Advt

Advt

Biplabi Samaj Sanskarak Iswar Chandra Vidyasagar (Feature / Probondho) by Dr. Raghunath Bhattacharya, Bangladesh, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free

 জন্মদিনে শ্রদ্ধা নিবেদন

Biplabi Samaj Sanskarak Iswar Chandra Vidyasagar (Feature / Probondho) by Dr. Raghunath Bhattacharya, Bangladesh, Tatkhanik Bangla/Bengali e magazine Online Reading Free

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০-২৯ জুলাই ১৮৯১) মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতীদেবী। পাণ্ডিত্য , শিক্ষা বিস্তার , সমাজ সংস্কার , দয়ার্দ্রতা ও তেজস্বিতায় তিনি ছিলেন উনিশ শতকে বাংলায় একক ব্যক্তিত্ব । তার প্রজ্ঞা ছিল প্রাচীন ভারতীয় রুধির মতো, আর হৃদয় ছিল বাংলার কোমলমতি মায়ের মতো। তাঁর দয়া এবং মানবিকতার জন্যে তিনি “ করুণাসাগর ” নামে পরিচিতি পান (তাকে এ বিশেষণ প্রথমে দিয়েছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ) ।

বিদ্যাসাগর ছিলেন আধুনিক মনোভাবাপন্ন । তিনি উপলব্ধি করেছেন, পুরোনো মূল্যবোধ এবং পরিবারের ভেতর থেকে পরিবর্তন আনতে না পারলে সমাজ এবং দেশের কখনো প্রকৃত উন্নতি হবে না। এজন্য তিনি বিধবা বিবাহ চালু, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ এবং স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্যে আন্দোলন শুরু করেন আর এই আন্দোলনে তিনি ছিলেন একাকী।সামাজিক এই বিপ্লবে তাকে এই লড়াই করতে হয়েছে তৎকালীন রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে।তাই সমাজ সংস্কারের এই কঠিন লড়াইয়ে বিপ্লবী বিদ্যাসাগরকে অধিক মূল্য দিতে হয়েছে। অবশ্য তাঁর পূর্বে রাজা রামমোহন রায়-ও ( ১৭৭২-১৮৩৩ ) হিন্দু সমাজের প্রচলিত সহমরণ প্রথা ( সতীদাহ প্রথা ) বিলোপের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। অবশেষে ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর লর্ড বেন্টিংক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন । আর এই আন্দোলনে রাজা রামমোহন রায়কেও এককভাবে লড়াই করতে হয়েছে ।

বিদ্যাসাগর ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন কোলকাতায় সরকারি সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। কলেজে একাদিক্রমে বারো বছর অধ্যয়ন করে ব্যাকরণ,কাব্য,অলঙ্কার,বেদান্ত,স্মৃতি, ন্যায় ও জ্যোতিষশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের এই সব বিষয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর তিনি সংস্কৃত কলেজের পাঠ সমাপ্ত করে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগে হেড পণ্ডিত পদে নিযুক্তি লাভ করেন । এরপর সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ পদে ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ।

১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে চার্লস উডের শিক্ষা সনদ গৃহীত হওয়ার পর সরকার গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে জনশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের উৎসাহ লক্ষ্য করে ছোট লাট ফেডারিক হ্যালিডে কর্তৃক ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তাকে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদের অতিরিক্ত সহকারি স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব দেয়া হয় । প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি নদীয়া , বর্ধমান , হুগলি এবং মেদিনীপুর জেলায় স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন । দু'বছরের মধ্যে তিনি এরকম বিশটি স্কুল স্থাপন করেন । এছাড়া তিনি এসব স্কুলে পড়ানোর জন্য,শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি নরমাল স্কুল স্থাপনের পাশাপাশি নিজের গ্রামে নিজের খরচে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এসব বাংলা মডেল স্কুল ছাড়া, সরকার বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তখন রক্ষণশীল সমাজের তীব্র বিরোধিতার মুখে এ ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে কিনা সরকার সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। অন্যদিকে , বিদ্যাসাগর ছিলেন স্ত্রীশিক্ষার বিশেষ সমর্থক । সরকার সেজন্যে এ কাজের দায়িত্ব দেয় তার ওপর। তিনি বালিকা বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে স্থানীয় লোকদের সমর্থনে বর্ধমানে একটি স্কুল স্থাপন করেন। পরে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর থেকে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসের মধ্যে আরও পঁয়ত্রিশটি স্কুল স্থাপন করতে সমর্থ হন ।

কিন্তু শিক্ষা বিভাগের পরিচালকের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কারণে বিদ্যাসাগর এ কাজ বেশি দিন চালিয়ে যেতে পারেননি । সেজন্য ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পাঁচশত টাকা মাসিক বেতনের সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ও অন্যান্য সরকারি পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।এ রকমের উচ্চপদে বাঙালিদের মধ্যে সম্ভবত তিনিই অধিষ্ঠিত ছিলেন। পরে শিক্ষা সম্প্রসারণের কাজে, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার কাজে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেন । এ সময়ে তিনি বেথুন সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত হন। এই সোসাইটির কাজ ছিল স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার এবং পরিবার ও সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা । তিনি স্কুল স্থাপনের জন্যে ধনী জমিদারদেরও উৎসাহ প্রদান করেন । ধনী পরিবারের ছেলেদের ইংরেজি শেখানোর উদ্দেশ্যে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে কোলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন স্থাপিত হয়। কিন্তু দু'বছরের মধ্যে এ স্কুল বন্ধের উপক্রম হলে বিদ্যাসাগর এ স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এর নাম রাখেন হিন্দু মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউট। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে তিনি এ স্কুলে এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য ছাত্রদের শিক্ষা দিতে থাকেন এবং ক্রমান্বয়ে সাফল্য লাভ করেন। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের গোড়ার দিকে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এ বিদ্যালয়কে কলেজ এবং ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ডিগ্রি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে এ কলেজটি ‘ বিদ্যাসাগর কলেজ'নামে খ্যাত ।

সংস্কৃত কলেজের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ এবং বালক ও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন ছাড়া,শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো পাঠ্যপুস্ত রচনা ও প্রকাশ করা । বর্ণপরিচয় ( ১৮৫১ ) প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত প্রথম শিক্ষার্থীদের জন্যে এ রকমের কোনো আদর্শ পাঠ্যপুস্তক ছিল না । তার বর্ণপরিচয়ের মান এতো উন্নত ছিল যে, প্রকাশের পর থেকে অর্ধশতাব্দী পর্যন্ত এই গ্রন্থ বঙ্গদেশের সবার জন্যে পাঠ্য ছিল। দেড়শো বছরের অধিক সময় পরেও এ গ্রন্থ এখনও মুদ্রিত হয়।বর্ণপরিচয়ের মতো সমান সাফল্য লাভ করেছিল বোধোদয় ( ১৮৫১ ), কথামালা ( ১৮৫৬ ),চরিতাবলী (১৮৫৬ ) এবং জীবন চরিত ( ১৮৫৯ )। সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা (১৮৫১) ও বর্ণপরিচয়ের মতো অভিনব পুস্তক - এর আগে বাংলা ভাষায় ছিল না । চার খণ্ডে লেখা ব্যাকরণ কৌমুদীও ( ১৮৫৩-৬৩ ) তার ব্যাকরণ রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক অবদান ।

তার পাঠ্যপুস্তকগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, তিনি কেবল লেখাপড়া শেখানোর কৌশল হিসেবে এগুলো লেখেননি বরং ছাত্রদের নীতিবোধ উন্নত করা এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানও তার লক্ষ্য ছিল । যেমন চরিতমালায় তিনি প্রাচীন ভারতের মুনি - ঋষিদের জীবনী লেখেননি , বরং ইউরোপের ষোলজন বিখ্যাত ব্যক্তির পরিচিতি দিয়েছেন । তেমনি জীবনচরিতে তিনি কোপারনিকাস,গ্যালিলিও,নিউটন এবং হার্শেলের মতো বিজ্ঞানীদের এবং উইলিয়ম জোনসের মতো পণ্ডিত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচিতি লিখেছেন। নীতিবোধেও একই দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে । এতে তিনি আনুষ্ঠানিক ধর্ম এবং আচার - অনুষ্ঠানের কোনো উল্লেখ করেননি , বরং যে - সব নীতিবোধ সকল মানুষের থাকা উচিত,তার কথা লিখেছেন।আর তিন খণ্ড আখ্যান মঞ্জরিতে সংগ্রহ করেছেন ইউরোপ - আমেরিকার ( এবং চারটি আরব দেশ ও পারস্যের ) সত্যিকার এবং জনপ্রিয় গল্প। এসব গল্পের শিরোনাম— মাতৃভক্তি, পিতৃভক্তি , ভ্রাতৃস্নেহ , গুরুভক্তি , আতিথেয়তা, পরোপকার এবং সাধুতার পুরস্কার - এ থেকেই বোঝা যায় যে , তিনি কেবল ছাত্রদের নীতিবোধ উন্নত করতে চাননি, সেই সঙ্গে চেয়েছিলেন তাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে। তার পাঠ্যপুস্তকগুলো দীর্ঘদিন বঙ্গদেশের সর্বত্র পাঠ্য ছিল । এগুলোর মাধ্যমে তিনি একই সঙ্গে প্রামাণ্য ভাষা ও বানান যেমন শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন, তেমনি নীতিবোধ উন্নত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিধবাবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর দীর্ঘকাল সংগ্রাম পরিচালনা করে সমাজ জীবনে এক বৈপ্লবিক ইতিহাস স্থাপন করেছেন। বিধবাবিবাহের পক্ষে শাস্ত্রীয় প্রমাণ উপস্থাপন করে ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে 'বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা তদ্বিষয়ক প্রস্তাবে'শীর্ষক পুস্তিকা প্রকাশ করেন । হিন্দু রক্ষণশীল সমাজ কর্তৃক বিধবাবিবাহের তীব্র বিরোধিতার মুখোমুখি হন তিনি। প্রতিবাদীদের প্রতি উত্তরদানের জন্য ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে উপরিউক্ত শিরোনামে দ্বিতীয় পুস্তক প্রকাশ করেন। অবশ্য সংস্কৃত কলেজ ছাড়ার কয়েক মাস পরে বিদ্যাসাগর বালবিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষে তাঁর প্রথম বেনামি লেখা প্রকাশিত হয় ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকায় । এভাবে বিধবাবিবাহের পক্ষে শাস্ত্রীয় প্রমাণ দেওয়া ছাড়াও, বিধবাদের পুনর্বিবাহ প্রবর্তনের পক্ষে একটি আইন প্রণয়নের জন্যে তিনি সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন। বিধবাবিবাহ আইন পাসের জন্য ভারতের ব্রিটিশ সরকারের নিকট বহু স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র পেশ করেন ( 8 অক্টোবর ১৮৫৫ )। আবেদনপত্রের সঙ্গে তিনি সংযুক্ত করে দিয়েছিলেন বিধবাবিবাহ আইনের একটি খসড়াও। ১৭ নভেম্বর ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে খসড়াটি গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া কাউন্সিলে উপস্থাপিত হয় । রাজা রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে বিরোধী পক্ষ বা রক্ষণশীল সমাজের পক্ষ থেকেও সরকারের কাছে বিপরীত আবেদনপত্র ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ দাখিল করা হয় । বহুবিধ বিচার বিশ্লেষণের পর ব্যবস্থাপক সভা কর্তৃক বিধবাবিবাহ আইনের খসড়াটি গ্রহণ করা হয়। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই গভর্নর জেনারেলের সম্মতিক্রমে এটি আইনে পরিণত হয় । আইন অনুসারে প্রথম বিধবাবিবাহ করেন ( ডিসেম্বর ১৮৫৬ ) সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক শ্ৰীশচন্দ্র বিদ্যারত্ব। বিদ্যাসাগরের তত্ত্বাবধানে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন স্থানে তার নেতৃত্বে বহু - বিধবাবিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যাসাগরের পুত্র নারায়ণচন্দ্র এক বালবিধবার পাণিগ্রহণ করলে তার ব্রত সার্থকতা লাভ করে।

বিধবাবিবাহ আইন পাশের পর বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল সংগ্রাম পরিচালনা করেন । এ প্রথার বিরুদ্ধে শাস্ত্রীয় প্রমাণ উপস্থাপন করে ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার 'শীর্ষক প্রথম পুস্তিকা এবং বহুবিবাহ সমর্থনকারীদের মত খণ্ডন করে ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে উপযুক্ত শিরোনামে দ্বিতীয় পুস্তিকা প্রকাশ করেন। প্রতিপক্ষ পণ্ডিত মহল এ সকল পুস্তিকা রচনা ও প্রকাশের জন্য তাঁকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলে তৎকর্তৃক ‘ কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য ' ছদ্মনামে ‘ অতি অল্প হইল ' ( মে ১৮৭৩ ) এবং আবার অতি অল্প হইল ' ( সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ ) শীর্ষক বিদ্রুপ কৌতুকে পরিপূর্ণ দু'খানি প্রতি আক্রমণ রচনা প্রকাশ করেন । বহুবিবাহ রোধকল্পে আইন প্রণীত না হলেও এ প্রথার বিরুদ্ধে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য।

মানবতাবাদ,কর্মবাদ এবং ইহলৌকিক চিন্তা - চেতনার প্রতি আস্থাশীল একজন ক্ষণজন্মা মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর । তাকে দেখার জন্য সে সময় পরম পুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস ( ১৮৩৬-১৮৮৬ ) বিদ্যাসাগরের বাড়িতে যান । রামকৃষ্ণদেব বিদ্যাসাগরকে সমুদ্রের বিশালত্বের সঙ্গে তুলনা করেন । বিদ্যাসাগর বাঙালি হিন্দু সমাজে বিধবাবিবাহ প্রবর্তন করে সমাজ সংস্কারের এক অনন্যসাধারণ ইতিহাস সৃষ্টি করেন।তিনি দান - দাক্ষিণ্যের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। প্রবাসী মাইকেল মধুসূদনকে ( ১৮২৪-১৮৭৩ ) দারিদ্র্য থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্বাতন্ত্র ছিল পোশাকে ও কর্মে,আচারে ও চিন্তায়।তাঁর অভিনবত্ব এখানেই যে তিনি এই দুই বিপ্রতীপ প্রবণতার মধ্যে সমন্বয়সাধন করে বাঙালি সমাজ এবং বাংলা সাহিত্যের উন্নতি সাধনে অগ্রসর হয়েছিলেন। এদিক থেকে পূর্বসূরি রামমোহন এবং সমসাময়িক অক্ষয় কুমারের সঙ্গে তার সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। মানবমুক্তির আধুনিক মন্ত্রে যিনি নিজেকে দীক্ষিত করেছিলেন, যিনি ধর্মের চেয়ে মানবাত্মাকে বড় বলে মনে করতেন, যার জীবন ধর্মনির্ভর ছিল না,ছিল কৰ্মনির্ভর। বর্তমান বাঙালি সমাজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো বিপ্লবী সমাজ সংস্কারকের খুব বেশি প্রয়োজন। 

লেখক পরিচিতি 

রঘুনাথ ভট্টাচার্য-র জন্ম বাংলাদেশের ঢাকায় । ধামরাই কলেজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন । বাংলায় স্নাতকোত্তর ও পিএইচ ,ডি । বিভাগীয় প্রধান বাংলা বিভাগ নবযুগ কলেজ ধামরাই ঢাকা ।

প্রকাশিত গ্রন্থ - ( ১ ) বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য ( ১৯২০-১৯৩০ ) । ( ২ ) সবুজপত্র গোষ্ঠীর সাহিত্য ভাবনা। ( ৩ ) প্রবন্ধ সংগ্রহ । ( ৪ ) ঈশ্বর ভাবনার বিবর্তন ও অন্যান্য প্রবন্ধ । ( ৫ ) বাংলার বৈষ্ণব দর্শন : সাহিত্যে রাধা ও কৃষ্ণের ক্রমবিবর্তন । এছাড়াও যৌথভাবে একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।