ভুলেও
কেউ যেও না ভাই
যেও
না বঙ্গদেশে,
সুযোগ
পেলেই ‘কাব্যরোগ’
ধরবে তোমায় এসে।
ষোল
থেকে আশি
কেউ
পাবে না পার
সুযোগ
পেলেই উঠবে মাথায়
মটকাবে যে ঘাড়।
কাব্যরোগে
ধরলে আর
মন
লাগে না কাজে,
বুকের
মধ্যে কাব্যধ্বনি
ঝনঝনিয়ে
বাজে।
ঔষধ
খাও, পথ্যি খাও
পাবে
না যে পার,
বিলেত
ফেরৎ ডাক্তারেও
মেনে যাবে হার।
এই
দুনিয়ায় যত রকম
পরীক্ষাগার
আছে,
কাব্যরোগ
ধরার যন্ত্র
পাবে না কারো
কাছে।
করোনার
মতো এই রোগও
যায়
না প্রথমে ধরা,
সিম্পটম
খুঁজে বার করতে
হবে
পাগল পারা।
ডাক্তারেরা
করাবে তোমার
নানান
রকম টেস্ট,
মল
মূত্রের পরীক্ষা হবে
সবার শেষে চেস্ট।
তাতেও
কিছু যাবে না ধরা
তখন
এম.আর.আই,
ডাক্তারবাবুদের
এতে আছে
ভালরকম আয়।
নার্সিং
হোমে ভর্তি হলে
যাবে
জিরেত জমি,
বেডভাড়া
ওষুধপত্তর
সেখানে বেজায় দামি।
একটি
মাস সেখানে থেকে
এলে
যখন ঘরে,
দেখলে
সবি শূন্য সেথায়
মা ভবানী ভাঁড়ে।
তবে
‘কাব্যরোগ’ ধরেছে কি না
জানার
‘টোটকা’ আছে,
চুপিচুপি
বলছি তোমায়
কানটি আনো কাছে।
কেউ
যদি সকাল বেলায়
কলম
নিয়ে বসে,
হিজিবিজি
দাগ কাটে খাতায়
অঙ্ক নাহি কষে।
কেউ
যদি বা ভাতের পাতে
মাখতে
গিয়ে ডাল,
ডাল
না মেখে চিবিয়ে ফেলে
আটটি লঙ্কা ঝাল।
মাংস
দিয়ে ভাতটি মেখে
ঢালে
যদি শুক্তো,
তাহলে
বুঝতে হবে
রোগটি আছে গুপ্ত।
তবে
তোমায় বুঝতে হবে
কাব্যরোগের
শুরু,
ধরতে
হবে তক্ষুণি যে
মস্ত কোন গুরু।
কেউ
যদি বা সন্ধ্যাকালে
চেয়ে
আকাশ পানে,
প্রিয়ার
মুখ আঁকে সেথায়
তুলির টানে টানে।
সাত
সকালে ঘোর বিকেলে
গিটকিরি
গান গায়,
জেনে
রাখো কাব্যরোগে
ধরেছে তারে প্রায়।
চিকিৎসা
সেই একইরকম
ধরতে
হবে গুরু,
প্রথম
থেকেই করে দাও
চিকিৎসাটা শুরু।
চিকিৎসার
রকম এবার
বলছি
তবে শোনো,
বাজার
থেকে গুরুর একটা
‘অখাদ্য’
বই কেনো।
বাজারে
কাটে না সে বই
কাটে
না তো পোকায়,
গুরু
বলে উচ্চমানের বই এটা যে
বুঝবে
না তো বোকায়।
সেই
বই-এর চারটে পাতা
দিনে
হাজার বার,
ঘাড়টি
ধরে লেখাও রোগীকে
হবে
না রোগের বাড়।
একটি
মাস পরে দেখো
রোগটি
গেছে সেরে,
কাব্যকথা
বললে রোগী
আসছে মারতে তেড়ে।
এতেও
যদি রোগ না সারে
উপায়
আর এক আছে,
কাব্যরোগী
নিয়ে চলে যাও
প্রকাশকের কাছে।
বটতলাতে
আছে জেনো
হাজার
প্রকাশনী,
তাদের
পাল্লায় পড়লে যাবে
কাব্য রোগের শনি।
গাছের
মাথায় তুলে দিয়ে
কাড়বে
যে তারা মই,
কাব্যরোগী
ঘুরে মরে
কোথায় আমার বই!
প্রকাশক
বলেন হেসে
বই
গিয়েছে জেলায়,
হাজার
হাজার বিক্রি হবে
দেখবেন বইমেলায়।
আশায়
বাঁচেন কাব্যরোগী
আশায়
বাঁচে চাষা,
কাব্যরোগী
ভাবেন বসে
বই
লিখেছেন ‘খাসা’।
হাজার
হাজার কাব্যরোগীর
স্বপ্ন
দেখাই সার,
একুশখানা
মেলা ঘুরে
বিক্রি মোটে চার।
কাব্যরোগীর
কাব্যরোগ
তাতেও
যদি না ঘোচে,
বুঝবেন
যে তার মাথাটা
একেবারেই গেছে।
কাব্যরোগে
মৃত্যু হয় না
আশার
কথা এটাই,
পাসবুকটা
শুকিয়ে মরে
দুঃখ হল সেটাই।
ঘরে
বইয়ের পাহাড় জমে
তার
মধ্যে কবি,
বঙ্গদেশের
ঘরে ঘরে
দেখবেন এমন ছবি।
উইতে
কাটে, পোকায় কাটে
বাজারে
কাটে না যে,
তবু
কাব্যরোগী লিখেই চলেন
মন
লাগে না কাজে।
কবি পরিচিতি -
চলে যাওয়া অধ্যায়
নতুন জীবন শুরুর পথ
মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে
সাগরের বুকে টলমল
জলছবি সম সাময়িক ভ্রান্তিবিলাস!
উট চলেছে রাজপথ ধরে গ্রীষ্মের ছুটিতে
তৃষ্ণা এতো সুন্দর পৃথিবীতে
মাথা খুঁড়ে মরে ব্যভিচারের নামে
চলে যাওয়া অধ্যায়
শ্লাঘা জাগায় আপাত সুখের।
পেশায় স্বনিয়োজিত সংস্থায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। পরিবেশবিদ, আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা Health Climate Initiatives এর সঙ্গে যুক্ত ।
*********************************************************************
বন্ধ ঘরে বিনিদ্র রাত যাপন করা জীবন
উপরে উন্মুক্ত কড়িকাঠে উইপোকার চাষ
জানলা্র গোবরাটে পোকামাকড়ের চলাফেরা;
পলেস্তারা খসে পড়া থমকে থাকা জীবন।
তারই মাঝে রাতজাগা পাখিদের কর্কশ চিৎকার
রাস্তায় আস্তাকুড়ে শুয়ে থাকা নেড়ি কুত্তার ডাক,
উদ্দাম হুটার বাজিয়ে ছুটে চলা এ্যাম্বুলেন্স।
রাতের নিঃশব্দকে খান খান করে চিরে যায়।
অনিদ্রা আর উদ্ভট ভাবনা মিলেমিশে যায়
রাতের ঊলঙ্গ শহর ক্রমশ বর্ণহীন হয়,
কত প্রিয়জন যায় শশ্মনে, নিরবে-নিভৃতে,
শুধুই কান্নার রোল উঠে বারংবার।
লেখক পরিচিতি -
অনন্ত কৃষ্ণ দে। জন্মঃ কলকাতার বাগবাজারে। মহারাজা কাসিমবাজার স্কুল ও বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশুনা। বিজ্ঞানে স্নাতক। স্কুল, কলেজ, অণু পত্রিকা ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখা। যুগ্মভাবে পদক্ষেপ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা। নাটক ও স্কাউটিং এর সাথে যুক্ত।