Advt

Advt

সেক শুভোদয়া - একটি পর্যালোচনা - ড. বাসুদেব রায়, Sek Shuvodoya - Ekti Paryalochana by Dr. Basudeb Ray, Tatkhanik Bangla / Bengali Magazine Online Reading Free

 লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

সেক শুভোদয়া - একটি পর্যালোচনা - ড. বাসুদেব রায়,  Sek Shuvodoya - Ekti Paryalochana by Dr. Basudeb Ray, Tatkhanik Bangla / Bengali Magazine Online Reading Free

বাঙালি বলতে বোঝায় যাদের মাতৃভাষা বাংলা এবং যারা এক বিশেষ সংস্কৃতির বাহক । নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে বাঙালিকে মিশ্রজাতি বলা যায় । অস্ট্রিক , দ্রাবিড় ও ভোটচিনা গোষ্ঠীর সঙ্গে আর্যদের মিলনে এই জাতির উদ্ভব ঘটে । পক্ষান্তরে,বাংলাভাষা কিন্তু অস্ট্রিক গোষ্ঠী , দ্রাবিড় গোষ্ঠী কিংবা ভোটচিনা গোষ্ঠীর ভাষা নয় । বাংলাভাষা ইন্দো - ইউরোপীয় মূল ভাষা - গোষ্ঠীর অন্তর্গত । বাংলাভাষা মোটামুটি ভাবে অবয়ব নিয়েছিল খ্রিষ্টিয় দশ শতকের দিকে । এর পূর্ববর্তী স্তর হল মাগধী অপভ্রংশ – অবহট্ঠ বা মাগধী প্রাকৃত ।বাংলাভাষায় বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির পূর্বে বাঙালির সংস্কৃত , প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছে ।

বাংলা সাহিত্যের বর্তমান বয়সকাল কমপক্ষে এক হাজার বছর । এই সুদীর্ঘ হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতির নানাবিধ পরিবর্তন ঘটেছে । আর্য সামাজিক পরিকাঠামোরও পরিবর্তন ঘটেছে । বিভিন্ন রাষ্ট্রনৈতিক বিপর্যয় তথা পরিবর্তনও ঘটেছে এই সময়ে । সেসব দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে কয়েকটি ভাগে (সময়কালের দিক থেকে) বিন্যস্ত করা যায় । যেমন – (১) আদি বা প্রাচীনযুগ ( আনুমানিক ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ ) , ( ২ ) অন্ধকার যুগ বা যুগসন্ধিকাল ( ১২০১-১৩৫০ খ্রিঃ ) ( ৩ ) মধ্যযুগ ( ১৩৫১-১৮০০ খ্রিঃ ) এবং ( ৪ ) আধুনিক যুগ ( ১৮০১ খ্রিঃ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ) ।

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম সাহিত্যিক নিদর্শন 'চর্যাপদ' বা 'চর্যাগীতি’ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে অনেকগুলো সমধর্মী পুঁথির সঙ্গে বাংলাভাষায় লেখা ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয় ' বা ' চর্যাপদ ’ - এর পুঁথি আবিষ্কার করেন। বৌদ্ধ তান্ত্রিক পদসংকলন তথা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের ‘সবেধন নীলমণি’ চর্যাপদ সম্পর্কে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে কোনো তথ্যই জানা ছিল না। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দে ) চর্যাচর্যবিনিশ্চয় ,সরহপদ ও কৃষ্ণপদের দোহা এবং ডাকার্ণব - এ চারটি পুঁথি একত্রে 'হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা ' নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । এগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বা চর্যাপদ-ই প্রাচীন বাংলায় লেখা । অন্য তিনটি বাংলায় নয় , অপভ্রংশ ভাষায় রচিত।

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ' মধ্যযুগের প্রথম কাব্য এবং এর রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস মধ্যযুগের আদিকবি । এ তথ্যটি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে জানা ছিল না । প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের জহুরি বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্‌বল্লভ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ( ১৩১৬ বঙ্গাব্দে ) বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের কাছাকাছি কাঁকিল্যা গ্রামনিবাসী শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশজাত দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়ালঘরের মাচা থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুঁথি আবিষ্কার করেন। এই দুর্লভ এবং মূল্যবান পুঁথিটি আবিষ্কারের মাধ্যমে বসন্তরঞ্জন রায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন ঘটান । ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ( ১৩২৩ বঙ্গাব্দে ) তাঁর সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে উক্ত পুথিটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ।

চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হলেও মোটামুটি ভাবে খ্রিস্টিয় দশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বারো শতকের শেষভাগের মধ্যে চর্যাগানগুলো রচিত হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া হয় ।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আদি বা প্রাচীন যুগের সময়কাল ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ; আবার , মধ্যযুগের সময়কাল ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত । ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটলেও ১২০১ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন বা আদিযুগ পেরিয়ে মধ্যযুগে সুচনা ঘটেনি । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ১২০১ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে,বিভিন্ন গবেষকগণ অন্ধকারযুগ , তামসযুগ , বন্ধ্যা যুগ যুগসন্ধিকাল ইত্যাদি অভিধায় অভিহিত করেছেন । তারা ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে মধ্যযুগের সময়কাল চিহ্নিত করেছেন।বাংলা তথা বাংলাদেশে তুর্কি অভিযানের মাধ্যমে মুসলমান শাসনামলের সূত্রপাতের প্রেক্ষাপটে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সাহিত্যসৃষ্টি হয়নি অনুমান করে এরকম সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

ঐতিহাসিকদের মতে , ১২০২-১২০৩ খ্রিস্টাব্দে ( ১১২৪ শকাব্দে ) তুর্কি মুসলমান ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী নবদ্বীপ অধিকার করলে গৌড়াধিপতি, লক্ষণ সেন আত্মরক্ষার জন্যে ঢাকার বিক্রমপুরে পালিয়ে যান । সেই সময় থেকেই বাংলাদেশের -মুসলমান তথা মুসলিম রাজত্বের সূত্রপাত ঘটে । তুর্কিরা এদেশ দখল করেই হিন্দু ও বৌদ্ধদের ওপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে । হিন্দুদের মন্দির , চতুষ্পাঠী , বৌদ্ধদের মঠ, বিহার , পাঠকেন্দ্র ইত্যাদি বিলুপ্ত হতে থাকে । সমকালীন বাংলার সাহিত্য, দর্শন ও সংস্কৃতি চর্চার প্রধান কেন্দ্র ছিল রাজসভা , সামন্তসভা ও বৌদ্ধবিহারগুলো । কিন্তু তুর্কিদের নির্মম ধ্বংসলীলায় সব কিছুই নষ্ট হয়ে যায় । ফলস্বরূপ বহু মূল্যবান পুঁথিও ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে গেলেন হিমালয়ের বুকে নেপালে কিংবা তিব্বতে । সে কারণেই বাংলাভাষায় রচিত আদিগ্রন্থ চর্যাপদ বা চর্যাগীতি আবিষ্কৃত হয়েছে নেপালে রাজদরবারের পুঁথি সংগ্রহশালা থেকে।

তুর্কি শাসকেরা এদেশের জনগণ বিশেষ করে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করার জন্যে কখনও উৎপীড়ন , কখনও সু-ভাষণের পথ নিয়েছিলেন । এজন্য এদেশে পীর , আউলিয়া , ফকির ইত্যাদির আগমন ঘটতে থাকে । ফলস্বরূপ এই বিপর্যয় রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমিকায় এদেশের মানুষেরা ধর্ম ও জীবন রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত থেকেছে,সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করার সুযোগ পায়নি এসময়। অবশ্য , প্রায় দেড়শো বছরের তুর্কি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইলিয়াস শাহি রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে ( খ্রিস্টিয় চৌদ্দো শতকের মাঝামাঝি ) এদেশে কিছুটা শান্তি ফিরে আসে।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের অন্ধকার যুগ তথা যুগসন্ধিকাল ( ১২০১-১৩৫০ খ্রিঃ) নিয়ে গবেষকদের গবেষণার শেষ নেই । এখনও সে প্রচেষ্টা বহমান । এ প্রসঙ্গে স্বনামধন্য সাহিত্যসমালোচক গোপাল হালদারের মতামত উদ্ধৃত করা যেতে পারে "... খুব সম্ভব সে সময়ে কেউ কিছু সৃষ্টি করার মতো প্রেরণাই পায়নি । অন্তত বাঙলা ভাষায় যদি তখন কিছু লেখা হয়েও থাকে তার একটি ছত্রও আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি। বাঙলা ছাড়া অন্য ভাষায় লেখা হয়েছে , তাও সামান্য । এই সন্ধিযুগের বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাস হচ্ছে তাই সাহিত্য - শুন্যতার ইতিহাস । এমনকি , তুর্ক ধ্বংসলীলার যে চিত্র আমরা বাঙলা সাহিত্যে দেখতে পাই তাও অপ্রচুর এবং যা পাই তাও পরবর্তীকালের রচিত,স্মৃতি থেকে সংগৃহীত।”স্মর্তব্য,'অন্ধকার যুগে ' প্রাকৃত পৈঙ্গল ' - এর মতো প্রাকৃত ভাষার গীতিকবিতা গ্রন্থ “ পিঙ্গল” কর্তৃক সংকলিত হয়েছে । কাব্যটিতে বাঙালি জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে । এতে কৃষ্ণের গোপীলীলা , প্রকৃতির বর্ণনা , দৈনন্দিন জীবনের সুখ,দুঃখ ও বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনচিত্র প্রতিফলিত হয়েছে । আবার , রামাই পণ্ডিতের 'শূন্য পুরাণ ' - এ সময়কারই রচনা। শূণ্য পুরানের অন্তর্গত ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’কবিতাটি থেকে প্রমাণিত হয় যে , গ্রন্থটি তুর্কি মুসলমান কর্তৃক বঙ্গবিজয়ের পরের , অন্তত খ্রিস্টিয় তেরো শতকের শেষের দিকের রচনা। তাছাড়া হলায়ুধ মিশ্র রচিত ‘সেক শুভোদয়া' নামক গ্রন্থটির কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।

“ সেক শুভোদয়া ' রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি হলায়ুধ মিশ্র রচিত সংস্কৃত গদ্যপদ্যে মিশ্রিত চম্পুবাক্য।অধিকাশে গবেষকের ধারণা – গ্রন্থটি খ্রিস্টিয় তেরো শতকের একেবারেই গোড়ার দিককার রচনা । গ্রন্থটি রাজা লক্ষ্মণ সেন ও শেখ জালালুদ্দিন তবরেজির অলৌকিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত । শেখের ( সেকের ) শুভোদয় অথাৎ শেখের গৌরব ব্যাখ্যাই হচ্ছে "সেক শুভোদয়া" গ্রন্থের উদ্দেশ্য । এতে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে মুসলমান দরবেশের চরিত্র আধ্যাত্মশক্তির পরিচয় দেওয়া হয়েছে । গ্রন্থটিতে প্রাচীন বাংলার অনেক নিদর্শন প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠেছে । এতে পীরমাহাত্ম্য-জ্ঞাপন বাংলা ছড়া বা 'আর্যা,খনার বচন, ভাটিয়ালি রাগের প্রেমসঙ্গীত ইত্যাদি স্থান পেয়েছে ।

‘সেখ শুভোদয়া'গ্রন্থটি নানাবিধ কারণে উল্লেখযোগ্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে । গ্রন্থটিতে আর্যার সংখ্যা মাত্র তিনটি হলেও গবেষকদের দৃষ্টিতে বাংলাভাষায় প্রাপ্ত পীর – মাহাত্ম্য-জ্ঞাপন ছড়ার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে সেগুলো মর্যাদা পেয়েছে । উক্ত গ্রন্থে সংকলিত একমাত্র প্রেমসঙ্গীত তথা প্রেম - বিষয়ক পদটির বিচার - বিশ্লেষণ করে ভাষাচার্য ড.সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায় প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে , পদটি তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী যুগের ( অর্থাৎ প্রাচীন যুগের ) রচনা -পরবর্তীকালে ভাষান্তরিত হয়েছে । সেক শুভোদয়া গ্রন্থটিতে প্রাচীন বাংলার ব্যক্তিমানসের যে প্রতিফলন ঘটেছে তা অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।উক্ত গ্রন্থে প্রাচীন বাংলার সমাজচিত্রেরও সন্ধান মেলে ।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যে সমকালকে ( ১২০১-১৩৫০ খ্রিঃ ) অন্ধকারযুগ তথা বন্ধ্যাযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে , অধিকাংশ গবেষকের ধারণা - তার জন্যে শুধুমাত্র তুর্কি আক্রমণকে চিহ্নিত করলে তা হবে একপেশে সিদ্ধান্ত । কারণ তুর্কি আক্রমণ যেখানে ঘটেনি সেখানেও সাহিত্য তো খুব বেশি সৃষ্টি হয়নি । তাছাড়া তুর্কি আক্রমণ যদি সাহিত্যের বন্ধ্যাত্বের কারণ হয় , তাহলে তা পরবর্তী সাহিত্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হতে পারত ।যেমন ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদী শোষণের চিত্র পরবর্তীকালের সাহিত্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে ।

