পর্ব – ৪
-কালীপদ চক্রবর্ত্তী
অনেকে হয়তো আড্ডাকে নেতিবাচক ভাবতে পারেন। কিন্তু আড্ডার
সবকিছুই নেতিবাচক নয়। আড্ডা থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। একটি পরিবেশে নিজেকে কিভাবে
খাপ খাইয়ে নিতে হবে তা এর মাধ্যমে আত্মস্থ করা যায়। আড্ডার মাধ্যমে নিত্য-নতুন অভিজ্ঞতার
দ্বারা নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। আড্ডা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, খোশগল্প, পরচর্চা
বা সমালোচনা করতে গিয়ে বেশি বেশি কথা বলার ব্যাপারটা শরীরকে আরও সুস্থ রাখতে সহায়তা
করে। গবেষণায় দেখা গেছে আড্ডা, খোশগল্প বা পরচর্চায় ‘প্রটেস্টেরন’ নামের
একটি হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অন্যের সমালোচনা,
খোশগল্প প্রভৃতি সামাজিক বন্ধন জোরদার ও মেয়েদের সুখে করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অধ্যাপক স্টেফানি ব্রাউনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা
এ গবেষণা চালান।
দুর্গাপুজোর
সময় আড্ডা দিতে গিয়ে অবশ্যই কিছুকথা মনে রাখবেন -
- আড্ডা জমিয়ে তোলার আসল রহস্য হল, সবার সাথে স্বাতন্ত্র্য
সম্পর্কে প্রত্যেকের পছন্দ-অপছন্দ বুঝে চলা। এই বিদ্যায় পারদর্শী হলে আড্ডায় সবার কাছে
আকর্ষণীয় হওয়া যাবে।
- আড্ডায় বন্ধুর সাথে মত না মিললে এমন কোনও বহিঃপ্রকাশ
করবেন না যাতে আপনার সাথে তার স্বাভাবিক সম্পর্কে বিঘ্ন ঘটে।
- আড্ডায় অনেক সময় মিথ্যেকথা (গুল) মেরেও সবার কাছে
পছন্দ হওয়া যায়, তবে তার কায়দাটা জানতে হবে ভাল করে। গুল যদি সরল রেখা হয় তা আপনার
ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। আর এর প্রভাবও আঁচ করা যায় সহজে। তাই গুল মারুন কৌশলে, সবাই তা
বিশ্বাস না করলেও যেন মজা পায়।
- লক্ষ্য রাখবেন, আড্ডার মধ্যমণি হতে গিয়ে সবার মুখের
কথা টেনে আপনিই কেবল বলছেন না তো? তাহলে কিন্তু মাঠে মারা যাবে আপনার জনপ্রিয়তা। সবসময়
সকলকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দিন।
- তর্কের খাতিরে তর্ক না করে সীমার মধ্যে থাকুন।
এক্ষেত্রে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ করা থেকে দূরে থাকুন। অনেক সময় তর্ক, হাতাহাতিতে গিয়ে
পৌঁছোতে পারে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বিপজ্জনক হয়।
- আড্ডা হতে পারে নানারকম। তাই আলোচনায় যোগ দেওয়ার
আগে তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জেনে নিন। আড্ডায় বয়স-ভেদে অনেকে উপস্থিত থাকতে পারেন।
- নতুন কোনও চমক আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। তাই
চমক যা থাকুক তা সবার কাছে প্রকাশ করুন। তবে মনে রাখতে হবে আজ আপনি চমক দিতে পারলেও
কাল পালা অন্য কারও হতে পারে।
- আড্ডায় প্রাণ এনে দেয় জোকস আর মজার কথা। আলোচনার
সাথে জোকস আর মজার বিষয় উপস্থাপন করতে পারলে আপনাকে আর পায় কে। একটু লেখাপড়া করে জোকস
এর স্টক বাড়িয়ে নিন।
- আড্ডার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল উপস্থাপন। আপনি যাই
করুন অথবা বলুন না কেন, তার উপস্থাপনা হওয়া চাই নিখুঁত ও নির্ভেজাল। মনে রাখবেন উপস্থাপনাই
একজন মানুষের বড় সম্পদ।
- মনে রাখবেন দুর্গাপুজো আমাদের প্রধান উৎসব, তাই
আড্ডাদিতে গিয়ে মনমালিন্য করে পুজোটাকে মাটি করবেন না। পুজোর কদিন জমিয়ে আড্ডা দিন
ও আনন্দ উপভোগ করুন। এই কদিন বাঙালিরা সম্পূর্ণ টেনশন মুক্ত হয়ে যায় এবং এর প্রয়োজনীয়তা
আমাদের জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে। বাঙালিরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই কদিনের জন্য।
তাই জমিয়ে আড্ডা দিন ও আনন্দে থাকুন।
লেখা শেষ করার
আগে আপনাদের সকলকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানাই।ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।(সমাপ্ত)