শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ
পরমহংসদেব ( ১৮৩৬-১৮৮৬ ) উনিশ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব । তিনি অবতার পুরুষও বটে। অবশ্য , আমরা বলছি না , সকলেই তাঁকে অবতার বলে গ্রহণ করুন । শ্রীরামকৃষ্ণও সেই কথার ওপর জোর
দেননি । যুগাবতার , যুগদেবতা , যুগপুরুষ
, মহামানব, মহাপুরুষ, সাধক পুরুষ , সমন্বয়ের দূত ইত্যাদি যে অভিধা
- ই আমরা শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে প্রয়োগ করি না কেন, তাঁর
উদ্দেশ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১ ) -এর নিবেদিত শ্রদ্ধাবাণীটি
কিন্তু সর্বজনসম্মতঃ “ বহু সাধকের বহু সাধনার ধারা ।
ধেয়ানে তোমার মিলিত হয়েছে তারা ।। তোমার জীবনে অসীমের লীলাপথে । নূতন তীর্থ রূপ
নিল এ জগতে । "
স্বামী বিবেকানন্দ (
১৮৬৩-১৯০২ ) তাঁর গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে বলেছেন ,
“ তাঁর জীবন না বুঝলে বেদবেদান্ত অবতার প্রভৃতি বোঝা যায় না ।
কেননা , তিনি ছিলেন ব্যাখ্যাস্বরূপ । " স্বামীজী
তাঁর ইষ্টদেবতাকে এক মহাসমন্বয়াচার্য রূপেই বুঝেছেন এবং বুঝিয়েছেন । বাস্তবিকই
তাই। কেননা , বিভিন্ন ধর্মমত , পথের
সাধনার শেষে শ্রীরামকৃষ্ণ একটিমাত্র বাণী উচ্চারণের মাধ্যমে সমগ্র জগৎকে স্তম্ভিত ,
আলোড়িত এবং উপকৃত করে গেছেন । সেই মহাবাণীটি হচ্ছে – ‘যত মত তত পথ ’ । ধর্ম জগতের ইতিহাসে এ এক
আশ্চর্য বাণী , এ এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। ইহাই
রামকৃষ্ণদর্শনের ভিত্তিস্বরূপ । পুরাণে সমুদ্রমন্থন করে ‘অমৃত
' তোলার কাহিনী আছে । শ্রীরামকৃষ্ণ জীবনব্যাপী সাধনার সমুদ্রমন্থন
করে যে 'অমৃত ' তিনি তুলেছেন ,
তা তিনি পুণ্যবান – পাপী , ভালো - মন্দ নির্বিশেষে সকলের হাতে তথা মুখে তুলে দিয়েছেন । আর তিনি
নিজে সকলের পাপতাপের কালকূট তথা গরল,গলাধঃকরণ করে হয়েছেন
নীলকণ্ঠ । শ্রীরামকৃষ্ণের ভাষায় – ‘‘ ভাত রেঁধেছি ,
তোরা বাড়া ভাতে বসে যা । " ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত
' সেই মৃত্যুশ্রয়ী সুধা তথা অমৃতের ভাত । যাঁরা
দেবপ্রকৃতির মানুষ তাঁরা তো এই অমৃত পান করে অমর হবেনই , এমনকি
যারা অসুর প্রকৃতির , তাঁরাও যদি শ্রদ্ধা ভরে এই অমৃত পান
করেন , তাহলে তাঁরাও অমর হয়ে যাবেন । শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ দানের এটাই অভূতপূর্ব মহিমা ! দিন - ক্ষণ - তিথি - স্থান- পাত্র
মিত্রের খুঁটিনাটি বর্ণনা সম্বলিত - শ্রীরামকৃষ্ণ অবতার জীবনের তরতাজা , জীবন্ত দলিল হচ্ছে ‘শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণকথামৃত '
নামক অমূল্য গ্রন্থখানা । এ এমন গ্ৰন্থ , এমন সব কথা আছে এতে যা একবার পড়ে শেষ হয় না । আয়ত্ত করা তো দূরের
কথা । অন্য গ্রন্থ বা বই একবার পড়লে হয়তো দ্বিতীয়বার পড়ার আগ্রহ থাকে না ,
কিন্তু কথামৃত বারবার । এটি নিত্য নতুন , নিত্যপাঠ্য । এমনই এর মহিমা । কথামৃতে যেমন উপনিষদ্ আছে , গীতা আছে , রামায়ণ মহাভারত আছে , ভাগবত আছে তেমনি চৈতন্যচরিতামৃত , বাইবেল এবং
ইসলাম , বিশেষত সুফিদের তত্ত্বকথাও আছে । বলা যায় –
‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত ’ সর্বশাস্ত্রের
সার ।। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ( ১৮৫৪-১৯৩২ ) তথা ‘শ্রীম ’
- কথিত গ্রন্থ ‘শ্রী শ্রী
রামকৃষ্ণকথামৃত ” । পাঁচ ভাগের শ্রীশ্রীকথামৃতের মধ্যে ‘শ্রীম ’ নিজেকে প্রচ্ছন্ন রেখে শ্রীরামকৃষ্ণকে
সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছেন । গ্রন্থকার বহু কাল্পনিক নামের আশ্রয় নিয়েছেন
নিজেকে লুকোবার জন্যে । যেমন মণি , মোহিনীমোহন , একটি ভক্ত , মাস্টার , শ্রীম , ইংলিশম্যান ইত্যাদি । লেখক
মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি কোথাও নেই বললেই চলে । দু 'এক স্থানে দু ' একটি নিভৃত চিন্তার মাত্র
পরিচয় পাওয়া যায় তাহাও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবের ওপর ভিত্তি করে তাঁরই মহিমা
প্রকাশের প্রয়াসমাত্র । সেগুলো সেবকের নির্মল হৃদয়াকাশে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ছবি
ছাড়া আর কিছু নয় । এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন , প্লেটো সক্রেটিসের যে জীবনী লিখেছেন সেটি হচ্ছে plato all over, সব
জায়গাতে প্লেটোই ফুটে ওঠেছেন । সক্রেটিসের চেয়ে সেখানে প্লেটোর প্রাধান্যই ঘোষিত
হয়েছে । পক্ষান্তরে কথামৃতকার শ্রীম নিজেকে একেবারে সম্পূর্ণরূপে আড়ালে রেখে
দিয়েছেন ।
কথামৃতের সময়কাল ১৮৮২
সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৮৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত । অর্থাৎ ,
এই সময়কালের দিন - ক্ষণ - তিথি - স্থান – পাত্র-মিত্র ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত ' গ্রন্থে সন্নিবেশিত
হয়েছে। শ্ৰীম তথা মাস্টারমশাই যেদিন যা শুনেছেন তা লিপিবদ্ধ করেছেন । কথামৃতে
বিধৃত শ্রীরামকৃষ্ণের মুখের কথাকে অবিকল লেখার অক্ষরে বসিয়ে দেওয়ার দুরূহ কাজটি
শ্রীম সুনিপুণভাবে করেছেন তা বলাই বাহুল্য । তত্ত্বের দিক দিয়ে ঠাকুর
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং তাঁর সহধর্মিণী শ্রীশ্রীমা সারদাদেবী এক অখণ্ড চৈতন্যস্বরূপ।
‘‘ঠাকুর ও আমাকে অভেদ দেখবে । ” - স্বয়ং সারদা মায়ের উক্তি ।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের
দেহরক্ষার ( ১৮৮৬ ) কয়েক বছর পরে শ্রীমা সারদা ( ১৮৫৪-১৯১৯ ) মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত (
শ্রীম ) কে ‘ কথামৃত ' শোনাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন । শ্রীম-র কাছ
থেকে কথামৃত শুনে শ্রীমা খুবই সন্তুষ্ট হলেন । তাঁকে তিনি আশীর্বাদ করে বললেন –
“ তোমার মুখে ঐ সকল কথা শুনিয়া আমার বোধ হইল , তিনিই ঐ সমস্ত কথা বলিতেছেন । ” অতঃপর শ্রীমা
শ্রীমকে এই গ্রন্থ প্রকাশ করার আদেশ দিলেন । মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ( শ্রীম ) ১৮৯৭
সালে ইংরেজীতে উক্ত গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশ করেন 'Gospel of Sri Ramkrishna
' (According to M. , a son of the Lord and
disciple ) এই শিরোনামে । পরবর্তীতে উহা ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ – শ্ৰীম কথিত '
নাম ধারণ করে বাংলা ভাষায় 'তত্ত্বমঞ্জরী
','বঙ্গদর্শন ',‘উদ্বোধন ’
‘হিন্দু পত্রিকা ' ইত্যাদি মাসিক
পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে । এক সময় এগুলো একত্রীভূত করে স্বামী
ত্রিগুণাতীতানন্দ কর্তৃক উদ্বোধন প্রেস থেকে ১৯০২ সালে ‘শ্রীম
কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত ' - এর প্রথম ভাগ প্রকাশিত
হয় । এরপর পর্যাক্রমে ১৯০৪ সালে দ্বিতীয় ভাগ, ১৯০৮
সালে তৃতীয় ভাগ , ১৯১০ সালে চতুর্থ ভাগ এবং ১৯৩২ সালে
পঞ্চম ভাগ প্রকাশিত হয় ‘ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত'
