Advt

Advt

Pinda Daan, Story/Galpo, 3rd Part, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik Digital Online E magazine, পিণ্ড দান, ৩য় পর্ব, গল্প

দ্বিতীয় পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন ।

Pinda Daan, Story/Galpo, 3rd Part, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik Digital Online E magazine, পিণ্ড দান, ৩য় পর্ব, গল্প

 

ঢাকা জেলার পাণ্ডা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে এক পুরোনো জাবদা খাতা নিয়ে এলেন । অবাক কাণ্ড ! বাবা চল্লিশ বছর আগে অর্থাৎ স্বপনের জন্মেরও আগে ঠাকুরদার পিণ্ডদান করতে এসেছিলেন । তার পূর্বপুরুষদের নাম পরিষ্কার লেখা রয়েছে । নিচে বাবার পূর্ণ স্বাক্ষর । লেখা দেখে স্বপন চিনতে পারলোএটা বাবারই নিজের হাতের স্বাক্ষর । হঠাৎ যেন শরীরে এক শিহরণ খেলে গেল । অন্য এক অনুভূতি যা ঠিক বলে বোঝানো যাবে না । এরপর পাণ্ডা স্বপনের কাছে শুনে জাবদা খাতাতে তার নাম , পুত্রের নাম , বোনেদের নাম , বাসস্থান এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখে স্বপনের দিকে এগিয়ে দিলনিন স্বাক্ষর করুন । স্বপন পুরো নাম লিখে এবং তারিখ দিয়ে ফেরত দিল । সে জানে না তার সন্তান তার মৃত্যুর পর এখানে আসবে কিনা । পূর্বপুরুষদের বাসস্থান সঠিক বললে সেও তার পিতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর দেখে তার মতো আপ্লুত হয়ে উঠবে কিনা । পাণ্ডা চলে যেতেই পুরোহিত স্বপন ভট্টাচার্য একটি মাটির পাত্রে যবের ছাতু ও আরেকটি পাত্রে জল এগিয়ে দিয়ে বললেন , নিন এটা মেখে তিনটে মণ্ড তৈরি করুন । স্বপন আটা মাখার মত অল্প অল্প করে জল ঢেলে মাখতে লাগল ।

পুরোহিত বললেন , আপনার পূর্বপুরুষের পিণ্ডদানের পূর্বে গয়া - মাহাত্ম্যের কিছু পৌরাণিক কাহিনি শোনাই গয়াধামের উৎপত্তি স্মরণাতীত প্রাচীন কালে শ্বেতকল্পে । প্রাচীনকালে বিশাল নামে এক অপুত্রক রাজা গয়াশিরে পিণ্ডদান পূর্ব্বক পিতৃগণের আশীর্বাদে পুত্রলাভ করেন । ভরদ্বাজ মুনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে যখন পিণ্ডদান করেন ,তখন তার জন্মদাতা পিতা ও পালক পিতা উভয়ে যথাক্রমে শ্বেতবর্ণ ও কৃষ্ণবর্ণ হাত প্রসারণ করে পিণ্ডগ্রহণ করেন এবং ঊর্ধ্বগতি প্রাপ্ত হন । ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র পিণ্ডদানের সময়ে তদীয় পিতা দশরথ উভয় হস্ত প্রসারণ করে পিণ্ডগ্রহণ পূৰ্ব্বক তৃপ্তিলাভ ও রুদ্রলোকে গমন করেন । রামগয়া ও সীতাকুণ্ড গয়া শহরের অপর পারে অবস্থিত । দশরথের প্রেতাত্মা সীতাদেবীর হস্ত থেকে ঙুলের অভাবে বালুকার পিণ্ড গ্রহণ করেছিলেন । ফল্গুনদী , তুলসীবৃক্ষ এবং অক্ষয়বট এই পিণ্ডদানের সাক্ষী ছিলেন । 