'চর্যাপদ ','সেক শুভোদয়া ' এবং ' শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ' - এর একটি করে পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে । এগুলোর এই একটি মাত্র নমুনা যদি পাওয়া না যেত তাহলে এসব সাহিত্যও লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যেত । গবেষকদের ধারণা – এ সময়ে অন্যান্য সাহিত্য সৃষ্টি হয়ে থাকলেও তার অস্তিত্ব হয়তো বিলীন হয়ে গিয়েছে । মধ্যযুগের প্রথম কাব্য হলেও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ' যথেষ্ট উৎকর্ষপূর্ণ কাব্য । প্রাচীন যুগের বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন চর্যাপদের পরে হয়তো এমন কিছু কাব্যের অনুশীলন চলেছিল যার ফলে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মতো উৎকর্ষপূর্ণ কাব্য রচনা সম্ভব হয়েছে। সেক শুভোদয়া আমাদেরকে সেই সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দেয় ।

বলা যায় , তেরো চোদ্দো শতকে বাংলা ভাষার গঠন যুগ চলছিল । স্বনামধন্য গবেষক ড.এনামুল হকের ভাষায় – “ ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে বাংলা ভাষা অপভ্রংশ অবস্থা থেকে বাংলার আঞ্চলিক মূর্তিতে আত্মপ্রকাশিত হচ্ছিল । তখনও তার রূপ স্থিতিস্থাপক ,- কখনও অপভ্রংশ - ঘেষা কখনও পরবর্তীযুগের বাংলা - ঘেষা । রাহুল সাংকৃত্যায়ন কর্তৃক আবিষ্কৃত নতুন চর্যাপদ ও কৃষ্ণকীর্তনের ভাষাই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ । যতদূর মনে করা হয় – বাংলাভাষায় সাহিত্যচর্চায় সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ বাংলায় তুর্কি অভিযানের পরবর্তী পর্যায়ের ঘটনা । ‘সেক শুভোদয়া' গ্রন্থে এধরনের ইঙ্গিত সহ আরও  অনেক সূত্র গ্রথিত রয়েছে , যা এখনও অনাবিষ্কৃত । ভাবীকালের গবেষক - পণ্ডিত সমাজ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন — পরিশেযে এ প্রত্যাশা রেখে আমাদের আলোচনার ইতি টানছি ।

লেখক পরিচিতি 

ড.বাসুদেব রায়ের জন্ম ১৯৬২ সালে। কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যের জগতে আত্মপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশিত বই মানব' (কাব্যগ্রন্থ), দ্বিতীয় বই রক্তের বাঁধন (উপন্যাস)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণা করলেও প্রবন্ধ সাহিত্যের দিকে তার ঝোঁক বেশি। তদুপরি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তথা বই লিখতে তিনি অধিকতর উৎসাহী। গবেষণামূলক বইয়ের পাশাপাশি সাধু-মহাপুরুষদের জীবনী-গ্রন্থ, একাঙ্কিকা ইত্যাদি সম্পাদনাও করেছেন তিনি।

ড.বাসুদেব রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। হার উল্লেখযোগ্য গবেষণা গুলোর মধ্যে রয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ', চণ্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবদেবীর স্বরূপ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে সমাজ-চিত্র ইত্যাদি। তাঁর যৌথ রচনা ও উপেক্ষণীয় নয়।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাসুদেব রায় নিরলস ভাবে লিখে চলেছেন। এছাড়াও নতুন করে তিনি একক ও যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক কাজে হাত দিয়েছেন।