Advt

Advt

Meena, Jhar, Ramar Galpo / Story (Three Anu /short stories), by Manisha Kar Bagchi, Tatkhanik digital bengali online e magazine, তিনটি অনুগল্প

 মনীষা কর বাগচী-র

তিনটি অনুগল্প

Meena, Jhar, Ramar Galpo / Story (Three Anu /short stories), by Manisha Kar Bagchi, Tatkhanik digital bengali online e magazine, তিনটি অনুগল্প


সকাল থেকে বার বার মীনার চোখের পাতা ভিজে উঠছে। কিছুতেই চোখের জল বাঁধ মানছে না। তবে এই জলটুকু বড় সুখের জল, দুঃখের কান্না নয়। ঈশ্বরের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার জল।

জীবনে অনেক দুঃখ কষ্ট সে সহ্য করেছে। এই দিনটি দেখার জন্য সে কৃচ্ছ সাধনা করেছে। সেই যে কত বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে, সেই থেকে কষ্ট সহ্য করে চলেছে আর মনে মনে ভেবেছে ছেলে,মেয়ে দুটো মানুষ হলে তার সব দুঃখ দূর হবে। আজ বার বার মীনার চোখের সামনে তার মায়ের মুখটা ভেসে উঠছে। মা বলত....".. দুঃখ করিস না মা তোর একদিন খুব ভাল দিন আসবে। তোর ছেলে অনেক বড় হবে তোর সব কষ্ট সে দূর করবে। "

তখন মীনা বলত" মা ওরা অনেক বড় হোক তুমি শুধু সেই আশীর্বাদ দিও,আমাকে ওদের দেখতে হবে না। ওরা যেন আমার মত কষ্ট না পায়।"

আজ এক এক করে জীবনের সমস্ত ঘটনা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সেই পনেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের ক-দিন পরেই বুঝতে পারে স্বামীর বুদ্ধি তেমন ভাল নয়। কখন কি করবে সে নিজেই বোঝে না। কোনো দিন কাজে যায় কোনো দিন যায় না। কিছু বললে মারামারি গালাগালি করে। স্বঅভিমানী মীনা কাউকে কিছু না বলে শুধু চোখের জল ফেলেছে। যে মেয়েটি একদিন অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত সে আজ জীবনযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত। বেঁচে থাকার জন্য তাকে কি-ই না করতে হয়েছে। সে সব কথা এখন আর সে মনে করতে চায় না।

আজ তার ছেলে অনেক বড় হয়েছে। অনেক বড় চাকরি পেয়েছে । কাল রাতে এক মাসের বেতন আশি হাজার টাকা মীনার হাতে তুলে দিয়েছে তার ছেলে। এই সুখ সে রাখবে কোথায়? যে মীনাকে কত দিন না খেয়েও থাকতে হয়েছে আজ তার ছেলে প্রত্যেক মাসে আশি হাজার টাকা বেতন পাবে? ভাবলেই খুশিতে তার চোখ বেয়ে জল নামছে। 

মায়ের চোখে জল দেখে ছেলে বলছে "মা কেঁদোনা তোমার চোখের জল মুছিয়ে দেব বলেই তো এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। আমার বেতন আরও বাড়বে তুমি শুধু আশীর্বাদ করো আমি যেন আমার মাকে কখনো কষ্ট না দেই। তার চোখের জলের কারণ যেন কখনো না হই।"

আনন্দে খুশিতে আপ্লুত হয়ে মীনা তখন তার মানিক রতন কে বুকে টেনে নিল...

--------------------------

Meena, Jhar, Ramar Galpo / Story (Three Anu /short stories), by Manisha Kar Bagchi, Tatkhanik digital bengali online e magazine, তিনটি অনুগল্প


ঝড় উঠেছে ভয়ঙ্কর ঝড় । গাছ পালা ভেঙ্গে চুড়মার। সোঁ, সোঁ শব্দে কান ঝালা পালা।

ঝড় তো থেমে যাবে কখনো না কখনো। এই কালো রাত শেষ হবে সকাল হলেই কিন্তু অভি-র মনে যে ঝড় উঠেছে সে ঝড় তো থামে না। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বয়ে চলেছে ঝড়। অসহ্য একটা যন্ত্রণা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। শরীর মন দুটোই ভীষণ অশান্ত।

অশ্লীল চিন্তা ভাবনা কিল বিল করছে মনের মধ্যে।

পাশে শুয়ে আছে তার প্রেমিকা ওরফে বৌ। তাকে ছোঁয়ার অধিকার অভি-র নেই। এক ছাদের নিচে একই বিছানায় স্বামী-স্ত্রী শুয়ে আছে কিন্তু সেটা কাছে নয়,পাশে নয়,যেন দুজন দু মেরুতে।

বাইরের ঝড়ের থেকেও প্রবল ঝড় উঠেছে অভি-র মনে,নিজেকে সামলাতে পারছেনা সে। তার মনে হচ্ছে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করে। আদরে সোহাগে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় তাকে। ভালবাসায় ভালবাসায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় উত্তাল সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের দেশে,সেই ওর সঙ্গে মিলনের প্রথম রাতের মত।

সেটা যে সম্ভব নয়। সন্দেহ করে করে অভি-র জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছে এক্কেবারে। অভি জানেনা এই নরক যন্ত্রণা তাকে আর কতদিন ভোগ করতে হবে। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে সামনে নানা রকম সুস্বাদু খাবার অথচ খাওয়ার উপায় নেই অভি-র হয়েছে সেই অবস্থা।

