Advt

Advt

Amader Jibane Rabindranath O Vivekananda (Feature / Probondho) by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik Bangla / Bengali e magazine Online Reading Free

Amader Jibane Rabindranath O Vivekananda (Feature / Probondho) by Dr. Basudeb Roy, Tatkhanik Bangla / Bengali e magazine Online Reading Free

 

আমাদের জীবন নদীধারা প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে । এই বয়ে চলাটা সব সময় মসৃণভাবে যে হচ্ছে তা নয় । এর মধ্যে কত বাঁক ইত্যাদি মধ্য দিয়ে মাঝে মাঝেই আমাদের চলতে হয় । তবে শত ঝড় - ঝঞ্ঝা - অমানিশার ভ্রূকুটিকে উপেক্ষা করে আমাদের মাঝে অনেক আলোকবর্তিকার মধ্যে উজ্জ্বলতম হয়ে বিরাজ করছেন ভুবন বিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৬১-১৯৪১ ) এবং বিশ্ববিজয়ী বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ( ১৮৬৩-১৯০২ ) ।

বাতাস ছাড়া যেমন কেউ বাঁচে না , তেমনি রবীন্দ্রনাথ এবং বিবেকানন্দ ছাড়া আমাদের বিশেষ করে বাঙালিদের বাঁচার উপায় নেই । তাঁরা আমাদের চলার পথের নিত্যসঙ্গী । আমাদের বিশেষ করে বাঙালিদের সামগ্রিক সমাজচিত্তা রবীন্দ্র - ভাবনা দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত । সেখানে বিবেকানন্দও অবশ্যই রয়েছেন । শিক্ষিত বাঙালির অনেকের কাছে জীবনচর্চার অর্থ রবীন্দ্রচর্চা । তাদের জন্ম , মৃত্যু , বিবাহ অথবা যে কোনও সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে রবীন্দনাথ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে উপস্থিত। আবার , রবীন্দ্রনাথেরই বক্তব্য – ‘ভারতকে জানতে হলে বিবেকানন্দকে বুঝতে হবেতাঁর সমস্তটাই ইতিবাচক । বলা যায় রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দ যেন একই মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আলোকসামান্য প্রতিভার বিস্তীর্ণ লীলাক্ষেত্র দেখে আমরা বিস্ময়ে হতবাক্ হয়ে পড়ি । তার কবি পরিচয়ই প্রথম এবং প্রধান হলেও সাহিত্য , সঙ্গীত , নৃত্যকলা , চিত্রকলা , ধর্ম , দর্শন , বিজ্ঞান , শিক্ষা , সমাজসেবা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর স্বচ্ছন্দ পদচারণা অবলোকন করে আমাদের বিস্ময়ের ঘোর যেন কিছুতেই কাটতে চায় না । শুধু সাহিত্যের বিভিন্ন বিচিত্র শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণের কথা চিন্তা করলেই আমরা ভাবি এক জীবনে এও কি সম্ভব ? তদুপরি সাহিত্যের পাশাপাশি অন্যান্য বিচিত্র বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের দৃপ্ত পদচারণা শুধু আমাদের মনে নয় , বিশ্ববাসীর মনেও বিস্ময়ের উদ্রেক করে । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনদর্শনের মূল সূত্রই হচ্ছে একটি অপরূপ মহিমায় বিশ্বসংসার সমাচ্ছন্ন , আনন্দে এবং সৌন্দর্যে সর্বত্রই তরঙ্গিত । কেননা তার কাছে মানুষের ধর্মটিই হচ্ছে অন্তরতম সত্য । বঙ্গমাতার কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনা মানুষ হওয়ার পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে / মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে । রবীন্দ্রসাহিত্যের সবচেয়ে প্রধান সুর - মানবিকতা । কবিগুরুর মানবপ্রীতি দেশ থেকে দেশান্তরে , কাল থেকে কালান্তরে ধাবিত হয়েছে । মানুষের প্রতি গভীর মমতা এবং সুগভীর আস্থা প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথ যে অমর সাহিত্য সৃষ্টি করে গিয়েছেন তা শুধু আমাদের দেশের নয় , সারা বিশ্বের মূল্যবান সম্পদ । সমাজ - সংসারের নিষ্ঠুর নির্মম শোষণ ইত্যাদি তার সাহিত্যে প্রতিফলিত হলেও তার কাছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই শেষ কথা নয় । তাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রত্যয়দীপ্ত ঘোষণা কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ , সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করবো ।

আবার ,এক আশ্চর্য জীবনের নাম স্বামী বিবেকানন্দ । মানব মহিমাকে তিনি শীর্ষস্থান দিয়েছেন । এমনকী ,মানুষকে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে একাসনে বসিয়েছেন কোনও রকম দ্বিধা কিংবা জড়তা না রেখে । তাঁর সুস্পষ্ট উচ্চারণ - জগতের সমুদয় ধনরাশির চেয়ে মানুষ বেশি মূল্যবান । .... মানবপ্রকৃতির মহিমা কখনও ভুলো না । আমরাই সর্বোচ্চ ঈশ্বর । ' মানবতার অর্চনা ছিল তাঁর সামগ্রিক লক্ষ্য । প্রবাদবাক্যের রূপ নেওয়া তার সুবিখ্যাত বাণী বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছে , ঈশ্বর ! / জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর । ' দেশ , দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসীর প্রতি তার নিঃস্বার্থ ও অতলাস্ত ভালবাসার পরিমাপ করার চেষ্টা বৃথা। স্বামী বিবেকানন্দ নিজেই বলেছেন , ‘যদি আর একটা বিবেকানন্দ থাকতো তবে বুঝতে পারতো, বিবেকানন্দ কি করে গেলো । ' মাত্র ৩৯ বছরের জীবনে তিনি যে দাগ রেখে গেছেন , তা এতটাই গভীর ,সত্য ও কালজয়ী যে , তাকে মুছে ফেলা বা ভুলে থাকা অসম্ভব । স্বামী বিবেকানন্দ জাগরণের অগ্রদূত , ভারতাত্মার মূর্ত বিগ্রহ , বৈপ্লবিক সন্ন্যাসী ,সংগ্রামের পূজারি , কল্যাণব্রতী , স্বদেশপ্রেমিক , বিশ্বপ্রেমিক , চিন্তানায়ক , যুগনায়ক এবং আরও কত কী ! তাঁর সমগ্র জীবনদর্শন অবধারণ করার ক্ষমতা যে আমাদেরই নেই ,সেটি স্বীকার করে নেওয়াই ভাল । তবে সজ্ঞানে তো বটেই , অজ্ঞানেও আমাদের জীবনধারা থেকে তাঁকে কোন মতেই বাদ দেওয়া যাবে না । সারথিসদৃশ এই মহামানবকে উপেক্ষা করার কোন জায়গা নেই । কেননা , তিনিই তো আমাদেরকে প্রতিনিয়ত আশ্বস্ত করে বলছেন,‘দেখছিস না , পূর্বাকাশে অরুণোদয় হয়েছে , সূর্য ওঠবার আর বিলম্ব নাই । ' আমাদের চারপাশে যে ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা স্তূপীকৃত হয়ে উঠেছে , তাকে পুড়িয়ে ফেলার শক্তি সঞ্চয়ের জন্যে যেমন আমাদের রবীন্দ্রনাথকে প্রয়োজন , তেমনি প্রয়োজন বিবেকানন্দকে । বিবেকানন্দ সব সময় চেয়েছেন , 'আমার ভিতর যে আগুন জ্বলছে , তোমাদের ভিতরে সেই আগুন জ্বলে উঠুক । ' তারাই তো আমাদেরকে অনুক্ষণ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন — ‘প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই রয়েছে জ্ঞান ও শক্তির অনন্ত প্রস্রবণ । উপনিষেদোক্ত অসতো মা সদ্‌গাময় তমসো মা জ্যোতির্গময় ... ' অর্থাৎ অসত্য থেকে সত্যে , অন্ধকার থেকে আলোতে , মৃত্যু থেকে অমৃতে যাওয়ার শিক্ষাই তো রবীন্দ্রনাথ , বিবেকানন্দ প্রমুখ আমাদেরকে দিয়েছেন , দিচ্ছেন এবং অনাগত কালেও দিতে থাকবেন । 'সবার উপরে মানুষ সত্য / তাহার উপরে নাই । ' বাংলা তথা ভারতের চিরন্তন এই আপ্তবাক্যের ক্রান্তদর্শী কবি তথা ঋষি ' এবং ' যুগাচার্য হিসেবে যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দ অনন্তকাল আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে বিরাজ করবেন সেটা বলাই - বাহুল্য ।

লেখক পরিচিতি 

ড.বাসুদেব রায়ের জন্ম ১৯৬২ সালে। কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যের জগতে আত্মপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশিত বই মানব' (কাব্যগ্রন্থ), দ্বিতীয় বই রক্তের বাঁধন (উপন্যাস)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণা করলেও প্রবন্ধ সাহিত্যের দিকে তার ঝোঁক বেশি। তদুপরি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তথা বই লিখতে তিনি অধিকতর উৎসাহী। গবেষণামূলক বইয়ের পাশাপাশি সাধু-মহাপুরুষদের জীবনী-গ্রন্থ, একাঙ্কিকা ইত্যাদি সম্পাদনাও করেছেন তিনি।

ড.বাসুদেব রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। হার উল্লেখযোগ্য গবেষণা গুলোর মধ্যে রয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ', চণ্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে সমাজ-চিত্র ইত্যাদি। তাঁর যৌথ রচনা ও উপেক্ষণীয় নয়।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাসুদেব রায় নিরলস ভাবে লিখে চলেছেন। এছাড়াও নতুন করে তিনি একক ও যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক কাজে হাত দিয়েছেন।  নিয়মিত বিভিন্ন e magazine-এ লেখেন।