Advt

Advt

Greek O Bharatiya Puraner Tulanamulak Aalochana, 1st Part, Feature, Probondho, by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik Digital, Online, e magazine

Greek O Bharatiya Puraner Tulanamulak Aalochana, 1st Part, Feature, Probondho, by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik Digital, Online, e magazine

 

পুরাণ বা Mythology হচ্ছে অতি প্রাচীন কালের বিখ্যাত ব্যক্তি , সমাজ , ধর্ম , রাজা ইত্যাদি অবলম্বন করে রচিত আখ্যায়িকা । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ( যেমন ভারত , গ্রিস , রোম , ব্যবিলন , মিশর , চীন , জাপান, জার্মান ইত্যাদি ) নিজ নিজ দেশের লৌকিক সংস্কার বিশ্বাস , আচার - বিচার , প্রথা - পদ্ধতি ইত্যাদি লৌকিক উপাদান নিয়ে পুরাণগুলো গড়ে উঠেছিল । বিভিন্ন দেশের পুরাণগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের বৃহত্তম জন সমাজের বিশ্বাস , রুচি , ধ্যান , মনন ইত্যাদি দিককে প্রতিফলিত করে ।

গবেষকরা ধারণা করে থাকেন - আনুমানিক পনেরো হাজার বছর পূর্বে মানব সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছিল । তখন মানুষের জীবনে প্রধান ঘটনা ছিল খাদ্য সংগ্রহ করা । পশু এবং পশুশিকার ছিল দৈনন্দিন জীবনের প্রধান বিষয় । পশু শিকার ছিল সে সময়কার মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেই ঘটনাকেই স্থায়িত্ব দেওয়ার আশায় তারা নিজেদের বাসস্থানে অর্থাৎ পাহাড়ের গুহায় মানুষের, পশুর এবং মানুষের পশু শিকারের ছবি এঁকে রাখতে শুরু করে । এই ছবিই হচ্ছে মানুষের প্রাচীনতম লিপি । বর্তমান সভ্যজগতে প্রচলিত বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা তথা লিপিগুলোর উদ্ভব ঘটেছে মিশরীয় , ফিনিসিয় ,চৈনিক ও ভারতীয় - এই চারটি অতি প্রাচীন লিপিচিত্র থেকে । পৃথিবীর আদিম চৈনিক এবং ভারতীয় অবস্থা থেকে শুরু করে সৃষ্টির বিবরণের নাম ছিল পুরাণ । পুরাণের বিভিন্ন উপাদানের অনত্যম হচ্ছে অলৌকিক কাহিনির সমাবেশ। সব পুরাণের মধ্যেই উন্নত সভ্যতার অলৌকিক কাহিনির সমাবেশ ঘটতে দেখা যায় । সেখানে দেবকল্পনায় অলৌকিকতা বিচিত্র ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে । ভারতবর্ষের বাইরে যে সকল প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে ইরান ,মিশর এবং গ্রিসের নামই বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমান তুলনামূলক আলোচনা মূলত গ্রিক পুরাণের সঙ্গে ভারতীয় পুরাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ।

বৈদিক সাহিত্যকে শুধু ভারতবর্ষের নয় , ইন্দো - ইউরোপীয় ভাষায় প্রাচীনতম সাহিত্যের নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয় । বৈদিক সাহিত্যের প্রাচীনতম সাহিত্যের নিদর্শন হিসাবে ঋকবেধ-কে বিবেচনা করা হয়। বৈদিক সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋকবেদের অনুবাদকালে ভূমিকায় পাশ্চাত্য গবেষক ম্যাক্সমুলার (Maxmuller ) ঋক্‌বেদ সম্পর্কে বলেছেন " The most ancient of books is the library of mankind . " 

