দ্বিতীয় পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন ।
ঢাকা
জেলার পাণ্ডা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে এক পুরোনো জাবদা খাতা নিয়ে এলেন ।
অবাক কাণ্ড ! বাবা চল্লিশ বছর আগে অর্থাৎ স্বপনের জন্মেরও আগে ঠাকুরদার পিণ্ডদান
করতে এসেছিলেন । তার পূর্বপুরুষদের নাম পরিষ্কার লেখা রয়েছে । নিচে বাবার পূর্ণ
স্বাক্ষর । লেখা দেখে স্বপন চিনতে পারলো— এটা বাবারই নিজের হাতের স্বাক্ষর । হঠাৎ যেন শরীরে এক শিহরণ খেলে গেল ।
অন্য এক অনুভূতি যা ঠিক বলে বোঝানো যাবে না । এরপর পাণ্ডা স্বপনের কাছে শুনে জাবদা
খাতাতে তার নাম , পুত্রের নাম , বোনেদের
নাম , বাসস্থান এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখে স্বপনের দিকে এগিয়ে
দিল— নিন স্বাক্ষর করুন । স্বপন পুরো নাম লিখে এবং তারিখ
দিয়ে ফেরত দিল । সে জানে না তার সন্তান তার মৃত্যুর পর
এখানে আসবে কিনা । পূর্বপুরুষদের বাসস্থান সঠিক বললে সেও তার পিতার উজ্জ্বল
স্বাক্ষর দেখে তার মতো আপ্লুত হয়ে উঠবে কিনা । পাণ্ডা চলে যেতেই পুরোহিত স্বপন
ভট্টাচার্য একটি মাটির পাত্রে যবের ছাতু ও আরেকটি পাত্রে জল এগিয়ে দিয়ে বললেন ,
নিন এটা মেখে তিনটে মণ্ড তৈরি করুন । স্বপন আটা মাখার মত অল্প
অল্প করে জল ঢেলে মাখতে লাগল ।
পুরোহিত
বললেন , আপনার পূর্বপুরুষের
পিণ্ডদানের পূর্বে গয়া - মাহাত্ম্যের কিছু পৌরাণিক কাহিনি শোনাই গয়াধামের
উৎপত্তি স্মরণাতীত প্রাচীন কালে শ্বেতকল্পে । প্রাচীনকালে বিশাল নামে এক অপুত্রক
রাজা গয়াশিরে পিণ্ডদান পূর্ব্বক পিতৃগণের আশীর্বাদে পুত্রলাভ করেন । ভরদ্বাজ মুনি
পিতৃগণের উদ্দেশ্যে যখন পিণ্ডদান করেন ,তখন তার জন্মদাতা
পিতা ও পালক পিতা উভয়ে যথাক্রমে শ্বেতবর্ণ ও কৃষ্ণবর্ণ হাত প্রসারণ করে
পিণ্ডগ্রহণ করেন এবং ঊর্ধ্বগতি প্রাপ্ত হন । ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র পিণ্ডদানের
সময়ে তদীয় পিতা দশরথ উভয় হস্ত প্রসারণ করে পিণ্ডগ্রহণ পূৰ্ব্বক তৃপ্তিলাভ ও
রুদ্রলোকে গমন করেন । রামগয়া ও সীতাকুণ্ড গয়া শহরের অপর পারে অবস্থিত । দশরথের প্রেতাত্মা
সীতাদেবীর হস্ত থেকে অঙুলের অভাবে বালুকার পিণ্ড গ্রহণ
করেছিলেন । ফল্গুনদী , তুলসীবৃক্ষ এবং অক্ষয়বট এই
পিণ্ডদানের সাক্ষী ছিলেন ।
রামচন্দ্র
জিজ্ঞাসা করলে ফল্গু ও তুলসী মিথ্যা বলে সীতাদেবী কর্তৃক অভিশপ্ত হয় ,
অক্ষয় বট সত্য বলে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন । দ্বাপর যুগে ভীষ্মদেব
পিতার উদ্দেশ্যে গয়াশিরে বিষ্ণুপদে পিণ্ড দিলে পিতা শান্তনু তা স্বহস্তে
গ্রহণপূর্ব্বক আশীর্বাদ করেন— বৎস , তুমি ত্রিকালজ্ঞ ও ইচ্ছামৃত্যুর অধিকারী হও । ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির
পিণ্ডদান করলে পিতা পাণ্ডু অত্যন্ত প্রীত হয়ে আশীর্বাদ করলেন— বৎস তুমি সশরীরে স্বর্গগমনে সমর্থ হবে ।
রাজকুমার সিদ্ধার্থ রাজভোগৈশ্বর্য্য পরিত্যাগ করে নির্ব্বাণ সাধনার জন্য বহির্গত
হয়ে মহাপুণ্য ক্ষেত্র গয়াধামেই ছয় বৎসরব্যাপী কঠোর তপস্যার পর বুদ্ধত্ব লাভ
করেন । মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গ পিতৃপিণ্ডাদি দানের কালে শ্রীবিষ্ণুপাদ স্পর্শে
শ্রীকৃষ্ণ প্রেমে উন্মত্ত হন । তখন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দেহে আবির্ভূত হয়ে
হরিনামের বন্যায় বঙ্গদেশ তথা সমগ্র ভারত ভাসিয়ে দিয়েছিলেন । শ্রীরামকৃষ্ণ
পরমহংসের পিতা ভক্ত ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় বিষ্ণুপাদে পিণ্ডদান করে
শ্রীরামকৃষ্ণকে পুত্র রূপে লাভ করে ধন্য হন ।
পুরোহিত
বলেন , এবার আপনার পূর্বপুরুষদের
পিণ্ডদান করতে হবে । তিনটে মণ্ড থেকে একটি মণ্ড নিয়ে ওটাকে আবার তিনভাগ করুন ।
তার একটিকে আবার তিন ভাগ করুন । এবার একটি তালুতে রেখে পিতা পিতামহের নাম বলুন ,
গোত্র বলুন , মাতার নাম স্মরণ করুন ,
মৃত কাকা জেঠার নামও বলতে পারেন । বলুন ঃ ওঁ নমঃ ...। নিন জল
দিন । আবার নিন । পূর্বপুরুষদের নাম বলুন । এছাড়া মৃত বন্ধুবান্ধব ,
প্রিয় পশুপাখির নামও বলতে পারেন । বলুন— ওঁ ... নিন এবার মস্তকে জলের ছিটে দিন । এরপর হাতে জল , কুশ ও তিল নিয়ে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করালেন । প্রথম পিণ্ডটি ফল্গুনদীর
মন্দিরে বাবা - মায়ের নাম স্মরণ করে রাখা হল । তারপর সেই একই অটো করে যাওয়া হল
শ্রীশ্রীবিষ্ণুপাদ মন্দির । স্বর্ণকলস ও স্বর্ণ পতাকা শোভিত কৃষ্ণ প্রস্তরের এই
মন্দিরটি ইন্দোরের মহারাণী অহল্যাবাঈ কর্তৃক ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় ।
মন্দিরের মধ্যে রৌপ্যমণ্ডিত একহাত পরিমিত অষ্টকোণ গহ্বর মধ্যে প্রস্তরফলকের উপর
শ্রীশ্রীবিষ্ণুর শ্রীপাদপদ্ম স্থাপিত । এখানেও মন্দিরের এক কোণে বসে পুরোহিত
পিণ্ডদানের কাজ শুরু করেন । যবের ছাতুর দ্বিতীয় মণ্ডটিকে অনেকগুলো ছোট ছোট গুলির
মত করে পূর্বপুরুষদের নামে আগের মতই মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে উৎসর্গ করা হয় ।
পুরোহিত বললেন , যান , এবার
পিণ্ডটি মন্দিরের ভেতর অষ্টকোণ গহ্বরের বিষ্ণুর পাদপদ্মে রেখে আসুন । অনেকে বলেন ,
এখানে পিণ্ড দেয়ার সময় পূর্বপুরুষরা হাত বাড়িয়ে সেই পিণ্ড
গ্রহণ করেন— তা নাকি স্পষ্ট দেখা যায় । স্বপন অবশ্য
বুঝতে পারেননি । তবে হাতের ছায়া ঘোরাফেরা করছে বলে মনে হল । যদিও মন্দিরে বহু
ভক্ত ঘোরাফেরা করছে তাদেরই ছায়া কিনা ঠিক স্পষ্ট নয় । মন্দিরে পিণ্ড দিয়ে
বেরিয়ে আসতেই এক পাণ্ডা ধরলেন ।
