Advt

Advt

Baroyari Durgotsabe - Janata Bhog Ranna O Poribeshone Hal Behal by Dinesh Chandra Das, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free

 

Baroyari Durgotsabe - Janata Bhog Ranna O Poribeshone Hal Behal by Dinesh Chandra Das, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free

দিল্লির বারোয়ারী দুর্গোৎসবে –
জনতা ভোগ রান্না ও পরিবেশেনে
হাল বেহাল 
দীনেশচন্দ্র দাস


বারোয়ারি পূজাতে বড় জন সমাবেশ ও উৎসাহ স্বতঃস্ফূর্ত এবং প্রবল ৷ তাতে পাশ্ববর্তী কিছু না ঘটলে আসর  ঠিক জমে ওঠেনা মূর্তি মন্ডপ সাজানোতে, মূল ভোগ ও জনভোগ রান্না-পরিবেশনে, ধুনচি নাচে, নাটকে নাচে,বিসর্জন–শান্তিজল-মিষ্টি মুখের সময়ে ইত্যাদিতে৷ বাঙালি ভোজন রসিক , বাজার করা থেকে পরিবেশন পর্যন্ত মন্তব্যের শেষ নেই,বড় গলায় বড়াই আবার নিচু গলায় খুঁত ধরা ৷ তাই জনতা ভোগ দিয়েই বাড়তি আনন্দের কথা বলছি ৷ দিল্লির ৩৪-পল্লী কালী বাড়ি সমিতির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে কালী পূজা দিয়ে ৷ মূর্তি বিসর্জন না দিয়ে ব্রিজ বিহার আবাসনের পেছনের পার্কে একটি ছোট সেডে প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ DDA ওটা ভেঙ্গে দিলে তখনকার কুড়ি জনের কম সদস্য পরিবারের সমিতি পুষ্পাঞ্জলি এনক্লেভে D-Block-এর বড় খালি জমিতে ৮ বর্গফুটের বাঁশের খুঁটি ও চাটাইতে ঘেরা আর টিনের চালাতে ঢাকা ঝুপড়িতে মূর্তি নিয়ে আসে ৷ বেশি প্রচার ও সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দশ্যে ১৯৮৯ সালে দুর্গা পূজার শুরু ৷

১৯৯২ সালের পূজা ও ঝুপড়িতেই হয় এবং সেখানেই মা-কালীর পুজো করা হয় ৷ এরফলে সদস্য ও দর্শক সংখ্যা বেশ বেড়ে যায় ৷ তাই জনতা ভোজনের আয়োজন সেবার একটু বড় মাত্রায় করা হয়৷ আগের তিন বছর ফাউন্ডার সভাপতি শ্রী অমিতাভ সেন মহাশয়ের নেতৃত্বে, দুই জন লোক ভাড়া করে, নিজেরাই জনতা ভোগ রান্না করেছেন ৷ সে বছর আর্থিক অবস্থা খুব ভালো না হলেও এক অল্পখ্যাত পাচককে ভাড়া করা হয়৷ কিন্তু তিনি চাটনি পায়েস রেধে লাবড়া বসিয়ে, আসছি বলে প্যান্ডলের বাইরে গেলেন৷ আর ফেরার নাম নেই৷  খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে দেখা গেল সহযোগী দুজনও গায়েব ৷ অগত্যায় অতি বৃদ্ধ সেনদা এগিয়ে এলেন সঙ্গে আরও  কয়েকজন ৷ লাবড়ার কড়াই নামানো হলে খিচুড়ির চাল ডাল মেপে আলাদা আলাদা করে রাখা হল ৷ মাঝারি কড়াইটি খুঁজে নিয়ে আসার আগেই সেনদা গ্যাসের নবটি বাড়াতে গিয়ে জ্বলন্ত শিখার উপরে হাত দিয়েই ছিটকে পেছনে সরে এলেন, তাল সামলাতে পারলেন না৷কাছাকাছির আমরা ধরে ফেলাতে অঘটন এড়ানো গেল৷। সবাই সেনদাকে বললেন তিনি যেন আর রান্নার দিকে না যান ৷ এবার প্রশ্ন হল দুই ভাগে খিচুড়ি রাঁধবে কে? নীরব দর্শক হয়ে আর থাকা গেল না ৷ ভারটি আমাকেই নিতে হল ৷ এতে সমস্যা নেই,কেন না কিছু তালিম আছে ৷ অসুবিধা অফিস নিয়ে৷ জানুয়ারি ১৯৯৩-এ ভারত সরকারের চাকরি থেকে অবসর নিচ্ছি ৷ একটি ডিভিসনের কাজ দেখাশুনা করি ৷ ডিভিসনটি পরিবেশ মন্ত্রালয় থেকে সরিয়ে গ্রাম-বিকাশ মন্ত্রালয়ে জুড়ে দেওয়া হলে অফিসাররা এবং চারটি সেকসনের সব কর্মচারীরা পর্যাবরণ ভবন থেকে নির্মাণ ভবনে চলে আসে ৷ অ্যাসেট এবং লায়াবিলিটিস বিভাজনের জন্য খসড়া প্রস্তাবটি অ্যাডিশনাল সেক্রেটারির সাথে বসে ফাইনাল করে ক্যাবিনেট সেকরেটারির কাছে পাঠানোর কথা আছে সেদিনই। ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিট। কয়েজনকে নিয়ে দু্টি বড় ডেগচিতে খিচুড়ি বসিয়ে দেওয়র পর সমস্যা খুলে বলাতে চারজন আমাকে আশ্বাস দিলেন যে আমি ফোড়ন দিয়ে চলে গেলে আলু-কুমড়ো ভাজটা সেন মেসোর নির্দ্দেশ মত ওরা করে নেবেন৷

সন্ধ্যা বেলায় সেনদা আমাদের নিয়ে বসলেন পরের দিনের ব্যবস্থাপনা করতে ৷ অষ্টমীতে ভিড় আরো বেশি, তার উপর খিচুড়ির বদলে পোলাও এবং অতিরিক্ত বেগুনি ভাজা৷ এত বেশি পরিমানে পোলাও রাঁধা আমার পক্ষেও সম্ভব নয়,আর বেগুনির জন্য সমেবেত চাহিদা মিটিয়ে ভাজাটাও সহজ নয়৷ সেনদা বললেন পোলাওর বদলে নিরামিষ ফ্রাইড রাইস হোক আর শুধু বেগুনের বেগুনি নয় মিষ্টি কুমড়োরও হবে,তাতে হুল্লোড়টা একটু কমবে এবং যে ভাজছে তার টেনসনও হবে না ৷ রান্নাতো মোটামুটি ভালো মতই সারা হল৷ সমস্যা বাঁধল পরিবেশনের সময়ে ৷ গত কাল অনেকরই অসুবিধা হয়েছে মাটিতে ভাঁজ করা শতরঞ্চিতে উবু হয়ে বসে শালপাতা থেকে খেতে, স্থূল কলেবরের ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলাদেরও বসতে উঠতে বেশ অসুবিধা হয়েছে ,আবার অনেকে ধুলা বালিতে অস্বস্তি বোধ করেছেন ৷ সমিতির পক্ষে চেয়ার টেবিল ভাড়া করা সম্ভব নয়৷ ঠিক হল পরিবেশন করার ঘন্টাখানেক আগে মাটিতে জল ছিটিয়ে দেওয়া হবে যাতে ধুলা না ওড়ে ,কাদাকাদাও না হয়৷ বসতে উঠতে সাহায্য করার জন্য কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচিত হলেন ৷

গুহদার সমস্যাটা হল কাঁটা চামচ দিয়ে গতকাল খেতে পারেননি, বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু গুহদা রসিক মানুষ তাই তাঁকে তো প্যান্ডেলে চাই হাসি ঠাট্টার জোয়ার আনতে ৷ তাঁর জন্য একটি খালি প্যাকিং বাক্স এনে তার উপরে শালপাতা রাখা হল৷ তাতেও খুব একটা সুবিধা হলনা৷ তবে নিজেই কৌতুকী মন্তব্য করে সবাইকে হাসালেন,কষ্ট গায়ে মাখলেননা৷ অন্য দিকে অতি কর্মতৎপর দুই খুদেকে (তিথি এবং শাঙ্কী ) নিয়ে ঝামেলা দেখা দিল । তাদের দাবি তারাও পরিবেশন করবে ৷ নুন পাতায় দিয়ে ভাজার ঝুড়ি বা চুপড়ি নিতে আগ্রহী৷ আপোস মত –কাকু ঝুড়িটা ধরে রইলেন আর ওদের একজন একটা করে বেগুনি অন্যজন একটা করে কুমড়োর বেগুনি পাতায় পাতায় রেখে চলল ৷ পায়েস খুব ভালো হওয়াতে এবং খোলা হাতে দেওয়াতে সবাই সন্তুষ্ট ৷ মধুরেন সমাপ্ত মহা অষ্টমীর জনতা ভোগ ৷ সেনদা খুশিমনে মিষ্টিপান হাত হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘোষণা করলেন – যার শেষ ভালো, তার সব ভালো।

লেখক পরিচিতি -

স্কুল-কলেজ পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা পান আই টি খরগপুর, নেডারল্যান্ডস্‌ ও জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউ এস এ -তে । কর্মক্ষেত্র উত্তর প্রদেশ-এর তরাই অঞ্চলের গ্রাম, ভারত সরকার-এর অধীনে অরুণাচল-এ, (শিলং-এ থেকে), উটি (তামিলনাড়ু), দেরাদুন-এ (উত্তরাখণ্ড) , কৃষি এবং পরিবেশ মন্ত্রালয়, দিল্লি-তে।

দিল্লির ৩৪ পল্লীর কালীবাড়ির সাথে যুক্ত আছে বিগত ৩০ বছর ধরে। ১৯৪৮ সাল থেকেই লেখেন কিন্তু প্রথম প্রকাশন ২০১৫-তে। কবিতা , গল্প, ভ্রমণ কাহিনী ও প্রবন্ধ ছাপতে থাকে দিল্লির পত্র-পত্রিকাগুলোতে। কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রথম বই ' অনুভূতি বহুরূপে'। অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে দিল্লিথেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ' কলমের সাথ রঙ' পত্রিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং উচ্চপদে আছেন।   

 

** দীনেশচন্দ্র দাসের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন

 

Baroyari Durgotsabe - Janata Bhog Ranna O Poribeshone Hal Behal by Dinesh Chandra Das, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free