বর্তমান
প্রবন্ধটি পড়ার আগে গত জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে ‘জানা-অজানা’-য়
প্রকাশিত “সূর্য
স্পর্শ” প্রবন্ধটি সম্ভব
হলে আর একবার পড়ে নিতে
অনুরোধ করবো।
আমার
মতন অনেকেরই মনে এই প্রশ্নটা উঁকি-ঝুঁকি মারছে, ‘পার্কার
সূর্য-যান
এখন কোথায়?’
এই প্রশ্নটা
মনে জেগেছে,কারণ কয়েকজন অনুসন্ধিৎসু পাঠক আমার
কাছে জানতে চেয়েছেন পার্কারের খবর।
পার্কারের
খবর দেওয়ার আগে প্রথমেই একটি দুঃসংবাদ দিতে
হচ্ছেঃ-
দুঃসংবাদটি
হল যে মহান সূর্য-বিজ্ঞান
সৃষ্টিকারী মানুষের নামে ‘নাসা’র এই
প্রকল্প শুরু হয়েছিল সেই বিখ্যাত সৌর বিজ্ঞানী প্রফেসার ইউজিন পার্কার গত ১৫ই
মার্চ মঙ্গলবার ৯৪ বছর বয়সে দেহরক্ষা করেছেন। খুবই
দুঃখজনক সংবাদ। তবুও
বৈজ্ঞানিক মহল এই ভেবে সন্তুষ্ট অনুভব করছেন যে
প্রফেসার পার্কার জীবনভর যা নিয়ে গবেষণা করলেন সেই সূর্য সম্বন্ধে বিস্তৃত জ্ঞান
লাভের জন্য পাঠানো ‘সূর্য-যান’ উনি
দেখে যেতে পারলেন আর জেনেও গেলেন যে অদূর ভবিষ্যতে সূর্য সম্পর্কে আরও অনেক অজানা
তথ্য জানতে পারবে পৃথিবীর মানুষ।
লেখার শুরুতেই এই মর্মান্তিক দুঃসংবাদ দেবার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
অনেকের সুবিধার জন্য ২৩ জানুয়ারির প্রবন্ধটির কিছু অংশ নিচে তুলে দিলামঃ
…‘নাসা’ জানিয়েছে ‘পার্কার’ সূর্য-যান করোনাকে ছুঁয়ে
বর্তমানে (২১শে নভেম্বর,২০২১) ৮৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে লিব্রা বা তুলা নক্ষত্র মণ্ডলীতে
অবস্থান করছে।
এবার দেখা যাক সূর্যের
উপরিভাগের তাপমান ৬ হাজার ডিগ্রি অথচ কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত করোনার
তাপ কি করে অবিশ্বাস্য ১০ লক্ষ ডিগ্রি হয়? এই তথ্য যুগ যুগ
ধরে বৈজ্ঞানিকদের বিভ্রান্ত করে এসেছে। আমরা জানি একটা জ্বলন্ত
উনোন থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ততই তাপ কম অনুভূত হয়। তাহলে সূর্যের করোনাতে এত
গরম কি করে হয়? এটা কিন্তু অন্য সব
মণ্ডলীর তারার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। শেষে,১৯৪২ সালে সুইডেনের এক বৈজ্ঞানিক এর ব্যাখ্যা
প্রদান করেন। তাঁর মতে, সূর্যের উপর থেকে অহরহ যে চুম্বক-শক্তি (Magnetic field) সঙ্গে নিয়ে প্লাজমা নির্গত
হচ্ছে,তা মহাকাশে গিয়ে সূর্যের ‘ফটোস্ফিয়ার’কে ফাঁকি দিয়ে আবহাওয়া মণ্ডলের উপরিভাগে (corona) প্রচণ্ড শক্তিতে বিস্ফোরিত
হয়,আর এই বিস্ফোরণের ফলেই করোনার তাপমান হয় অবিশ্বাস্য রকম বেশি।
‘পার্কার সূর্যযান’পৃথিবী থেকে সঙ্গে নিয়ে গেছে প্রফেসার পার্কারের একটি ছবি, ওঁর ১৯৫৮ সালের বিখ্যাত ’সৌর-বায়ু’প্রবন্ধের একটি প্রতিলিপি আর ১১ লক্ষ মানুষের নাম যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে এই অভিনব প্রকল্পের ফলাফল জানার আশায়।
এই এগারো লক্ষ মানুষের
সঙ্গে বাকি দুনিয়ার কোটি কোটি সাধারণ মানুষও কি অধীর আগ্রহে দিন
গুনবেনা?
এবার
জানাই সূর্যযান ‘পার্কার’ এর
খবরঃ
মোট
সাত বছর-ব্যাপী
এই সূর্য অভিযান যান এখন পর্যন্ত সফলভাবে দুটি বছর অতিক্রম করে বর্তমানে আমাদের
পৃথিবী থেকে ২.৬১
কোটি কিলোমিটার দূরে রয়েছে আর ধীরে ধীরে (ঘণ্টায় ৫৩,৫০০কিলোমিটার
বেগে) সূর্যের কাছাকাছি এগিয়ে
যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ‘পার্কার’ সূর্য
থেকে ৬২ লক্ষ কিলোমিটার দূর থেকে পৃথিবীতে পাঠাবে নতুন নতুন
তথ্য যা আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক মহলে ‘অজানা’ রহস্য
হয়ে রয়েছে। এটাই হবে পার্কারের সবচেয়ে কাছ থেকে সূর্য পর্যবেক্ষণ আর তথ্য সংগ্রহকরার অবস্থান।
‘নাসা’ ও সারা বিশ্বের অসংখ্য বৈজ্ঞানিকের মত আমরাও অধীর আগ্রহে সেই দিনটির অপেক্ষায় বসে রইলাম।
লেখক পরিচিতি –
ড. তুষার রায়-এর স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ লেখা। ওই সময়েই “শুকতারা”তে “অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু “Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পান।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর আই. আই. টি, দিল্লি থেকে পড়াশুনা ও গবেষণা,কিছুদিন অধ্যাপনা,তারপর সরকারী বৈজ্ঞানিক দপ্তরে কার্যকালে পৃথিবীর কয়েকটি দেশেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।
পঞ্চাশটিরও বেশি প্রবন্ধ নামী বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে (ইন্দোর) আমন্ত্রিত প্রবন্ধ পাঠ করার গৌরবও ভাগ্যে ঘটেছে। বিগত দেড় বছর করোনার প্রকোপে ছাপাখানা বন্ধ থাকার কারণে অনেক ই-ম্যাগাজিনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।
দিল্লি থেকে প্রকাশিত বহুল জনপ্রিয় ই-ম্যাগাজিন, “তাৎক্ষণিক”এর ‘জানা-অজানা’ কলমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ টি জনপ্রিয়-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি “দেশ” ওয়েব-সাইটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।