Advt

Advt

Prithibir Saptam Ascharjya by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik Bangla / Bengali Magazine Online Reading Free

জানা অজানা

Prithibir Saptam Ascharjya by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik Bangla / Bengali Magazine Online Reading Free


পুরানো একটা এলবাম হাতে এলো-তার
সঙ্গে ফিরে এল অনেক স্মৃতিও। যে দিন গুলো ছিল কত জীবন্ত,কত প্রাণবন্ত সেগুলো কোথায় হারিয়ে গেল-অথচ মনে হয় এইতো কদিন আগের কথা-গ্রেট ওয়ালবা চীনের প্রাচীরের উপর দাঁড়িয়ে ফটো তোলা বা  স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে থাকা সুসজ্জিত গার্ড এর কাছে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ফটো-তোলা অথবা রোমের কলোজিয়ামকে পিছনে রেখে ভিডিও তোলা অথবা নিদেন পক্ষে তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে যুগল-মূর্তিতে ফটো তোলা।

এগুলি ত হল আধুনিক পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের কয়েকটি। আসল বা আদিম পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের কিছুই তো দেখা হল না।

 আদিম পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের সাতটি দর্শনীয় জিনিষ হলোঃ

১) গিজ্জার পিরামিড (Pyramid of Giza) (২) ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান (Hanging Gardens,Babylon) (৩) গ্রীসের অলিম্পিয়াতে জীয়াসএর বিশাল মূর্তি (Statue of Zeus at Olympia,Greece) (৪) এফেসাসে এ আর্তিমিসের(Temple of Artemis,Ephesus) মন্দির, (৫) হলিকার্নাসাস এর মাজার(Mausoleum of Halicarnassus) (৬) রোডস এর কলোসাস (Colossus of Rhodes) আর (৭) মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরের লাইট হাউসবা বাতিঘর  (Lighthouse of Alexandria, Egypt)

আদিম গ্রীকরা এদের বলতেন থিয়ামাটা বা দেখার-জিনিষ। অনেক পরে ওয়ান্ডারবা আশ্চর্য কথাটা যোগ করা হয়েছে।


এদের মধ্যে কেবল গিজ্জার পিরামিডই এখনও অক্ষত আছে-যদিও ওর পরের চুনা পাথরের আস্তরণ জায়গায় জায়গায় উঠে গেছে। মিশরের ১০৪ টি পিরামিড এর মধ্যে এটি সবচেয়ে পুরানো আর এই পিরামিডটি ফেরায়ো বংশের চতুর্থ বংশধর বিখ্যাত ফেরায়ো খুফুর কবর হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৬ শতকে। এটি বানাতে ২৭ বছর সময় লেগেছিল। চারশো একাশি (৪৮১) ফুট উঁচু এই পিরামিড অন্তত ৩৮০০ বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মিনার হিসাবে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। জমিতে এর বিস্তার বিশাল- ৭৫৫ বর্গ ফুটেরও বেশি। এটি বানাতে ২৩০ লক্ষটি বড় বড় পাথর যার এক একটির ওজন আড়াই থেকে ১৫ টন। একবার চিন্তা করে দেখুন ওই বিশাল বিশাল পাথর কি করে অত পরে তুলেআনা হয়েছিল-তখন তো আর আজকের মত শক্তিশালী ক্রেন ছিলনা। খনন করে দেখা গেছে যে এর ভিত’ ‘বেড রকপর্যন্ত চলে গেছে। তাইতো এটি সাড়ে চার-হাজার বছর ধরে রোদ-বৃষ্টি-হাওয়ার নির্মম আর নিরন্তর আঘাত সয়েও অক্ষত দাঁড়িয়ে রয়েছে এখন পর্যন্ত যখন আর বাকি সব আদিম আশ্চর্য কালের কবলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হ্যাঙ্গিং গার্ডেন যে ব্যাবিলনের ঠিক কোন জায়গায় ছিল তাও আজ কেউ বলতে পারেনা।

তবু এরা যে এককালে ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই;তাই এদের সম্বন্ধে কিছু না জানালে ভীষণ অন্যায় হবে বলে মনে হয়।

 পিরামিড সম্বন্ধে অনেক কিছু লেখা যায় কিন্তু এই স্বল্প পরিসরে বিস্তারিত লেখা সম্ভব নয়। অন্যকোনও দিন আবার হাজির হবো পিরামিড সম্পর্কে লেখা নিয়ে।

ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান আসলে আকাশে ঝুলত নাকতকগুলো পাথরের উঁচু পিলারের উপর সিঁড়ির আকারের ছাদ বসিয়ে তার উপরে গাছ লাগানো হয়েছিল। সেটা তো ঠিক আছে;আসল সৌন্দর্য আর টেকনিকাল আশ্চর্য ছিল অত উঁচুতে গাছগুলোতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা। আমাদের দেশে গ্রামের দিকে খেত খামারে জল দেবার জন্য যেমন কুয়োর কাছে বড় চাকা লাগিয়ে তাতে বালতি বা বড় বড় টিন লাগিয়ে দেওয়া হয়,তারপর চাকা ঘুরিয়ে কুয়োর জল বালতি থেকে কয়েক ফুট দূরে চাষের জমিতে ছুঁড়ে দেওয়া হয়,ঠিক সেই ভাবে বিশাল বড় চাকা ঘুরিয়ে উঁচু ছাদের উপরে গাছে জল দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আদিম কালের প্রযুক্তিবিদ্যার উৎকর্ষতা আধুনিক যুগের থেকে মোটেই কম ছিল না।

আর্টিমিস/ আরটিমিশন বা ডায়নার মন্দির ছিল ৫৯ ফুট উঁচু একটি সুন্দর মন্দির। ডায়না হল এফেসসের এক স্থানীয় দেবী। খৃস্টপূর্ব ৫৫০ থেকে বানানো শুরু হয়েছিল,লেগেছিল ১০ বছর। আবার ৪০১ খৃস্টাব্দে ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিলিয়ে গেল।

অধুনা তুর্কি দেশে অবস্থিত হালিকারনাসের মসোলিয়াম (Mausoleum) ছিল ১৩৮ ফুট উঁচু,তৈরি হয়েছিল ৩৫৩ থেকে ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে। এক বিরাট ভূমিকম্পে পুরোটা ধ্বংস হয়ে যায়

রোডস দ্বীপের ওই নামের শহরেই ছিল এই সুবিশাল ১০৮ ফুট উঁচু গ্রীক সূর্য দেবতা হেলিয়স এর ব্রোঞ্জের মূর্তি। দুশ আশি(২৮০) খ্রিস্টপূর্বে চারে (Chares) নামক শিল্পী বানান এই মূর্তি। মাত্র ৫৪ বছরেই বিরাট এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায় ২২৬ খ্রিস্টপূর্বে। ভূমিকম্পে মূর্তিটি হাঁটুর উপর থেকে ভেঁঙে দুটুকরো হয়ে উলটে পড়ে যায়,কিন্তু সমুদ্রে না পড়ে পড়েছিল সমুদ্র উপকুলে। বিশাল এই মূর্তি ওখানের অধিবাসীরা তুলে নিয়ে যেতে না পারায় সমুদ্র উপকূলেই পড়ে ছিল। পরে আরব দেশ যখন রোডস দখল করে তখন এই মূর্তির ব্রোঞ্জ টুকরো করে কাবাড়িওয়ালাদের বিক্রি করে।

Prithibir Saptam Ascharjya by Dr. Tushar Ray, Tatkhanik Bangla / Bengali Magazine Online Reading Free


সবশেষে
,আলেকজান্দ্রিয়া (মিশর) বন্দরের ৩৩০ফুট উঁচু লাইট-হাউস বা বাতিঘর। একে ফেরোজ অব আলেকজান্দ্রিয়া ও বলা হয়। অপূর্ব সুন্দর এই বাতিঘর তৈরি হয়েছিল ২৮০ খ্রিস্টপূর্বে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কার্ড-বোর্ড কেটে কেটে এই বাতিঘর বানিয়ে সমুদ্র পাড়ে একটি পাথরের উপর বসিয়ে দিয়েছে। আদিম যুগের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে এটি ছিল সেদিনের সবচেয়ে উঁচু মানুষের তৈরি আশ্চর্য স্থাপত্য। আর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তৃতীয় যা কালের হাতকে ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘ দিন মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিল সবচেয়ে দীর্ঘদিন,অবশ্য আমরা জানি,বেঁচে রয়েছে গিজ্জার পিরামিড। আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর ভেঁঙে পড়ার পরে ও অবশ্য বেঁচে ছিল হ্যালিকারনাসের মুসোলিয়াম। খ্রিস্টাব্দ ৯৫৬ থেকে ১৩২৩ পর্যন্ত বারবার ভূমিকম্প একে আঘাত করে প্রায় ধ্বংস স্তূপে বানিয়ে দিয়েছিল। পরিশেষে, ১৪৮০খৃস্টাব্দে আবার এক সর্বনাশা ভূমিকম্পে এটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় ,তখন ওই ধ্বংসাবশেষের পাথর নিয়ে গিয়ে কয়েত বের দুর্গ (Citadel of Qaitbay) বানাবার কাজে লাগানো হয়েছিল। মন্দের ভাল, ওই আশ্চর্য সুন্দর বাতিঘরের পাথরগুলি কাজে লেগে গেল আর একটি সুদৃশ্য ইমারত Citadel of Qaitbay বানানোর কাজে। এ যেন আধুনিক যুগের অঙ্গ-দান

মানুষ কত শখ করে কত কষ্ট সহ্য করে কত বছর ধরে পরিশ্রম করে স্বপ্ন-সৌধ গড়ে আর প্রকৃতি এক নিমিষে তা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়ে শুধুই প্রমাণ করে: কিছুই চির-স্থায়ী নয়।

আধুনিক যুগের সপ্তম আশ্চর্যের কথা নিয়ে হাজির হবো আগামী সপ্তাহে।  

লেখক পরিচিতি 

ডঃ তুষার রায় স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ। ওই সময়েই শুকতারাতে অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু “Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর আই. আই. টিদিল্লি থেকে পড়াশুনা ও গবেষণা,কিছুদিন অধ্যাপনা,তারপর সরকারী বৈজ্ঞানিক দপ্তরে কার্যকালে পৃথিবীর কয়েকটি দেশেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।

পঞ্চাশটির বেশি প্রবন্ধ নামী বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে (ইন্দোর) আমন্ত্রিত প্রবন্ধ পাঠ করার গৌরবও ভাগ্যে ঘটেছে। বিগত দেড় বছর করোনার প্রকোপে ছাপাখানা বন্ধ থাকার কারণে অনেক ই-ম্যাগাজিনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।

দিল্লি থেকে প্রকাশিত বহুল জনপ্রিয় ই-ম্যাগাজিন, “তাৎক্ষণিকএর জানা-অজানা’ কলমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টি জনপ্রিয়-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশ” ওয়েব-সাইটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।