কবিতার পাতা
লিখেছেন – দীনেশচন্দ্র দাস, কুমার আশীষ
রায়
নীরব তবুও মুখর
দীনেশচন্দ্র দাস
মূক নিদর্শন
গ্রানাইট পাথরের
অধি মূর্ত রূপ
ভাস্কর্যের বিকাশে অবিস্মরণীয়
বিজয়নগরের রাজধানী হাম্পী
আকাশ আলো বাতাস চুমি
হাম্পি আজ বিধ্বস্ত নীরব ৷
অমোঘ কালের বিধানে
রোদ বৃষ্টির ক্ষরণ পেরিয়ে
বয়ে নিয়ে ইতিহাসের গৌরবময়
ও বেদনা ভরা ঘটনাগুলোর ভার
তুঙ্গভদ্রার তীরে
আজও আছে দাঁড়িয়ে ৷
বলে, দ্বিধা সংকোচ
কাটিয়ে
হে, দেশ বিদেশের
ভ্রমণবিলাসী
এস দেখ নিবিড়ে রোমাঞ্চকর
কালজয়ী সমৃদ্ধির কিছু ঝলকে
তালিকটের রক্তাক্ত যুদ্ধের শেষে
তার মূক অবস্থিতি ৷
হবে স্তব্ধ স্তম্ভিত,
পাবে ছড়িয়ে থাকা বহু কোণে
তৎকালীন নৃত্যপারঙ্গমা নটিনীর
ভুবন মোহিনী রূপ স্থাপত্যে বিধৃত
ছন্দে লালিত্যে ভঙ্গিমায় প্রসাধনে
সুচারু সুচিক্কণ ভূষণে ৷
কান পেতে শুনবে
বদ্ধ হাওয়ার বুকে রাজসঙ্গীতজ্ঞ
রাগ রাগিনীর আলাপ বৈচিত্রে
তাল লয় মূর্ছনার সংযোজনায়
মত্ত আছেন ভুলে পরিবেশ সময়
আছেন নিজেতে মগ্ন ৷
চোখ বুজে হাত রাখ
বিঠলের অসমাপ্ত মন্দির প্রাচীরে,
শুনতে পাবে কোনো অদৃশ্য ইশারায়
নট মন্দিরের স্তম্ভগুলো মূর্ত হয়ে
তোমায় নিয়ে চলেছে প্রমোদ অতীতে ৷
এই মন্দিরের বেদিতে
মঙ্গলময় দেবতার প্রতিষ্ঠা হতে পারেনি,
সুশোভিত আলোক উজ্জ্বল চত্বরে
নূপুর গুঞ্জরনে মধুরিমা ছড়িয়ে
কোন নিস্পাপ কুমারী দেবদাসী
আশীষ প্রর্থনায় নাচেওনি ৷
এই টুকুতেই
সার্থক হবে তোমার আসার পরিশ্রম
ভুলবে দেহের শ্রান্তি মনের ক্লান্তি ৷
নির্বাক তোমার শ্রদ্ধা পৌঁছে যাবে
সেই সব অপরিচিত স্থপতির পায়ে,
বলবে "ভোলোনি তাদের কুশলতা,শ্রম"
৷
কবি পরিচিতি -
স্কুল-কলেজ
পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা পান আই টি খরগপুর, নেডারল্যান্ডস্
ও জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউ এস এ -তে । কর্মক্ষেত্র উত্তর
প্রদেশ-এর তরাই অঞ্চলের গ্রাম, ভারত সরকার-এর অধীনে
অরুণাচল-এ, (শিলং-এ থেকে), উটি
(তামিলনাড়ু), দেরাদুন-এ (উত্তরাখণ্ড) , কৃষি এবং পরিবেশ মন্ত্রালয়, দিল্লি-তে।
দিল্লির ৩৪
পল্লীর কালীবাড়ির সাথে যুক্ত আছেন
বিগত ৩০ বছর ধরে। ১৯৪৮ সাল থেকেই লেখেন কিন্তু প্রথম প্রকাশন ২০১৫-তে। কবিতা ,
গল্প, ভ্রমণ কাহিনী ও প্রবন্ধ ছাপতে থাকে
দিল্লির পত্র-পত্রিকাগুলোতে। কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত
লেখেন। প্রথম বই ' অনুভূতি বহুরূপে'।
অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে দিল্লিথেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ' কলমের সাথ রঙ' পত্রিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং
উচ্চপদে আছেন।
** দীনেশচন্দ্র দাসের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
***************************************
বহুরূপে শূন্য
কুমার আশীষ রায়
আঁধারে ভরা কায়াহীন জীবনের অভ্যন্তরে
এক বিপন্ন, উদগ্ৰ ক্ষোভ
বিদ্যমান ।
প্রমত্ত দৈবাঘাতে --- উন্মাদিত যৌবন,
অস্থির জান্তব পল্লবিত প্রেমে
নিশ্চিন্তের সাধনায়,বিরল
ক্ষণের ফাঁকে
মহাকালের অভাবিত ধূসর-ধরণী
নির্মানে ব্যস্ত ।
প্রবাহিত মন্থর প্রহর --- অতিবাহিত,
সভ্যতার ভগ্নসোপানে
প্লাবিত বিশৃঙ্খল, অক্ষম
বিহঙ্গের
স্বরক্লিষ্ট অনুচ্চ তানে ।
শান্তির অলীক শূন্যস্থান পূর্ণ করে
প্রসারিত দীর্ঘ ছায়া ।
অনিশ্চিতের নিত্যতায়,নির্বাক
স্বপন হাসে
দলিত প্রেমের পদতলে
দুর্ঘটনার করুণ উদ্ভাসনে ।
উদারতার সুগভীর আলোক
লাঞ্ছনার উত্তাল দিগন্তে --- মথিত, ধ্বস্ত
।
কবি পরিচিতি :-
জন্ম মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ । সেখানে কিছুটা
পড়াশোনা,
পরে পাটনা ও শেষে দিল্লী থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক । কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও
সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে অবসরপ্রাপ্ত । সাহিত্য, সঙ্গীত, বই-পড়া, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, যোগ-ব্যায়াম, আধ্যাত্মিকতা ও প্রেত-তত্ত্ব ইত্যাদিতে
চর্চা । মুক্ত-চিন্তাবিলাসী ও কুসংস্কার বিরোধী । বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি।