Advt

Advt

Sahajatri (co-passenger), Story / Galpo, by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik digital, bengali online, bangla web, e magazine, সহযাত্রী, গল্প

 

Sahajatri (co-passenger), Story / Galpo, by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik digital, bengali online, bangla web, e magazine, সহযাত্রী, গল্প

মাঝরাতের দিকে এটওয়া স্টেশনে লখ্‌নউ মেল পাঁচ মিনিটের জন্য দাঁড়ালে প্রিয়ার কম্পার্টমেন্টে একজন মহিলা পুলিশ এসে ঢুকলেন। পুলিশের উর্দি পরা মহিলার কোমরে পিস্তলের খাপ, সঙ্গে কোন ব্যাগট্যাগ নেই। প্রিয়ার কম্পার্টমেন্টের সবাই তখন নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে, কিন্তু নীচের সিটে শোয়া প্রিয়ার চোখ খোলাই ছিল। এসি থ্রি টায়ারে দিল্লি থেকে লখ্‌নউ একরাতের সফর কিন্তু প্রিয়ার ভয় কখন কোন চোর বাটপাড় বা বদ চরিত্রের লোক বিনা টিকিটে মাঝখানের কোন স্টেশনে উঠে পড়ে ঝামেলা না বাঁধিয়ে বসে। মহিলা পুলিশ দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে প্রিয়া পা গুটিয়ে বেঞ্চে জায়গা করে দিল ওঁকে বসতে।

“ শুক্রিয়া, কানপুরে নেমে যাব আমি,” মহিলা পুলিশ বললেন প্রিয়াকে।

“ নো প্রবলেম,” প্রিয়া বলল অভ্যাসমত।

“ চান্নাদেবীর জন্যই আমাকে এই রাতের গাড়িটা ধরতে হল,” মহিলা পুলিশ বললেন মুখ ব্যাজার করে।

“ চান্না নামটা কেমন কেমন শোনা শোনা লাগছে।“

“ লাগবে বইকি, ইউপির মেয়ে ডাকাতদের মধ্যে ও এখন নাম্বার ওয়ান। গতবছর ওর বিপক্ষ দলের দশজনকে গুলি করে মারার পর অনেক মেহনত করে পুলিশ ওর নাগাল পায়। কিন্তু দেখ, এক বছর না হতেই জেলের সান্ত্রীদের চোখে দুলো দিয়ে আজ সন্ধ্যায় জেলে থেকে পালিয়েছে ও। পুলিশ হয়েও আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি চান্নার ক্ষমতা আছে।“

এমনিতেই একটু নার্ভাস প্রিয়া এবার সিটে উঠে বসল। “ এটাতো খুব খারাপ খবর। এই ট্রেনে আবার উঠে বসেনিতো ও?”

মহিলা পুলিশ হেসে বললেন, “ উঠে বসলেতো ভালই, ওকে ধরতে পারলে সরকার ওর মাথার ওপর যে এক লাখ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছে সেটা পেয়ে যাব।“ মহিলা পুলিশ কোমরের পিস্তলে একবার হাত বুলিয়ে দেখে নিলেন। “ তা কি করেন আপনি?”

প্রিয়া জানাল নয়ডার এ্যামিটি ইউনিভার্সিটিতে ও ইংরেজি নিয়ে এম এ পড়ছে। হস্টেলেই থাকে। হোলির ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে তিন দিনের জন্য।

“ রাতের খাওয়া সেরে নিয়েছেন?”

“ স্টেশনেই খেয়ে নিয়েছি আমি।“

“ ভাল। মনে হচ্ছে আজ আর আমার পেটে কিছু পড়বেনা। চান্নার ভেগে যাবার খবর পেয়ে ওপরওয়ালার আদেশে কানপুর ছুটছি খালি পেটেই।“

প্রিয়া ভাবল, সবাইতো পুলিশকে গালাগালি দেয় কিন্তু কেউ ভেবে দেখেনা রাতবিরেতে নাওয়া খাওয়া ভুলে কীভাবে চোর-ডাকাতের পেছনে ছুটতে হয় ওদের। প্রিয়া সিটের নীচ থেকে ওর ব্যাগ খুলে ছোট বোনের জন্য যে ক্যাডবেরি চকলেটটা নিয়ে যাচ্ছিল সেটা বের করে দিয়ে দিল পুলিশ মহিলাকে। “ নিন আপনি এটা খান।“

“ আরে না না, এটা কী করছেন আপনি?”

“ আপনি দেশের জন্য কাজ করছেন, এটা আপনারই প্রাপ্য।“

“ অনেক ধন্যবাদ। আপনার নামটা জানা হলনা।“

“ প্রিয়া।“

“ খুব ভাল নাম। আমার নাম রিমা।“

ক্ষুধার্ত রিমা দু’মিনিটের মধ্যেই দেড়শ’ গ্রামের চকলেটটা চিবিয়ে খেয়ে নিয়ে ছোট টেবিলে রাখা জলের বোতল থেকে ঢকঢক করে জল খেলেন অনেকটা। তারপর উনি চলে গেলেন বাথরুমে আর প্রিয়া হাই তুলে শুয়ে পড়ল। ভোরবেলা চোখ খুলতে ও দেখল রিমা নেই। ট্রেন কখন কানপুর পার হয়ে গেছে প্রিয়া টের পায়নি।

চারবাগ স্টেশনে খবরের কাগজ হাতে বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রিয়াকে দেখে এগিয়ে এলেন। বাইরে এসে গাড়িতে উঠে প্রিয়া বলল, “ এত সকালেতো আপনি খবরের কাগজ পড়েননা বাবা।“

গাড়ি স্টার্ট করে বাবা বললেন, “ আজ পড়তে হল প্রিয়া। কাল রাতে টিভিতে দেখলাম চান্নাদেবী এটওয়া জেল থেকে ভেগেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে জেলের মধ্যেই ওর গ্যং-এর লোক ছিল, তারাই ওকে সাহায্য করেছে পালিয়ে যেতে। ট্রেন আসার আগে ওই খবরটাই দেখছিলাম আমি।“

প্রিয়া জানাল এটওয়া থেকে ওঠা এক মহিলা পুলিশের মুখে খবরটা ও আগেই পেয়ে গেছে। সিটের পাশে রাখা খবরের কাগজটা খুলে প্রথম পাতায় নজর দিতেই প্রিয়ার চোখ কপালে উঠে গেল। চান্নাদেবীর ছবির সঙ্গে রিমা নামের সেই মহিলা পুলিশের মুখের কী আশ্চর্য মিল!

-      - -

লেখক পরিচিতি

জন্ম এবং শিক্ষা কলকাতায়; কর্মজীবন দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রালয়ে। গল্প লেখার শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে আসছেন গত পঞ্চাশ বছর ধরে। ইংরেজিতে দেশে এবং বিদেশে ওঁর কিছু গল্প এবং তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি থেকেও ওঁর কয়েকটি গল্প প্রচারিত হয়েছে। বাঙলায় একটি উপন্যাস এবং একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশ, আনন্দবাজার, সাপ্তাহিক বর্তমান, নবকল্লোল, কালি ও কলম(বাংলাদেশ) এবং দিল্লি ও কলকাতার অনেক সাহিত্য পত্রিকায় গল্প লেখেন উনি। দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘ কলমের সাত রঙ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন।