Advt

Advt

Avivavak (Guardian), 2nd Part, Story, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik digital bengali / bangla online/ web e magazine, অভিভাবক, গল্প, ২য় পর্ব

Avivavak (Guardian), 2nd Part, Story, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik digital bengali / bangla online/ web e magazine, অভিভাবক, গল্প, ২য় পর্ব

 

১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

২য় পর্ব শুরু ……

পারতপক্ষে রতনদাকে বলে না । অযথা কারো উপকার নিতে সে চায় না । তাতে দায়বদ্ধতার একটা ব্যাপার এসে যায় । যদিও মুখে না বললেও রতনদা পাশে না থাকলে দুজন মেয়ের পক্ষে এ জায়গায় দোকান চালানো দুঃসাধ্য ব্যাপার — সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই । এমনিতে রতনদা ছেলে হিসেবে মোটের উপর ভালোই । বয়স বোধহয় সাতাশ - আঠাশ হবে । চুঁচুড়ার তোলাফটকে দোতলা বাড়ি । দু ভাই । কোনও বোন নেই । বড়দা ব্যাংকে চাকরি করেন । বাবাও চাকরি করতেন । এখন পেনশন পান । মা মাটির মানুষ । রতনদা লম্বাচওড়া এবং শরীর স্বাস্থ্যও ভালো । দেখনাই অতটা না হলেও পুরুষালী একটা ভাব আছে । অমিতাভ বচ্চনের মত ভরাট গলার স্বর । আসলে তাপসীর একজনের সঙ্গে মন দেয়া-নেয়া হয়ে গেছে বলে , নাহলে হয়ত প্রেমেই পড়ে যেত । তাই অযথা উপকার করতে এলে তার অসহ্য লাগে । মনে হয় যেন ধান্দায় আসছে— মনে হয় কেন ? তাপসীকে পাওয়ার জন্যই তার এত ছলাকলা— মেয়েরা সে - সব ভালোই বুঝতে পারে । দোকানটা চালু করার পেছনেও মাকে এত পীড়াপীড়ি কেন? উদ্দেশ্য ওই একটাই । না না , সোমনাথদাকে ছাড়া সে বাঁচবেই না । সোমনাথদাও তাকে পাগলের মত ভালোবাসে । ও কিছুতেই রাজি হবে না । ইদানীং রাত বাড়লেই দোকানের বিক্রি বেড়ে যায় । বিশেষ করে ভেজিটেবল চপ আর চিকেন পকোড়া হু হু করে বিক্রি হয় । এতে লাভ অনেক বেশি । তাই বেশি রাত পর্যন্ত দোকানে থাকার উদ্দেশ্য । তাছাড়া ঘুগনি , ডিমসেদ্ধ যা পড়ে থাকে , দোকান খোলা রাখলেই বিক্রি হয়ে যাবে নিশ্চিত । সেই আশায় তাপসী বেশিক্ষণ দোকানটা খোলা রাখতে চায় । কারণ ভাইবোনগুলো বড় হচ্ছে , তাদের লেখাপড়া , টিউশনির খরচ তো কম নয় । কিন্তু রাত বাড়লেই অন্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে । মনের মধ্যে সর্বদা এক আতঙ্ক । এই বুঝি হুজ্জুতি শুরু হলো । মাকে ঘটনাটা বলার পরেই মা কেমন যেন গুম মেরে গেলেন । দুদিন কথাবার্তাও ঠিকমত বলছিলেন না । তৃতীয় দিনে মা যা বললেন , তাপসী অবাক ! মা বললেন , “ আমি রতনের সঙ্গে তোর বিয়ে দেব। অনেক ভেবে দেখলাম , রতন জামাই হলেই আমাদের সংসারটা বাঁচবে । না হলে ছেলেমেয়েগুলোকে মানুষ করতে পারবো না । একজন অভিভাবকের মত শক্তসমর্থ পুরুষ মানুষ থাকা দরকার । আমি রতনকে প্রস্তাবটা দিয়েছি । ”

তাপসী বলল, “ আমাকে জিজ্ঞেস না করে প্রস্তাব দিয়ে ফেললে ? ”

মেজ বোন বলল, “ রতনদা কি রাজি হয়েছে ? ”

তাপসী বলল, “রাজি আবার হবে না! আমাকে পাওয়ার জন্য তো সারাক্ষণ ছোঁক ছোঁক করে ।”

মা বললেন, “রতন, তাপসীর সঙ্গে কথা বলে জানাবে বলেছে ।”

মানুষ যা ভাবে, যা মনেপ্রাণে চায়— তা কি সর্বদা পায়? পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অনেককিছুকেই ওলটপালোট করে দেয় । যাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে বলে স্বপ্ন দেখেছে, দীর্ঘদিনের আশা, সব যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল । মা ভাই - বোনদের নিরাপত্তার কথা তুলে এমনভাবে বললেন, তাপসী প্রতিবাদ করার সাহসই পেল না। জীবনটাই যেন বৃথা হয়ে গেল । পরদিন বিকেলে দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গেই রতনদা এসে উপস্থিত । তাপসী জানে রতনদা ঠিক চলে আসবে । চোখমুখ দেখেই স্পষ্ট— খুশিতে ডগমগ । রতনদা বললেন, “গতকাল তোর মা একটা প্রস্তাব দিয়েছে । শুনেছিস?” তাপসী আর কি বলবে । বলল, হ্যাঁ ।

রতনদা বললেন, “তুই তো একটা বেইমান।”

তাপসী অবাক— বেইমান!

— বেইমান না? তুই দীর্ঘদিন ধরে একটি ছেলেকে ভালোবাসিস । সোমনাথ ছেলেটি খুব ভালো ছেলে । আমার ভাইয়ের মত । আমি ওকে কয়েকদিন বলেছি, তাপসীর মত মেয়ে হয় না । লড়াকু মেয়ে । আমার বোনের মত । তুই খুব সুখি হবি সোমনাথ । দোকানে যাতে কেউ ওকে ডিস্টার্ব না করে, তার জন্য সর্বদা ওকে চোখে চোখে রাখি । তোর কোনও চিন্তা নেই । আর তুই এই প্রতিদান দিচ্ছিস? ”

তাপসী থ! রতনদা তাকে বোনের মত দেখে । এতদিন কী তাহলে ভুল ভেবে এসেছে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ ।

রতনদা আবার বললেন, “শোন তাপসী, আমি তোকে দাদার মত বলছি, সোমনাথের মত ছেলে হয় না । চাকরির চেষ্টা করছে , শিগগিরই পেয়ে যাবে দেখবি । ওর জন্য তুই অপেক্ষা কর । আমি বলছি তুই ঠকবি না । ভালোবাসার মানুষকে আঘাত দিতে নেই রে । তাহলে তুইও জীবনে শান্তি পাবি না । ”

তাপসীর সারা শরীর মনে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে । মানুষটা এতটা মহত! চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না । কোনও রকমে উঠে রতনের পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।

– দাদা, তোমার কথাই হবে । তুমি শুধু নিজের দাদার মতো আমার পাশে থেকো । রতন বোনকে দু হাতে তুলে বলল, ওরে, আমি সর্বদা তোদের পাশে আছি । কেন? তুই লক্ষ করিস না । তোর দোকানের দিকে সারাক্ষণ চেয়ে থাকি । সেইদিন মাতালগুলোকে দেখে আমি তটস্থ ছিলাম । শুধু তোর একটা ডাকের অপেক্ষায় ছিলাম । তাপসী রতনকে জাপ্টে ধরে বলল—

আজ আমি নিজের দাদা পেলাম । আমার মত সুখী পৃথিবীতে আর কেউ নেই বলেই ফোঁপাতে লাগল ।

সমাপ্ত

লেখক পরিচিতি: 

জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।

তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট,  দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর  ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।

তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। 

Tatkhanik digital bengali / bangla online web e magazine