Advt

Advt

Saishabe Kabi Nazrul, Feature / Probondho, by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik digital online bengali e magazine, শৈশবে কবি নজরুল

Saishabe Kabi Nazrul, Feature / Probondho, by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik digital online bengali e magazine,  শৈশবে কবি নজরুল

 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (1861-1941)- এর পরেই বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি হচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম (1899-1976) অবিভক্ত বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে (24 মে 1899) জন্মগ্রহণকারী কবি নজরুলের ডাক নাম ছিল দুখু মিঞা। তাঁর পিতা ধর্মপ্রাণ ফকির আহমদ এবং মাতা জাহেদা খাতুন। শৈশবেই (মাত্র আট বছর বয়সে) পিতৃহীন দুখু মিঞা তথা কাজী নজরুলের দারিদ্র্যের মধ্য দিয়েই জীবনের সূচনা হয়।

চুরুলিয়া গ্রামের বিশিষ্ট মৌলবী কাজী ফজলে আহমদের কাছে নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। তাঁর ছিল জ্ঞান আহরণের তীব্র ক্ষুধা। পাশাপাশি, দুরন্তপনায়ও তিনি ছিলেন সেরা। দুঃসহ দারিদ্র্য মাঝে মাঝেই নজরুলকে সরস্বতীর শুনি শুচিশুভ্র অঙ্গন থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে কর্ম-কোলাহলের রূঢ় রুক্ষ জগতে। বেঁচে থাকার প্রাণান্ত  চেষ্টায় তিনি জীবিকার সন্ধান করেছেন। কিন্তু তাঁর জানা ও শেখার আগ্রহ থেমে থাকেনি। তিনি সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে পাঠ করেছেন কোরান- রামায়ণ- মহাভারত- ভাগবত- পুরাণ- কথকতা- যাত্রাগান। উর্দু- আরবি- ফারসি- সংস্কৃত ভাষা পাঠেও কাজী নজরুলের আগ্রহ ছিল প্রচুর। শৈশবেই তিনি অনেক বাউল- সুফি- ফকির- সাধু- সন্ন্যাসীর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। মানবতার মহামন্ত্রের দীক্ষার পাশাপাশি দুঃখ জয়ের প্রেরণা তিনি শৈশবেই লাভ করেছিলেন।

দশ বছরের বালক নজরুল গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সংসারের চাপে ঐ মক্তবেই এক বছর শিক্ষকতা করেন। বারো বছর বয়সে তিনি লেটোর দলে যোগদান করেন। পাশাপাশি দলের জন্য পালাগান রচনা করেন। এত কিছুর পরেও তাঁর দুরন্তপনার কমতি ছিল না। বালক নজরুলের দুরন্তপনার জ্বালাতন থেকে নিষ্কৃতি পেতে গ্রামের কয়েক জন মাতব্বর তাঁকে রানীগঞ্জের কাছে শিয়ারশোল রাজস্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু স্কুলের বাঁধাধরা জীবন নজরুলের পছন্দ হল না। সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার কিছুদিন পর মোটামুটি তেরো বছর বয়সে তিনি স্কুল ত্যাগের পাশাপাশি বাড়ি থেকে পলায়ন করেন। এভাবেই নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে নজরুলের শৈশব পেরিয়ে কৈশোর, কৈশোর পেরিয়ে যৌবন অতিবাহিত হয়।

কবি নজরুলের সৃষ্টিশীল জীবন 1942 সাল পর্যন্ত। 1942 সালের অক্টোবরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তিনি সুদীর্ঘ কাল 'জীবন্মৃত' অবস্থায় কালাতিপাত করেন। 1972 সালে তাঁকে কলকাতা থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে 1976 সালের 29 আগস্ট (১২ই ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ)।

1941 সালের 16 মার্চ কাজী নজরুল ইসলাম বনগাঁ সাহিত্য সভার চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলনে প্রদত্ত সভাপতির ভাষণে তাঁর বাল্যকালের স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে- "আমার সাহিত্য সাধনা বিলাস ছিল না। আমি আমার জন্মক্ষণ থেকে যেন আমার শক্তি বা আমার অস্তিত্বকে, existence-কে খুঁজে ফিরেছি। যখন আমি বালক তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার কান্না আসতো, বুকের মধ্যে বায়ু যেন রুদ্ধ হয়ে আসতো। আমার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, 'ঐ আকাশটা যেন ঝুড়ি, আমি যেন পাখির বাচ্চা, আমি ওই ঝুড়িচাপা থাকবো না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।' তাই আমি 'ইউনিভার্সিটি'-র দ্বার থেকে ফিরে 'ইউনিভার্স'-এর দ্বারে হাত পেতে দাঁড়ালাম।" এটাই কবি নজরুলের শৈশবের মর্মকথা।

লেখক পরিচিতি 

ড.বাসুদেব রায়ের জন্ম ১৯৬২ সালে। কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যের জগতে আত্মপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশিত বই মানব' (কাব্যগ্রন্থ), দ্বিতীয় বই রক্তের বাঁধন (উপন্যাস)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণা করলেও প্রবন্ধ সাহিত্যের দিকে তার ঝোঁক বেশি। তদুপরি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তথা বই লিখতে তিনি অধিকতর উৎসাহী। গবেষণামূলক বইয়ের পাশাপাশি সাধু-মহাপুরুষদের জীবনী-গ্রন্থ, একাঙ্কিকা ইত্যাদি সম্পাদনাও করেছেন তিনি।

ড.বাসুদেব রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। হার উল্লেখযোগ্য গবেষণা গুলোর মধ্যে রয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ', চণ্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে সমাজ-চিত্র ইত্যাদি। তাঁর যৌথ রচনা ও উপেক্ষণীয় নয়।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাসুদেব রায় নিরলস ভাবে লিখে চলেছেন। এছাড়াও নতুন করে তিনি একক ও যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক কাজে হাত দিয়েছেন।  নিয়মিত বিভিন্ন e magazine-এ লেখেন।    

Tatkhanik digital bengali online e magazine.