Advt

Advt

Baradin, Likhechen Kalipada Chakraborty, Nandita Saha, Krishna Mishra Bhattacharya, Dr. Prakash Adhikary, Ashis Kundu, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free

Baradin, Likhechen Kalipada Chakraborty, Nandita Saha, Krishna Mishra Bhattacharya, Dr. Prakash Adhikary, Ashis Kundu, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free



 বড়দিন

কালীপদ চক্রবর্ত্তী

আমরা সবাই জানি ২৫শে ডিসেম্বর সারা বিশ্বজুড়ে যিশুখ্রিস্ট-র জন্মদিনকে বড়দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে বেথলেহেমের এক জীর্ণ গোশালায় জন্ম নিয়েছিলেন এক মহামানব, যিশুখ্রিস্ট। সে সময় থেকেই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে বড়দিন হিসেবে উদযাপন শুরু করে। এই ২৫শে ডিসেম্বর ঈশ্বরপুত্র যিশুর জন্মদিনটিকে খ্রিস্টান ভক্তদের কাছে খুব শুভ দিন। আজকাল শুধু খ্রিস্টানরাই নয় সারা বিশ্বব্যাপী জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এই আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ করে। আর আমরা বাঙালিরা ২৫শে ডিসেম্বর থেকে ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত এই এক সপ্তাহ উৎসবের আনন্দে মেতে উঠি। এ যেন এক শীতের শারদীয়া। মা মেরির কোলে শিশু যিশুর আবির্ভাবকে কেন্দ্রকরে মহামিলনের মহাস্রোতে আমরা উজ্জীবিত হয়ে উঠি। প্রতিটি মানুষের মন ভালোবাসা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল করে তোলাটাই এই উৎসব উদযাপনের লক্ষ্য। সমগ্র বিশ্বজুড়ে সব মানুষের হৃদয়ে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে উৎসব-মাধুর্যের সঞ্চার করে। সান্তা ক্লসের চকলেট ও ক্রিস্টমাস ট্রি এই দিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে। 

২৪শে ডিসেম্বর রাত থেকেই গির্জায় গির্জায় শুরু হয়ে যায় ভক্তির প্রার্থনা সংগীত। বহু বছর আগে আমাদের দেশে বড়দিন পালন করা হতো না। অনেকেরই নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে তাহলে কবে থেকে আমাদের দেশে এই উৎসব শুরু হয় তাইনা? যতদূর জানা যায়, আমাদের দেশে বড়দিনের উৎসব শুরু করে পর্তুগীজরা। পর্তুগীজরা আমাদের দেশে এসেছিল দক্ষিণ ভারতের কোচিন বা কালিকট বন্দর দিয়ে। সম্ভবত ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে কোচিনে একটি গির্জা তৈরি হয়েছিল আর সেটাই ছিল আমাদের দেশের প্রথম গির্জা। সতেরো শতকে হুগলীতে প্রায় আট-নয় হাজার পর্তুগিজ ছিল। সে সময় কলকাতা-সহ সারা বাংলায় এদের সংখ্যা ছিল প্রায় তিরিশ হাজারের মতো।

এই বড়দিন উৎসবে ঘর-বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয় ও উপহার আদান-প্রদান করা হয়। এই উৎসবে ছোট ছেলেমেয়েদের দিয়ে খ্রিস্টের জন্মসংক্রান্ত নাটক অভিনয় এবং ক্যারল গাওয়ার প্রথা আছে। আবার খ্রিস্টানদের কেউ কেউ তাদের ঘরের সামনে খ্রিস্টীয় ধর্মের অন্তর্গত চরিত্রের পুতুল সাজিয়ে প্রদর্শনী করে থাকেন। এই দৃশ্যকে  ক্রিব বলা হয়। চিত্রশিল্পে যিশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলার ঐতিহ্যটি সুদীর্ঘ। এই দৃশ্যে মেরি, জোসেফ, শিশু যিশু, স্বর্গদূত, মেষপালক থাকে। যেসব দেশে খ্রিস্টান সংস্কার প্রবল, সেখানে দেশজ আঞ্চলিক ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে মিলনের ফলে বড়দিন উদযাপনে নানা  বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। অনেক ক্যাথলিক দেশে ক্রিস্টমাসের আগের দিন ধর্মীয় শোভাযাত্রা বা কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। অন্যান্য দেশে সান্তা ক্লস ও মৌসুমি চরিত্রদের নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ক্রিসমাস ট্রি যেন ক্রিসমাস উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। এই উৎসবে ক্রিসমাস ট্রি উপহার দেওয়া বর্তমানে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কালচারে পরিণত হয়েছে। তবে এই ক্রিসমাস ট্রি বড়দিনের উৎসবের সঙ্গে কিভাবে জড়িয়ে গেল তা নিয়ে অনেক রকম মিথ রয়েছে।

একবার যিশুর শিষ্যদের মধ্যে তর্ক বেধে গিয়েছিল। তর্কের বিষয় ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কে? তখন গুরু তাঁর শিষ্যদের ঝগড়া থামিয়ে দিয়ে কাছে এসে বললেন, ‘যে সকলের চেয়ে বড় হতে চায়, সে সকলের ছোট হবে। যে সকলের নেতা হতে চায় সে সকলের ভৃত্য হবে। যে সকলের আগে যেতে চায়, সে সকলের পেছনে গিয়ে দাঁড়াক’।

এরপর যিশু একটি শিশুকে নিজের কোলে নিয়ে বসলেন। শিশুটিকে দেখিয়ে বললেন, ‘এই শিশুটিকে দেখ। এর মত হও। সরল শিশুর মত না হতে পারলে কেউ স্বর্গরাজ্যের সেই অসীম ভালোবাসার সমুদ্রে যেতে পারবেনা’।

কারণ শিশুদের মধ্যে আছে সরলতা, জীবনের চরন্তন বিশ্বাস। একটুও অহঙ্কার নেই, নেই কোনও সম্মানলোভের হাতছানি। রিক্ততাই তার ভূষণ, নম্রতাই সম্পদ। সে ছোট দুর্বল হলেও প্রবল শক্তিশালী।একলা হয়েও সে সকলের মধ্যমণি। আর্তের সেবা করো। তাই নিরহঙ্কার নিঃস্বার্থ স্নেহে তোমরাও সরল শিশুর মতো হও। এইভাবে মানবপ্রেমিক যিশু সহজ সরল বাস্তব উদাহরণের মধ্যে তাঁর উপদেশগুলি বিশ্বখাতি পেয়েছে।

তিনি তাঁর শিষ্যদের নির্বাচিত করেছিলেন অবহেলিত, নির্যাতিত মানুষদের মধ্যে থেকে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে, দলিত মানুষ হলেও তাঁরা ছিলেন সহজ,সরল শিশুর মতো পবিত্র। 

অনেকেই দেখে থাকবেন ক্রিসমাসকে অনেকে সংক্ষেপে এক্সমাস লিখে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগবে এটা কেন লেখা হয়। অনেকে এও বলেন এই শব্দটি সংক্ষেপে এভাবে লেখা ঠিক নয়। তবে অনেকেই মনে করেন, এটা সহজে উচ্চারণ করা যায়। সেইসাথে ক্রিসমাসের উৎসবকে যাতে সব ধর্মের মানুষই আপন ভাবতে পারে সেই ভাবনা থেকেই এই এক্সমাস শব্দের উৎপত্তি। অনেকের ধারণা, এক্সমাসের এক্সবলতে যীশুর ক্রসকে বোঝায়। আবার কিছু লোক মনে করেন এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। কারণ সেন্ট এন্ড্রুর ক্রুশ এক্স’-এর মত হলেও যীশু খ্রিস্টের ক্রসটি ছিল ইংরেজি অক্ষর টিআকারের। অনেক আগের খ্রিস্ট শিল্পকলায় এক্সএবং ‘’এক্স পিখ্রিস্টের নামের সংক্ষেপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

বড়দিনের জন্য রইল শুভেচ্ছা। আপনারাও এই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠো।

লেখক পরিচিতি –

 কালীপদ চক্রবর্ত্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী এবং দিল্লি থেকে ম্যানেজমেন্ট-এর পড়াশোনা। দিল্লি থেকে প্রায় ১৮ বছর ‘মাতৃমন্দির সংবাদ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন এবং ‘সৃষ্টি সাহিত্য আসর’ পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে ‘দ্যুতি সাহিত্য সভা’ পরিচালনা করেন।

 দিল্লি, কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। কলকাতার আনন্দমেলা, আনন্দবাজার পত্রিকা, সাপ্তাহিক বর্তমান, নবকল্লোল, শুকতারা, শিলাদিত্য, সুখবর, গৃহশোভা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা, সন্দেশ, তথ্যকেন্দ্র, স্টেটসম্যান এবং অন্যান্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত বই-এর সংখ্যা ৬ টি এবং প্রকাশের পথে ৪টি বই।

‘ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান’, পূর্বোত্তর আকাদেমির পুরস্কার, ‘বরুণা অসি’-র গল্প প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ, আরত্রিক সম্মান, কাশীরাম দাস সম্মান, সতীনাথ ভাদুড়ী সম্মান লাভ করেন। এছাড়াও আরও কিছু পুরস্কার লাভ করেছেন।

বর্তমানে দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘কলমের সাত রঙ’ পত্রিকার সাথে যুক্ত।


**********************************************    

Baradin, Likhechen Kalipada Chakraborty, Nandita Saha, Krishna Mishra Bhattacharya, Dr. Prakash Adhikary, Ashis Kundu, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free


আমি তখন ক্লাস টেনে, সে দিনটি ছিল মঙ্গলবার ,২৬শে ডিসেম্বর । আগের দিন ২৫শে ডিসেম্বর ছিল বড়দিন, যীশুখৃষ্টের জন্ম দিন ।

আমাদের ছোট শহরে ওইসময় এখনকার মতো রাস্তার মোড়ে মোড়ে ,আনাচে-কানাচে কেক পেস্ট্রি পাওয়া যেত না। আর বাড়িতে মা, কাকিমা, জেঠিমার হাতের কেক! সে গুড়েও বালি,কারণ সে সময় ছিলনা গ্যাস ওভেন, ছিল না প্রেসার কুকার। কাঠের গনগনে উনুনে কেক পুড়ে ছাই হবে। তাই যখন তখন কেক খাওয়া হতো না। কেক খাওয়া তখন বেশ বিলাসিতার মধ্যেই ধরা হত।

তবে প্রতি বছর ঠিক এই সময় বাজারে মাত্র দুটো বেকারিতে ঠিক দুদিন কেক পাওয়া যেত। আমার বাবা লাইনে দাঁড়িয়ে গরম গরম কেক নিয়ে বাড়ি ঢুকতেন।  কেক এর লোভে সারাবছর  এই একটি দিনের দিকে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতাম। বেশ অনেকটাই আনা হতো। সকাল-বিকেল, দুপুর ইচ্ছেমতো  কেক পর্ব চলত সেই দিনটি।

পর দিন,২৬শে ডিসেম্বর। গেলাম মাস্টার মশায়ের কাছে টিউশনি পড়তে। পড়তে পড়তেই বিথীকা একটা প্ল্যান করল। ও ছিল আমাদের দলনেত্রী । ও যা বলতো আমরা  ওর হ্যাঁ-তে  হ্যাঁ মিলিয়ে বসে থাকতাম । বিথীকা বলল, চল একটা জায়গায় তোদের নিয়ে যাই। কেক  খাওয়াবো  চল সবাই মিলে কেক খাবো,কাল বড়দিন ছিল।

আর কি!  আমরা পাঁচজন ওর পেছনে পেছনে ছুটলাম। ডিসেম্বর মাস ,কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। বেশ খানিকটা হেঁটে এসে পৌঁছলাম আমাদের শহরের বিমান বন্দর লাগোয়া একটি জায়গাতে  যদিও বর্তমানে বিমান ওঠানামা একেবারেই বন্ধ তবু খালি জায়গাটা তেমন খালি রয়ে গেছে ।
ঠিক তার পাশেই একটি বেশ বড়সড় গেটের সামনে গিয়ে হাজির হলাম আমরা। আমি অবাক চোখে তাকালাম ,ওমা! সেকি! এটাতো ব্লাইন্ড স্কুল! আগে তো দেখি নি ! এমনকি শুনিওনি! এখানে ব্লাইন্ড স্কুল আছে সেটাই তো জানতাম না।
 

বিথীকা    বেশ গর্বের সাথে বলল, হ্যাঁ, জানতে হয়।  তুই এখানে জন্মেছি, বড় হচ্ছিস,আর শহরে কোথায় কি আছে সেই খবর রাখিস না?

আমি চুপসে গেলাম। ওর পেছন পেছন ভেতরে ঢুকলাম।  একটা চত্বর, ছোট্ট একটি বাগান। কিছু ছেলেমেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে  বোঝাই যাচ্ছে ওরা কেউ দেখতে পায় না, তবে ওদের একটি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে হয়তো । আমরা আলগোছে গেট দিয়ে ঢুকতেই ওরা ফিরে তাকাল ,একজন ধীরে ধীরে একটা লাঠি ভর করে এগিয়ে এলো । আমাদের দলনেত্রী বীথি বলল, চার্চে যাব।
অন্ধ মেয়েটি তখন ছোট্ট চার্চটিতে আমাদের নিয়ে গেল ,আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটি কি সাবলীলভাবে হেঁটে চলছে আমাদের সাথে সাথে । চার্চে ঢুকেই বুঝতে পারলাম গতরাতে এখানে বেশ আয়োজন ছিল এবং অনুষ্ঠান হয়েছে।
  বেলুন ঝুলছে, কিছু রংবেরঙের কাগজ  টুকরো টুকরো নিচে  ছড়িয়ে  আছে ‌। এখনো সাফ সাফাই হয়নি ।

সেই প্রথম আমি চার্চ দেখলাম। বেশ লাগল। বিথীকা আমাদের ফিসফিস করে বলল, চল আমরা গিয়ে বসি, আমাদের কেক দেবে।  কেক খাওয়া হয়ে গেলেই আমরা  ফিরে  যাব, এমনিতে অনেক বেলা হয়ে গেছে

বেশ কিছুক্ষণ বসে  আছি।  যীশুকৃষ্টকে কিভাবে শ্রদ্ধা জানাতে হয় আমি জানিনা, কিছুক্ষন ভেবে নিজের মতো করেই দুই হাত কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম সারলাম। এমন সময় ভগ্নদূত এর মত একজন এসে বললোএখন সাফ সাফাই হবে । তার মানে টাইম ইজ ওভার, আমাদের চলে যেতে হবে।

নজরে পড়ল বিথীকার ছলছলকরা দুটি চোখ। ওর ভারী মন খারাপ হয়েছে। কেক খাওয়া হলো না,এক টুকরো কেক আমাদের কেউ দিল না ।

সারা রাস্তা বিধিকা একটি কথাই বলতে বলতে এলো, শেষ হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। নইলে ওরা এই দিনে সবাইকে কেক খাওয়ায়, আমি জানি। তাছাড়া আমাদের দেরিও হয়ে গেছে ,আরো আগে এলে পাওয়া যেত। দেখলি না আমরা যাবার সময় ওই গেট দিয়েই কজন বেরোচ্ছিল। ওরা কিন্তু কেক খেতে খেতেই বেরোচ্ছিল। বলেই বিথীকা আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ,"তোর জন্যই তো ! এত আস্তে হাঁটে ! একটু জোরে হাঁটতে পারলি না? এইভাবে  ঢিপু ঢিপু করলে তোর সব ভোকাট্টা হবে, জীবনে কিসসু হবে না,কিসসু পাবি না । সবকিছু  মিস হয়ে যাবে।

এরপর কেটে গেছে বহু বছর । প্রায় ২৫ বছর পর গত বছর ছেলেমেয়ে নিয়ে গেলাম আবার সেই ব্লাইন্ড স্কুলে  ২৬শে ডিসেম্বর ,ছেলেমেয়েকে দেখাবো বলে। মনে মনে ইচ্ছে যদি
  পাওয়া যায়   এক টুকরো কেক!  কি জানি এত বছর পর স্কুলটাই হয়তো দেখব বন্ধ হয়ে গেছে।

মনে মনে সেই ভয়টা রয়ে গিয়েছিল। এবার দেরী না করে, সাতসকালেই হাজির হলাম।
জায়গাটা ভারী মনোরম গাছে গাছে ভরা। রাস্তা একই রকম আছে এতোটুকু বদলায়নি । সেই বাগান সেই চার্চ ! তবে চার্চে ঢুকতে না ঢুকতেই এবার এক প্লেট গরম কেক চলে এলো। উফফ কি যে আনন্দ হল! কেক নিয়ে কত রকম ভাবে সেলফি তুললাম ! বিথীকা কে পাঠাবো। ও থাকে ব্যাঙ্গালুরুতে। তারপর এক টুকরো কেক মুখের সামনে ধরলাম ,কিন্তু নাহ! খেতে পারলাম না,রেখে দিলামহঠাৎই
  বিথীকা র সেই ছলছল চোখ দুটো আমার মানসপটে ভেসে উঠলো। কত উৎসাহ নিয়ে গিয়ে ছিল! অথচ-----!!!

ফিরে এসে বিথীকা কে ছবি গুলো একে একে পাঠিয়ে দিলাম।  বিথীকা জানালো ও নিজেও গিয়েছিল দু'বছর আগে ,কিন্তু কেক  খাওয়া হয়নি । লিখেছে,"কেকটা মুখে তুলতে গিয়েই তোর জল ভরা চোখ দুটো ভেসে উঠলো আর খেতে পারলাম না রে, দুলি।"
এবারে সত্যি সত্যি আমার চোখ দিয়ে টস টস করে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। সত্যি ,অবচেতন মনেকি
  গাঢ় বন্ধুত্ব! আমরা বুঝতেই পারিনি।  আমার গর্বও হলো । আমরা একে অপরের জন্য কতটা অনুভব করতাম।  জলের মত স্বচ্ছ ছিল সেই সখ্যতা।

ভেবে পাইনা, আচ্ছা আমরা কি সত্যিই কেক খাবার লোভে গিয়েছিলাম ? আমরা কি এতটাই লোভাতুর ? উত্তর খুঁজে পেয়েছি । কেক খাবার লোভে আমরা যাইনি ,আমরা গিয়েছিলাম কেক ঘিরে সেই আনন্দ উৎসবের আনন্দ টুকুর লোভে । সবাই মিলে বড়দিনের আনন্দ ভাগ করে নেব, সেই লোভে।

লেখিকার পরিচিতি -

জন্ম পশ্চিমবঙ্গ-র কুচবিহার শহরে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রথম কবিতার বই ' সুখের ঠিকানা', গল্প সংকলন 'চিরন্তন'। ইংরেজি কবিতার বই 'Bouuet of Poems' বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন। বেশকিছু কিশোর সংকলনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। 

স্টেটস্‌ম্যান, সুখবর, সকালবেলা ইত্যাদি খবরের কাগজে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রসাদ, সারথি পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। 'Times of India'-তে বেশ কয়েকবার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জীবনের শুরু।বর্তমানে কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প লিখতেই বেশি ভাল বাসেন ।  বহু e magazine এ লেখেন।  



****************************************

Baradin, Likhechen Kalipada Chakraborty, Nandita Saha, Krishna Mishra Bhattacharya, Dr. Prakash Adhikary, Ashis Kundu, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free


সূর্যাস্ত শেষে অন্ধকার নেমে এলে যোসেফ আর মেরী একটি আস্তাবলে

খড়ের বিছানায় একফালি চাঁদ--নক্ষত্র

প্রাচ‍্য দেশের নিকোনো আকাশ জুড়ে একটি

উজ্জ্বল নীলতারা

বেথলেহামের ভিজে খড়ে আগুন জ্বলে

জেরুজালেম এর রুলটানা খাতায় পিটার

মাথানীচু করে লিখে চলেছে জমা খরচের ইতিহাস

হেরল্ডের মসনদে তখন ঘাম ঝরছে

ন‍্যাজারেথের যীশু কে খুঁজে বেড়াচ্ছে ওরা

আনাচে কোনাচে

বেথলেহামের প্রতিটি বাড়িতে

ওরা ঢুকে পড়ছে

যখন তখন তুলে নিয়ে যাচ্ছে

শিশু মায়ের কোল থেকে

ওরা গেষ্টাপো পাঠিয়ে সবুট লাথি মারছে

সদ‍্য বিয়োনো মায়ের পেটে

রক্ত মাখা থেৎলানো নরম শিশু কে

সঙ্গীনে বিজয় পতাকা র মতো গেঁথে

উল্লাসে ফেটে পড়ছে

বেথলেহামের শিশু র চোখে

ভালবাসা র পাখি খেলা করে

ন‍্যাজারেথের যীশু মধ্য রাতে র খানাতল্লাশি

আর

ফ্ল‍্যাগমার্চ উপেক্ষা করে

বড় হয়ে উঠে

বড়দিনের বড় ইতিহাস

লিখবে বলে।

কবি পরিচিতি-- 

জন্ম-কলকাতা য় ।আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা

প্রকাশিত গ্রন্থ  -

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত

প্রকাশিত অডিও ভিডিও সিডি--দিল্লি হাটার্স তিন কবি


***************************************

Baradin, Likhechen Kalipada Chakraborty, Nandita Saha, Krishna Mishra Bhattacharya, Dr. Prakash Adhikary, Ashis Kundu, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free



সেই তীব্র শীতের রাত্রিতে

আকাশে রহস্যময় এক নক্ষত্র 

উঠেছিল জেগে ।

 

তারই পানে চোখ রেখে 

পথ চিনে 

'জন সন্যাসী হাজির হয়েছিল বেথলেহেমে...

 

তারা জেনেছিল

দেবশিশুর আগমন কথা । 

 

সেই শিশুই

মানব-প্রেমের বার্তা বহনকারী 

করুণার প্রতিমূর্তি যিশু !

 

তাঁরই কথা খুঁজে পাই

লাদাখে , হিমিসে , কাশ্মীরে

এই---

প্রেম । যন্ত্রণা-আকীর্ণ প্রেম-পথ

বিনে মুক্তির পথ নাই...

 

হিংসা-দীর্ণ আজ পৃথিবী ঘনঘোর ।

সন্ত্রাসে হতাশে রক্তাক্ত পায়ে

কোন পথে হেঁটে যাই...

 

নতজানু হও তাই ।

চোখ মুদো ।

সমবেত নীরব প্রার্থনায় কান পাতো ।

শোনো---

হৃদয়ে কোন বার্তা পাই !

কবি পরিচিতি : 

 

জন্ম দিনাজপুর শহরে (১৩৬০ বঙ্গাব্দে)। অবসরপ্রাপ্ত বাণিজ্য বিষয়ের অধ্যাপক। উত্তরবঙ্গের লেখক। উল্লেখযোগ্য বই : " ছোট প্রাণ,  ছোট ব্যথা" ( অণু- কাব্য-গ্রন্থ ) , "গল্পের আঁকিবুকি" ( গল্প- গ্রন্থ), " The Least Developed SAARC Members : Bangadesh, Bhutan, Nepal & Maldives" ( প্রবন্ধ-গ্রন্থ ) ইত্যাদি । 

বঙ্গ ও বর্হিবঙ্গের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন ।  

*********************************



দৈন্যতা ঢাকা যায় না 

সাময়িক দোলাচল কিংবা ভ্রম

মুখোশের আস্তর খসে পড়ে 

পিছিয়ে পড়া মানুষের ভিড়ে 

আমার একাকিত্বই সম্বল!

 

জগতে রঙ পাল্টায় আকাশ

আমি না পাল্টালে বেমানান

অনধিকারে অধিকার নেই 

আমি অন্তর্মুখী এক বিড়ম্বনা 

তবু পথ চলা থামে না আমার। 

 

যীশুকে খুঁজেছি একটুকু ভিড়ে

পথের ধারে বাতাসে বাঁশি বাজায় 

অদৃশ্য পালনহার , প্রাঞ্জল শব্দের 

আমি ব্যতিক্রমী হবার চেষ্টা করে 

একান্ত আপন পাইনি এখনও ।

 কবি পরিচিতি - 

পেশায় স্বনিয়োজিত সংস্থায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। পরিবেশবিদ, আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা Health Climate Initiatives এর সঙ্গে যুক্ত ।  

********************************


Baradin, Likhechen Kalipada Chakraborty, Nandita Saha, Krishna Mishra Bhattacharya, Dr. Prakash Adhikary, Ashis Kundu, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free


শীতের

     নবীন দোলায়,

বরফের

     মিষ্টি খেলায়,

হয়েছি আমি

     হাজির আবার

এই শুভ

     ক্রিসমাসের বেলায় ৷

 

সোনালী

      মেঘের আড়ালে,

স্বপ্নের

      হরিণের সাথে,

এসেছি আমি

      সুদূর স্বপ্ন থেকে,

ইচ্ছে সবার

      পূর্ণ করতে ৷

কবি পরিচিতি –

কবি পান্থ দাস থাকেন আগরতলায়। লেখালিখির সাথে জড়িত বিগত ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বর্তমানে ত্রিপুরাসহ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা তথা ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক। আন্তর্জাতিক লেখা নিয়েও কাজ চলছে। শিক্ষা জীবনে, শিক্ষা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বি.এড ডিগ্রি।

বর্তমান পেশা শিক্ষকতা। V.H.A.T. Vivekananda Library সামাজিক সংস্থা (N.G.O)-র সাথে যুক্ত।