মোহিতলাল মজুমদার
ড. রঘুনাথ ভট্টাচার্য
ঢাকা,বাংলাদেশ
মোহিতলাল মজুমদার কবি, প্রাবন্ধিক, সাহিত্যসমালোচক। প্রথম জীবনে কবিতা লিখলেও পরবর্তী জীবনে সাহিত্যসমালোচক হিসেবেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে অক্টোবর, নদীয়া জেলার কাচড়াপাড়ায় তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পৈতৃক
নিবাস হুগলি জেলার বলাগড়ে। পিতা নন্দলাল মজুমদার, মাতা হেমলতা দেবী। মোহিতলাল মজুমদারের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় মাতুলালয়ের
নিকটবর্তী হালিশহর স্কুলে। পরে তিনি বলাগড় উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে
এন্ট্রান্স পাস করেন। কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন। (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)
থেকে তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বি.এ. শ্রেণিতে তাঁর
পাঠক্রম ছিল বাংলা ও ইংরেজি ব্যতীত সংস্কৃত দর্শন। এরপর তিনি কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এম.এ. এবং আইন পড়া শুরু করেন। কিন্তু আর্থিক কারণে পড়া
অসমাপ্ত রেখে তাঁকে চাকরি গ্রহণ করতে হয়।
মোহিতলালের ব্যক্তিত্ব গঠনে পিতা-মাতার প্রভাব গভীর। পিতার সংসার জীবনের প্রতি ঔদাসীন্য ও কাব্যপ্রীতি তার মধ্যে সঞ্চারিত হয় আর উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি মায়ের কাছ থেকে পান একটি স্পর্শকাতর আত্মাভিমানী স্বভাব। বাংলা সাহিত্যের দু’জন কবি - ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। একজন হলেন কবি দেবেন্দ্রনাথ সেন যিনি তার পিতার জ্ঞাতি ভাই এবং দ্বিতীয়জন কবি ঈশ্বর গুপ্ত— তাঁর মাতুল বংশের দিক দিয়ে দূরসম্পর্কের আত্মীয় ।
মোহিতলাল মজুমদারের জীবন সংগ্রামবহুল। তিনি প্রথমে শালিখায় একটি স্কুলে এবং পরে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তালতলা হাইস্কুলে অস্থায়ী শিক্ষকের পদে কাজ করেন। ১৯০৯-এ তার বিবাহ হয় বারাকপুর নিবাসী রায় সাহেব যোগেন্দ্রনাথ রায়ের কন্যা তরুলতা দেবীর সঙ্গে। শিক্ষকতার পাশাপাশি শুরু হয় তার সাহিত্যচর্চা ও কবিতা রচনার কাজ। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ দেবেন্দ্রমঙ্গল। সাংসারিক দায়িত্বভার বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে মোহিতলাল স্কুলের কাজ ছেড়ে সরকারি জরিপ বিভাগে কানুনগোর পদ গ্রহণ করে উত্তরবঙ্গে চলে যান। এতে তার সাহিত্যচর্চা ব্যাহত হতে থাকায় তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে আবার ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলের শিক্ষকতায় ফিরে আসেন, চাকরি নেন ক্যালকাটা হাই স্কুলে সহকারি শিক্ষক পদে। তবে উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি ও মাসের সংস্পর্শ তাঁর কাব্যভাবনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল, বিশেষত পদ্মার দিগন্ত বিস্তৃত তীরভূমি এবং নানা শ্রেণির মানুষজনের সঙ্গে পরিচয় তার অভিজ্ঞতাকে রুদ্রমধুর রূপে অভিষিক্ত করে।
১৯০৯ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোহিতলাল যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সাহিত্যগোষ্ঠীর সঙ্গে। এগুলো হলো - 'মানসী', 'বীরভূমি', বাণী, 'ভারতী', 'প্রবাসী', 'কালিকলম', 'কল্লোল', 'শনিবারের চিঠি' এবং স্বসস্পাদিত 'বঙ্গদর্শন' ও 'বঙ্গভারতী'। 'মানসী' পত্রিকায় ১৩২১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মপ্রত্যয়ের স্বাক্ষরবহ কবিতা ‘আমি’ । কবিতাটিকে কেন্দ্র করে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের অবসান ঘটে। বীরভূমি' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, ফরাসি ও ইংরেজি গল্পের অনুবাদ। ভারতী গোষ্ঠীর সংস্পর্শে এসে তিনি বৃহত্তর সাহিত্য সৃষ্টির পথে অগ্রসর হন ‘সত্য সুন্দর দাস' ছদ্মনামে এই পত্রিকায় তার কাব্যতত্ত্ব সম্পর্কিত আলোচনার সূত্রপাত ঘটে, রবীন্দ্রোত্তর যুগের বুদ্ধিবাদী জীবন জিজ্ঞাসা নিয়ে ১৯২১-এ প্রকাশিত হলো তার প্রথম বিশিষ্ট কাব্য স্বপন পসারী। এ কাব্যেই তিনি রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক ভাবসচেতন কাব্যাদর্শের বিরুদ্ধে গেলেন এবং বুদ্ধিবাদী জীবনচেতনায় দেহবাদকে প্রাধান্য দিলেন। ভোগবাদের একটি বিশিষ্ট চেতনা তার কাব্যে স্পষ্ট হয়েছে। তাঁর ভোগবাদ দেহগত লালসায় বিলীন হয়নি, বরং দুরন্ত এক মোহমুক্ত জীবন পিপাসায় তিনি এই পৃথিবীর রূপ, রস- সবকিছু ইন্দ্রিয়গত করে ভোগ করতে কতকটা Stoic দার্শনিক চেতনা, কতকটা Epicurean ক্ষণবাদ- হর কাব্যপ্রেরণাকে ও ভোগচেতনাকে প্রভাবিত করেছে।
বড় মিঠা মদ! ফের পেয়ালায় ভর সাকী!
হরদম দাও! – আজ বাদে কাল ভরসা কি?
তার সে ভুরুর একটুকু
চাঁদ
আধ-ঢাকা।
‘রোজা'র উপোস ভেঙে দিল যেন
‘ইদ’ রাতে !
রাত হ'ল দিন সেই আতশের
রোশনা'য়ে-
দিন হ'ল রাত নয়নে নামিল
নি্দ প্রাতে!
তাঁর কাব্যের অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বিধৃত জগৎ-ই তাঁর কাব্যের বিষয়বস্তু । এমন কোনো রূপরসস্পর্শগন্ধ সম্পর্কে তার কবিমন কল্পনায় অধীর হয়নি - যা তার ইন্দ্রিয়ের প্রত্যক্ষীভূত বিষয় না হয়েছে। ইন্দ্রিয়জ জগতের বাইরের অনুভূতি সম্পর্কে তাঁর সৃষ্টিপ্রতিভা কিছুমাত্র আগ্রহান্বিত ছিল না।
‘শনিবারের চিঠি'র একজন মনস্বী লেখক হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি লাভের পর মোহিতলালের কর্মজীবনে এমন একটা পরিবর্তন ঘটল যা তাঁর নিকট ছিল অপ্রত্যাশিত। ১৯২৮-এ পণ্ডিত অধ্যাপক ডক্টর সুশীল কুমার দে'-র সক্রিয় সহযোগিতায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯২১) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আপেক্ষিক আর্থিক সচ্ছলতা এবং জ্ঞানচর্চার অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় তাঁর সাহিত্যজীবনেও বিরাট পরিবর্তন ঘটে ।
১৯২৮ থেকে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ষোল বৎসরকাল তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন প্রতিভাবান অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করে খ্যাতিমান হন। তবে কবি হিসেবে তার যে জীবন-প্রত্যয় ও রূপবাদী রচনাশৈলী ছিল তাঁর পরিবর্তে দেখা দেয় বহুপাঠী আত্মপ্রত্যয়ী সাহিত্য সমালোচকের সূক্ষ্মদর্শী নির্ভীক বিচারক সত্তা। উচ্চতর সমালোচনার উদ্দেশ্যে তিনি কাব্যরচনা ত্যাগ করে সমালোচনা সাহিত্যে আত্মনিয়োগ করেন। শিল্প ও সাহিত্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলো দেখানোর ক্ষেত্রে তার একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তার মননধর্মিতা এবং কবিসুলভ ভাবাত্মক বিচারবোধ সমালোচনা সাহিত্যকে উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি তাঁর সমালোচনামূলক প্রবন্ধগুলোতে কৃত্তিবাস ওঝা’, ‘সব্যসাচী', 'শ্রীসত্য সুন্দর দাস’ ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। ১৯৩৬-এ প্রকাশিত হয় তার প্রথম