এগুলি ত হল আধুনিক পৃথিবীর সপ্তম
আশ্চর্যের কয়েকটি। আসল বা আদিম পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের কিছুই তো দেখা হ’ল না।
আদিম
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের সাতটি দর্শনীয় জিনিষ হলোঃ
১) গিজ্জার পিরামিড (Pyramid of Giza) (২) ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান (Hanging Gardens,Babylon) (৩) গ্রীসের অলিম্পিয়াতে ‘জীয়াস’এর বিশাল মূর্তি (Statue of Zeus at Olympia,Greece) (৪)
এফেসাসে এ ‘আর্তিমিসের’(Temple of
Artemis,Ephesus) মন্দির, (৫)
হলিকার্নাসাস এর ‘মাজার’(Mausoleum of
Halicarnassus)
(৬) রোডস এর কলোসাস (Colossus of Rhodes) আর (৭) মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া
বন্দরের ‘লাইট হাউস’ বা
বাতিঘর (Lighthouse of Alexandria, Egypt)।
আদিম গ্রীক’রা এদের বলতেন ‘থিয়ামাটা বা ‘দেখার-জিনিষ’। অনেক পরে “ওয়ান্ডার” বা আশ্চর্য কথাটা যোগ করা হয়েছে।
তবু এরা যে এককালে ছিল তাতে কোন সন্দেহ
নেই;তাই
এদের সম্বন্ধে কিছু না জানালে ভীষণ অন্যায় হবে বলে মনে হয়।
পিরামিড
সম্বন্ধে অনেক কিছু লেখা যায় কিন্তু এই স্বল্প পরিসরে বিস্তারিত লেখা সম্ভব
নয়। অন্যকোনও দিন আবার হাজির হবো পিরামিড সম্পর্কে লেখা নিয়ে।
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান আসলে আকাশে ঝুলত
না।কতকগুলো পাথরের উঁচু পিলারের উপর সিঁড়ির আকারের ছাদ
বসিয়ে তার উপরে গাছ লাগানো হয়েছিল। সেটা তো ঠিক আছে;আসল
সৌন্দর্য আর টেকনিকাল আশ্চর্য ছিল অত উঁচুতে গাছগুলোতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা। আমাদের
দেশে গ্রামের দিকে খেত খামারে জল দেবার জন্য যেমন কুয়োর কাছে বড় চাকা লাগিয়ে তাতে
বালতি বা বড় বড় টিন লাগিয়ে দেওয়া হয়,তারপর চাকা ঘুরিয়ে
কুয়োর জল বালতি থেকে কয়েক ফুট দূরে চাষের জমিতে ছুঁড়ে দেওয়া হয়,ঠিক সেই ভাবে বিশাল বড় চাকা ঘুরিয়ে উঁচু ছাদের উপরে গাছে জল দেওয়ার
ব্যবস্থা ছিল। আদিম কালের প্রযুক্তিবিদ্যার উৎকর্ষতা আধুনিক যুগের থেকে মোটেই কম
ছিল না।
আর্টিমিস/ আরটিমিশন বা ডায়নার মন্দির ছিল
৫৯ ফুট উঁচু একটি সুন্দর মন্দির। ডায়না হ’ল এফেসসের
এক স্থানীয় দেবী। খৃস্টপূর্ব ৫৫০ থেকে বানানো শুরু হয়েছিল,লেগেছিল
১০ বছর। আবার ৪০১ খৃস্টাব্দে ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিলিয়ে গেল।
অধুনা তুর্কি দেশে অবস্থিত হালিকারনাসের
মসোলিয়াম (Mausoleum) ছিল
১৩৮ ফুট উঁচু,তৈরি
হয়েছিল ৩৫৩ থেকে ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে।
এক বিরাট ভূমিকম্পে পুরোটা ধ্বংস হয়ে যায়।
রোডস দ্বীপের ওই নামের শহরেই ছিল এই
সুবিশাল ১০৮ ফুট উঁচু গ্রীক সূর্য দেবতা হেলিয়স এর ব্রোঞ্জের মূর্তি। দু’শ আশি(২৮০) খ্রিস্টপূর্বে চারে (Chares) নামক শিল্পী বানান এই মূর্তি।
মাত্র ৫৪ বছরেই বিরাট এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায় ২২৬ খ্রিস্টপূর্বে। ভূমিকম্পে মূর্তিটি হাঁটুর
উপর থেকে ভেঁঙে দু’টুকরো হয়ে উলটে পড়ে যায়,কিন্তু সমুদ্রে না পড়ে পড়েছিল সমুদ্র উপকুলে। বিশাল এই মূর্তি ওখানের
অধিবাসীরা তুলে নিয়ে যেতে না পারায় সমুদ্র উপকূলেই পড়ে ছিল। পরে আরব দেশ যখন রোডস
দখল করে তখন এই মূর্তির ব্রোঞ্জ টুকরো করে “কাবাড়ি”
ওয়ালাদের বিক্রি করে।
মানুষ কত শখ করে কত কষ্ট সহ্য করে কত বছর
ধরে পরিশ্রম করে স্বপ্ন-সৌধ গড়ে আর প্রকৃতি এক নিমিষে তা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়ে শুধুই
প্রমাণ করে: কিছুই চির-স্থায়ী নয়।
আধুনিক যুগের সপ্তম আশ্চর্যের কথা নিয়ে হাজির হবো আগামী সপ্তাহে।
লেখক পরিচিতি –
ডঃ তুষার রায় স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ। ওই সময়েই “শুকতারা”তে “অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু “Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পান।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর আই. আই. টি, দিল্লি থেকে পড়াশুনা ও গবেষণা,কিছুদিন অধ্যাপনা,তারপর সরকারী বৈজ্ঞানিক দপ্তরে কার্যকালে পৃথিবীর কয়েকটি দেশেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।
পঞ্চাশটিরও বেশি প্রবন্ধ নামী বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে (ইন্দোর) আমন্ত্রিত প্রবন্ধ পাঠ করার গৌরবও ভাগ্যে ঘটেছে। বিগত দেড় বছর করোনার প্রকোপে ছাপাখানা বন্ধ থাকার কারণে অনেক ই-ম্যাগাজিনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।
দিল্লি থেকে প্রকাশিত বহুল জনপ্রিয় ই-ম্যাগাজিন, “তাৎক্ষণিক”এর ‘জানা-অজানা’ কলমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টি জনপ্রিয়-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি “দেশ” ওয়েব-সাইটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।