তিনি
বললেন ,“আপনার পিতামাতা স্বর্গে যাতে
সুখেশান্তিতে থাকতে পারেন আমরা তার ব্যবস্থা করে থাকি । " তিনি নানাভাবে
বিশ্লেষণ করে বোঝালেন পূর্বপুরুষগণ ইহলোক ত্যাগ করলেও পরলোকে গিয়ে যাতে কোনো কষ্ট
ভোগ করতে না হয় , তার জন্য কিছু ক্রিয়াকর্ম থাকে । সেই
কাজগুলো আমরা দায়িত্ব নিয়ে করি । ”
স্বপন
বলল ,"এরজন্য আমাকে কি করতে
হবে ? "
পাণ্ডা
বললেন ,'আপনি শুধু মূল্য ধরে দবেন ।
এক হাজার , দু হাজার , তিন হাজার
, পাঁচ হাজার , দশ হাজার—
যা আপনি পারবেন , তাতেই আমরা খুশিমনে
কাজটা করব । স্বপন মহারাজের কথামত হাতজোড় করে বলল , ক্ষমা
করবেন , আমি পারবো না ।
— সেকি
? আপনি কি চান না আপনার বাবা - মা সুখে শান্তিতে থাকুন ।
পাণ্ডা তাকে এমনভাবে বোঝাতে লাগলেন— স্বপন কেমন
দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় । কথাগুলো কী সত্যি ? সে বলল ,
ঠিক আছে , আমি পাঁচশো টাকা দিচ্ছি ।
আপনি তাঁদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করুন ।
– পাঁচশো
টাকায় হয় নাকি ? এই টাকায় দুজনকে সুখ - স্বাচ্ছন্দ্যে
রাখা সম্ভব? আপনিই বলুন না । মন্দিরের ভেতর দাঁড়িয়ে
আশেপাশে নানা দেবদেবীর মাঝে পাণ্ডার কথাগুলো শুনে স্বপন যেন কেমন হয়ে গেল ।
পাণ্ডার প্রতিটি কথা ক্ষণিকের জন্য হলেও ধ্রুব সত্য বলে মনে হচ্ছিল তার । সে এক হাজার
টাকা দিয়ে বলল , নিন , বাবা -
মায়ের সুখের জন্য আপনি ভালোভাবে ব্যবস্থা করুন । পরিবেশ এবং পরিস্থিতি মানুষের
মনকে বোধহয় কিছুটা প্রভাবিত করে । না হলে স্বপন যে মনের মানুষ , হঠাৎ তার এতটা পরিবর্তন হওয়ার কথা নয় । শ্রীশ্রীবিষ্ণুপাদ মন্দিরের
কার্য সমাধা করে ওরা আবার ফিরে এল ফল্গু নদীর মন্দিরে । স্বপন নিয়মকানুন কিছুই
জানে না । পুরোহিত যা বলবেন ,তাই করতে সে বাধ্য । যে
পাণ্ডা পুরোনো জাবদা খাতা থেকে পূর্বপুরুষদের নাম এবং তাঁর বাবার স্বাক্ষর
দেখিয়েছিলেন , সেই পাণ্ডার সম্মুখে গিয়ে বসল । পাশে
পুরোহিতও বসলেন । পাণ্ডা বললেন , “ আপনার পিতামাতার পিণ্ডদানের পরেও কিছু কাজ থেকে যায় । সেই অসম্পূর্ণ
কাজগুলো আমরা নিষ্ঠাসহকারে করে থাকি যাতে আপনার পূর্বপুরুষগণ সুখেশান্তিতে থাকতে
পারেন । ”
স্বপন বলল ,“বিষ্ণুপাদ
মন্দিরে তো এক পাণ্ডা দায়িত্ব নিয়েছেন । আবার কেন ? ”
পাণ্ডা বললেন ,“সেখানে
একটা অংশের কাজ হয়েছে । এছাড়াও যে যে কাজ আমরা করি তা হলো …… ” ।স্বপনের
মাথাটা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে । কিছুটা যেন গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে । আগের
পাণ্ডার কথাগুলোই অবলীলায় আউড়ে যাচ্ছে । হুবহু একই কথা— তফাৎটা
কী তার মাথায় ঢুকছে না । সে বুঝতে পেরে গেছে এখানে বিনা অর্থে হাতজোড় করে