সমালোচনা গ্রন্থ আধুনিক বাংলা সাহিত্য। অবশ্য ঢাকায় অধ্যাপনাকালে ১৯৩৬-এ বের হয় স্বরগরল এবং ১৯৪১-এ হেমন্তগোধূলি কাব্য। এই দুটি কাব্যেই লক্ষ্য করা গেল সমালোচক মোহিতলালের ক্রিটিক সত্তাকে। এ সময় আরও প্রকাশিত হয় সাহিত্যকথা (১৯৩৮), বিচিত্র কথা (১৯৪১), বিবিধ কথা (১৯৪১)। ১৯৪৪-এ তিনি প্রকাশ করেন শিশুপাঠ্য রূপকথা নামের একটি কাব্য, ১৯৪২-এ কাব্য মঞ্জুষা নামক একটি সুনির্বাচিত কাব্য সংকলন। বিভিন্ন সময়ে রচিত তার বিখ্যাত সনেটগুলো ছন্দ চতুদর্শী শিরোনামে সংকলিত হয় ১৯৫১-এ।
১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে মোহিতলাল মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং সপরিবারে ঢাকা ত্যাগ করে কিছুকাল ব্যারাকপুরে, তিন বছর হুগলি জেলার বাগনানে এবং পরে কোলকাতার উপকণ্ঠে বড়িশায় জীবনের অবশিষ্টকাল অতিবাহিত করেন। ঢাকায় কর্মজীবনে বৃহৎ পরিবারের জন্য সাংসারিক ব্যয় ছাড়াও তিনি তার প্রিয় পুষ্পোদ্যান এবং উদার আতিথেয়তার জন্য অকুণ্ঠভাবে ব্যয় করতেন বলে ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সঞ্চয় করতে পারেননি। ফলে বড়িশায় স্থায়িভাবে থাকার সময় তাঁকে আবার কঠোর জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়। কলকাতায় বঙ্গবাসী কলেজে স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগ খোলা হলে তিনি সে বিভাগে আমৃত্যু অধ্যাপনা করেন।
বড়িশায় বসবাসকালে পরিবার প্রতিপালনের জন্য নিরন্তর অর্থচিন্তায় ও নানা ব্যাধির আক্রমণে তাঁর শরীরে ভাঙন ধরে। নির্জন পরিবেশে বড়িশার বাসগৃহে এ সময়ে সাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত অধ্যাপক, কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার অর্থাৎ তৎকালীন সৃজনধর্মী শিল্পী এবং সাহিত্য যশোলিপ্সু ব্যক্তিবর্গের সমাগম হতো। এ পর্যায়ে সাহিত্যচিন্তক মোহিতলাল মজুমদার বাঙালি জাতির অবক্ষয় ও বিপর্যয় সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েন। বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ চিন্তা তাকে ভাবতন্ময় সাহিত্যজীবন থেকে গভীর নৈরাশ্যবোধে নিক্ষেপ করে। ফলে সাহিত্যালোচনার পাশাপাশি লিখিত হয় কতিপয় সাহিত্য ও স্বজাতি বিষয়ক প্রবন্ধ ও সংকলন গ্রন্থ। এগুলো হলো বাংলা কবিতার ছন্দ (১৩৫২), 'বাংলার নবযুগ (১৩৫২), 'জয়তু নেতাজী (১৩৫৩), “কৰি শ্ৰীমধুসূদন (১৩৫৪), সাহিত্য বিচার' (১৩৫৪), বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস' (১৩৫৫), 'বঙ্কিম-বরণ (১৩৫৬), রবি-প্রদক্ষিণ (১৩৫৬), বাংলা প্রবন্ধ ও রচনারীতি' (১৩৫৮), বাংলা ও বাঙালি' (১৩৫৮), “কবি রবীন্দ্র ও রবীন্দ্রকাব্য', ১ম খণ্ড (১৩৫১), ২য় খণ্ড (মৃত্যুর পরে ১৩৬০), অনুবাদ- বিদেশি ছোটগল্প সঞ্চায়ন (১৩৫৭), বিদেশি কাৰ্যসঞ্চয়ন। সম্পাদিত গ্রন্থ : 'অভয়ের কথা (১৩৫৪), “দুর্গেশনন্দিনী ও কপালকুণ্ডলা (১৯৪৭)। কাব্যচয়নিকা (১৯৬৯) এবং মোহিতলাল -কাব্য সম্ভার (১৯৬৯) প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পরে।
এছাড়া মোহিতলাল ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায়ের ‘বঙ্গদর্শন’ এবং ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘বঙ্গভারতী' (১৩৫৯ বঙ্গাব্দের বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত) নামক মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পঞ্চাশের মন্বন্তরের প্রভাবে বাঙালির নৈতিক মূল্যবোধের যে বিপর্যয় ঘটে তাতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন। এ সময়ে তিনি বিবেকানন্দ ও সুভাষচন্দ্র বসুর পৌরুষপ্রবল বীর্যবান ব্যক্তিত্বকে জাতির সমক্ষে তুলে ধরতে থাকেন। দেশভাগের পরে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রয়াসকে তিনি যেমন তীব্র সমালোচনা করেন তেমনি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বাংলা ভাষার অধিকার ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াসকেও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করেন। জীবনের শেষপ্রান্তে বঙ্গদেশ, বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য তার এই অক্লান্ত সংগ্রাম অতুলনীয়। কিন্তু, ক্রমেই অন্তর্জগত ও বহির্জগতের নিরন্তর সংঘাতে দুর্বল দেহ তার প্রাণশক্তিকে ক্ষীণ করে তোলে । করোনারি থ্রম্বসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই (১০ শ্রাবণ, ১৩৫১) মোহিতলাল মজুমদার প্রেসিডেন্সি হাসপাতালের মেকেঞ্জি ওয়ার্ডে ৬৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি জীবিতকালে খুব বেশি সাহিত্য সম্মাননা লাভ করেননি। ১৯৩৭-এ একবার তাকে পাটনায় অনুষ্ঠিত প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনে সাহিত্য শাখার সভাপতি পদে এবং ১৯৪১-এ মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত সাহিত্য সম্মেলনের মূল এর আগে ১৯৩৮-এ তাঁকে পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়েছিল। ১৯৫১-এ তিনি নদীয়া জেলা সাহিত্য সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার জন্য মনোনীত হন। ১৯৪৬-এ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মোহিতলাল কে সরোজিনী পদক দিয়ে সম্মানিত করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ১৯৪৯-এ তিনি শরৎ-স্মৃতি বক্তৃতা দেন। এছাড়াও উভয় বাংলায় ছোটখাটো সাহিত্য সম্মেলনে প্রদত্ত তার সভাপতির মূল্যবান ভাষণগুলো স্মরণীয়।
ভাবগুরু বঙ্কিমচন্দ্রের মতো দণ্ডপাণি সাহিত্যিক হলেও তিনি নতুন প্রতিভার প্রশংসা করতেন। তাঁর কাম্য ছিল সমুচ্চ সাহিত্যিক আদর্শ ও বিশুদ্ধ সাহিত্যিক পরিবেশে জীবন অতিবাহিত করা। কিন্তু বাস্তব ছিল বিপ্রতীপ, ফলে সামঞ্জস্যহীনতার জন্য তিনি জীবনে দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু শিল্পীমনন, রসগ্রাহিতা ও কালজয়ী সাহিত্যাদর্শের জন্য তার আকাঙ্ক্ষা ছিল আপসহীন। বাংলা সাহিত্য-সমালোচনায় তিনি উঁচুমানের সমালোচক হিসেবে সর্বদাই একজন স্মরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। প্রকৃত অর্থে মোহিতলাল মজুমদার কবি অপেক্ষা সাহিত্য-সমালোচক রূপেই বাংলা সাহিত্যে অমরতা লাভ করেছেন।
সহায়ক গ্রন্থ -
১। বাঙলা প্রবন্ধ ও ভাষা-শিল্প, অধ্যাপক সুশীল জানা সম্পাদিত, বিদ্যোদয় লাইব্রেরী প্রাইভেট লিমিটেড, কোলকাতা, প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ১৯৬১।
২। স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব (বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), রফিকুল ইসলাম, সাঈদ-উর রহমান ও বিশ্বজিৎ ঘোষ সম্পাদিত, বাংলা বিভাগ, ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২০০৪।
লেখক পরিচিতি –
রঘুনাথ ভট্টাচার্য-র জন্ম বাংলাদেশের ঢাকায় । ধামরাই কলেজ , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন । বাংলায় স্নাতকোত্তর ও পিএইচ ,ডি । বিভাগীয় প্রধান , বাংলা বিভাগ , নবযুগ কলেজ , ধামরাই , ঢাকা ।