রামচন্দ্র জিজ্ঞাসা করলে ফল্গু ও তুলসী মিথ্যা বলে সীতাদেবী কর্তৃক অভিশপ্ত হয় , অক্ষয় বট সত্য বলে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন । দ্বাপর যুগে ভীষ্মদেব পিতার উদ্দেশ্যে গয়াশিরে বিষ্ণুপদে পিণ্ড দিলে পিতা শান্তনু তা স্বহস্তে গ্রহণপূর্ব্বক আশীর্বাদ করেনবৎস , তুমি ত্রিকালজ্ঞ ও ইচ্ছামৃত্যুর অধিকারী হও । ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির পিণ্ডদান করলে পিতা পাণ্ডু অত্যন্ত প্রীত হয়ে আশীর্বাদ করলেনবৎস তুমি সশরীরে স্বর্গমনে সমর্থ হবে । রাজকুমার সিদ্ধার্থ রাজভোগৈশ্বর্য্য পরিত্যাগ করে নির্ব্বাণ সাধনার জন্য বহির্গত হয়ে মহাপুণ্য ক্ষেত্র গয়াধামেই ছয় বৎসরব্যাপী কঠোর তপস্যার পর বুদ্ধত্ব লাভ করেন । মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গ পিতৃপিণ্ডাদি দানের কালে শ্রীবিষ্ণুপাদ স্পর্শে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমে উন্মত্ত হন । তখন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দেহে আবির্ভূত হয়ে হরিনামের বন্যায় বঙ্গদেশ তথা সমগ্র ভারত ভাসিয়ে দিয়েছিলেন । শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের পিতা ভক্ত ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় বিষ্ণুপাদে পিণ্ডদান করে শ্রীরামকৃষ্ণকে পুত্র রূপে লাভ করে ধন্য হন ।

পুরোহিত বলেন , এবার আপনার পূর্বপুরুষদের পিণ্ডদান করতে হবে । তিনটে মণ্ড থেকে একটি মণ্ড নিয়ে ওটাকে আবার তিনভাগ করুন । তার একটিকে আবার তিন ভাগ করুন । এবার একটি তালুতে রেখে পিতা পিতামহের নাম বলুন , গোত্র বলুন , মাতার নাম স্মরণ করুন , মৃত কাকা জেঠার নামও বলতে পারেন । বলুন  ঃ ওঁ নমঃ ...। নিন জল দিন । আবার নিন । পূর্বপুরুষদের নাম বলুন । এছাড়া মৃত বন্ধুবান্ধব , প্রিয় পশুপাখির নামও বলতে পারেন । বলুনওঁ ... নিন এবার মস্তকে জলের ছিটে দিন । এরপর হাতে জল , কুশ ও তিল নিয়ে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করালেন । প্রথম পিণ্ডটি ফল্গুনদীর মন্দিরে বাবা - মায়ের নাম স্মরণ করে রাখা হল । তারপর সেই একই অটো করে যাওয়া হল শ্রীশ্রীবিষ্ণুপাদ মন্দির । স্বর্ণকলস ও স্বর্ণ পতাকা শোভিত কৃষ্ণ প্রস্তরের এই মন্দিরটি ইন্দোরের মহারাণী অহল্যাবাঈ কর্তৃক ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় । মন্দিরের মধ্যে রৌপ্যমণ্ডিত একহাত পরিমিত অষ্টকোণ গহ্বর মধ্যে প্রস্তরফলকের উপর শ্রীশ্রীবিষ্ণুর শ্রীপাদপদ্ম স্থাপিত । এখানেও মন্দিরের এক কোণে বসে পুরোহিত পিণ্ডদানের কাজ শুরু করেন । যবের ছাতুর দ্বিতীয় মণ্ডটিকে অনেকগুলো ছোট ছোট গুলির মত করে পূর্বপুরুষদের নামে আগের মতই মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে উৎসর্গ করা হয় । পুরোহিত বললেন , যান , এবার পিণ্ডটি মন্দিরের ভেতর অষ্টকোণ গহ্বরের বিষ্ণুর পাদপদ্মে রেখে আসুন । অনেকে বলেন , এখানে পিণ্ড দেয়ার সময় পূর্বপুরুষরা হাত বাড়িয়ে সেই পিণ্ড গ্রহণ করেনতা নাকি স্পষ্ট দেখা যায় । স্বপন অবশ্য বুঝতে পারেননি । তবে হাতের ছায়া ঘোরাফেরা করছে বলে মনে হল । যদিও মন্দিরে বহু ভক্ত ঘোরাফেরা করছে তাদেরই ছায়া কিনা ঠিক স্পষ্ট নয় । মন্দিরে পিণ্ড দিয়ে বেরিয়ে আসতেই এক পাণ্ডা ধরলেন ।

তিনি বললেন ,“আপনার পিতামাতা স্বর্গে যাতে সুখেশান্তিতে থাকতে পারেন আমরা তার ব্যবস্থা করে থাকি । " তিনি নানাভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝালেন পূর্বপুরুষগণ ইহলোক ত্যাগ করলেও পরলোকে গিয়ে যাতে কোনো কষ্ট ভোগ করতে না হয় , তার জন্য কিছু ক্রিয়াকর্ম থাকে । সেই কাজগুলো আমরা দায়িত্ব নিয়ে করি ।

স্বপন বলল ,"এরজন্য আমাকে কি করতে হবে ? "

পাণ্ডা বললেন ,'আপনি শুধু মূল্য ধরে দবেন । এক হাজার , দু হাজার , তিন হাজার , পাঁচ হাজার , দশ হাজারযা আপনি পারবেন , তাতেই আমরা খুশিমনে কাজটা করব । স্বপন মহারাজের কথামত হাতজোড় করে বলল , ক্ষমা করবেন , আমি পারবো না ।

সেকি ? আপনি কি চান না আপনার বাবা - মা সুখে শান্তিতে থাকুন ।

পাণ্ডা তাকে এমনভাবে বোঝাতে লাগলেনস্বপন কেমন দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় । কথাগুলো কী সত্যি ? সে বলল , ঠিক আছে , আমি পাঁচশো টাকা দিচ্ছি । আপনি তাঁদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করুন ।

পাঁচশো টাকায় হয় নাকি ? এই টাকায় দুজনকে সুখ - স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা সম্ভব? আপনিই বলুন না । মন্দিরের ভেতর দাঁড়িয়ে আশেপাশে নানা দেবদেবীর মাঝে পাণ্ডার কথাগুলো শুনে স্বপন যেন কেমন হয়ে গেল । পাণ্ডার প্রতিটি কথা ক্ষণিকের জন্য হলেও ধ্রুব সত্য বলে মনে হচ্ছিল তার । সে এক হাজার টাকা দিয়ে বলল , নিন , বাবা - মায়ের সুখের জন্য আপনি ভালোভাবে ব্যবস্থা করুন । পরিবেশ এবং পরিস্থিতি মানুষের মনকে বোধহয় কিছুটা প্রভাবিত করে । না হলে স্বপন যে মনের মানুষ , হঠাৎ তার এতটা পরিবর্তন হওয়ার কথা নয় । শ্রীশ্রীবিষ্ণুপাদ মন্দিরের কার্য সমাধা করে ওরা আবার ফিরে এল ফল্গু নদীর মন্দিরে । স্বপন নিয়মকানুন কিছুই জানে না । পুরোহিত যা বলবেন ,তাই করতে সে বাধ্য । যে পাণ্ডা পুরোনো জাবদা খাতা থেকে পূর্বপুরুষদের নাম এবং তাঁর বাবার স্বাক্ষর দেখিয়েছিলেন , সেই পাণ্ডার সম্মুখে গিয়ে বসল । পাশে পুরোহিতও বসলেন । পাণ্ডা বললেন , “ আপনার পিতামাতার পিণ্ডদানের পরেও কিছু কাজ থেকে যায় । সেই অসম্পূর্ণ কাজগুলো আমরা নিষ্ঠাসহকারে করে থাকি যাতে আপনার পূর্বপুরুষগণ সুখেশান্তিতে থাকতে পারেন ।

স্বপন বলল ,“বিষ্ণুপাদ মন্দিরে তো এক পাণ্ডা দায়িত্ব নিয়েছেন । আবার কেন ? ”

