মৃত্যুর পরে
প্রকাশ অধিকারী
মৃত্যুর পরে তুমি
হঠাৎ
উধাও হয়ে গেলে---
দৃষ্টিগোচর এই
অনন্ত জগৎ
চরাচর ছেড়ে ।
আছি থেকে নেই হয়ে
গেলে
চিরতরে...
কিন্তু আমি
জানি---
নিভৃত বিলাসে
স্থায়ী আসনে
থেকে গেছ তুমি
অন্তরে হৃদয়ে
স্বয়ং-প্রভ
প্রেমে !
সময়ের উজানে এখন
তাই
এই নিত্য
যাওয়া-আসা ।
কবি পরিচিতি :
জন্ম দিনাজপুর শহরে (১৩৬০ বঙ্গাব্দে)। অবসরপ্রাপ্ত বাণিজ্য
বিষয়ের অধ্যাপক। উত্তরবঙ্গের লেখক। উল্লেখযোগ্য বই : " ছোট প্রাণ,
ছোট ব্যথা" (
অণু- কাব্য-গ্রন্থ ) , "গল্পের আঁকিবুকি" ( গল্প- গ্রন্থ ),
" The Least Developed SAARC Members :
Bangadesh, Bhutan, Nepal & Maldives"
( প্রবন্ধ-গ্রন্থ )
ইত্যাদি ।
বঙ্গ ও বর্হিবঙ্গের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন ।
***************************************************
শব্দ কাকে বলে
ভীষ্মলোচন শর্মা
শিলেতে
হলুদ ঠুকতে গিয়ে
শব্দ হল
‘পটাশ্’
হরিস্যারের
কানে গিয়ে
লাগল সেটা ‘কটাস’।
সাতসকালে
কটাস শব্দে
মেজাজ গেল
খিঁচড়ে
ছোটছেলেটা
সামনে ছিল
দিলেন কান
হিঁচড়ে।
তারস্বরে
ছেলে কাঁদে
শব্দের
যেন বাণ
গিন্নি
বলেন কেন তুমি
টানলে ওর
কান।
পটাশ করে
শব্দ কেন
সাত
সক্কাল বেলা
হলুদ
বাটার শব্দ চোটে
কান হল
ঝালাপালা।
হলুদটা
তো ও বাটেনি
বেটেছি
তো আমি
দেখি
আমার কান টানো তো
বুঝব কেমন
স্বামী!
শব্দ নিয়ে
তুলকালাম
লাগল
সকালবেলা
পড়শি যারা
ছিল তাদের
কান হল
হাফ কালা।
জনে জনে
সুধায় এসে
শব্দ কেন
এতো?
গলার স্বর
তাদের
কারোরই
নয় ‘খাটো’।
শব্দব্রহ্ম
বলে একটা
কথা আছে
বটে
হরিস্যারের
কথাটা
সেঁধোলো
মাথার ঘটে।
সকাল থেকে
শব্দে শব্দে
জগৎ
অন্ধকার
শব্দ
জোরে বলতে পারলে
জিতটি হবে
তার।
হলুদবাটা
চুলোয় গেল
হলুদ ছাড়া
ঝোল
তার মধ্যে
পড়ল গিয়ে
চিতল
মাছের কোল।
তাই দুই
গাল মুখে দিয়ে
হরিস্যার
ইস্কুলে
আজ
ছেলেদের শিক্ষা দেবেন
শব্দ কাকে
বলে।
রোল কল
হয়ে গেল আজ
সব ছেলে
ইস্কুলে
হরিস্যার
বলেন নরেন
শব্দ কাকে
বলে?
‘শুনতে যা
পাই আমরা
শব্দ
তাকেই বলে’
‘বইয়ের
লেখা শুনতে পাও?
শব্দ নয়
তাহলে’?
‘মিহির
বলো এবার তুমি
শব্দ কত
প্রকার’?
‘মিহি
শব্দ’, ‘মোটা শব্দ’
আর ‘চিল
চিৎকার’।
এবার বলো
শব্দ মিনিটে
কত মাইল যায়?
আশু আর
সত্যেন যাও
সঠিক
হিসাব চাই।
দৈর্ঘ্য
কত, প্রস্থ কত?
কতই বা
তার গতি?
সঠিক জবাব
না পেলে
আজ অশেষ
দুর্গতি।
কানে কানে
শব্দ বলো
বলো
জোরে জোরে
এমনভাবে
বলো সবাই
পৌঁছয় যেন
দোরে।
শব্দ
শেখার ক্লাস আজকে
আর কোনো
পড়া নাই
শব্দ কাকে
বলে তা আমি
স্পষ্ট জানতে
চাই।
ছেলেরা সব
শব্দ মাপে
চেয়ারে
স্যার ঢোলে
মাথাটা
কেমন ধরে যায়
ভাতঘুম না
হলে।
এমন সময়
হঠাৎ করে
হা রে রে
রে রে রে
ঐ যে কারা
আসছে তেড়ে
বল হাতে
ডাক ছেড়ে।
‘বিশ’
ফুটবল আছড়ে পড়ে
বিকট
আওয়াজ তুলে
হরিস্যার
পিছলে পড়েন
ভাতঘুমেরই
ঢুলে।
‘বিশ’
ফুটবল আছড়ে পড়ে
দরজা
জানালা পরে
শব্দ তার
কমতি নয়
হচ্ছে যে
বেশ জোরে।
হরিস্যার
কানে চেপেছেন
জামার
দুটো হাতা
তার ওপরে
চেপে ধরেছেন
রাজ্যের
বই খাতা।
হরিস্যারকে
চেয়ারে তুলে
বলে
ক্যাপ্টেন ‘গুলে’
এবারে
স্যার বুঝলেন তো
শব্দ কাকে
বলে?
কবি
পরিচিতি
ভীষ্মলোচন
শর্মার পোশাকি নাম উৎপল মৈত্র। একদা দৈনিক বসুমতী কাগজে সাংবাদিক ছিলেন। বর্তমানে ‘বইওয়ালা’ নামে একটি
প্রকাশনা সংস্থার সাথে যুক্ত। স্থায়ী নিবাস কলকাতায়।