নিস্তার পাওয়া প্রায় অসম্ভব । কারণ একটু আগেই তার সম্মুখেই এক ভদ্রলোক দুশো টাকা
দিচ্ছিলেন । পাণ্ডা সে টাকা না নিয়ে অকথ্য গালিগালাজ শুরু করে দিয়েছেন ।
স্বপন বলল , ঠিক
আছে এর জন্য আপনাকে কত দিতে হবে ? "
পাণ্ডা বললেন ,“আমি
বেশি চাইবো না । মাত্র দু হাজার দেবেন । এতেই আমি সমস্ত কাজ করে দেব । ”
পাশের পুরোহিত
মশাই মিটিমিটি হাসছেন । তার অভিপ্রায় কী বোঝা বেশ শক্ত । এদের আচরণে স্বপন সত্যিই
খুব বিরক্ত ।
স্বপন বলল , এই
নিন , আমি এক হাজার টাকা দিলাম । এরপর কিছু বললে আমি কিন্তু
উঠে যাব । ”
পাণ্ডা বোধহয়
তার মুখের অভিব্যক্তি পড়ে ফেলেছেন । তিনি বললেন , “ আরে রেগে যাচ্ছেন কেন ? বসুন বসুন । খুশি মনে দিলেন
তো ? ”
স্বপন আর কি বলবে
? খুশি - অখুশি , বিশ্বাস - অবিশ্বাসের
উর্দ্ধে উঠে বলল , হ্যাঁ , খুশি মনে
দিলাম । শেষ পিণ্ডদান— অক্ষয় বট । শ্রীবিষ্ণুপাদ এবং
ব্রহ্মযোনির মাঝামাঝি স্থানে অক্ষয়বট অবস্থিত । এখানে বটবৃক্ষের তলার পাণ্ডারা
পিণ্ডদানের সফল দেয় । অর্থাৎ বলে তোমার গয়াযাত্রা সফল হলো । প্রবাদ আছে এই বৃক্ষ
ত্রেতাযুগ থেকে নাকি এই স্থানেই বর্তমান । অক্ষয়বটের মন্দিরে অবশিষ্ট যবের ছাতুর
মণ্ডটি দিয়ে শেষ পিণ্ডদানের কাজটি করা হল । অবাক কাণ্ড ! পিণ্ডদানের মন্ত্র বলতে
বলতে পুরোহিত হঠাৎ থেমে গিয়ে বললেন ,“আপনার পিণ্ডদানের
কাজটি যথেষ্ট নিষ্ঠাসহকারে করছি । এই কাজ থেকেই আমার পরিবারের এবং সন্তান সন্ততির
ভরণপোষণ চলে । আপনি পাণ্ডাদের যে অর্থ দিয়েছেন ,আশা করি
তাদের থেকে একটু বেশি অর্থ আমাকে দেবেন । কারণ আমি তাদের থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম
করেছি । অকাট্য যুক্তি । যদিও ভারত সেবাশ্রমের মহারাজ অন্যরকম বলেছিলেন । তবুও
পাণ্ডাদের তুলনায় পুরোহিত অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন । স্বপন তাকে
বারোশো টাকা দেওয়ার কথা অঙ্গীকার করল । হাত বাড়িয়ে দিতেও গেল ।
পুরোহিত বললেন , “ এখন রাখুন । পিণ্ডদানের কাজ এখনও সমাপ্ত হয়নি ” বলেই
আবার মন্ত্র উচ্চারণ শুরু করলেন । পিণ্ডদানের কাজ শেষ করে বেলা বারোটা নাগাদ অটোতে
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মন্দিরে ফিরে এল ।
অক্ষয় বটের
পাণ্ডা কিন্তু দুশো টাকাতেই অত্যন্ত খুশি । টাকা হাতে নিয়েই বললেন , তোমার
গয়ায় পিণ্ডদানের কাজ সম্পূর্ণ সফল হয়েছে বৎস । তোমার কাজে আমি খুব প্রীত হয়েছি
। অক্ষয় বট তোমার মঙ্গল করবেন । বলে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন । একটা বড়
ডিউটি শেষ হলো । কতটা সফল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় । বাবা - মায়ের মনস্কামনা পূর্ণ
করল এটাই বড় কথা । মানুষের মৃত্যুর পর কোনো অস্তিত্ব থাকে না বলেই তার বিশ্বাস ।
তবু চাপে পড়ে দায়িত্ব পালন করা । পিণ্ডদান সমাপ্তির পর ভারত সেবাশ্রম সন্ধেবেলা
বিনামূল্যে আহারের ব্যবস্থা করে । নিরামিষ খাবার । বেশ তৃপ্তি
সহকারেই সে খেল । ভাত ডাল দুটো তরকারি এবং চাটনি ।
বিকেল চারটে
নাগাদ অটো করেই বুদ্ধগয়া এবং আরো কয়েকটি মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখল । গয়ায় এসে
সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে বুদ্ধগয়া দেখে । যে বোধিবৃক্ষতলে গৌতম বুদ্ধ ধ্যান
করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন— সেখানটায় দাঁড়িয়ে থেকে মনে হচ্ছিল
এটাই আসল পবিত্র স্থান । আশেপাশে অনেকেই বসে বসে নিবিষ্ট মনে ধ্যান করছেন । বড়
শান্তির জায়গা বলে মনে হল তার। পরদিন হোটেল থেকে সকালের জল খাবার খেয়ে গয়া স্টেশন থেকে সকাল নটা পনের মিনিটে পূর্বা এক্সপ্রেসে চেপে বসল ।
বিদায় গয়া ।
স্যার বলেন , এসব
জায়গায় ঘোরাও নাকি পুণ্যের কাজ । পুণ্য ব্যাপারটা যে কী তার কাছে ঠিক স্পষ্ট নয়
। পুণ্য করলে কি হবে তার ? স্বর্গবাস হবে ? সম্পূর্ণটাতেই কেমন এক অদ্ভুত যুক্তি— বড়ই গোলমেলে
। তবে সে একটা ধন্দের মধ্যে আছে । মনের দৃঢ়তা বোধহয় আগের অবস্থায়
নেই। দোদুল্যমান । ট্রেনে বসেই হঠাৎ খেয়াল হলো , আরে !
গতকাল রাতে মাকে তো স্বপ্নে দেখেনি । সত্যিই কি দেখেনি ? ভালো
করে মনে করার চেষ্টা করল । না , একদম দেখেনি । আগের রাতে
মাকে নিয়ে কত জায়গায় ঘুরল । আর গত রাতে এলেনই না ! তবে কী পিণ্ডদানের জন্য ?
না অসম্ভব । মাঝে মধ্যে এমনটা হতেই পারে । আজ রাতেই আবার মা স্বপ্নে
আসবেন এ বিষয়ে সে নিশ্চিত।
ট্রেনটা
আসানসোলে এসে প্রায় একঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল । কি একটা কারণে নাকি লাইন ক্লিয়ার পাচ্ছে না । ফলে হাওড়া ঢুকল প্রায় এক ঘণ্টা লেট করে । হাওড়া
থেকে ব্যান্ডেল লোকাল ধরে যখন উত্তরপাড়ায় নিজের বাড়িতে পৌঁছলো তখন ঘড়িতে সাতটা বেজে দশ মিনিট । গরমে বিধ্বস্ত । এখন আর কিছুই ভালো লাগছে
না । ঠাণ্ডা জলে ভালো করে স্নান করল । এবার সে দরজা বন্ধ করে এসি অন করে
ঘণ্টাখানেক ঘুমোবে । তবেই ফ্রেস ।
অপর্ণা
বলল , বাব্বা ! দুশ্চিন্তা কাটল ।
এবার নিশ্চিত্তে ঘুমোও । মাকে আর কখনো স্বপ্ন দেখবে না ।
স্বপনের
বুকটা ধক্ করে উঠল । অপর্ণার প্রতিটি বাক্য যেন তার বুকে এসে বিঁধছে । মনে মনে বলল
, অপদার্থ । যতসব অবাস্তব চিন্তা ।
লেখক পরিচিতি:
জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।
তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট, দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।
তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন।