Advt

Advt

Rabindranather Premer Kabitay Vaishnav Padabali Sahityer Probhab (1st Part) by Dr. Raghunath Bhattacharya, Bangladesh,Tatkhanik Digital, e magazine, Online Magazine

Rabindranather Premer Kabitay Vaishnav Padabali Sahityer Probhab (1st Part) by Dr. Raghunath Bhattacharya, Bangladesh,Tatkhanik Digital, e magazine, Online Magazine


সারসংক্ষেপ

রবীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতায় বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব অপরিসীম । তিনি বৈষ্ণব কবিতাকে বিচার করেছেন তাঁর স্বতন্ত্র কবিসত্তা দিয়ে । বৈষ্ণব দর্শনকে তিনি দেখেছেন রোমান্টিক গীতিকবিতার স্বপ্নলোকে । তাঁর প্রেমের কবিতার বৈশিষ্ট্য বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে নর - নারীর হৃদয়ের সংযোগের সন্ধান ; সামান্যের মধ্যে অসামান্যের পরিকল্পনা , মানবীর মধ্যে মানসীর আবিষ্কার । পদাবলির আধ্যাত্মিক চেতনাকে ছাপিয়ে কবি সেখানে মানবীয় প্রেমের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন । আলোচ্য প্রবন্ধে এ বিষয়টিই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৬১-১৯৪১ ) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর প্রতিভা । সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখা তাঁর অসামান্য অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে । তন্মধ্যে কাব্যসাহিত্য অন্যতম। তাঁর কাব্য মুখ্যত গীতিধর্মী । কবির কাব্যে রয়েছে এক অখণ্ড জীবনবোধের তাৎপর্য, অনির্বচনীয় আনন্দ ও সৌন্দর্যচেতনা এবং মানব ও বিশ্বের প্রতি সুগভীর অনুরাগ । বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের প্রেম ও সৌন্দর্যবোধ তাঁকে এক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছে ।

রবীন্দ্রনাথের জীবনে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব অপরিসীম । বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর আবাল্য পরিচয় । ধর্মে ব্রাহ্ম হওয়া সত্ত্বেও ঠাকুর বাড়ির আঙিনায় যাত্রা কীর্তন ও পাঁচালীর আসরের মধ্য থেকেই বালক রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব পদাবলির স্বাদ পেয়েছিলেন । তিনি কৈশোরকাল থেকে শেষজীবন পর্যন্ত বৈষ্ণব পদাবলির রসজ্ঞ পাঠক ছিলেন । অজিত কুমার বেরার মতে :

তাঁদের পারিবারিক গ্রন্থাগারে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রায় সব গ্রন্থই ছিল , তিনি এই গ্রন্থাগারেই অক্ষয়চন্দ্র সরকার ও সারদাচরণ মিত্র সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন (১৮৭৪-৭৭ ) পড়েছিলেন , বয়সে রবীন্দ্রনাথ তখন ১৩-১৪ বছরের বালক । চণ্ডীদাসের সরল ভাষায় লেখা ধ্বনি ঝঙ্কারে ভরপুর পদগুলি কিশোর কবিকে মুগ্ধ করেছিল , যা তাঁকে প্রাচীন কবিদের আদর্শে ও ভাষায় পদ রচনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল ।

বৈষ্ণব সাহিত্য পাঠ ও আলোচনা প্রসঙ্গে কবি নিজেই বলেছেন :

শ্রীযুক্ত সারদাচরণ মিত্র ও অক্ষয় সরকার মহাশয়ের প্রাচীনকাব্যসংগ্রহ সে - সময়ে আমার কাছে একটি লোভের সামগ্রী হইয়াছিল । গুরুজনেরা ইহার গ্রাহক ছিলেন কিন্তু নিয়মিত পাঠক ছিলেন না । সুতরাং এগুলি জড়ো করিয়া আনিতে আমাকে বেশি কষ্ট পাইতে হইত না। বিদ্যাপতির দুর্বোধ্য বিকৃত মৈথিলী পদগুলি অস্পষ্ট বলিয়াই বেশি করিয়া আমার মনোযোগ টানিত । আমি টীকার উপর নির্ভর না করিয়া নিজে বুঝিবার চেষ্টা করিতাম । বিশেষ কোনো দুরূহ শব্দ যেখানে যতবার ব্যবহৃত হইয়াছে সমস্ত আমি একটি ছোটো বাঁধানো খাতায় নোট করিয়া রাখিতাম। ব্যাকরণের বিশেষত্বগুলিও আমার বুদ্ধি - অনুসারে যথাসাধ্য টুকিয়া রাখিয়াছিলাম।

শৈশবেই এমন করে বৈষ্ণব পদাবলি যিনি পড়েছিলেন উত্তর জীবনের কাব্যে , ভাবে ও ভাষায় , ছন্দে ও কল্পনায় বৈষ্ণব পদকর্তাদের স্পর্শ লাগবে তাতে আর বিচিত্র কি ? বৈষ্ণব পদগুলোর নিবিড় ভাবোপলব্ধি কিশোর কবির চিত্তকে মুগ্ধ করেছিল ; আর সেই সাথে বৈষ্ণব কবিতার ভাষার সহজ ললিতগীতি এবং গীতিমাধুর্যও তাঁর কবিপ্রাণে নতুন প্রেরণা সঞ্চার করেছিল পরবর্তী জীবনে কখনো তা বিস্তৃত হয়নি । মহাকবি কালিদাস ( আনু . খ্রি . পূর্ব ১ ম / খ্রিষ্টীয় ৪ র্থ শতক ) ছাড়া ভারতবর্ষের প্রাচীন কবিদের মধ্যে এই বৈষ্ণব পদকর্তাদের মতো আর কেউ রবীন্দ্রনাথের উপর এতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি ।

ষোলো ও সতেরো শতক বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সুবর্ণ যুগ । উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে পদাবলি রচনার তেমন প্রচলন ছিল না । আধুনিক যুগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ( ১৮২৪-১৮৭৩ ) ব্রজাঙ্গনা ( ১৮৬১) কাব্যে বৈষ্ণবভাবের কবিতা রচনা করেন । ব্রজভাষা ব্যবহার না করলেও মধুসূদন তাঁর লিরিক্যা আকুতি প্রকাশের মাধ্যম রূপে রাধা - কৃষ্ণের রূপক ব্যবহার করেন এবং ব্রজাঙ্গনা’-য় কৃত্রিম বৈষ্ণব পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেন ।

কবি জয়দেব ( ১২ শ শতক ) স্বরচিত মধুর কোমলকান্ত সংগীতের নাম দিয়েছেন পদাবলি '। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায় এই পদাবলি শব্দটি গ্রহণ করেছেন । চৈতন্যদেবের ( ১৪৮৬-১৫৩৩ ) পূর্ববর্তী কবি বিদ্যাপতি ( আনুমানিক ১৩৭৪-১৪৬০ খ্রিষ্টাব্দ ) ও চণ্ডীদাসের ( ১৪ শ শতক ) এবং পরবর্তী কবি রায়শেখর ,কবিরঞ্জন প্রভৃতির রচিত সংগীতসমূহ পদাবলি নামে অভিহিত হয়ে আসছে । বাংলা ভাষায় রচিত পদাবলির ভাষা সাধারণত ' ব্রজবুলি ' নামে পরিচিত । এই ব্রজবুলি শ্রীবৃন্দাবন , মথুরা অঞ্চলের ভাষা নয় । ব্রজবুলি বৈষ্ণব কবিতার ভাষা , কবিগুণের সৃষ্ট কৃত্রিম ভাষা । মিথিলার দেশীয় ভাষার মিশ্রণে আসাম , বাংলাদেশ , উড়িষ্যায় একই সময়ে এর উদ্ভব হয়েছিল । মিথিলার বিদ্যাপতি মৈথিল ভাষায় পদ রচনা করেছিলেন । বাংলাদেশে তা ব্রজবুলিতে রূপান্তরিত হয়েছে ।

বৈষ্ণব পদাবলি বৈষ্ণবতত্ত্বের রসভাষ্য । বৈষ্ণবের তত্ত্ব যেন রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলার মধ্য দিয়ে রস - নির্ঝরিণীর প্রবাহে স্নাত ও পূত । পরমাত্মা ও জীবাত্মার নিবিড় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক আধ্যাত্মিক ব্যাকুলতার ধ্বনি উপস্থাপিত হয়েছে বৈষ্ণবতত্ত্বে । পরমাত্মা নিরন্তর আহ্বান করছেন জীবাত্মাকে । সেই আহ্বানে সারা দিতে গিয়ে জীবাত্মা চলেছে ত্যাগ - সর্বস্বতাকে আশ্রয় করে । শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মার প্রতীক ; আর শ্রীরাধা জীবাত্মার প্রতীক । ত্যাগের পথে- দুঃখের পথে পরমাত্মা ও জীবাত্মার দুর্নিবার মিলন সম্ভব হয় । মানবিক প্রেমের অন্তরালে এক আধ্যাত্মিক চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বৈষ্ণব কবিগণ । বৈষ্ণব পদাবলিতে বৈষ্ণবতত্ত্বের অন্তরালে সদা প্রমূর্ত হয়ে আছে একটি নিরপেক্ষ মানবিক আবেদন । এই মানবিক আবেদন ব্যক্তির সংকীর্ণ সীমা অতিক্রম করে একটি সার্বজনীন আবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।

বৈষ্ণব কবিতার যে আকুলতা , অপ্রাপ্যকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা , জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতির মধ্যে যেমন রোমান্টিকতার লক্ষণ প্রকট ,তেমনি আধুনিক গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য - লক্ষণও বর্তমান । বৈষ্ণব পদাবলির কবিগণ মানবীয় পরিবেশের ও পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে রসরাজ শ্রীকৃষ্ণের প্রেমলীলা বর্ণনা করেছেন এবং তাঁদের ব্যক্তিগত অভিপ্রায় , কামনা কোথাও প্রকাশিত হয়নি ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈষ্ণব কবিতাকে বিচার করেছেন তাঁর স্বতন্ত্র কবিসত্তা দিয়ে। তিনি বৈষ্ণব দর্শনকে দেখেছেন রোমান্টিক গীতিকবিতার স্বপ্নলোকে । কবির প্রেমের কবিতা আলোচনা করতে হলে বৈষ্ণব কবিতার সঙ্গে তার সংযোগ ও পার্থক্য অনুধাবন করা প্রয়োজন । রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব কবিদের কাছে ঋণী । তিনি পদাবলি সাহিত্যের দ্বারা যে আকৃষ্ট হয়েছিলেন তার প্রমাণ তাঁর বৈষ্ণব কবিতা , ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী । অন্যান্য কবিতায়ও পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়। অথচ রবীন্দ্রনাথের কাব্যের সঙ্গে পদবলি সাহিত্যের বৈষম্যও রয়েছে যথেষ্ট ।

বৈষ্ণব পদাবলিতে ব্যাপকতার অভাব দেখা যায় । তার একটি লক্ষণ এই শ্রীরাধার সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির সংযোগ নেই । শ্রীরাধা একজন নায়িকা মাত্র । এই বিস্তৃতিও রবীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতায় বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব । ব্যাপকতা রবীন্দ্রনাথের কাব্যের বৈশিষ্ট্য । তিনি বৈষ্ণবকাব্য ও অন্যান্য কবির প্রেমের কবিতার তীব্রতা অটুট রেখে তার মধ্যে বিরাট ব্যাপকতা আনতে চেষ্টা করেছেন । তাঁর প্রথম বয়সের যৌবনস্বপ্ন ' কবিতায় কবি বলেছেন :

আমার যৌবনস্বপ্নে যেন               ছেয়ে আছে বিশ্বের আকাশ ।

ফুলগুলি গায়ে এসে পড়ে                রূপসীর পরশের মতো।

……… কে আমারে করেছে পাগল--     শূন্যে কেন চাই আঁখি তুলে !

যেন কোন্‌ উর্বশীর আঁখি                 চেয়ে আছে আকাশের মাঝে !

                                   (কড়ি ও কোমল)

 

দুই

রবীন্দ্রনাথ প্রায় ষোল বছর বয়সে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী'র ( ১৮৮৪ ) কবিতাগুলো লিখতে শুরু করেন। কবি কাহিনী ( ১৮৭৮ ) রচনারও পূর্বে এটি রচিত হয় । এর পর কবির বিভিন্ন সময়ে কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় মালতীপুঁথি নামক কাব্যের মধ্যে । এ পুঁথির কবিতাগুলো কোনো পত্র পত্রিকায় বা গ্রন্থে মুদ্রিত হয়নি । পুঁথির কাল আনুমানিক ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সম্ভবত ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত । মুম্বাই ,আমেদাবাদ এমনকি প্রথমবার বিলাতবাসকালেও এটি কবির সঙ্গী ছিল । পরে কীভাবে পুঁথিটি অন্তর্হিত হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি । বর্তমানে পুঁথিটি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রসদনে সংরক্ষিত আছে ।

রবীন্দ্রনাথের কবিতায় পদাবলির প্রভাব আস্বাদন করতে হলে মালতীপুঁথি'-র কবিতাগুলোকে বুঝতে হবে । মালতীপুঁথি'-র টুকরো কবিতাগুলোতে কবি হৃদয়ের অশান্তি ও আক্ষেপপূর্ণ অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটেছে । কবিতাগুলো ড . জলি সেনগুপ্তের গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে । ড . সেনগুপ্তের গ্রন্থ থেকে মালতীপুঁথি'-র এরকম কয়েকটি অশান্তি ও আক্ষেপপূর্ণ কবিতার উল্লেখ করা হলো :

১. হায় বিধি এ কপালে   এই কি আছিল শেষে ?

   ভালবাসা পাইনুনা মানুষেরে ভালবেসে ?

   (রবীন্দ্র জিজ্ঞাসা , ১ ম খণ্ড , ১৯৬৫ : ১৯ / ১০ ক , পৃ . ৩২ ) 

. এস আজি সখা বিজন পুলিনে

            বলিব মনের কথাঃ

   মরমের তলে যা কিছু রয়েছে

            লুকানো মরম - ব্যথা ।

           ( ৩১ / ১৭ ক , পৃ . ৪৭)

 

৩. স্বতন্ত্রভাবে লেখা দুটি পঙক্তি –

   খা এতদিনে জুড়াল হৃদয়

   পেয়েছি সে সুখ যাহা খুঁজেছি পৃথিবীময়

                   (পৃ – ৪৪)

 

৪. ছেলেবেলাকার আহা ঘুমঘোরে দেখেছিনু

        মুরতি দেবতাসম অপরূপ স্বজনি ,

   ভেবেছিনু মনে মনে,     প্রণয়ের চন্দ্রলোকে

           খেলিব দুজনে মিলি দিবস ও রজনি

           (৪২/২২ খ, পৃ. ৬৮)

 

কবি কাহিনী'-র খসড়ার শেষে মালতীপুঁথিতে তিনটি ছোট ছোট কবিতা আছে । কবিতাগুলোর অংশ বিশেষ এখানে উদ্ধৃত করা হলো :

৫. পাষাণ হৃদয় কেন সঁপিনু হৃদয় ?

   মর্মভেদা যন্ত্রণায় , ফিরেও যে নাহি চায়

   বুক ফেটে গেলেও যে কথা নাহি কয় ...

   যার তরে কেঁদে মরি , সেই যদি উপহাসে

   তবে মানুষের সাথে মিশিব না আর ।

 

   হারে বিধি কি দারুণ অদৃষ্ট আমার

   যারে যত ভালবাসি , যার তরে কাঁদে প্রাণ

   হৃদয়ে আঘাত দেয় সেই বারেবারে

           ( ৬০ / ৩০ থ , পৃ . ৯৬-৯৭ )

 

৬. ও কথা বোল না সখি- প্রাণে লাগে ব্যথা

   আমি ভালবাসি নাকো এ কিরূপ কথা ।

   কি জানি কি মোর দশা কহিব কেমনে

   প্রকাশ করিতে নারি রয়েছে যা মনে

   পৃথিবী আমারে সখি চিনিল না তাই

   পৃথিবী না চিনে মোরে তাহে ক্ষতি নাই

 

   তুমিও কি বুঝিলে না এ মর্ম কাহিনী

   তুমিও কি চিনিলে না আমারে স্বজনি ?

                (৭০/৩৬ , পৃ .১১৯ )

 

৭.  কি হবে বল গো সখি ভালবাসি অভাগারে

   যদি ভালবেসে থাক ভুলে যাও একেবারে

          ( ৭০ / ৩৬ খ , পৃ .১২০ )

 

৮.  এ হতভাগারে ভাল কে বাসিতে চায় ?

   সুখ আশা থাকে যদি বেসো না আমায় ।

   এজীবন অভাগার- নয়ন সলিলধার

   বল সখি কে সহিতে পারিবে তা হায় ।

   এ ভগ্ন প্রাণের অতি বিষাদের গান

   বল সখি কে শুনিতে পারে সারা প্রাণ

   গেছি ভুলে ভালবাসা - ছাড়িয়াছি সুখ - আশা

   ভালবেসে কাজ নাই স্বজনি আমায় ।

           ( ৭১ / ৩৭ ক , পৃ .১২০ )

 

৯.  জানি সখা অভাগীরে ভাল তুমি বাসনা

   ছেড়েছি ছেড়েছি নাথ তব প্রেম কামনা

   এক ভিক্ষা মাগি হায় - নিরাশ কোরো না তায়

   শেষ ভিক্ষা শেষ আশা- অন্তিম বাসনা

   এ জন্মের তরে সখা- আর তা হবে না দেখা

   তুমি সুখে থেকো নাথ কি কহিব আর ...

 

কবিতাটির শেষ দুটি পঙ্ক্তিতে বিদায়ের সুর :

 

   যাই সখা যাই তবে - ছাড়ি তোমাদের সবে

   সময় আসিছে কাছে বিদায় বিদায় ...

            ( ৭১/৩৭ ক , পৃ . ১২১ )

 

তরুণ কবির অন্তরের অশান্তি , আক্ষেপ ও বেদনা তাঁর মালতীপুঁথি'-র বহু কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে । কবির বাল্যকালীন রচনা 'প্রলাপ ' ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি 'জ্ঞানঙ্কুর ও প্রতিবিম্ব ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় । তিনটি কিস্তিতে প্রকাশিত প্রলাপ ' একটি দীর্ঘ কবিতা । জীবনস্মৃতিতে কবি প্রলাপ ' কবিতাকে বাল্যকালের পদ্যপ্রলাপ ' বলে উপহাস করেছেন । ড . জলি সেন গুপ্ত এ প্রসঙ্গে সজনীকান্ত দাসের একটি উদ্ধৃতি তাঁর গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন : কবি স্বয়ং জীবনস্মৃতিতে এই গুলিকে পদ্যপ্রলাপ ' বলিয়া বিস্মৃতিগর্ভে নিক্ষেপ করিয়াছেন । সন্ধ্যা সঙ্গীতে’-র ও 'প্রভাত সঙ্গীতে'র পূর্বগামিনী ছায়া ( এ কবিতায় ) লক্ষণীয়। এই ' প্রলাপ ' কবিতাগুচ্ছে কবি - হৃদয়ের রোমান্টিক উচ্ছ্বাস ও গীতিপ্রাণতা প্রকাশিত হয়েছে । কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি ও রোমান্টিক আবেগ এই দীর্ঘ কবিতায় আত্মপ্রকাশ করেছে । এতে অক্ষয় চৌধুরীর রোমান্টিক আখ্যায়িকা কাব্যের প্রভাব লক্ষ করা যায় , তবে রবীন্দ্রনাথের কবি প্রকৃতি অনুসারেই এ জাতীয় কাহিনীকাব্যগুলো রচিত হয়েছিল ।          (ক্রমশ) ..............................

                                                                           দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন আগামীকাল, মঙ্গলবার ( ০৮.০২.২০২২)

লেখক পরিচিতি 

রঘুনাথ ভট্টাচার্য-এর জন্ম বাংলাদেশের ঢাকায় । ধামরাই কলেজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন । বাংলায় স্নাতকোত্তর ও পিএইচ ,ডি । বিভাগীয় প্রধান বাংলা বিভাগ নবযুগ কলেজ ধামরাই ঢাকা ।

প্রকাশিত গ্রন্থ - ( ১ ) বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য ( ১৯২০-১৯৩০ ) । ( ২ ) সবুজপত্র গোষ্ঠীর সাহিত্য ভাবনা। ( ৩ ) প্রবন্ধ সংগ্রহ । ( ৪ ) ঈশ্বর ভাবনার বিবর্তন ও অন্যান্য প্রবন্ধ । ( ৫ ) বাংলার বৈষ্ণব দর্শন : সাহিত্যে রাধা ও কৃষ্ণের ক্রমবিবর্তন । এছাড়াও যৌথভাবে একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।


Rabindranather Premer Kabitay Vaishnav Padabali Sahityer Probhab (1st Part) by Dr. Raghunath Bhattacharya, Bangladesh,Tatkhanik Digital, e magazine, Online Magazine