ভারতবর্ষের বৈদিকী প্রজ্ঞার লৌকিকী রূপ হচ্ছে পুরাণ । পুরাণের লক্ষণ হচ্ছে – “সর্গশ্চ প্রতি সর্গশ্চ বংশমন্বত্তরাণি চ । / বংশানুচরিতং চেতি পুরাণ পঞ্চলক্ষম। সৃষ্টি ,প্রলয়ের পর সৃষ্টি , ঋষি এবং রাজন্য মণ্ডলীর বংশ , এক এক মনুর শাসনকাল - এই পাঁচটি মূল বিষয়ে এতে রয়েছে বিস্তারিত বিবরণ । প্রাচীন ভারতের লোকজীবন তথা গণজীবনের প্রতিচ্ছবি এই পুরাণ গ্রন্থ। বেদাদি গ্রন্থে পুরাণের উৎপত্তির কথা আছে । অথর্ব বেদে উক্ত হয়েছে যে , যজ্ঞের উচ্ছিষ্ট থেকে ঋক , সাম , ছন্দ ও পুরাণ উৎপন্ন হয়েছিল ; বেদাদির সঙ্গে পুরাণের সৃষ্টিকর্তা পরব্রহ্মাই - " ঋক চ স্যামানি ছদাংসি পুরাণং যজুসা সহ । / উদ্দিষ্টাজজ্ঞিরে সর্বং দিবি দেবাদিভিশ্চিতাঃ।। "

বেদের কাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে । সঠিক কাল নিয়ে মতভেদ থাকা সত্ত্বেও আধুনিক যুগের সুসভ্য মানুষ পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ তথা গ্রন্থ ঋকবেদ থেকে সাত হাজার কিংবা আরও প্রাচীন কালের মানুষের ধর্মবিশ্বাস , দেবকল্পনা , নৈতিক মূল্যবোধ এবং ধর্মচর্চার এক নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত আবিষ্কারে সফলকাম হয়েছে । ঋকবেদে নৈসর্গিক শক্তিরাজি থেকেই বিভিন্ন দেবতা কল্পিত হয়েছেন । যেমন ইন্দ্র বৃষ্টির , মরুৎ ঝড়ের , সূর্য বা সবিতা আলোকের ইত্যাদি । অগ্নি ছাড়া যজ্ঞ হয় না , তাই তিনি হচ্ছেন সকল যজ্ঞের পুরোহিত । অগ্নিকে যে হব্য দেওয়া হয় তা তিনি সকল দেবতার কাছে পৌঁছে দেন । এ দিক থেকে দেখতে গেলে অগ্নিই হচ্ছেন ঋকবেদের প্রধান এবং প্রথম দেবতা । অগ্নির উপাসনা ভারতবর্ষ থেকেই এশিয়া , ইউরোপ ইত্যাদি মহাদেশের বিভিন্ন দেশে প্রচারিত হয় । গ্রিকরা অগ্নিকে বিভিন্ন নামে (যেমন - Vulcan , Hephaistos , Hestia ইত্যাদি ) পূজা করতেন।

প্রাচীন গ্রিকদের দেবতা,বীর ,ধর্মীয় আচার - অনুষ্ঠান ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গ্রিক পুরাণ গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর গ্রিক কবি হেসিওড ( Hesiod ) লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ ' থিওগোনি ' ( Theogony ) হচ্ছে প্রাচীন গ্রিসের পৌরাণিক কাহিনির মূল ভিত্তি । কবি হেসিওড তাঁর এই গ্রন্থে সন্তানকে নিয়ে আকাশরূপী ইউরেনাস এবং পৃথিবীরূপী গেইয়ার সংঘাত , গেইয়া ও তার পুত্র ক্রনাসের চক্রান্ত এবং ক্রনাস কর্তৃক ইউরেনাসের নির্বীজকরণ , জিউসের জন্ম এবং শিশু জিউসের স্থানান্তরকরণ,জিউসের সঙ্গে টাইটানদের যুদ্ধ , প্রমিথিউসের যুদ্ধ , প্রমিথিউসের শাস্তিভোগ , জিউস কর্তৃক টাইফনকে দমন ইত্যাদি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ।

