Advt

Advt

Bangla Sangeet : Utsa Sandhane (Bengali Music: In Search of Sources), Feature by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e-magazine, বাংলা সঙ্গীত-উৎস সন্ধানে

 

Bangla Sangeet : Utsa Sandhane (Bengali Music: In Search of Sources), Feature by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e-magazine, বাংলা সঙ্গীত-উৎস সন্ধানে


সঙ্গীতের উৎপত্তি সম্বন্ধে অনেক গবেষণা এবং আলোচনা হলেও আজ পর্যন্ত কেউ সঠিক বর্ণনা দিতে সক্ষম হননি। সত্যিকারার্থে এর সঠিক বর্ণনা দেওয়া সম্ভবও নয়, কেননা সঙ্গীত অপৌরষেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল তথা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন সঙ্গীতের মতো বাংলা সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।

সঙ্গীত মানবজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কালে মানুষের মধ্যে যখন সভ্যতার বিকাশ হয়নি, তখনও মানুষ কণ্ঠের বিভিন্ন ধরণের স্বরের সাহায্যে এবং অঙ্গভঙ্গি দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করতো। তারপর বৈদিকযুগে সঙ্গীত কিছুটা রূপ পরিগ্রহ করে। তখনকার মুনিঋষিগণ বেদের স্তোত্রগুলো সুর সহযোগে গাইতেন। সঙ্গীতের ব্যবহার তখন ধর্মের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। কালক্রমে সঙ্গীত মানবজীবনের বিভিন্ন স্তরে তথা ক্ষেত্রে পদচারণা শুরু করে।

সঙ্গীত ---অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে যাহা গীত হয়। গীত, বাদ্য ও নৃত্যকে একত্রে সঙ্গীত বলা হয়। তিনটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে শাস্ত্রকারদের মতে এদের প্রত্যেকটি সঙ্গীতের অন্তর্গত।

বাংলা তথা বাংলাদেশের আত্মার ধ্বনি হলো সঙ্গীত । বাংলা ভাষায় লেখা বা এই ভাষায় প্রচারিত যত রচনা পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হলো 'চর্যাপদ'। চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও চর্যাপদের কবিতাগুলো যে অন্তত এক হাজার বছরের পুরনো তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, চর্যাপদ হলো বেশ কয়েকটি পদ বা কবিতার সংগ্রহ। এই পদগুলো সেই সময় সুর করে গাওয়া হতো। প্রত্যেকটি পদের ওপর রাগের নাম লেখা রয়েছে। এখানে ব্যবহৃত ছন্দ কানে সুন্দর ধ্বনি সৃষ্টি করতে পারে।

বাঙালি জাতির মর্মকথার প্রকাশ পাওয়া যায় বাংলা সঙ্গীতের মাধ্যমে। তাদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ - দুঃখ, বিরহ - মিলন, হাসি - কান্না, জন্ম - মৃত্যু - বিবাহ, সংগ্রাম - আন্দোলন - বিদ্রোহ ইত্যদির কাহিনী যেন মূর্ত হয়ে ওঠেছে এদেশীয় সঙ্গীতের মধ্যে। বাংলার ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, গম্ভীরা, ঝুমুর, বাউল, রয়ানি ইত্যাদি সঙ্গীতের তুলনা বোধ হয় অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।

প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজা - বাদশাহের পৃষ্ঠপোষকতার ওপর সঙ্গীতের বিকাশ নির্ভর করতো । তৎকালীন বঙ্গদেশ তথা বাংলায়ও এর ব্যতয় ঘটেনি । বারো শতকে লক্ষ্মণ সেনের রাজস্ব কালে সংস্কৃত ভাষায় ‘গীতগোবিন্দম' (কীর্তনজাতীয় গান সমন্বিত পুস্তক) নামক কাব্য রচনা করেন বাঙালি কবি জয়দেব। তাঁকেই কীর্তনের আদি প্রবর্তক মনে করা হয়। আনুমানিক চোদ্দো পনেরো শতকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী কবি চণ্ডীদাস বাংলা ভাষায় সরল ও সুমধুর পদাবলী কীর্তন রচনা করেন। বলা যায় – চণ্ডীদাসই বাংলা  ভাষায় রচিত সঙ্গীতের প্রথম সার্থক স্রষ্টা। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩ ) যে আধ্যাত্মিক প্রেমধর্ম অর্থাৎ বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করেন, তার প্রধান সাধন হলো ‘কীর্তন’ গান। সেজন্যে শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবে সমকালীন বাংলায় কীর্তনের প্লাবন বয়ে যায়। হিন্দু - মুসলমান নির্বিশেষে অসংখ্য কবি পদাবলী কীর্তন রচনা করতে থাকেন।

বাংলার মাটির সম্পদ হচ্ছে শ্যামাসঙ্গীত, বাউলগান, ভাটিয়ালি গান, ভাওয়াইয়া গান, লোকগীতি ইত্যাদি। শ্যামাসঙ্গীতের ক্ষেত্রে কবি রামপ্রসাদ সেন (আনুমানিক ১৭২০-১৭৮১) এবং বাউল গানের ক্ষেত্রে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ (১৭৭৪-১৮৯০) কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন। আধুনিক যুগে (উনিশ শতক থেকে শুরু) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) -এর ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত' কান্তকবি রজনীকান্ত (১৮৬৫-১৯১০) -এর গান, নাট্যসম্রাট গিরিশচন্দ্র (১৮৪৪-১৯১৯) -এর গান, নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল (১৮৬৭-১৯১৩) -এর গান , চারণিক কবি মুকুন্দ দাস ( ১৮৭৮-১৯৩৪ ) -এর গান , কবি অতুলপ্রসাদ সেন (১৮৭১-১৯৩৪) -এর গান , বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল (১৮৯৯-১৯৭৬) -এর গান , পল্লীকবি জসীম উদ্দিন (১৯০৩-১৯৭৬ ) -এর গান ইত্যাদি বাংলা সঙ্গীতের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করেছে। এছাড়া বিভিন্ন রকমের আধুনিক গানও বাংলা সঙ্গীতের ভাণ্ডারে স্থান লাভ করেছে ।

সঙ্গীতে শব্দকে মূলতত্ত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই শব্দ কিন্তু স্থূল বা ধ্বনিতরঙ্গ নয়। স্থূলের পেছনে সূক্ষ্ম এবং সূক্ষ্মের অধিষ্ঠানরূপে কারণ শব্দ ‘নাদ’ - কে শব্দ এবং সঙ্গীত শাস্ত্রকারেরা ব্রহ্ম অর্থাৎ শাশ্বত শান্তির কারণীভূত বস্তু বলেছেন। বলা যায়- সঙ্গীতের সাধনা করার অর্থ নাদ ব্রহ্মের উপাসনা করা। সেজন্যে সঙ্গীতকে শ্রেষ্ঠ সাধনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলা সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও যে-কোন শ্রেণীর গানই অনুশীলন করা হোক না কেন , নাদ ব্রহ্মের উপাসনাই যে তার মূল সুর তা বলাই বাহুল্য । 

লেখক পরিচিতি 

ড.বাসুদেব রায়ের জন্ম ১৯৬২ সালে। কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যের জগতে আত্মপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশিত বই মানব' (কাব্যগ্রন্থ), দ্বিতীয় বই রক্তের বাঁধন (উপন্যাস)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণা করলেও প্রবন্ধ সাহিত্যের দিকে তার ঝোঁক বেশি। তদুপরি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তথা বই লিখতে তিনি অধিকতর উৎসাহী। গবেষণামূলক বইয়ের পাশাপাশি সাধু-মহাপুরুষদের জীবনী-গ্রন্থ, একাঙ্কিকা ইত্যাদি সম্পাদনাও করেছেন তিনি।

ড.বাসুদেব রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। হার উল্লেখযোগ্য গবেষণা গুলোর মধ্যে রয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ', চণ্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে সমাজ-চিত্র ইত্যাদি। তাঁর যৌথ রচনা ও উপেক্ষণীয় নয়।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাসুদেব রায় নিরলস ভাবে লিখে চলেছেন। এছাড়াও নতুন করে তিনি একক ও যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক কাজে হাত দিয়েছেন।  নিয়মিত বিভিন্ন e magazine-এ লেখেন।    

Tatkhanik digital bangla / bengali online / web free e magazine.  

Bangla Sangeet : Utsa Sandhane (Bengali Music: In Search of Sources), Feature by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e-magazine, বাংলা সঙ্গীত-উৎস সন্ধানে