সম্প্রতি (২০ জানুয়ারি,২০২২) M 5.5 মাপের এক সূর্য বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় বেলা ১১ টা বেজে ৩১ মিনিটে। সূর্য শিখা বা সোলার ফ্লেয়ার হ’ল সূর্যের উপরিভাগের আবহাওয়ায় এক ভীষণ ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক বিস্ফোরণ (Electro-magnetic Explosion)। এই জাতীয় বিস্ফোরণ ঘটে প্রতি ১১ বর্ষীয় ‘সূর্য স্পট’ বিকিরণ (Solar spot cycle) ঘটনার-চক্র অনুযায়ী।
এই সময়ে
সূর্যের প্রচণ্ড শক্তিশালী চুম্বকত্ব যখন অতিমাত্রায় মুচড়ে সঙ্কুচিত হয় তখনই ঘটে
এই বিস্ফোরণ। একটি রাবার ব্যাণ্ডকে / গার্ডারকে যদি খুব বেশি করে পাকিয়ে হঠাৎ ছেড়ে দেওয়া যায় তাহলে কি হয়? তখন সেটি তীব্র বেগে ছিটকে দূরে চলে যাবে। ঠিক একই ভাবে সূর্যের
বৈদ্যুতিক-চুম্বক শক্তি (Electro-Magneic Energy) অতি
মাত্রার চাপে মুচড়ে যাওয়ার ফলে ওই রাবার ব্যান্ডটির মত অগ্নিশিখার আকারে সূর্যের
বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। এটাই হ’ল
সাধারণ ভাষায় সূর্য-শিখা বা সোলার ফ্লেয়ার। ‘সৌর স্পট’
আমাদের পৃথিবী থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা,কখনও
বা কম সময়ের জন্য সূর্যের উপরে উজ্জ্বল বিন্দুর মত দেখায়।
‘সূর্য শিখা’সব সময়ে সমান থাকেনা-কখনও দিনে বেশ কয়েক বার হয় আবার কখনও সপ্তাহেও
একবারের কম হ’তে পারে। আবার ফ্লেয়ারের তীব্রতারও কম বেশি
হয়। তবে, বেশি তীব্র ফ্লেয়ারের ঘটনা ঘটে কম তীব্র
ফ্লেয়ারের তুলনায় কম বার।
সোলার ফ্লেয়ার সাধারণভাবে মানুষের কোন
ক্ষতি না করলেও দূর-সঞ্চার প্রণালি, বিদ্যুৎ-চুম্বকত্ব বিকিরণ (Electro-Magnetic
Radiation), বিদ্যুৎ প্রবাহের লাইন (Electric
Power Lines), ন্যাভিগেশন সিগনাল (Navigation
Signals) মহাকাশ যান (Space Crafts)
ও নভচরদের (Cosmonauts)
প্রভূত ক্ষতি করতে পারে। রবিবার,২০শে
জানুয়ারি,২০২২ তারিখে একটি তীব্র সৌর ফ্লেয়ারের ঘটনার ফলে
ভারত-মহাসাগরের উপরে দূর-সঞ্চার প্রণালীর ভীষণ ক্ষতি হয়েছিল। এর ফলে কয়েক ঘণ্টা ধরে সমুদ্রে জাহাজ চলাচলে আর
তাদের দূর-সঞ্চার প্রণালী বিঘ্নিত হয় এবং সমুদ্রে জাহাজ
চলাচলে বিশেষ অসুবিধা হয়েছিল।
আগেই বলেছি, ফ্লেয়ার প্রত্যক্ষভাবে মানুষের কোন
ক্ষতি করেনা কারণ ফ্লেয়ার প্রধাণতঃ এক্স-রে (X-Ray)
জাতিয় বিকিরণ। তাই,এই ক্ষতিকর রশ্মি
পৃথিবীর দিবা-ভাগের উপরের আবহাওয়ায় নষ্ট হয়ে গিয়ে নিচে নেমে আসতে পারেনা।
ফ্লেয়ার, সূর্যের ন্যায় অন্য তারকাতেও ঘটে তাকে ‘স্টার-ফ্লেয়ার’ বা তারকা-শিখা বলে।
লেখক পরিচিতি –
ড. তুষার রায়-এর স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ লেখা। ওই সময়েই “শুকতারা”তে “অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু “Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পান।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর আই. আই. টি, দিল্লি থেকে পড়াশুনা ও গবেষণা,কিছুদিন অধ্যাপনা,তারপর সরকারী বৈজ্ঞানিক দপ্তরে কার্যকালে পৃথিবীর কয়েকটি দেশেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।
পঞ্চাশটিরও বেশি প্রবন্ধ নামী বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে (ইন্দোর) আমন্ত্রিত প্রবন্ধ পাঠ করার গৌরবও ভাগ্যে ঘটেছে। বিগত দেড় বছর করোনার প্রকোপে ছাপাখানা বন্ধ থাকার কারণে অনেক ই-ম্যাগাজিনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।
দিল্লি থেকে প্রকাশিত বহুল জনপ্রিয় ই-ম্যাগাজিন, “তাৎক্ষণিক”এর ‘জানা-অজানা’ কলমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টি জনপ্রিয়-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি “দেশ” ওয়েব-সাইটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।