অনুগল্প
ডোর বেল বাজতেই দরজা খুলে দেখি একজন অচেনা বৌ । আমি বৌটিকে জিজ্ঞেস করলাম – কী চাই ? সে বলল - দিদি, আপনার কাজের লোক চাই ? না বলতে গিয়েও কৌতূহল বশত: জিজ্ঞেস করলাম – তোমায় কে পাঠিয়েছে? কোথায় থাকো তুমি?
- সোনিয়া বলেছিল, যে বাড়িতে লেবু গাছ আছে সে বাড়িতে কাজের লোকের দরকার । আমি
সোনিয়ার বাড়ির কাছে থাকি।
- লেবু গাছ তো পাশের বাড়িতে । আমাদের বাড়িতে তো নয় !
- না, না আপনার বাড়ির কথাই বলেছিল সোনিয়া ।
কাজের লোকের আমার খুবই প্রয়োজন তবু বৌটিকে আমি না করে দিলাম । কারণ অচেনা
কারোকে রাখব না । সোনিয়া মেয়েটি পাশের বস্তিতে থাকে । সেলাইয়ের কাজ করে । সে
শাড়িতে ফলস্ লাগিয়ে দেওয়া ছাড়াও টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করে দেয় আমার । তাকেই বলে
রেখেছিলাম, একটি ঠিকে
ঝিয়ের জন্য । আমার ঠিকে ঝিটি এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে নিজের গ্রামে গেছে, ফেরার নাম নেই এক মাস হতে চলল ! সোনিয়া তো নিজেই বৌটিকে
নিয়ে আসতে পারত আমার কাছে। বৌটিকে ও সত্যি পাঠিয়েছে নাকি বৌটি জানতে পেরে নিজেই
চলে এসেছে ! আমি মনে মনে এই সব কথা
ভাবছিলাম । একটি বাচ্চা ছেলের প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরে পেলাম ।
- আন্টি লেবু পেড়ে নিই ।
দেখি, একটি বাচ্চা
ছেলে লেবু পাড়ার অনুমতি চাইছে ।
- পেড়ে নে । বললাম
বটে কিন্তু লেবুগাছটি তো পাশের বাড়ির ! পাশের বাড়ির লেবু গাছটি ঢাকা পড়ে যায় ওদের
গাড়ির শেডের জন্য । দুই বাড়ির গেট পাশাপাশি । দুটি গেটের মাঝে দুই বাড়ির পাঁচিল
একই উচ্চতায় সমান্তরাল ভাবে চলে গেছে গ্যারেজ অবধি ।
পাশের বাড়ির পাতি লেবু গাছ। ফলন্ত গাছ। সারা বছর গাছে লেবু হয় । ঝাঁকড়া লেবু
গাছটির অসংখ্য ডাল-পালা আমাদের পাঁচিলের ধারে লাগানো জবা, শিউলি ও ক্রোটন গাছের মাথা ডিঙ্গিয়ে পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছে
আমাদের বাড়ির সীমানায়। অবলীলায় । ট্রেসপাস ? গাছেরা সীমানা বোঝে না । অগুনতি কাঁচা পাকা লেবু ডালে ডালে
। লেবু গাছের অসংখ্য ডালপালার ছায়ার নিচে থাকে আমাদের গাড়িটা । প্রাকৃতিক আচ্ছাদন
! ইচ্ছে করলেই আমরা আমাদের দিকে চলে আসা ডাল-পালা ছেঁটে ফেলতে পারি কিন্তু কাটি না
প্রথমত: লেবু, দ্বিতীয়ত:
গাছের ছায়া । আমাদেরও প্রয়োজন মেটায় গাছটি
। যখনই প্রয়োজন হয় গাছ থেকে লেবু পেড়ে নিই । আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যখনই আসেন
লেবু গাছটিকে দেখে বলেন - বাহ্, তোমাদের লেবু গাছটি কী সুন্দর । কত লেবু! প্রথম প্রথম বলতাম
– আমাদের গাছ নয়।
পাশের বাড়ির । প্রশংসার খাতিরে, কিছু লেবু পেড়ে তাদের দিয়ে দিতাম । কে
না চায় টাটকা ফল পেতে ! পাড়ায় আমাদের বাড়িটা চিহ্নিত হয়ে গেছে লেবুগাছওয়ালা বাড়ি ।
কে হায় কষ্ট করে সত্যটা খুঁজতে চায়!
ffffffffffffffffff
লেখক পরিচিতি - যদিও জন্ম পলাশীপাড়া,
নদীয়া জেলা
পশ্চিমবঙ্গ, কিন্তু তার শৈশব বেড়ে ওঠা, শিক্ষা-দীক্ষা
সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে
এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা তৃণীর’ প্রকাশ
করতেন।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়।
হিন্দি ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবি রাখোলিও সিনান-এর দশটি
স্প্যানিশ কবিতা বাংলাতে অনুবাদ করেছেন। অনুশীলন পত্রিকা, সুইডেন
থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে প্রাপ্তি। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে ঈশ্বর ও
মানুষ’ (অণুগল্প ও ছোট গল্প সংকলন)।