ছোট বেলা থেকেই অভি খুব লাজুক। নিজের মনের কথাটা কাউকে খুলে বলতে পারে না। প্রেমাকেও সে খুলে বলতে পারেনি কোনোদিন কোনো কথা। কোনো দিন সে প্রেমার অন্যায় ব্যবহারেরও প্রতিবাদ করতে পারে নি। সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন এই ভেবে চুপ করে গেছে। প্রেমার সঙ্গে যখন প্রেম করত তখন প্রেমের কথাটাও অভি আগে বলতে পারেনি প্রেমাই প্রথমে বলেছিল।

যখন সবে সে বড় হল,যখনই ক্লাসে কোনো মেয়ের সঙ্গে ছোঁয়া লেগে যেত তার রোম রোম কেঁপে উঠত ভাললাগায়। খুব ইচ্ছা করত তাদের পাশে গিয়ে বসতে আরো একটু ভাল করে ছুঁয়ে দেখতে কিন্তু অভি কখনো কাউকে ছুঁয়ে দেখে নি। কাউকে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টাও করে নি। ভেবেছে বিয়ের পর সব কিছু হবে।

কত আশা নিয়ে,কত ভালবাসা নিয়ে বিয়ে করেছিল সে। ক'টা বছর আনন্দে কেটেও ছিল তাদের। একটা বাচ্চা নিয়ে তাদের সুখের সংসার ছিল। এখন সংসার নেই ওটা যেন একটা জেলখানা। নিজেও কথা বলবে না,কোনো বান্ধবীর সঙ্গেও কথা বলতে দেবে না। অষ্ট প্রহর চলছে পাহারা । শুধু বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে এই সব সহ্য করে চলেছে অভি। এই নিদারুণ যন্ত্রণার শেষ কোথায় কে জানে...

 কখনো না কখনো জীবনের চলার পথ ঝরনা ধারায় ধুয়ে যাবে সেই অপেক্ষা করে চলেছে অভি....!

 

-----------------------------------

Meena, Jhar, Ramar Galpo / Story (Three Anu /short stories), by Manisha Kar Bagchi, Tatkhanik digital bengali online e magazine, তিনটি অনুগল্প


      একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে। ঝিরঝিরে হাওয়া বইছে। বাইরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রমা। শীতল বাতাসে রমার শরীর ঠান্ডা হলে কি হবে,মনে তো তার রাবণের চিতা জলছে। দুশ্চিন্তার পাহাড় তাকে ঘিরে ধরেছে চারিদিক থেকে।

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে কোনো না কোনো গল্প থাকে। আমি তো বলি আমাদের জীবনটাই এক একটা আস্ত গল্প। একটুখানি গভীর ভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারব জীবন মানেই গল্প।

        সেই ছোট্ট রমা আমি একদিন বড় হলাম। পড়াশুনা করে অনেক বড় হলাম। চাকরি পেলাম। ভেবেছিলাম জীবনকে যা বলব জীবন সেটাই করবে। যেভাবে চালাব সেই ভাবেই চলবে।

     কিন্তু গল্প যে অন্য রকম লিখেছেন সেই মহান লেখক। শুধু টাকা পয়সা থাকলেই সব কিছু পাওয়া যায় না,ভাগ্য আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমার গল্প শুরু হল আমার বিয়ের দিন থেকে। ভালবেসে বিয়ে করলাম অনিকেত কে। সে কি আনন্দের দিন। হাসি আনন্দে কেটে গেল কতগুলো বছর। একটা মেয়ে হল। অনির সে কি আনন্দ। মেয়ে যেন তার প্রাণ। কোনো মতে ডিউটি শেষ করেই পরি-মরি করে বাড়ি ছুটে আসত কখন মেয়ে কে দেখবে।

সেই ছোট্ট বেলা থেকেই রমা স্বপ্ন দেখত এক সুন্দর রাজকুমার টগবগ টগবগ করে ঘোড়া ছুটিয়ে আসবে আর তাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে এক স্বপ্নপূরীতে। চারিদিকে ফুল গাছ থাকবে। থোকায় থোকায় ফুটে থাকবে রং বেরংয়ের ফুল। ফুলের সুভাষে ময়ময় করবে তার মন প্রাণ। মধুর সুরে গান গাইবে পাখি। ঠিক যেমনটি চেয়েছিল সে তেমনটিই হয়েছিল। কিন্তু বিধির বিধানে অন্য কিছুই লেখা ছিল....... 

       দু বছর আগে এমনই এক দিনে আসার পথে রাস্তায় এক্সিডেন্ট হল অনিকেতের। ওখানেই বেহুশ পড়েছিল অনেকক্ষণ। ছমাস পরে হসপিটাল থেকে ছুটি পেল। সেই থেকে বিছানায় পড়ে আছে সে। যত টাকা ইনকাম করছি সবই ওর পেছনে খরচ করছি কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। কোনো রকম ইমপ্রুভমেন্ট নেই। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। ওকে ভাল করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। জানিনা আমার গল্পে লেখক আর কত কষ্ট লিখেছে।

অনির কষ্ট আর সহ্য করতে পারিনা আমি। সে কিছু বলতে পারে না শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর তার দুচোখের জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।

  তার দুচোখের জল আমি শুকাতে পারছি না এর থেকে কষ্টকর আর কি থাকতে পারে? যাকে আমি ভীষষষষষষণ ভালবাসি সে আমার চোখের সামনে তিল তিল করে মরছে অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না সেটা আমি কি করে সহ্য করি......

লেখিকার পরিচিতি -

কৈশোর কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার একটি গ্রামে। বৈবাহিক সূত্রে দিল্লিতে আসা । ছোটবেলা থেকেই লেখালিখি শুরু। স্কুলের ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হত। 

এ পর্যন্ত ছয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দিল্লি, কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লেখা প্রকাশিত হয় । প্রতিদিনই কিছু না কিছু লেখেন। লেখার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পান ।