Advt

Advt

Filmy Filmy Mahim (Story / Galpo) 2nd Part, by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik Bangla / Bengali Online / emagazine

Filmy Filmy Mahim (Story / Galpo) 2nd Part, by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik Bangla / Bengali Online / emagazine

 

বাস থেকে নেমে রাত্রের খাওয়া সারতে যখন সে দক্ষিণ ভারতীয় হোটেলে ঢোকে তখনই ভারতের 'ফলো অন ' হবার খবর সে শোনে ।

সন্ধ্যা সাতটা । মহিম একবারে খেয়ে দেয়ে ঘরে ঢুকবে । হোটেলের চাকরটা এসে জানাল এখনও ভাত নামেনি । মহিম 'ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পাতা ওল্টায় এবং একটু পরেই আগামী ইলেকশনে বিভিন্ন পার্টি কোন রাজ্যে কত আসন পাবে তার পর্যালোচনা পড়তে মনোযোগী হয়ে পড়ে । মহিমের প্রিয় নেতা রাজনারায়ণের মিটিং - এ আবার ঢিল পড়েছে । কিন্তু রাজনারায়ণ তাতে ভ্রুক্ষেপও করেনি । পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ঝাড়া বক্তৃতায় শাসকদলের তিনটি গভীর , গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছে আর একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে প্রধান মন্ত্রীকে । মহিম এতক্ষণ পেটের মধ্যে খিদের জন্য যে চিনচিনে ব্যাথাটা অনুভব করছিল , সেটা ভুলে যায় ।

বিখ্যাত নেতা মহিম হালদার রামলীলা ময়দানের বাঁধানো স্টেজে উঠলে একলক্ষ জনতা মহিম হালদার , জিন্দাবাদ ' ধ্বনিতে আবহাওয়া গরম করে তোলে । মহিমকে স্টেজে উঠতে দেখে মহিমের দলের যে ছোট নেতাটি এতক্ষণ আসর গরম করে রাখছিল সে এবার মাঝপথেই বক্তৃতা শেষ করে মহিমের জন্য জায়গা করে দেয় । মহিম হাত তুলে শ্রোতাদের শান্ত হবার নির্দেশ দেয় । মন্ত্রমুগ্ধের মতো জনতার কলরোল থেমে যায় । দলের পক্ষ থেকে একটি সুন্দরী তরুণী এসে মহিমের গলায় ভারী মালা পরিয়ে নিয়ে যায় । শ্রোতারা আরেকবার ময়দান কাঁপিয়ে তালি দিয়ে মহিমকে অভিনন্দন জানায় । মহিম সলজ্জ ভঙ্গিতে জোড়হাতে দর্শকদের এবং তার দলের অন্যান্য নেতাদের অভিনন্দন গ্রহণ করে । ঘোষক এসে এবার মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে একটু ঘুরে মহিমের দিকে চোখ রেখে নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করে , – “আপকা সামনে চুনাও কা আধার পর আপনা বিচার রাখেঙ্গে ধড়কন , হরুদিল্ আজীজ শ্রীমহিম হালদার । আরেকবার উচ্ছ্বসিত আবেগপুষ্ট করতালিতে স্নান করে ওঠে মহিম । গলা পরিষ্কার করে সে , “ ভাইও আউর বহিনোবলে বক্তৃতা শুরু করে । ভুখা মানুষ কীভাবে না খেতে পেয়ে তিলে তিলে মরে যাচ্ছে , জিনিসপত্রের কিমত দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে , বেরোজগারী দেশের যুবশক্তিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে , আমদানি বাড়ছে , রপ্তানি কমছে , বিদেশে ভারতের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ম্লান হয়ে যাচ্ছে মহিম একের পর এক দেশের সব সমস্যা তুলে ধরে শ্রোতাদের সামনে । চারপাশ থেকে ফোটোগ্রাফারেরা ক্রমাগত ছবি তুলে আঙুল ব্যথা করে ফেলে । এবার সমস্যাগুলির সমাধান কী করে করা যায় তার ইঙ্গিত দেবে মহিম ।

