Advt

Advt

Pinda dan, Story / Galpo, 2nd Part, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik Digital Online e magazine, পিণ্ড দান, ২য়পর্ব, গল্প

 প্রথম পর্ব পড়ার জন্য এখানেক্লিক করুন ।

Pinda dan, Story / Galpo, 2nd Part, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik Digital Online e magazine, পিণ্ড দান, ২য় পর্ব, গল্প

স্বপন জিজ্ঞেস করল ,“কি রকম খরচ পড়বে । একটা আইডিয়া দিলে ভালো হয় ।

একজন বললেন ,“খরচ আপনার উপর নির্ভর করছে । আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই । দেড়শো , আড়াইশো , পাঁচশো , হাজার , দু হাজার , পাঁচ হাজার , দশ হাজার আপনি যা বলবেন ,তার মধ্যেই সব হবে । তবে অটো ভাড়া ত্রিশ টাকা এবং দুশো টাকা আপনাকে আলাদা দিতে হবে ।

স্বপন প্রথমটায় একটু ঘাবড়ে গেল । পিণ্ডদানেও বিভিন্ন রেট ! পরে অবশ্য আলোচনা করে ধারণা স্পষ্ট হয়। সে সিদ্ধান্ত নিল বাবা - মায়ের আলাদা আলাদা পাঁচশো পাঁচশো হাজার টাকায় দুটো কুপন নেবে । একজন বললেন ,“একজনের দুটো কুপন নেওয়া যাবে না । একটা পাঁচশো টাকাতেই বাবা - মায়ের পিণ্ডদান করা যাবে । শুধু বাবা - মা কেন ? অন্য কোনো আত্মীয়স্বজন এমনকি প্রিয় পশুপাখির নামেও পিণ্ডদান হবে ঐ একই টাকায় ।

স্বপন নিশ্চিন্ত । যাক ঝামেলা তেমন নেই । রাতে হোটেলের ঘরে শুয়ে শুয়ে মাকে স্বপ্ন দেখল । দুজনে একটি পাহাড়ে উঠছে । মা তর তর করে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে গেল । কিন্তু স্বপন উঠতেই পারছে না । বার বার হোঁচট খাচ্ছে । মা ডাকছেন , খোকা তাড়াতাড়ি আয় । ঐ দিকটা কি অপূর্ব দৃশ্য । চেয়ে দেখ । দেখতে গিয়ে আবার হোঁচট খেল । আরেকটু হলে খাদেই পড়ে যেত । ভাগ্যিস মা উপর থেকে দ্রুত নেমে এসে ওকে জাপ্টে ধরে ফেলল । পরক্ষণেই ওরা একটি সুন্দর ফুলের বাগানে । জায়গাটা ঠিক কোথায় চিনতে পারল না । নাম না জানা হরেক রকম পাহাড়ি ফুল । মায়ের হাত ধরে সে হাঁটছে । মা গুনগুন করে গান গাইছিলেন । লাল,সাদা,নীল,সবুজ,হলুদ কত রকমের যে ফুল তার ইয়ত্তা নেই । আগে একসঙ্গে এত ফুল দেখেইনি কোনোদিন । ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙে গিয়েও তার উঠতে ইচ্ছে করছিল না । প্রায় মিনিট পনের কুড়ি চুপচাপ শুয়ে রইল । মায়ের এমন প্রাণখোলা হাসিখুশি অনেকদিন দেখেনি সে । মনটা আনন্দে ভরে উঠল । এতদিন বাড়িতেই মা রান্না করছেন বা খাইয়ে দিচ্ছেনএসবই দেখতো । আজকের মত এমন বাম্পার স্বপ্ন আগে দেখেছে বলে মনে পড়ে না তার । তবু একটু আপশোষ রয়ে গেল । ফুলের বাগানে মায়ের গানটা শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল । মোবাইলে অ্যালার্ম দেওয়া ছিল যে । যাক আজকের দিনটাও খুব ভালো কাটবে সে নিশ্চিত । ভোর ছটার মধ্যে স্নান সেরে ধুতি পরে সে অফিসে পৌঁছে গেল । রেজিস্টারে নাম লেখানোর পরেই অটো করে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের গয়ার প্রধান মন্দিরে এসে পৌঁছে গেল। গয়া স্টেশন থেকে মাইলখানেক দূরত্ব । স্বরাজ্যপুরী রোড , গয়া । মন্দিরে কম করে তিন থেকে সাড়ে তিনশো লোক পিণ্ডদানের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে । আজ অমাবস্যা , ভালো দিন , সে জন্যেই নাকি এত লোকের সমাগম । বিভিন্ন রাজ্য থেকে সব এসেছে । তবে বেশিরভাগই বাঙালী । বাংলাদেশ থেকেও এসেছেন বেশ কয়েকজন । মন্দিরের অফিসেই কুপন কাটতে হয় । সেই কুপনটিই পাশের আরেকটি রুমে জমা দিতে হল । এক মহারাজ একজন একজন করে নাম ডাকছেন । কোথায় বাড়ি , স্বাভাবিক মৃত্যু না অপমৃত্যু , শ্রাদ্ধশান্তি হয়েছে কিনা , কত টাকার পিণ্ডদান কররেন সমস্ত তথ্য জেনে তাঁরাই পুরোহিত ঠিক করে দিচ্ছেন এবং বারবার ঘোষণা করে দিচ্ছেন , কোনো পাণ্ডা বা পুরোহিতকে টাকা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয় । বারবার চাইলেও আপনারা মনে করলে হাতজোড় করে তাদের বিদায় করে দিতে পারেন । আপনারা যারা এখানে টাকা দিচ্ছেন , তার থেকে অর্ধেক টাকা যাবে পিণ্ডদানের সমস্ত উপকরণ কেনার জন্য । আর বাকি অর্ধেক পুরোহিতের প্রাপ্য । কারণ পুরোহিত আপনার সঙ্গে সারাক্ষণ থাকবেন এবং তিনিই আপনাকে দিয়ে পিণ্ডদানের ব্যবস্থা সম্পন্ন করাবেন । প্রায় তিনশোর উপর পুরোহিত সার দিয়ে বসে আছেন । যার যখন ডাক পড়ে তখনই উঠে আসেন। স্বপনের স্লিপ জমা দেওয়ার দেড় ঘণ্টা পর ডাক পড়ল । পাঁচশো টাকা জমা দিতেই পুরোহিত ঠিক হয়ে গেল । পুরুতের নাম রতন ভট্টাচার্য । বাঙালী । তিনিও স্বপনকে একটু তফাতে ডেকে নিয়ে একটি বেঞ্চে বসালেন । একই কথার পুনরাবৃত্তি । একটু আগে মহারাজ লাউড স্পিকারে যা বললেন , তিনিও পাখিপড়ার মত সেসব বুঝিয়ে দিলেন । একমাত্র মহারাজ যা বলেননিপূর্বপুরুষদের বাড়ি কোথায় ছিল । সেটা পাণ্ডারা নাকি বারবার জিজ্ঞেস করবে । স্বপনের পূর্বপুরুষ অর্থাৎ বাবা ঠাকুরদার জন্ম বাংলাদেশের ঢাকা জেলায় । বর্তমান নিবাস উত্তরপাড়ায় । পঁয়ষট্টি বছর আগে ঠাকুরদা উত্তরপাড়ায় জায়গা কিনে বাড়ি করেছিলেন । তবে ঢাকা জেলায় ঠিক কোথায় বাড়ি ছিল , সেসব স্বপন জানে না ।

পুরোহিত বললেন ,“তাহলে আপনাকে বাংলাদেশের কথা বলতেই হবে না । বলবেন উত্তরপাড়াতেই আদি বাড়ি । ঐ এক জায়গাতেই স্ট্রিক্ট থাকবেন । কারণ বিভিন্ন জায়গার পাণ্ডা আলাদা আলাদা । শুধুমাত্র জেলা বললে হবে না । সাব ডিভিশন , থানা এমনকি অঞ্চলের নামও বলতে হবে ।

ওরা যখন বেরোল ঘড়িতে তখন নটা বেজে পাঁচ মিনিট । পুরোহিত জিজ্ঞেস করলেন , কি করবেন ? অটো ভাড়া করবেন ? না ঘোড়ার গাড়িতে যাবেন ? স্বপন বলল ,“যেটা সুবিধে হয়, তাই করুন ।

পুরোহিত বললেন ,“অটো নিলেই ভালো হয় । তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে । তবে ঘোড়ার গাড়িতে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া কম ,দেড়শো টাকা নেবে ।

গেটের বাইরে আশ্রমের সম্মুখে সারি সারি অটো , ঘোড়ার গাড়ি , গাধার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে । ওরা একটা অটো নিয়েই বেরিয়ে পড়ল । এখানে ফিক্সড রেট । দরাদরির ব্যাপার নেই । অটোর দুশো টাকা ভাড়া । একেবারে পিণ্ডদানের কাজ সমাধা করে অর্থাৎ যেখানে যেখানে যেতে হয় যাবেশেষে আশ্রমে পৌঁছে দিয়েই তার ডিউটি শেষ । মিনিট দশেক যাওয়ার পরেই পুরোহিত বললেন , “ এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়াও । পিণ্ডদানের উপকরণগুলো কিনে নিয়ে আসি ।

এদিকে স্বপনের চায়ের নেশা । অন্তত সকালে এক কাপ না হলে মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে । যদিও কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উপবাস থাকারই কথা । তবুও পুরোহিতকে জিজ্ঞেস করল , “এক কাপ চা খাওয়া যাবে ঠাকুরমশাই ? ”

পুরুত বললেন , “ হ্যাঁ হ্যাঁ কেন যাবে না ? চা বিস্কুট খেয়ে নিন । আমার জন্যও বলুন । আমি জিনিসগুলো এনেই খাচ্ছি । জল , চা , বিস্কুটে কোনো দোষ নেই ।

স্বপন শুধু এককাপ চা খেল । তারপর একটা সিগারেট । নেশার বস্তু । না খেলে যেন শরীরটা কেমন আনচান করে । সর্বদা এক অস্বস্তি ভাব । ওরা প্রথম গেল ফল্গু নদীতে , যদিও নদীতে এখন জল নেই । শুধু ধু ধু বালি । তবে সামান্য বালি তুললেই নাকি জল পাওয়া যায় । ফল্গু নদীর উপকূলে ছোট এক মন্দির । মন্দিরে মা কালীর মূর্তি । পাশে চারদিক খোলা বিশাল বড় এক ছাদের নিচে এক চাতাল । পুরোহিত স্বপনকে নিয়ে চাতালের এক কোণে কুশাসন পেতে দুজনে মুখোমুখি বসল । সম্মুখে পিণ্ডদানের সমস্ত উপকরণ সাজিয়ে রাখা হয়েছে । পুরো চাতালটাতেই গোল গোল করে বসে অনেকেই পিণ্ডদানের কাজ করছেন । এরই মধ্যে এক পাণ্ডা এসে জিজ্ঞেস করল , “কোথায় বাড়ি ? ”

স্বপন বলল ,“উত্তরপাড়া ।

পাণ্ডা জিজ্ঞেস করলেন,“পূর্বপুরুষদের বাসস্থান কোথায় ছিল ? ”

স্বপন বলল ,“বাংলাদেশ , ঢাকা ।

শুনে পুরোহিত তো হতবাক ! এর আগে আসার পথে জায়গায় জায়গায় অনেক পাণ্ডাই জিজ্ঞেস করেছিল কোথায় বাড়ি । সব জায়গাতে একই কথা বলেছেউত্তরপাড়া এবং পূর্বপুরুষের বাড়িও উত্তরপাড়া । যা আগে বারবার করে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল । হঠাৎ আবার উলটপুরাণ কেন ? মতিভ্রম হলো নাকি লোকটার ?

পাণ্ডা জিজ্ঞেস করল , “ ঢাকা জেলার কোন্ সাব ডিভিশন ? ”

স্বপন বলল , “ আমার জানা নেই । পাণ্ডা বলল ,'ফোন করুন । ফোন করে জেনে নিন ।আড়াই হাজার সাব ডিভিশন । স্বপন সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল বার করে দিদিকে ফোন করল ।

 

ক্রমশ  ……………

তৃতীয় পর্ব পড়ুন আগামী কাল

লেখক পরিচিতি: 

জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।

তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট,  দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর  ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।

তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। 

Pinda dan, Story / Galpo, 2nd Part, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik Digital Online e magazine, পিণ্ড দান, ২য়পর্ব, গল্প