গ্রন্থটি । স্মর্তব্য , কথামৃতের
পঞ্চমভাগ মুদ্রণ সমাপ্তকালে ( ১৯৩২ ) শ্ৰীম তথা মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের দেহাবসান ঘটে
। ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত ’ - এর
বিষয়বস্তু হলো ভগবান এবং ভগবানলাভের উপায় । কী করে আমাদের ভববন্ধন মোচন হবে,
কীভাবে আমরা এই সংসার - ব্যাধি থেকে মুক্ত হবো , এই যে জন্মজন্মান্তর ধরে আমরা অন্ধকারে ঘুরছি , এই অন্ধকারের কী করে নিবৃত্তি হবে ইত্যাদি আমরা কথামৃত থেকে জানতে পারি
। আমাদের যত সংশয় সেগুলো কী করে দূর
হবে , আমাদের সংসারে
সমস্ত কাজকর্মের ভেতরেও কী করে আমরা ভগবানমুখী হয়ে অপার
শান্তির অধিকারী হবো ইত্যাদি কথামৃতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের উপদেশের মধ্যে আমরা
পাই । আমরা ব্যক্তিগতভাবে জ্ঞানপ্রবণ , ভক্তিপ্রবণ কিংবা কর্মপ্রবণ যাই - ই হই না কেন , কথামৃত
থেকে আমরা সকলেই পথনির্দেশনা পেতে পারি। পাশাপাশি পেতে পারি অপূর্ব প্রেরণা । ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত ' ধর্মীয় শাস্ত্র হিসেবে তো
বটেই ,কথাসাহিত্যের দিক দিয়েও এটি অসাধারণ সৃষ্টি । অপূর্ব
বাক্শিল্পী শ্রীরামকৃষ্ণদেব কথামৃতে শাস্ত্রের তথাকথিত গুরু গম্ভীর ভাব ও ভাষাকে
সর্বসাধারণের উপযোগী করে পরিবেশন করেছেন । স্বাভাবিকভাবে সেখানে উঠে এসেছে আমাদের
চিরপরিচিত লৌকিক জীবন এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন গল্প , প্রবাদ - প্রবচন , শ্লোক , খেলাধূলার
প্রসঙ্গ ইত্যাদি । শ্ৰীম কথিত ' শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত '
প্রথম যখন প্রকাশিত হয়েছিল তখন হয়তো মুষ্টিমেয় কিছু লোককে এটি
প্রভাবিত করেছে , কিন্তু কালপরিক্রমায় কথামৃত আজ সমগ্র
বিশ্বের মানবকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করছে । ' শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত
' পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে । ফলে বিভিন্ন
ভাষাভাষীর মানুষ এই কথামৃতের রস আস্বাদন করতে পারছেন , পাশাপাশি
তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক পিপাসা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে । ১৯৮২ সালের ৩১ ডিসেম্বর
‘ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত ' - এর
গ্রন্থস্বত্ব বা কপিরাইট শেষ হয় । ১ জানুয়ারি ১৯৮৩ দৈনিক ‘আনন্দবাজার
পত্রিকা'-য় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ ছিল এরূপ –
" ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনটি এবার কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায়
এক নতুন ইতিহাস রচনা করল । এই সকালে কমপক্ষে পাঁচটি প্রকাশনা সংস্থা একই সঙ্গে
প্রকাশ করছেন 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত : শ্রীম - কথিত '। দু - চার দিনেরই মধ্যে একই বই নিয়ে বাজারে নামছেন আরও কয়েকজন প্রকাশক।
এ ঘটনা , অনেকের মতে , বইপাড়ায় অভিনব
... এঁদের সকলেই বইটি দিচ্ছেন মূল সংস্করণের থেকে কম দামে
এবং প্রতিযোগিতার বাজার প্রধানত গরম হচ্ছে – কে কত কম দামে
দিতে পারেন , তাই নিয়ে । ” বর্তমান
কাল অনেক বছর আগের ঘটনা এটি । দীর্ঘ এত বছরের ব্যবধানে
কথামৃতের প্রকাশনার প্রতিযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয় ।
গ্রন্থটির অসাধারণ জনপ্রিয়তা এর থেকেই উপলব্ধি করা যায় । পরিশেষে বলা যায় ,
শ্রীম - কথিত ‘ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত'
হচ্ছে শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাবসমুদ্র। শ্রীরামকৃষ্ণের সেই ভাবরূপ কথামৃতের সাগরে ডুবলে
কেউ মরে না, মরে বেঁচে যায়। মাস্টারমশাই শ্রীম (মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত) আত্মহত্যা
করবেন বলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে ছিলেন। কিন্তু শ্রী রামকৃষ্ণের কথামৃত আস্বাদন করে
তিনি অমর হয়ে গেলেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেব তাঁর কথামৃতের লিপিকারের মর্যাদায় অভিষিক্ত
করলেন মাস্টারমশাই শ্রীমকে। ধন্য মহেদ্রগুপ্ত সার্থক তাঁর মানবজীবন! শ্রীম নিজে এই
অমৃতফল আস্বাদন করেছেন, কিন্তু আম খেয়ে মুখ মুছে ফেলেননি – আমাদেরও তার ভাগ
দিয়েছেন। সেজন্য আমরাও ধন্য। যতদিন বিশ্বের বুকে শ্রীরামকৃষ্ণের নাম থাকবে, ততদিন
‘ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ ও থাকবে। আর থাকবে কথামৃতের লিপিকার মাস্টারমশাই
শ্রীম-র নামও। শ্রীম-র মতো আমরাও যদি কথামৃত প্রাণভরে আস্বাদন করতে পারি, তাহলে
আমরাও মৃত্যুকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবো – তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। জয়তু
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ। জয়তু শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতম।
সহায়ক গ্রন্থ-
১) শ্রীম-কথিত,
‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ (অখণ্ড)
২) স্বামী ভূতেশানন্দ-রচিত,
‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-প্রসঙ্গ’ (প্রথম ভাগ ও পঞ্চম ভাগ)
৩) মণি বাগচি – সংকলিত ‘কথামৃত
সার’।
৪) অভয়া দাশগুপ্ত সংকলিত,
‘নিজমুখে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবন ও উপলব্ধি’
৫) ‘উদ্বোধন’ পত্রিকার
১১৬-তম বর্ষের কতিপয় সংখ্যা ইত্যাদি।
লেখক পরিচিতি –
ড.বাসুদেব রায়ের জন্ম ১৯৬২ সালে। কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যের জগতে আত্মপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশিত বই মানব' (কাব্যগ্রন্থ), দ্বিতীয় বই রক্তের বাঁধন (উপন্যাস)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণা করলেও প্রবন্ধ সাহিত্যের দিকে তার ঝোঁক বেশি। তদুপরি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তথা বই লিখতে তিনি অধিকতর উৎসাহী। গবেষণামূলক বইয়ের পাশাপাশি সাধু-মহাপুরুষদের জীবনী-গ্রন্থ, একাঙ্কিকা ইত্যাদি সম্পাদনাও করেছেন তিনি।
ড.বাসুদেব রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। হার উল্লেখযোগ্য গবেষণা গুলোর মধ্যে রয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ', চণ্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে সমাজ-চিত্র ইত্যাদি। তাঁর যৌথ রচনা ও উপেক্ষণীয় নয়।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাসুদেব রায় নিরলস ভাবে লিখে চলেছেন। এছাড়াও নতুন করে তিনি একক ও যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক কাজে হাত দিয়েছেন। নিয়মিত বিভিন্ন e magazine-এ লেখেন।
***************
শ্রীরামকৃষ্ণ মধ্যাহ্ন-সূর্য
শ্রীমা পূর্ণিমা-রাতের শশী--
একে একে দুইয়ে মিলে
স্বয়ং-প্রকাশ পূর্ণ-ব্রহ্ম
শ্যামের হাতের বাঁশি!
জীবন-মরণ পথের ধারে
প্রাণের টানে
ফিরে ফিরে আসি...
কবি পরিচিতি :
জন্ম দিনাজপুর শহরে (১৩৬০ বঙ্গাব্দে)। অবসরপ্রাপ্ত বাণিজ্য বিষয়ের অধ্যাপক। উত্তরবঙ্গের লেখক। উল্লেখযোগ্য বই : " ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা" ( অণু- কাব্য-গ্রন্থ ) , "গল্পের আঁকিবুকি" ( গল্প- গ্রন্থ), " The Least Developed SAARC Members : Bangadesh, Bhutan, Nepal & Maldives" ( প্রবন্ধ-গ্রন্থ ) ইত্যাদি ।
বঙ্গ ও বর্হিবঙ্গের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন ।
**********
প্রেমের সাধক বাঁধলো তরী
মানব-গঙ্গা
তীরে,
যাকে নিয়ে আজও প্রশ্ন হাজার
অখিল
বিশ্ব ঘিরে ।
নানা মত আর ভিন্ন ধর্ম
মিলনের
সদাগর,
অবতাররূপে পাগলা সাধক
জন্মাল
গদাধর ।
কৌতুকপ্রিয় জীবিত দেহে
সিক্ত
মধুর ভাষে,
তৃপ্তির লাভে বহুদূর হতে
ভক্তের
দল আসে ।
প্রথাগত কোন ছিল না শিক্ষা
অজ
পাড়াগাঁয়ে বাস,
অন্তরে তবু প্রজ্ঞা গভীর
তিনি
যে, "পরম-হাঁস" ।
ভারত-পথিক ভবিষ্যতের
ছিল
বিধাতার লেখা,
সন্ন্যাসী, সংসারী-গৃহীদের
তাঁর
পরশেই শেখা ।
সাধন-সহায় --- পত্নী সারদা
মূর্ত
সরস্বতী,
ষোড়শীরূপে স্বামী-পূজিতা
সাক্ষাৎ
জ্ঞানবতী ।
চেতনে পূর্ণ --- আধ্যাত্মিক
জ্ঞানের পরম আধার,
অতি সাধারণ মানুষ, যেন
জল,
মাটি আর কাদার ।
মূলাধার হতে ওঠা-নামা যার
চেতনা
সহস্রারে,
বিশ্বের তিনি আজও বিস্ময়
কিভাবে
মানুষ পারে ।
নরেন, কালী, শরৎ শশী
মাষ্টার
মহোদয়,
যোগেন, লাটু, মাতাল গিরীশে
ভক্তি
ও জ্ঞানোদয় ।
এমন-ই ছিল, পাগলা
ঠাকুরে
অদ্ভূত
ক্ষমতা,
নিজে বিবাহিত --- গৃহী সন্ন্যাসী
অন্তরে
মমতা ।
ঈশ্বর, গড্, ব্রহ্ম আল্লাহ্
সব
জীবে ভগবান,
দর্শনে সদা সমাধি-মগ্ন
শুনে
কীর্তনগান ।
সর্ব ধর্ম ---- অবগাহনে
ঋদ্ধ
বিনম্রতায়,
তৃপ্ত স্বাধীন সমন্বয়ে
দীপ্ত
অভিজ্ঞতায় ।
নরেনের থেকে বিবেকানন্দে
উত্তরণের
পথে,
পরম শিষ্য শিক্ষিত তাঁর
সমন্বয়ের
মতে ।
সকল ধর্ম, সকল পথ-ই
ধাবিত
একই লক্ষ্যে,
অনুভূত সেই সাধনা সকল
ধরলো
আপন বক্ষে ।
প্রভূত চাহিদা --- বিশ্ব সমাজে
ভাবনা
সমন্বয়ের,
ইতিহাস পুনঃ গড়বে ভারত
মানব
অভ্যুদয়ের ।
পদে পদে আজও তাই প্রয়োজন
ঠাকুরের
সেই বাণী,
"যত মত তত পথ" --- যদি নিজ
জীবন
যাপনে মানি ।
কবি পরিচিতি :-
জন্ম মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ । সেখানে কিছুটা পড়াশোনা, পরে পাটনা ও শেষে দিল্লী থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক । কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে অবসরপ্রাপ্ত । সাহিত্য, সঙ্গীত, বই- পড়া, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, যোগ-ব্যায়াম, আধ্যাত্মিকতা ও প্রেত-তত্ত্ব ইত্যাদিতে চর্চা । মুক্ত-চিন্তাবিলাসী ও কুসংস্কার বিরোধী । বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি।