বই পড়তে আমাদের অনেকেরই ভাল লাগে। আমাদের মত বই পড়তে বড়বড়, মনীষীরাও ভালবাসতেন। তাঁরা বই নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথাও বলে গেছেন। বই কিনে কেউ কখনও নিঃস্ব হয়না। বই-এর চাহিদা বা আবেদন কখনোই শেষ হবার নয়। এমনই আরও অনেক কথা। বই শুধু মজা পাওয়ার জন্য নয়। বই মানুষের মনকে প্রশস্ত করে তোলে। বই পৃথিবীর অন্য প্রান্তকে একেবারে কাছে নিয়ে আসে।
২০০১ সালে আগস্ট মাসে প্রকাশিত এক বিদেশী পত্রিকায় পড়েছিলাম যে আমেরিকার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পত্রিকা তাদের দেশের সফল ও বিখ্যাত কয়েকজন মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ছোটবেলায় তাঁরা সবথেকে কোন কাজটি করে বেশী মজা পেতেন। খুশীর খবর হল, প্রায় সকলেই জানিয়েছিলেন যে বই পড়তে তাঁদের ভাল লাগত এবং এখনও লাগে। এই বিখ্যাত মানুষদের কোন ধরণের বই সবথেকে প্রিয় ছিল, কি কি বই পড়ে তাঁরা সবথেকে বেশী মজা পেতেন, তা নিয়েই আজ আমার এই লেখা –
জেরাল্ড ফোর্ড (আমেরিকার ৩৮তম প্রেসিডেন্ট)
ছোটবেলায় হোরাশিও আলগারের কোন বই পেলে তিনি স্নান, খাওয়া ভুলে যেতেন। গোগ্রাসে গিলতেন তাঁর বই। এই লেখকের প্রতিটি গল্প তাঁকে সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে। তাঁর প্রতিটি চরিত্র সারাজীবন ফোর্ডকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। কোন কিছু পেতে হলে তার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন, দরকার নিজেকে সুসংহত করার ক্ষমতা। সেই সাথে থাকতে হবে নিয়মানুবর্তিতা। আর আলগারের বইয়ের নায়কদের মধ্যে এই সব গুণ ছিল বলে মনে করতেন জেরাল্ড ফোর্ড।
জিমি কার্টার (আমেরিকার ৩৯তম প্রেসিডেন্ট)
ছোটবেলায় তাঁর সবথেকে প্রিয় দু’টি বই ছিল, লিও টলস্টয়ের ‘ওঅর অ্যান্ড পীস’ এবং র্যাচেল কার্সনের ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’, তবে ছোটবেলা থেকে যে বইটি পড়েছেন যেটি এখনও তাঁকে অনুপ্রেরণা দেয় তা হল বাইবেল।
রোণাল্ড রিগান (আমেরিকার ৪০তম প্রেসিডেন্ট)
বই পড়তে তিনি খুবই ভালবাসতেন। বই পড়ায় তাঁর হাতেখড়ি মার্ক টোয়েনের হাকলবেরী ফিন ও টমসয়ার দিয়ে। বই দু’টি পড়ার সময় নিজেকে হাক ফিন ও টমসয়ার মনে করতেন। আসলে অ্যাডভেঞ্চার ধরনের সব বই-ই তিনি ভালবাসতেন। টারজান পেলে স্নান-খাওয়াও নাকি ভুলে যেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, বই সাথে থাকলে মানুষ কখনও একা বোধ করে না।
জর্জ বুশ (আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট)
ছোটবেলায় তাঁর সবথেকে প্রিয় বই ছিল তিনটি – রবার্ট লুই স্টিভেনসনের ‘ট্রেজার আইল্যান্ড”, অ্যানা সিওয়েলের “ব্ল্যাক বিউটি’ এবং ডিনিয়েল ডিফোর ‘রবিনসন ক্রুশো’। আর এখন সবথেকে প্রিয় বারবারা কার্টল্যাণ্ডের উপন্যাস।
বিল ক্লিনটন (আমেরিকার ৪২তম প্রেসিডেন্ট)
বই তাঁর জীবনে সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ১২ বছর বয়সে তিনি বেশ কিছু বই পড়ে ফেলেন। এর মধ্যে সাংঘাতিক প্রিয় ছিল থমাস বি কস্টেনের ‘ দ্য সিলভার চ্যালিস’, জেমস্ফেনিমোর কুমাপ্রের ‘দ্য লাস্ট অফ দা মহিকান্স’ এবং লয়েড সি ডগ্লাসের ‘ দ্য রোজ’। আরকানসাসের গভর্নর এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন প্রতিদিন তাঁকে গাদা গাদা খবরের কাগজ/পত্রিকা এবং আমেরিকান নাগরিকদের পাঠানো হাজার হাজার চিঠি পড়তে হয়েছে। তারপরও বছরে কমপক্ষে ৭০টি ফিকশন পড়েছেন তিনি। আসলে বই ছাড়া জীবনের কথা তিনি চিন্তাই করতে পারতেন না। বই পড়েই তিনি স্বপ্ন দেখতে শিখেছেন, জেনেছেন কিভাবে স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন করা যায়।
স্ট্যান লী (‘স্পাইডারম্যান’ কমিকসের স্রষ্টা ও মার্ভেল ফিল্মের চেয়ারম্যান)
তাঁর প্রিয় বই হল নিসেনসন এবং পার্কারের ‘মিনিট বায়োগ্রাফিস’, যে বইটির প্রতিটি পাতায় একজন বিখ্যাত মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। এই বইটি তাঁর কাছে দারুণ লাগত। এরা ছিলেন স্ট্যান লী-র কাছে হিরো। বড় হয়ে ওঠার পেছনে এই বিখ্যাত মানুষেরা ছিলেন আমার আইড্ল।
গ্রেগ লি মও (আমেরিকার সবথেকে জনপ্রিয় প্রফেশনাল সাইক্লিস্ট)
তিনি সাইকেলে চড়ে যেখানেই গেছেন একটি বই সবসময় সাথে নিয়ে যেতেন। যে বইটি তাকে চলার পথে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, সেটির নাম হল মার্কটোয়েনের লেখা ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ হাক্লবেরী ফিন’।