পাণ্ডা বললেন ,“সেখানে একটা অংশের কাজ হয়েছে । এছাড়াও যে যে কাজ আমরা করি তা হলো …… ” ।স্বপনের মাথাটা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে । কিছুটা যেন গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে । আগের পাণ্ডার কথাগুলোই অবলীলায় আউড়ে যাচ্ছে । হুবহু একই কথাতফাৎটা কী তার মাথায় ঢুকছে না । সে বুঝতে পেরে গেছে এখানে বিনা অর্থে হাতজোড় করে নিস্তার পাওয়া প্রায় অসম্ভব । কারণ একটু আগেই তার সম্মুখেই এক ভদ্রলোক দুশো টাকা দিচ্ছিলেন । পাণ্ডা সে টাকা না নিয়ে অকথ্য গালিগালাজ শুরু করে দিয়েছেন ।

স্বপন বলল , ঠিক আছে এর জন্য আপনাকে কত দিতে হবে ? "

পাণ্ডা বললেন ,“আমি বেশি চাইবো না । মাত্র দু হাজার দেবেন । এতেই আমি সমস্ত কাজ করে দেব ।

পাশের পুরোহিত মশাই মিটিমিটি হাসছেন । তার অভিপ্রায় কী বোঝা বেশ শক্ত । এদের আচরণে স্বপন সত্যিই খুব বিরক্ত ।

স্বপন বলল , এই নিন , আমি এক হাজার টাকা দিলাম । এরপর কিছু বললে আমি কিন্তু উঠে যাব ।

পাণ্ডা বোধহয় তার মুখের অভিব্যক্তি পড়ে ফেলেছেন । তিনি বললেন , “ আরে রেগে যাচ্ছেন কেন ? বসুন বসুন । খুশি মনে দিলেন তো ? ”

স্বপন আর কি বলবে ? খুশি - অখুশি , বিশ্বাস - অবিশ্বাসের উর্দ্ধে উঠে বলল , হ্যাঁ , খুশি মনে দিলাম । শেষ পিণ্ডদানঅক্ষয় বট । শ্রীবিষ্ণুপাদ এবং ব্রহ্মযোনির মাঝামাঝি স্থানে অক্ষয়বট অবস্থিত । এখানে বটবৃক্ষের তলার পাণ্ডারা পিণ্ডদানের সফল দেয় । অর্থাৎ বলে তোমার গয়াযাত্রা সফল হলো । প্রবাদ আছে এই বৃক্ষ ত্রেতাযুগ থেকে নাকি এই স্থানেই বর্তমান । অক্ষয়বটের মন্দিরে অবশিষ্ট যবের ছাতুর মণ্ডটি দিয়ে শেষ পিণ্ডদানের কাজটি করা হল । অবাক কাণ্ড ! পিণ্ডদানের মন্ত্র বলতে বলতে পুরোহিত হঠাৎ থেমে গিয়ে বললেন ,“আপনার পিণ্ডদানের কাজটি যথেষ্ট নিষ্ঠাসহকারে করছি । এই কাজ থেকেই আমার পরিবারের এবং সন্তান সন্ততির ভরণপোষণ চলে । আপনি পাণ্ডাদের যে অর্থ দিয়েছেন ,আশা করি তাদের থেকে একটু বেশি অর্থ আমাকে দেবেন । কারণ আমি তাদের থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছি । অকাট্য যুক্তি । যদিও ভারত সেবাশ্রমের মহারাজ অন্যরকম বলেছিলেন । তবুও পাণ্ডাদের তুলনায় পুরোহিত অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন । স্বপন তাকে বারোশো টাকা দেওয়ার কথা অঙ্গীকার করল । হাত বাড়িয়ে দিতেও গেল ।

পুরোহিত বললেন , “ এখন রাখুন । পিণ্ডদানের কাজ এখনও সমাপ্ত হয়নি বলেই আবার মন্ত্র উচ্চারণ শুরু করলেন । পিণ্ডদানের কাজ শেষ করে বেলা বারোটা নাগাদ অটোতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মন্দিরে ফিরে এল ।

অক্ষয় বটের পাণ্ডা কিন্তু দুশো টাকাতেই অত্যন্ত খুশি । টাকা হাতে নিয়েই বললেন , তোমার গয়ায় পিণ্ডদানের কাজ সম্পূর্ণ সফল হয়েছে বৎস । তোমার কাজে আমি খুব প্রীত হয়েছি । অক্ষয় বট তোমার মঙ্গল করবেন । বলে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন । একটা বড় ডিউটি শেষ হলো । কতটা সফল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় । বাবা - মায়ের মনস্কামনা পূর্ণ করল এটাই বড় কথা । মানুষের মৃত্যুর পর কোনো অস্তিত্ব থাকে না বলেই তার বিশ্বাস । তবু চাপে পড়ে দায়িত্ব পালন করা । পিণ্ডদান সমাপ্তির পর ভারত সেবাশ্রম সন্ধেবেলা বিনামূল্যে আহারের ব্যবস্থা করে । নিরামিষ খাবার । বেশ তৃপ্তি সহকারেই সে খেল । ভাত ডাল দুটো তরকারি এবং চাটনি ।

বিকেল চারটে নাগাদ অটো করেই বুদ্ধগয়া এবং আরো কয়েকটি মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখল । গয়ায় এসে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে বুদ্ধগয়া দেখে । যে বোধিবৃক্ষতলে গৌতম বুদ্ধ ধ্যান করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেনসেখানটায় দাঁড়িয়ে থেকে মনে হচ্ছিল এটাই আসল পবিত্র স্থান । আশেপাশে অনেকেই বসে বসে নিবিষ্ট মনে ধ্যান করছেন । বড় শান্তির জায়গা বলে মনে হল তার। পরদিন হোটেল থেকে সকালের জল খাবার খেয়ে গয়া স্টেশন থেকে সকাল নটা পনের মিনিটে পূর্বা এক্সপ্রেসে চেপে বসল । বিদায় গয়া ।

স্যার বলেন , এসব জায়গায় ঘোরাও নাকি পুণ্যের কাজ । পুণ্য ব্যাপারটা যে কী তার কাছে ঠিক স্পষ্ট নয় । পুণ্য করলে কি হবে তার ? স্বর্গবাস হবে ? সম্পূর্ণটাতেই কেমন এক অদ্ভুত যুক্তিবড়ই গোলমেলে । তবে সে একটা ধন্দের মধ্যে আছে । মনের দৃঢ়তা বোধহয় আগের অবস্থায় নেই। দোদুল্যমান । ট্রেনে বসেই হঠাৎ খেয়াল হলো , আরে ! গতকাল রাতে মাকে তো স্বপ্নে দেখেনি । সত্যিই কি দেখেনি ? ভালো করে মনে করার চেষ্টা করল । না , একদম দেখেনি । আগের রাতে মাকে নিয়ে কত জায়গায় ঘুরল । আর গত রাতে এলেনই না ! তবে কী পিণ্ডদানের জন্য ? না অসম্ভব । মাঝে মধ্যে এমনটা হতেই পারে । আজ রাতেই আবার মা স্বপ্নে আসবেন এ বিষয়ে সে নিশ্চিত।

ট্রেনটা আসানসোলে এসে প্রায় একঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল । কি একটা কারণে নাকি লাইন ক্লিয়ার পাচ্ছে না । ফলে হাওড়া ঢুকল প্রায় এক ঘণ্টা লেট করে । হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল লোকাল ধরে যখন উত্তরপাড়ায় নিজের বাড়িতে পৌঁছলো তখন ঘড়িতে সাতটা বেজে দশ মিনিট । গরমে বিধ্বস্ত । এখন আর কিছুই ভালো লাগছে না । ঠাণ্ডা জলে ভালো করে স্নান করল । এবার সে দরজা বন্ধ করে এসি অন করে ঘণ্টাখানেক ঘুমোবে । তবেই ফ্রেস ।

অপর্ণা বলল , বাব্বা ! দুশ্চিন্তা কাটল । এবার নিশ্চিত্তে ঘুমোও । মাকে আর কখনো স্বপ্ন দেখবে না ।

স্বপনের বুকটা ধক্ করে উঠল । অপর্ণার প্রতিটি বাক্য যেন তার বুকে এসে বিঁধছে । মনে মনে বলল , অপদার্থ । যতসব অবাস্তব চিন্তা ।

লেখক পরিচিতি: 

জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।

তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট,  দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর  ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।

তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। 

Pinda Daan, Story/Galpo, 3rd Part, by Nityaranjan Debnath, Tatkhanik Digital Online E magazine, পিণ্ড দান, ৩য় পর্ব, গল্প