Advt

Advt

Phire Pelam (Rammya Rachana), by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik Digital Online e magazine, রম্য রচনা, ফিরে পেলাম

Phire Elam (Rammya Rachana), by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik Digital Online e magazine, রম্য রচনা, ফিরে পেলাম

 

বেখেয়ালি মানুষ হিসেবে আমার খুব সুনাম আছে। বাড়ি থেকে শীলা চাল আনতে বললে ডাল নিয়ে আসি, আলু বললে পেঁয়াজ। পাড়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমিত আমার অবস্থা শুনে বলল দাদা এটা আলঝেইমারের লক্ষণ, সব কিছু কাগজে লিখে নিয়ে ঘর থেকে বেরোবেন, নইলে বাড়িতে গিয়ে অযথা বৌদির গালাগালি শুনতে হবে আপনাকে । আমি আশ্বস্ত হয়ে শীলাকে বললাম আমার আলঝেইমার শুরু হয়েছে।এখন থেকে তুমি সব চিরকূটে লিখে দেবে, আমি দোকানে গিয়ে লিস্ট মিলিয়ে সব জিনিষ আনব।পুরনো ইলেকক্ট্রিক বিল, গ্যাসের বিল, আর ওষুধের প্রেসক্রিপশনগুলো নিখুঁতভাবে ভাঁজ করে, কাঁচি দিয়ে কেটে চিরকুট বানিয়ে দরজার পাশেই ঝুলিয়ে দিলাম যাতে শীলার কাগজ খুঁজতে পড়েশান না হতে হয়। এই পদ্ধতি খুব কার্যকরী হল প্রথম দিকটায়। শীলা গোল বড়  অক্ষরে জিনিষের ফর্দ বানিয়ে চিরকূট আমার বুক পকেটে রেখে দেয় আর আমি দোকানে গিয়ে চিরকূটটি ধরিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকি। ব্যাগে জিনিষ পুরে দিলে দাম চুকিয়ে দিয়ে ঘরে জিনিষ আনি। শীলাও খুশি, আমিও খুশি। বিকেলে ঘুরতে বেরিয়ে ও ওর বান্ধবীদের কাছে আমার ভিমরতি নিয়ে গল্প করে সবাইকে যেভাবে আনন্দ দিত সেটা বন্ধ হয়ে গেল।

 কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমার আলঝেইমার বা ভিমরতি আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাড়ি থেকে চিরকুট নিয়ে বেরোই কিন্তু চিরকূট যে আমার পকেটে আছে সেটাই ভুলে যাই, ফলে আবার চালের জায়গায় ডাল আর রুই মাছের জায়গায় কাতলা মাছ নিয়ে ঘরে ফিরে সেই গালাগাল খাওয়া। শেষ পর্যন্ত শীলা চিরকূট ছেড়ে দিয়ে নতুন এক পন্থা আবিষ্কার করল। চাল আনার দরকার হলে ও ঘর থেকে বেরোবার আগে বেশ চেঁচিয়ে বলে দিত, ‘পাঁচ কিলো ডাল আর দুকিলো নুন আনবে আজ।আমি পাঁচ কিলো চাল আর দুকিলো চিনি নিয়ে হাজির হতাম। শীলা মুচকি হেসে বলত, ‘বাহ্‌ তোমার স্মৃতি শক্তি অনেক ভালো হয়ে গেছে দেখছি। কেলি ফস থার্টি কাজ দিয়েছে মনে হচ্ছে।আমার এক হোমিওপ্যাথ ডাক্তার বন্ধুর নির্দেশেই সকালের জল খাবারে দুধ বা দই-এর সঙ্গে কেলি ফস খাওয়ায় আমাকে শীলা। আমার উপর ও কাজটা ছেড়ে দিলে কেলি ফসের জায়গায় নাক্স ভমিকা বা আর্ণিকা খেয়ে ফেলব সেরকম সম্ভাবনা আছে বলেই ওষুধ খাওয়াবার দায়িত্বটা ওকেই নিতে হয়েছে। কেলি ফসের গুনে এখন অন্তত যা বলে তার উল্টোটা আনতে ভুল হয়না আমার।

কিন্তু বাড়ির সমস্যা এই অদ্ভুত উপায়ে মিটলেও বাইরের সমস্যা থেকেই গেল। ব্যাংক থেকে ছেড়া নোটের বান্ডিল আর দোকান থেকে অচল দশ টাকার কয়েন আমার ঘরেই জমা হয় যা চালাবার জন্য আমাকে হাটে বাজারে অনেক ঘোরাঘুরি করতে হয়। সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিতা মহিলাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে, ‘কেমন আছেন দিদি? টুবলুরতো এবার ক্লাস এইট হল, তাইনা?’  বললে মহিলা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন দুমিনিট তারপর বলেন, ‘আপনাকেতো ঠিক চিনতে পারলামনা ভাই। আমার ছেলের নামতো পিন্টু।

 সেদিন মন্দির থেকে ফিরে চটি রাখতে গিয়ে শীলার বাক্যবাণ শুনতে হল আমাকে। এটা কার স্যান্ডাল পায়ে গলিয়ে নিয়ে এলে তুমি?’ আমি বললাম,‘কেন এটাতো আমারই চটি, গত মাসে বাটা থেকে কিনে নিয়ে এলাম মনে নেই তোমার?’

এটাতো অনেক দামি স্যান্ডাল,’ শীলা বলল। ভালভাবে চেয়ে দ্যাখ, এটা তোমার বাটার সেই সস্তা চটি নয়।

আমি এবার পায়ের দিকে ভালোভাবে তাকালাম। সত্যিইতো বাটা নয়, অন্য এক নামি কোম্পানির ছাপ রয়েছে ওটাতে। মন্দির থেকে ফিরবার সময় একটু ভারি ভারি লাগছিল বটে চটিটা কিন্তু ওটা আমার মনের ভ্রম ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম আমি।

যার স্যান্ডেল তুলে নিয়ে এসেছ সে তোমার চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার করছে দেখ গিয়ে। শিগগির মন্দিরে গিয়ে এই চটি রেখে দিয়ে নিজেরটা নিয়ে এস।

আমি অগত্যা ছুটলাম চটি বদল করতে কিন্তু আমার বাটার চটি মন্দিরের বাইরে দেখতে পেলামনা। আগে কালে ভদ্রে মন্দিরে যেতাম আমি, এখন গিন্নির খোঁচায় রোজ একবার মন্দিরের বাইরে গিয়ে আমার চটি খুঁজি আমি। এভাবে একমাস পার হয়ে গেল। মাদার ডায়েরির লাইনে অনেকদিন পর দেখা হল আমার বন্ধু সুমিতের সঙ্গে। ও কলকাতা গিয়েছিল ওর ভাগ্নের বিয়েতে। একথা সেকথার পরে আমি আমার মনের দুঃখের কথা বলেই ফেললাম। আফটার অল, আমার যে আলঝেইমার সেটাতো ও-ই প্রথম আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল।

সুমিত বলল, ‘দেখি আপনার বদলানো চটি।আমি আমার পা বাড়িয়ে দিলাম।

সুমিত বলল, ‘আপনার ভাগ্য ভাল দাদা। আপনার চটি কলকাতা ঘুরে এসেছে। দেখুন।সুমিত পা বাড়াল, দেখলাম আমার চটি ওর পায়ে।

 একমাস ধরে খুঁজছি আমার চটি, এখন পেয়ে গেলাম। এটা কি করে হল?’ চটি বদল করতে করতে জিজ্ঞেস করলাম।

আলঝেইমার,’ মুচকি হেসে বলল সুমিত। সেদিন মন্দিরে গিয়ে আপনার চটি পরে বাড়ি ফিরে কবিতার গালাগাল শুনে বুঝতে পারলাম ওটা আমাকেও ধরেছে। ও এখন আমাকে চিরকূট দেয়। দেখুন।

সুমিত ওর পকেট থেকে চিরকূট বের করল। দেখলাম লেখা আছে কালো চামড়ার নতুন মজবুত আট নম্বর ফ্লেক্স কোম্পানির চটি কারো পায়ে দেখলে তাকে চেপে ধরবে। ওটা তোমার।

এটা একমাস আগেই দিয়েছিল কবিতা, আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম।  আপনি চটির কথা বললেন, তাই মনে পড়ে গেল।

   

 লেখক পরিচিতি

জন্ম এবং শিক্ষা কলকাতায়; কর্মজীবন দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রালয়ে। গল্প লেখার শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে আসছেন গত পঞ্চাশ বছর ধরে। ইংরেজিতে দেশে এবং বিদেশে ওঁর কিছু গল্প এবং তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি থেকেও ওঁর কয়েকটি গল্প প্রচারিত হয়েছে। বাঙলায় একটি উপন্যাস এবং একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশ, আনন্দবাজার, সাপ্তাহিক বর্তমান, নবকল্লোল, কালি ও কলম(বাংলাদেশ) এবং দিল্লি ও কলকাতার অনেক সাহিত্য পত্রিকায় গল্প লেখেন উনি। দিল্লি থেকে প্রকাশিত কলমের সাত রঙপত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন।           


Phire Elam (Rammya Rachana), by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik Digital Online e magazine, রম্য রচনা, ফিরে পেলাম