Advt

Advt

Khudha, Story / Galpo, 3rd Part, by Juthika Chakraborty, Tatkhanik digital bangla/ bengali online e magazine, ক্ষুধা, গল্প, ৩য় পর্ব

Khudha, Story / Galpo, 3rd Part, by Juthika Chakraborty, Tatkhanik digital bangla/ bengali online e magazine, ক্ষুধা, গল্প, ৩য় পর্ব

 

২য়পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

৩য় পর্ব শুরু

তারি দিশাহারা । এবার সে কি করবে । সন্ধেবেলা চাদর মুড়ি দিয়ে সোনাদির ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়ল । পাশের বাড়িতে নারায়ণ পুজোর নেমন্তন্ন । মা আর সোনাদি গেল , অনেক ডাকাডাকি করাতেও তারি গেল না । ওরা চলে গেল । তারি শুয়ে শুয়ে কাঁদছে , আর ভাবছে তার ভাগ্যে কি আছে , এমন সময় ছোড়দা এল চুপিচুপি । ছোড়দা সন্ধেবেলা একটু নেশাটেশা করে , অনেক বকাবকি খেয়েছে বাপের কাছে । কিন্তু ছোড়দা কাউকেই তোয়াক্কা করে না । বাবা - মাও ছোড়দার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে মেয়ে খুঁজতে । যত তাড়াতাড়ি পারে ছোটোছেলের বিয়ে দিতে হবে । ছোড়দা সটান এসে তারির গায়ের চাদর টেনে ফেলে তারিকে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এ্যাই শোন , তোর কি হয়েছে বুঝেছি । ভয় পাস্ না বড়দার হুমকিতে। আমি আড়াল থেকে সব শুনেছি। তুই কাঁদছিস কেন এত ? ’ 

তারি কান্নায় ভেঙে পড়ল , বলল , ' ছোড়দা বাঁচাও আমাকে । ' নিত্য বলল , ' বাঁচাবো বলেই তো এলাম । মা - বোন চলে যেতেই তোর কাছে এলাম , ভাবিস না । বৌদিটা তো বিছানায় শুয়ে শুয়েই কাটালো , বড়্দার জীবনটা বরবাদ হয়ে গেল । কষ্টও হয় ওর জন্য । এখন কান্না থামা , শান্ত হ’ । চল্ আমার ঘরে চল। প্রথমে তারি ছোড়ার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেও শেষ কথাটায় এসে বোবা হয়ে গেল । মাতাল ছোড়দার ঘরে গিয়ে কি হবে তারি আর ভাবতে পারল না । অনেক করে ছোড়দার কথায় বাধা দিয়ে তারি বলল, ' আজ থাক ছোড়দা কাল তোমার কথা শুনবো । ' ছোড়দা অনেক চেষ্টা করেও যখন তারিকে নিজের ঘরে টানতে পারল না তখন খানিকটা হতাশ হয়েই তারিকে রেহাই দিল । তারি ছুটে ছাতে চলে এল । কী করবে সে এবার ? মা কি ওর কথা বিশ্বাস করবেন । হায়, হায়, পৃথিবীটা ক্ষুধারই কি রাজ্য? তার এই শেষ আশ্রয়টুকুও কি হারাতে হবে । ক্ষুধার অন্ন , পরনের বাস , বাসের গৃহ তারির যে কিছুই নেই । পিছনে পায়ের শব্দে ফিরে দ্যাখে ছোড়দা এসে দাঁড়িয়েছে । তারি ছোড়দার দিকে ফিরে হাত জোড় করে বলল , ' ছোড়দা আমি নিচু জাতের মানুষ , তোমরা আমাকে পথের থেকে তুলে এনে আশ্রয় দিয়েছ শুধু নয় , খাওয়া - পরা , সেইসঙ্গে লেখাপড়া করারও সুযোগ দিয়েছো , আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ । কিন্তু তোমার কিংবা বড়দার কারুর চাহিদাই আমি মেটাতে রাজী নই । আমাকে রেহাই দাও । আমি চলে যাব । ' ‘ তারি ভুল করিস না , বাইরেটা আরও সর্বনেশে । তাছাড়া আমি তো তোকে খারাপ কিছু বলিনি , তোর সারাজীবনের দায়িত্ব নেব । কেউ এসে যাবে , চল আমার ঘরে চল । ' ‘ আমাকে একটু ভাবতে সময় দাও ছোড়দা । ' ' ঠিক আছে, ঠিক আছে । যত খুশি ভাব । ' ছোড়দা চলে যেতেই তারি নেমে এসে দ্যাখে মা বারান্দায় গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে । তারি চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ল, রাতে খেল না , শরীর খারাপ বলে শুয়েই থাকল । পরদিন সন্ধেবেলায় তিনতলার ঠাকুরঘরে এল মাকে একলা পাবে বলে । মার কাজ হয়ে গেলে পিছন ফিরে তারিকে ম্লান মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন , ' তোর কি হয়েছে রে । সারাদিন উঠলি না , খেলি না , কাল রাতেও খাসনি , বলবি আমাকে কি হয়েছে তোর ? ’ তারি শুধু ‘ মা ’ বলেই আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল , মার হাঁটুর উপরে মাথা রেখে কাঁদতেই থাকল । অনেকক্ষণ কাঁদার পর ঠোঁট টিপে রেখে অতি কষ্টে বলল , ‘ মা আমি আমাদের গাঁয়ে ফিরে যাব । সেখানে মণ্ডল খুড়োর উঠোন যখন ঝাঁট দিতাম তখন দেখেছি অনেক মেয়ে, বৌ মণ্ডল খুড়োর বাড়ীতে দুপুর - বিকেল বিড়ি বাঁধত । আমি ফিরে গেলে মণ্ডলখুড়ো কাজের বদলে আমাকে নিশ্চয় খেতে দেবে । তুমি কাউকে দিয়ে আমাকে নিজের গাঁয়ে ফেরৎ পাঠিয়ে দাও মা । ' গিন্নিমা সব শুনলেন , বুঝলেন সাংঘাতিক কিছু হয়েছে নইলে তারির মতো মেয়ে সংসারে যার আপন বলতে কেউ নেই , লেখাপড়া শেখার নেশা ছেড়ে ভেসে যেতে চাইছে অকুলে । তারির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন , সারাদিন খাস নি কিছু , রাতে খেয়ে শো , কাল সকালে লোক খুঁজব কাকে দিয়ে পাঠাব তোর গাঁয়ে । তবে তার আগে আমাকে বলতে হবে কেন তুই চলে যেতে চাস আমাদের ছেড়ে । তুই মন খুলে বল , কি হয়েছে । ' তারি বলল , ' তোমার বিশ্বাস হবে না , কারুরই বিশ্বাস হবে না কিন্তু আমি তোমাকে কিছুতেই মিথ্যাও বলতে পারব না । ’

– ‘বল তুই । ’ তারি শুকনো গলায় মার কাছে ছোড়দা ও বড়দার সব কথাই বলল । আরও বলল, ' মা প্রাণ থাকতে আমি তোমাদের সর্বনাশ করব না, এবার বল আমার চলে যাওয়াই কি ভাল না ? ' মা বললেন , ' ঠিক আছে , তোর কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তবু বলছি নিজের থেকে কোথাও চলে যাস না । মন দিয়ে পড়াশোনা কর আর কদিন পরেই তো বাৎসরিক পরীক্ষা – সেটা ভালভাবে দে । তোর সব দায়িত্ব আমি নিলাম। রাতে শোবার ঘরে দরজা বন্ধ করে শুবি ।

দু'মাস পরে তারির পরীক্ষা শেষ হল, তারপর গিন্নিমার চেষ্টায় ওদের দোকানের নিবারণ দাসের সঙ্গে তারির বিয়ের ব্যবস্থা হল । ছোটোখাটো হলেও অনুষ্ঠানে কোনো ত্রুটি রইল না । আর সাতপাঁক ঘোরার সময়ে তারি প্রাণপণে বড়দা, ছোড়দার গলা আঁকড়ে পিড়িতে বসে রইল । হতভাগী তারির জন্য আর কী ভাল ব্যবস্থা হতে পারতো! 

 

সমাপ্ত

লেখিকার পরিচিতি 

যুথিকা চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৪২-এ । মালদায় বেড়ে ওঠেন। সেখানে তার পড়াশোনা শুরু হয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও বাংলায় স্নাতকোত্তর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে। ১৯৬২-তে মালদহ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পবিত্র কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করে পরবর্তীতে ১৯৭১ থেকে ২০০২ পর্যন্ত সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার গুরুদায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, লেখালেখিতেও তার সহজাত অধিকার। তিনি সেতার বাদন ও বই পড়তে ভালোবাসেন। বর্তমান ভ্রমণকাহিনীটি তার অন্যান্য পরিচয়কে সমুন্নত করে তুলেছে।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বই একটি।