ওদিকে শাসক পার্টির বেশ কিছু ভাড়াটে গুণ্ডা যে দর্শকদের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে কে জানতো ? ডানদিক থেকেই প্রথম গণ্ডগোলটা শুরু হয় । প্রথম দিকে টিপটিপে বা ঝিরঝিরে বৃষ্টি এক আধটা পচা ডিম বা টমেটো এসে পড়ে । মহিমের নির্দেশে একজন ভলান্টিয়ার অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সেগুলি একটা ব্যাগে পোরে । একটু পরে শুরু হয় ভারী বর্ষণ । বেশ বড় বড় মাটির ঢেলা , পাথরের টুকরো , শিশি বোতল পড়তে থাকে, দু'চারটে মহিমের বিশাল ভুঁড়িতে লেগে এদিক ওদিক ছিটকে যায় । চটপট জন দশেক ভলান্টিয়ার ইম্পোর্টেড সাদা , হালকা কিন্তু মজবুত নাইলনের বিরাট এক নেট দিয়ে ডায়াসের চার দিক ঘিরে দেয় । এ নেটের বিশেষত্ব এই যে নেটের গায়ে যা পড়বে তা বিশেষ কায়দায় নির্মিত নেটের সঙ্গে আটকানো কতগুলি ছোট থলিতে গিয়ে জমা হবে , একটি পাথরের টুকরোও হারিয়ে যাবার ভয় নেই । মহিম নেটের আড়ালে দাঁড়িয়ে সজোরে ঘোষণা করে যে সে ঢিল পাটকেল কেন বোমা পড়লেও স্টেজ ছাড়বে না। দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করার জন্য , তাদের চোখে আঙুল দিয়ে শাসক পার্টির বদমাশি দেখিয়ে দেবার জন্য দরকার হলে সে প্রাণ দেবে । ততক্ষণে তার দলের ভলান্টিয়াররা গুণ্ডা বদমাশদের ভালো রকম ভাবে পেটাতে শুরু করেছে । মহিম এবার সদর্পে শাসক পার্টির তিনটি আধুনিকতম কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দেয়

পরের দিন খবরের কাগজে ফলাও করে ছাপা হয় প্রখ্যাত নেতা মহিম হালদার পার্লামেন্টে স্পীকারকে ঢিল , পাটকেল , পচা ডিম , টমেটো , শিশি বোতল , ছেঁড়া চটি ইত্যাদিতে ঠাসা পাক্কা তিনমনি একটি বস্তা উপহার দিয়েছে আর এই নিয়ে বিরোধী পক্ষ যে অ্যাডজার্ণমেন্ট মোশন আদায় করে তাতে মহিম হালদার দু'ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে শাসক দলকে তুলোধোনা করেছে। এমনকি তার প্রশ্নের জবাব দিতে প্রধানমন্ত্রীকে তিনবার ঢোক গিলে দু'দুবার জল খেয়ে গলা ভেজাতে হয়েছে ।

খানা আগায়া বলে কালো কুচকুচে কোকড়া চুলের একটি বছর পনেরর ছেলে স্টিলের থালার উপরে সাজনো ভাত , আর ছোট ছোট বাটিতে সম্বর , রসম , দই আর আলু ভিত্তির তরকারি নিয়ে এসে মহিমের সামনে দাঁড়ায় । মহিম উঠে গিয়ে বাইরে ড্রামের সঙ্গে লাগানো ট্যাপ খুলে হাত ধুয়ে এসে খেতে বসে ।

গ্যারেজের উপর মহিমের ঘরে দিনে আলো বাতাস ঢোকে না । রাত্রে জানালার ভাঙ্গা সার্সি আর চৌকাঠের নীচে তিন ইঞ্চির ফাঁকা জায়গা দিয়ে হু হু করে উত্তরে বাতাস ঢুকে ঘরটাকে কোল্ড স্টোরেজের মতো ঠাণ্ডা করে দেয় । লুঙ্গি পরে খবরের কাগজ দিয়ে মহিম ফাক ফোকরগুলি বন্ধ করতে লেগে যায় । তারপর চারপাইতে (খাটিয়া) বসে বাড়ি থেকে আসা চিঠি খোলে । একটা চিঠির মধ্যে পিঁপড়ের সারির মতো ট্যারা বাকা লাইনে ভর্তি চিঠিটাতে এত খবর থাকে যে মহিম তার মাকে যে বাংলা অক্ষরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তার মুণ্ডুপাত না করে পারে না । কী নেই মার চিঠিতে ? ঘরের বেড়ালটা ইঁদুর খেয়ে বিছানায় বমি করেছে , রুনার পুজোয় কেনা তাঁতের শাড়িটা সজনে গাছে উঠতে গিয়ে ছিঁড়ে গেছে , শ্যামল হা - ডু - ডু খেলতে গিয়ে পায় চোট লেগে তিনদিন ধরে বিছানায় শুয়ে চেঁচাচ্ছে , আলুর দাম একলাফে একটাকা থেকে দেড় টাকায় উঠে গেছে , বরাপোতা গ্রামে রসিক দাসের বাড়িতে ট্রাক্টর এসেছে, শনিবারের হাটে তাড়ি খেয়ে ভিন গাঁয়ের পাঁচটা ছেলে এসে একটা মেয়েকে ফুসলে নেবার চেষ্টা করে বেদম মার খেয়েছে । এমনকি বৈদ্যবাটির ফুলি মাসির ছেলে তপন বামুনের মেয়ে ঘরে নিয়ে এসেছে সে খবরও দিয়েছে মহিমের মা । তারপর চিঠির শেষে কাজের কথা জানিয়েছে তার মা— “জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে হু হু করিয়া বাড়িয়া যাইতেছে তাহাতে একহাজার ' টাকা পাঠাইলে আর চলে না । আগামী মাস হইতে অবশ্যই দেড় হাজার টাকা পাঠাইবা । আশীর্বাদ জানিও ,মা।

ডাকু মহিম নামে কোনোদিন বম্বেওয়ালারা প্রাণ মাতানো , দিলচাম্পী , সঙ্গীত - নৃত্য বহুল একটি রঙিন ছবি তুলবে শুধু এই আশায় চম্বলের দুর্ভেদ্য অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে বাঙলার মহিম হালদার তিন ইঞ্চি পুরু গোঁফ , খাকি ধূলিমলিন প্যান্ট শার্ট , স্টেনগান আর সাতজন বিশ্বস্ত অনুচর নিয়ে পুলিশ বাহিনীকে বহুত পড়েশান করে তুলেছে , আশপাশের পঞ্চাশটা গাঁয়ের নিহারাম করে দিয়েছে । কে বলবে এই ডাকু মহিমই করোলবাগের সোনি প্রিন্টার্সে সাড়ে তিনশো টাকার বিনিময়ে ঘাড় গুঁজে প্রুফ দেখতো ? কিন্তু ডাকু মহিমের পিছনে তাকাবার সময় কোথায় ? দিন সাতেক আগে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মলকা সিং সহ তার দলের পনের জনের মুণ্ডু উড়িয়ে দেবার পর থেকে যে 'অপারেশন প্যান্থার ' ( পুলিশ মহিমের শক্তি এবং চাতুর্যে মুগ্ধ হয়ে প্যান্থার নামকরণ করবে , এতে আর আশ্চর্য কী ? ) শুরু হয়েছে তার থেকে দলকে এবং সর্বোপরি নিজেকে বাঁচানোই এখন তার বড় কাজ । কিন্তু তিনদিক থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী চম্বলের এই পার্বত্য উপত্যকায় ঢুকে পড়েছে খবর এসেছে , তাই মনে মনে আমৃত্যু লড়াই - এর শপথ নিয়ে স্টেনগানটাকে ডানহাত দিয়ে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে মহিম ডাকু সিনেমার গব্বর সিং - এর ভঙ্গিতে পাথরের বড় বড় চাইয়ের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে পদচারণা করতে করতে হঠাৎ থেমে গিয়ে তার সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে রসিকতা করার ভঙ্গিতে লঘু গলায় বলে , “ মজা আয়েগা , আজ জরুর মজা আয়েগা , কেয়া সমঝা ? ” এই বলে হঠাৎ হো হো করে হেসে ওঠে মহিম ডাকু । প্যান্টের পকেট থেকে চামড়ার পাউচ বের করে এক টুকরো তামাক মুখে ফেলে, চিবিয়ে থুতু ফেলে বলে গোলি কা জবাব গোলিসে দেনা পড়েগা । এক গোলিকা কেয়া কিমত হোতা হ্যায় ভাই ? ”

                                                                                     ………………… (ক্রমশ)

৩য় পর্ব পড়ুন আগামী কাল (২২.১২.২০২১)

 

লেখক পরিচিতি

জন্ম এবং শিক্ষা কলকাতায়; কর্মজীবন দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রালয়ে। গল্প লেখার শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে আসছেন গত পঞ্চাশ বছর ধরে। ইংরেজিতে দেশে এবং বিদেশে ওঁর কিছু গল্প এবং তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি থেকেও ওঁর কয়েকটি গল্প প্রচারিত হয়েছে। বাঙলায় একটি উপন্যাস এবং একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশ, আনন্দবাজার, সাপ্তাহিক বর্তমান, নবকল্লোল, কালি ও কলম(বাংলাদেশ) এবং দিল্লি ও কলকাতার অনেক সাহিত্য পত্রিকায় গল্প লেখেন উনি। দিল্লি থেকে প্রকাশিত  কলমের সাত রঙ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন উনি।         


Filmy Filmy Mahim (Story / Galpo) 2nd Part, by Nalinaksha Bhattacharya, Tatkhanik Bangla / Bengali Online / emagazine