক কাহিনী ।

রতন সিকদারের ছোট ভাই,যতীন  সিকদার বিয়ে-থা করেননি । ব্যাচেলার মানুষ । কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসে একজন উচ্চপদস্থ অফিসার । ছুটি-ছাটায় তিনি তাঁর এক পাঞ্জাবী বন্ধু, মঞ্জিতের বাড়িতে ড্রিঙ্কস্ করতে যান ।  মঞ্জিতের বাড়িতে  তেতলার ঘরে দুই বন্ধু মিলে মনের সুখে ড্রিঙ্কস্ করেন । একদিন যতীন লক্ষ্য করেন যে ছাদে ডাঁই করে রাখা  লোহা-লক্কড় ও  লোহার চূর্ণ । কৌতূহলবশতঃ যতীন  সিকদার  মঞ্জিতকে জিজ্ঞেস করলেন --- তোমরা কী চায়ের ব্যবসা তুলে দিয়ে লোহা-লক্কড়ের ব্যবসা শুরু করেছো ?  মঞ্জিত অবাক হওয়া গলায় বললেন --- কেন ? চায়ের ব্যবসা তুলে  দেব কেন ? ওটা তো আমাদের তিনপুরুষের ব্যবসাযতীন বললেন --- তোমাদের ছাতে ডাঁই করা লোহা-লক্কড় ও  লোহার চূর্ণ দেখে আমি ভাবলাম, তোমরা বুঝি চায়ের ব্যবসা তুলে দিয়ে লোহা-লক্কড়ের  ব্যবসা শুরু করেছো! 

মঞ্জিত হাসতে-হাসতে বলেছিলেন --- চায়ের ব্যবসাতেই ওই লোহার ডাস্টগুলো প্রয়োজন হয়। চায়ের মধ্যে লোহার ডাস্টগুলো মেশানো হয় । শুনে তো যতীনের চক্ষু চড়কগাছ । পেটে খানিকটা তরল পানীয়-র প্রভাবেই বোধহয় সরল সত্য কথাটা বেরিয়ে পড়েছিল সেদিন মঞ্জিতের মুখ থেকে । ঘটনাটি যতীন নিজের দাদাকে বলেছিলেন । সেই থেকে রতন সিকদার চা পানও ত্যাগ করেন ।

ইদানীং রতন সিকদারের শরীর ভাল যাচ্ছে না । সর্বদাই মাথা ঘোরে । শরীর ঝিমঝিম করে । গ্যাস,অম্বল,চোঁয়া ঢেকুর লেগেই আছে হরদম । ডাক্তার-বদ্যি দেখানো হচ্ছে নিয়মিত কিন্তু উন্নতির লক্ষণ নেই বললেই চলে ।

রতন সিকদার সস্ত্রীক গ্রামের বাড়িতে এসেছেন হৃত স্বাস্থ ফেরাতে । দিল্লিতে ভেজাল খেয়ে-খেয়ে শরীরের সব কল-কবজা অচল হয়ে পড়ছিল । আগে ছেলে-মেয়ে যখন ছোট ছিল তখন প্রতিবছর গরমের ছুটিতে সপরিবারে আসতেন হবিবপুরে গ্রামের বাড়িতে  । তখন বাবা-মা জীবিত ছিলেন। বেশ কিছু বছর হল বাবা-মা দুজনেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন । সেই থেকে তাঁদেরও গ্রামের বাড়িতে  আসা বন্ধ হয়ে গেছে । একমাত্র মেজোভাই রথীনই সপরিবারে থাকেন  গ্রামের বাড়িতে । জমিজমা দেখাশোনা করেন । নিজের হাতে ফসল ফলান । শাক-সবজি উৎপাদন করেন ।

কতকাল পর দাদা-বৌদি এসেছেন । বাড়িতে যেন মচ্ছব লেগে গেছে । আর  রতন সিকদার তো আহ্লাদে আটখানা । টাটকা শাক-সবজি । পুকুরের টাটকা মাছ । গাছ থেকে পেড়ে যত খুশী খাও ডাব-নারকোল । বাড়ির গরুর শুদ্ধ দুধ । বাড়ির গাওয়া ঘী । সব যেন অমৃত । শরীরটাও যেন আতঙ্ক মুক্ত । কিন্তু তিন-চার দিন যেতে না যেতেই রতন সিকদারের পেটের মধ্যে গুড়গুড় গুড়ুম,ভুট-ভাট শব্দের বজ্র নিনাদ শোনা যাচ্ছিল তারপরেই প্রচণ্ড কলরোলে জলের মত বাহ্যে তীব্র বেগে নির্গত হতে থাকে ক্রমাগত । তাঁর অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যেতে থাকে । শরীরের সব শক্তি যেন এক নিমেষে উধাও । শেষে তাঁকে রানাঘাটের সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে হল। তারপর দশ-বারো দিন চলল যম ও ডাক্তারের টানাটানি,টাগ অব ওয়ার ।  শেষে ডাক্তারের হাত যশের কল্যাণে এবং রতন সিকদারের কপাল গুণে তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলেন ।

পরিশেষে অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ডাক্তার বললেন - অল্প-বিস্তর ভেজাল খাবার খেয়ে-খেয়ে আমাদের শরীরের সিস্টেম সেই অনুরূপ তৈরী হয়ে গেছে । এখন এক্কেবারে পিয়োর শুদ্ধ খাবার থুড়ি বিজাতীয় জিনিষ যদি শরীরে ঢোকে তাহলে শরীর বিদ্রোহ করে উঠবে এমনকি অক্কা প্রাপ্তিও ঘটতে পারে ।

  লেখিকার পরিচিতি - যদিও জন্ম পলাশীপাড়ানদীয়া জেলা পশ্চিমবঙ্গকিন্তু তার শৈশব বেড়ে ওঠাশিক্ষা-দীক্ষা সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা তৃণীর’ প্রকাশ করতেন।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়। হিন্দি ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবি রাখোলিও সিনান-এর দশটি স্প্যানিশ কবিতা বাংলাতে অনুবাদ করেছেন। অনুশীলন পত্রিকাসুইডেন থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে প্রাপ্তি। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে ঈশ্বর ও মানুষ’ (অণুগল্প ও ছোট গল্প সংকলন)।

Vejal banam Pure (Adulterated vs Pure), Galpo, Story, by Rekha Nath, Tatkhanik Digital Bengali Online, bangla web, e magazine, ভেজাল বনাম পিয়োর