গ্রিক পুরাণের সঙ্গে গ্রিক মহাকবি হোমারের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত । গ্রিক তথা ইউরোপীয় সাহিত্যের আদিকবি হোমার ইলিয়াড ওডিসি ’ - এ দুটি মহাকাব্যের স্রষ্টা । গবেষকগণ মোটামুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ,খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে আবির্ভূত হোমার আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০ অব্দে ইলিয়াড এবং আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে ওডিসি রচনা করেন। 'ইলিয়াড এবং ওডিসি এই দুটি মহাকাব্যই সর্বনাশা রূপের অধিকারিণী হেলেন অপহরণের কারণে সৃষ্ট ট্রয় যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত । ওডিসি মহাকাব্যের কাহিনি ইলিয়াড মহাকাব্যের কাহিনির পরিশিষ্ট ইলিয়াডে আছে যুদ্ধ আর ওডিসিতে রয়েছে শান্তির চিত্র।

বিশ্বসাহিত্যে জাত মহাকাব্য ( epic of growth ) - এর সংখ্যা মাত্র চার । এর মধ্যে গ্রিক সাহিত্যের অর্থাৎ হোমার রচিত ইলিয়াড ওডিসি ' - এ দুটো মহাকাব্য ছাড়া [ বাকি দুটো মহাকাব্য হচ্ছে ভারতীয় সাহিত্যের । এই দুটো হলো বাল্মীকি মুনি রচিত 'রামায়ণ ' ও কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস রচিত 'মহাভারত'। ইলিয়াড ওসিডির অধিষ্ঠান যেমন সমগ্র গ্রিক জাতির মর্মমূলে ,তেমনি রামায়ণ,মহাভারতের অধিষ্ঠানও সমগ্র ভারতবাসীর মগ্ন চৈতন্যে ।

ম্যাক্সমুলার প্রমুখ গবেষকদের মতে গ্রিক দেবদেবী ভারতীয় ধর্মচর্যার প্রভাব - সৃষ্ট এবং তাঁরা মনে করেন হোমারের ইলিয়াড কাব্যও বৈদিক কাহিনির নব রূপায়ণ । মূর্তি পূজার প্রচলন বৈদিক যুগে ছিল কিনা এ বিষয়ে গবেষকরা একমত হতে পারেননি । বেদের মন্ত্রে দেবতাদের রূপগুণের বর্ণনা আছে সত্য , কিন্তু মন্ত্রবর্ণিত দেবতার রূপ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ দেব - বিগ্রহ নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে হয় না । অগ্নিকে দেবতাদের মুখ এবং হব্যকব্যবাহ দূত কল্পনা করে যজ্ঞে পৃথক পৃথক দেবতাদের উদ্দেশ্য যে হবিঃ প্রদান করা হতো , তাতে দেবতার মূর্তি গড়ে পূজার কোন প্রসঙ্গ থাকা সম্ভব নয় । অনেক গবেষকের ধারণা , রামায়ণ - মহাভারতের যুগে দেবমূর্তি পূজার প্রচলন ছিল । রামায়ণে ইন্দ্র ,বরুণ ,যম ,কুবের ,ব্রহ্মা ,বিষ্ণু ,মহেশ্বর ,অশ্বিনীকুমার, ইন্দ্রপত্নী শচী , মহেশ্বরপত্নী উমা ,এমনকি কুবেরের পুত্র নলকুবের , ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত ইত্যাদি বহু দেবতার প্রসঙ্গ আছে । অনুরূপ ভাবে মহাভারতেও বহু দেবতার প্রসঙ্গ এবং মনুজ বংশের সঙ্গে তাঁদের সংযোগের কাহিনিও বর্ণিত হয়েছে ।

গ্রিক দেবদেবীর মূর্তি কিংবা গ্রিক পৌরাণিক বীরদের মূর্তি কত ভাবেই না বিকশিত হয়েছে । গ্রিক দেবদেবীর কল্পনায় ভারতীয় প্রভাব থাকলেও মূর্তি বা ভাস্কর্য শিল্পে যে গ্রিকরাই পথিকৃৎ এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য । ভারতবর্ষে বিভিন্ন সংস্কারগত কারণেই প্রথম থেকে মূর্তি শিল্প গড়ে উঠতে পারেনি । মূর্তি শিল্পকে ভারতে গান্ধার শিল্প বলা হয় । গান্ধার ( কান্দাহার Taxila ) গ্রিক অধিকৃত হওয়ায় গ্রিক ভাস্কর্য এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়েছিল । সেজন্য মূর্তি গড়ার রীতি গ্রিকদের কাছ থেকেই গৃহীত হয়েছিল এ সত্যকে অস্বীকার করা যায় না । স্মর্তব্য , ভারতবর্ষে বেদ - উপনিষদ , রামায়ণ - মহাভারত - এর যুগ পেরিয়ে পুরাণের যুগেই হিন্দুদের বহুতর দেবতার আবির্ভাব হয়েছে এবং মূর্তিপূজা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।

গ্রিক পুরাণের প্রধান দেবতা জিউস (Zeus)সমগ্র মর্ত্যভূমি , আকাশ ও বায়ুমণ্ডল এবং স্বর্গস্থ অলিম্পাসের একচ্ছত্র অধিপতি তিনি । দেবরাজ জিউস ক্লানাস ও রিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র । তাঁর মাথায় কুঞ্চিত কেশরাশি , মুখমণ্ডল শ্বশ্রুমণ্ডিত । ওক পাতার মুকুটে মণ্ডিত তাঁর মস্তকদেশ । তাঁর হস্তধৃত বজ্রদণ্ড দিয়ে তিনি মর্ত্যমানবদের সকল অধর্মাচারণের শাস্তি বিধান করেন।

দেবরাজ হিসেবে জিউস মেঘ , বৃষ্টি ও বজ্র নিয়ন্ত্রণ করতেন । প্রকৃতিও ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন । জিউসের বাহন হলো ঈগল । মর্ত্যলোকের জনসাধারণ দেবরাজ জিউসের প্রতিমূর্তি নির্মাণ করতো তাদের দেবরাজের নামকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে ।

 

ক্রমশ ……………………

দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন আগামী কাল

 লেখক পরিচিতি 

ড.বাসুদেব রায়ের জন্ম ১৯৬২ সালে। কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যের জগতে আত্মপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশিত বই মানব' (কাব্যগ্রন্থ), দ্বিতীয় বই রক্তের বাঁধন (উপন্যাস)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণা করলেও প্রবন্ধ সাহিত্যের দিকে তার ঝোঁক বেশি। তদুপরি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তথা বই লিখতে তিনি অধিকতর উৎসাহী। গবেষণামূলক বইয়ের পাশাপাশি সাধু-মহাপুরুষদের জীবনী-গ্রন্থ, একাঙ্কিকা ইত্যাদি সম্পাদনাও করেছেন তিনি।

ড.বাসুদেব রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। হার উল্লেখযোগ্য গবেষণা গুলোর মধ্যে রয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ', চণ্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে সমাজ-চিত্র ইত্যাদি। তাঁর যৌথ রচনা ও উপেক্ষণীয় নয়।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাসুদেব রায় নিরলস ভাবে লিখে চলেছেন। এছাড়াও নতুন করে তিনি একক ও যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক কাজে হাত দিয়েছেন।  নিয়মিত বিভিন্ন e magazine-এ লেখেন।    


Greek O Bharatiya Puraner Tulanamulak Aalochana, 1st Part, Feature, Probondho, by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik Digital, Online, e magazine