Advt

Advt

Sristir Prathom Dine Bramhanda Dekhta Kemon Chilo (Part - 2), Jana Ajana by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik digital bengali online e magazine

 প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

Sristir Prathom Dine Bramhanda Dekhta Kemon Chilo (Part - 2), Jana Ajana by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik Bangla / Bengali e-magazine, সাহিত্য পত্রিকা, ছোট পত্রিকা


  

Sristir Prathom Dine Bramhanda Dekhta Kemon Chilo (Part - 2), Jana Ajana by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik Bangla / Bengali e-magazine, সাহিত্য পত্রিকা, ছোট পত্রিকা

এক নম্বর চিত্রটি দেখুন।

জে ডবলু এস টি বা শুধু ওয়েব টেলিস্কোপএর ২১ ফুট চওড়া প্রাথমিক আয়নাহুবেল এর প্রাথমিক আয়নার তিনগুণ বড়। সেকারণে মহাকাশের অনেক বেশি দূর থেকে সামান্যতম আলোও ( ইনফ্রা-রেড বা অবলোকিত-রশ্মি) ( Infra-Red) এতে ধরা পড়বে। হুবেলকাজ করে আমাদের চোখে দেখা দৃশ্যপট রশ্মি বা ভিজিবেলরশ্মি ক্ষেত্রে। এই অবলোকিত রশ্মি এতই ক্ষমতা সম্পন্ন যে চাঁদে যদি একটি অতি ক্ষুদ্র ভোমরাও ডানা ঝট-পট করে,তবে তা থেকে উৎপন্ন উত্তাপও ওয়েবেধরা পড়বে-এতই জোরালো ওয়েবএর শক্তি।

এর এন্টেনার গঠনও অনন্য : একটি ধাতুর তৈরি ১৮টি ছয়-কোনা আলাদা আলাদা আয়নাকে ভাঁজ করে রাখা আছে। ওয়েব এল-২স্থানে পৌঁছে গেলে ওই আয়না গুলিকে খুলতে হবে। এই আয়না সাধারণ নয় বেরিলিয়াম(Berrylium) নামক ধাতু যা নাকি এলুমিনিয়ামের চেয়েও হালকা কিন্তু লোহার চেয়েও শক্ত তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই আয়নাগুলি। আয়না গুলির উপরে আবার সোনার গুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে করে মহাকাশের ক্ষীণতম তাপ-সংকেত’-(Temperature Signal) ধরা পড়ে। এই কারণেই এটিকে ভীষণ নিন্ম-তাপে রাখা প্রয়োজন। এই প্রাথমিক আয়নাকে সূর্যের প্রচণ্ড তাপ থেকে মুক্ত রেখে মাইনাস ২২৩ (-২২৩) ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে যাতে করে মহাকাশের ক্ষীণতম আলোও ধরা পড়ে; এই আয়নার অন্য দিকে (সূর্যের দিকে মুখ-করা)’-র তাপমাত্রা হবে ৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই কারণে পাঁচটি পাতলা সূর্য-ছাতাবা সান-শিল্ড(Sun Shield) আছে-এক একটি ছাতাআয়তনে একটি ছোটো টেনিস খেলার মাঠের সমান। এই ছাতাগুলি সূর্যের কিরণ প্রতিহত করে প্রাথমিক আয়নাটাকে ঠাণ্ডা রাখবে। ওয়েবএর প্রাথমিক আয়নার কার্যকারী আয়তন (Effective Area) হুবেল আয়নার ৬.২৫ গুন বেশি আর এই কারণেই ওয়েবস্পেস টেলিস্কোপ হুবেল এর তুলনায় ১০০ গুন বেশি শক্তিশালী (sensitive) এই বিপুল শক্তির বলেই ওয়েবব্রহ্মাণ্ডের সুদূর প্রান্ত থেকেও আলোর রোশনি দেখতে পাবে। এক হাজার কোটি ডলার খরচের এই প্রকল্প আজ পর্যন্ত মানুষের দ্বারা মহাকাশে উৎক্ষিপ্ত সমস্ত যন্ত্র বা উপগ্রহ ছাড়ার খরচ ছাড়িয়ে গেছে। তাই  এই প্রকল্পের তিন শরিক নাসা’, ‘ই এস এ’(ইয়োরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি)-ক্যানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির বৈজ্ঞানিক, ও কর্মী নিরলস নেত্রে আগামী ৬মাস দিন-রাতএক করবে। প্রথমের একমাস আবার সবচেয়ে দুর্যোগ-সম্ভাব্য। এই এক মাসে মোট ২৬টি স্তরে (Stage)ওয়েবকে আপনস্থানে বসিয়ে কাজ শুরু করতে হবে আর এই কাজে ৩৪৪ টি স্থানে মারাত্মক ভুল হবার সম্ভাবনা আছে বলে নাসার বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন। মহাকাশে নভচর পাঠিয়ে এই মারাত্মক ভুলগুলি শোধরাবারকোন উপায়ই নেই। হুবেলএর ক্ষেত্রে পৃথিবী থেকে মহাকাশে ভাসমান মানুষ/ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে কয়েকবার ভুল সংশোধন করা হয়েছিল,কেননা হুবেল ছিল পৃথিবীর কাছে-মাত্র ৫৪৭ কিলোমিটার উপরে। কিন্তু ওয়েব”(১৬ লক্ষ কিলোমিটার উপরে) এর ক্ষেত্রে কোন ভুল মানে ১০০০কোটি ডলার মহাশূন্যে উড়িয়েদেওয়া। ই এইছ টি (EHT- Event Horizon Telescope) পৃথিবী-ব্যাপী ৯ টি রেডিও টেলিস্কোপের এক অপূর্ব নেট-ওয়ার্ক। এই ৯টি টেলিস্কোপের তথ্য একত্রিত করেই ই এইছ টি ২০১৯ সালে আমাদের চমকে দিয়েছিল প্রথম ব্ল্যাক-হোলের ছবি দেখিয়ে। খবরের কাগজে আর টি ভি তে আমরা সেই ছবি দেখে আঁতকে উঠেছিলাম-মনে নেই? ‘ব্ল্যাক-হোলমহাকাশে এমনই একটি শূণ্যস্থান যার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অসীম-যার থেকে এমনকি আলোরও মুক্তি নেই-বেঁকে যায় আলো। ওয়েবই এইছ টির সহযোগে আমাদের আপন গ্যালাক্সি অর্থাৎ আকাশ গঙ্গায় অবস্থিত ব্ল্যাক-হোলের সন্ধানও করার পরিকল্পনা আছে।

ওয়েবকে বলা হচ্ছে একটি টাইম-মেশিনযার সাহায্যে বৈজ্ঞানিকরা দেখতেপাবেন ১৩০০ কোটি বছরেরও আগে কি করে এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পরে কিভাবে তারা-মণ্ডলী আর গ্রহগুলির জন্ম হয়েছিল। দেখা যাবে সেই-দিনেরগ্যালাক্সিগুলি আর তারাদের গঠন কেমন ছিল। এ যেন টেপ-রেকর্ডারে রি-ওয়াইণ্ডকরে নেওয়া।

গত বছর ( ২০২১) ঠিক এমনি সময়ে (১ লা জানুয়ারি) তাৎক্ষণিকে প্রকাশিত ত্রিদেব সূর্যপ্রবন্ধে আমরা জেনেছিলাম যে মহাকাশের গ্যাস আর ধুলো’-র তৈরি ইডলিআকৃতির সৌর নেবুলার বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয়েছিল সূর্য,গ্রহ,উপগ্রহ আর নক্ষত্র-মণ্ডলী। সেটা ছিল প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগের ঘটনা। আবা,এর অনেক অনেক আগে প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে আর এক ভয়ানক বিস্ফোরণের ফলে জন্ম নিয়েছিল আমাদের এই অসীম ব্রহ্মাণ্ড। তাই এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান খুব বিসৃত নয়। সেই কারণেই হুবেলআর ওয়েবএর অতি প্রয়োজন।

ওয়েব’ নিজের স্থানে পৌঁছে গেলে পৃথিবীর কন্ট্রোল রুমথেকে প্রথম যে দুটি কাজ করতে হবে তা হল-১৮টি আয়নার ভাঁজ খুলে একটি প্রাথমিক আয়না তৈরি করা আর পাঁচ-স্তরের টেনিস মাঠের সমান হিট-শিল্ডগুলিকে আপন-আপন স্থানে বসানো। এই হিট-শিল্ডগুলি না খুললে ওয়েবএত গরম হবে যে তাকে সামলানো অসম্ভব হয়ে যাবে।তাই, এই সব অতি সূক্ষ্ম কাজগুলি করতে হবে-বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে। এতে সামান্যতম ভুলও ওয়েবের পক্ষে মারাত্মক হবে বলে নাসামনে করে। নাসার কথা অনুসারে ওয়েবথেকে প্রথম ছবি পেতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।

তাই, ‘নাসার বৈজ্ঞানিকদের মত আমরাও আগামী কয়েক মাস হাত-কামড়েঅধির আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকব আর প্রার্থনা করবো ওয়েবএত সম্পূর্ণ সাফল্যের জন্য।

 লেখক পরিচিতি 

ড. তুষার রায়-এর স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ লেখা। ওই সময়েই শুকতারাতে অসীমের অন্বেষণে প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু “Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পান

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর আই. আই. টি, দিল্লি থেকে পড়াশুনা ও গবেষণা,কিছুদিন অধ্যাপনা,তারপর সরকারী বৈজ্ঞানিক দপ্তরে কার্যকালে পৃথিবীর কয়েকটি দেশেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।

ঞ্চাশটিরও বেশি প্রবন্ধ নামী বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে (ইন্দোর) আমন্ত্রিত প্রবন্ধ পাঠ করার গৌরবও ভাগ্যে ঘটেছে। বিগত দেড় বছর করোনার প্রকোপে ছাপাখানা বন্ধ থাকার কারণে অনেক ই-ম্যাগাজিনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।

দিল্লি থেকে প্রকাশিত বহুল জনপ্রিয় ই-ম্যাগাজিন, “তাৎক্ষণিকএর জানা-অজানা কলমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টি জনপ্রিয়-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশ ওয়েব-সাইটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।         

Tatkhanik digital bengali online e magazine.